আড়ালের বড় অভাব
বাঙালির বারো মাসে তেরো পার্বণে গঙ্গাস্নান এক নিত্যকর্ম। নদিয়া, বর্ধমান, মুর্শিদাবাদ, বীরভূম, প্রতিবেশী অসম, মণিপুর, ত্রিপুরা ও বাংলাদেশ-সহ বহু দূর-দূরান্ত থেকে দলে-দলে সাধারণ মানুষ, ভ্রমণার্থী ও তীর্থযাত্রী নবদ্বীপ-মায়াপুরে আসেন পুণ্যতোয়া গঙ্গায় স্নান সারতে। বিশেষত দোল ও রাস পূর্ণিমায় ভক্ত সমাবেশ কয়েক লক্ষ ছাড়িয়ে যায়। এঁদের মধ্যে অধিকাংশই মহিলা। অথচ গঙ্গাতীরবর্তী বড়ালঘাট-সহ অন্য কোথাও মেয়েদের স্নানের উপযোগী সিঁড়ির ঘাট নেই বা তাঁদের ভেজা কাপড় পালটানোর উপযুক্ত আড়ালটুকুও নেই। নবদ্বীপ-মায়াপুর যমজ শহরের গঙ্গাতীরে নেই যথেষ্ট সুলভ শৌচালয়-সহ মহিলাদের জন্য আবরু-যুক্ত পৃথক স্নানাগার।
সরকার এখন যখন পর্যটনকে সবচেয়ে সম্ভাবনাময় শিল্প হিসাবে চিহ্নিত করছে, তখন নবদ্বীপ-মায়াপুর ন্যূনতম পরিকাঠামোর অভাবে এক বিরাট শূন্য ছাড়া আর কিছুই প্রসব করে না। অথচ দক্ষিণাঞ্চলের অন্য কোনও রাজ্য হলে, এই তীর্থস্থান অবশ্যই উপযুক্ত ভাবে বিকশিত হত।
সঞ্জীব রাহা পাডিয়া মার্কেট, কৃষ্ণনগর, নদিয়া
ফজলি-কথা
প্রদীপ নারায়ণ রায় (‘আম-কাসুন্দি’, সম্পাদক সমীপেষু, ১১-৭) লিখেছেন, বিধবা মহিলা ফজলির নাম অনুসারে ফজলি আমের নামকরণ হয়। এই ধারণাটি ঠিক নয়। ঠিক তথ্যটি হল, বাংলার স্বাধীন সুলতানদের ধ্বংসপ্রাপ্ত গৌড়ের একটি পুরনো কুঠিতে ফজলি বিবি নামে এক মহিলা বাস করতেন। তাঁর আঙিনায় ছিল একটি আমগাছ। মহিলার হাতের যত্নে গাছটিতে প্রচুর আম ধরত। এলাকার ফকির-সাধু-সন্ন্যাসীদের ওই আম দিয়ে আপ্যায়ন করতেন বলে ফজলি বিবি নিজে ওই আমের নামকরণ করেন ফকির ভোগ। ১৮০০ খ্রিস্টাব্দে মালদহের কালেক্টর সাহেব এক্কা গাড়িতে গৌড় যাচ্ছিলেন। পথে পিপাসার্ত হয়ে ফজলি বিবির কুঠিতে প্রবেশ করে জলপান করতে চাইলে ওই মহিলা জলের পরিবর্তে একটি আম খেতে দেন। আম খেয়ে সাহেব আমটির নাম জানতে চান। ফজলি সাহেবের ইংরাজি ভাষা অনুধাবন করতে না পেরে আমের নামের পরিবর্তে নিজের নাম বলে বসেন। সেই থেকে ওই আমের নামকরণ হয় ফজলি। অন্য মতে, মালদহের কালেক্টর সাহেব এক বার অবকাশ যাপনের জন্য ফজলি বিবির কুঠির নিকটেই ক্যাম্প করেছিলেন। সাহেবের আগমনের সংবাদ পেয়ে তাঁর গাছের আম নিয়ে ফজলি কালেক্টরের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। সাহেব ওই আম খেয়ে এবং ফজলির আতিথেয়তায় মুগ্ধ হয়ে আমটির নামকরণ করেন ফজলি। মানুষের মুখে মুখে ফজলি আমের নাম ভাইরাল হয়ে যায়।
সুভাষ ঘোষ হাজরা পাঁচথুপী, মুর্শিদাবাদ
মায়ের ছুটি
কিছু দিন আগে পড়লাম কেন্দ্রীয় সরকার মাতৃত্বকালীন ছুটি সবেতন ছ’মাস ধার্য করেছে। সরকারি ও আধা সরকারি কর্মীরা এই সুযোগ পাবে। পুরুষদেরও ছুটি দেওয়ার কথা ভাবা হচ্ছে। আমি একটি মাধ্যমিক (পরে উচ্চ মাধ্যমিক) স্কুলে পড়াতাম। তখন ১৯৬২-৬৩ সাল। আমাদের বেতন যেমন কম ছিল, ছুটির বিষয়েও ছিল তেমনই কার্পণ্য। ১৯৬৫ সাল নাগাদ আমার মাতৃত্বকালীন ছুটির দরকার হল। তখন ছুটি ছিল দেড় মাস পুরো বেতন আর দেড় মাস হাফ বেতন। অনেকে দেড় মাস পুরো বেতনের ছুটি নেওয়ার পর আর হাফ বেতনের ছুটি নিতেন না অভাবের সংসারে আরও অভাব দেখা দেবে বলে। এত দিনে সবেতন ছুটির কথা মনে হল?
অলি বন্দ্যোপাধ্যায় নদীকূল, নিমতা
সহমত
অশোক কুমার দাস যে প্রাসঙ্গিকতাকে তুলে ধরেছেন, তার সঙ্গে সহমত (‘ছাদ এক, ধর্ম অনেক’, সম্পাদক সমীপেষু, ১৫-৭)। দার্জিলিং থেকে বসিরহাট— যে হিংসার আগুন গ্রাস করেছে সমাজকে, তার সুরাহা মেলা কঠিন। অথচ এটাও ঠিক যে, কোথাও কোথাও সম্প্রীতি বজায় রাখার চেষ্টা চলছে। আমি এক জন স্কুল পড়ুয়া। হিন্দু। যে স্কুলে পড়ি, তার আশপাশে মুসলিমদের বাস। আমাকে মাঝেমধ্যেই মুসলিম ভাইবোনেরা ডেকে জিজ্ঞেস করে আমার নাম কী বা আমি কোথায় থাকি। এই ছোট ছোট ভাইবোনদের মধ্যে তো কোনও ধর্মীয় বিদ্বেষ নেই! তা হলে প্রাপ্তবয়স্করা বিপরীতমুখী কেন? কিছু মানুষের মনে জোর করে ধর্মীয় বিভেদ, দাঙ্গা, গোরক্ষাজনিত খুন প্রবেশ করানো হচ্ছে। মানুষের মধ্যে এক মানসিক অসুস্থতা জন্ম নিচ্ছে। দেশের অন্দরেই ধীরে ধীরে বাড়ছে ধর্মীয় বিদ্বেষ ও অশান্তির বীজ। কাজী নজরুল ইসলাম লিখেছিলেন,‘জানিস না কি ধর্ম সে যে বর্ম সম সহনশীল...’।
তিনটি শিক্ষার বড়ই অভাব ভারতে। তা হল সংহতি, সম্প্রীতি ও সৌহার্দ্য। এই শিক্ষাটা দেশের সরকারের কাছ থেকে আমরা আশা করতে পারি। যেখানে ভারত ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র। আমরা মহাত্মা গাঁধীকে ‘জাতির জনক’ বলি, কিন্তু আমরা যদি ধর্ম ও গীতা সম্পর্কে তাঁর কথা স্মরণে না রাখতে পারি, তা হলে সার্থকতা কিসে? ভবিতব্য কোনটা? এক ছাদের নীচে বহু ধর্মের সহাবস্থান না কি খোলা আকাশের নীচে যুদ্ধবিগ্রহ? কোনটা ফিরে পাব কে জানে!
শ্রেয়ান পাল চৌধুরী ভট্টনগর, পশ্চিম লিলুয়া, হাওড়া
সেন্ট জন’স চার্চ
‘অর্গ্যানের সুর শোনা যায়...’ (অন্য শহর, ৮-৭) শীর্ষক প্রতিবেদনে লেখা হয়েছে, ‘আঠারো শতকের মাঝামাঝি অবধি এই চত্বরেই ছিল কলকাতার সাহেবদের একমাত্র সমাধিক্ষেত্র।’ সেন্ট জন’স গির্জার নির্মাণকাল ১৭৮৪-১৭৮৭। তা হলে আঠারো শতকের মাঝামাঝি অবধি ওখানে কলকাতার সাহেবদের একমাত্র সমাধিক্ষেত্র কী করে থাকে?
কলকাতার সাহেবদের প্রথম সমাধিক্ষেত্র পার্ক স্ট্রিটের দক্ষিণে। তৈরি হয় ১৭৬৭-তে। যে কারণে প্রথমে সংলগ্ন রাস্তার নাম হয়েছিল বেরিয়াল গ্রাউন্ড স্ট্রিট। পরে ভ্যান্সিটারট সাহেবের লাগোয়া উদ্যানের জন্য নাম হল পার্ক স্ট্রিট। ১৭৮৫-তে আর একটি সমাধিক্ষেত্র তৈরি হয় কাছেই উত্তরের একটি অংশে। অর্থাৎ সেন্ট জন’স গির্জার জন্মের আগে কলকাতা পেয়ে গিয়েছে সাহেবদের দুটি সমাধিক্ষেত্র।
সামান্য সংযোজন করছি। সেন্ট জন’স চার্চ কলকাতায় ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির প্রথম তৈরি ভবনগুলির একটি। লটারির মাধ্যমে নির্মাণব্যয়ের ৩০,০০০ টাকা তোলা হয়েছিল। সেন্ট জন’স চার্চ কলকাতার তৃতীয় সবচেয়ে পুরনো (আর্মেনিয়ান গির্জা ও ওল্ড মিশন চার্চের পরে) গির্জা। ১৮৪৭ সাল পর্যন্ত এই চার্চ ছিল কলকাতার অ্যাংলিকান ক্যাথিড্রাল। তার পর সেন্ট পলস চার্চে কলকাতার ক্যাথিড্রাল স্থানান্তরিত হয়।
অশোক সেনগুপ্ত সার্ভে পার্ক
শিয়ালদহ
পূর্ব রেলওয়ের শিয়ালদহ ডিভিশনে সম্প্রতি ‘ফাস্ট অ্যান্ড ফ্রি ওয়াইফাই’ চালু হয়েছে। এটি নিঃসন্দেহে একটি যুগোপযোগী উদ্যোগ। কিন্তু ন্যূনতম সুবিধা থেকে রেলযাত্রীরা এখনও বঞ্চিত। কয়েকটি প্ল্যাটফর্মের বেহাল দশা। প্ল্যাটফর্মে চলাফেরা করাটাই দায়। দীর্ঘ দিন যাবৎ ১২ নম্বর প্ল্যাটফর্মে অসংখ্য টাইলস্ ভাঙা। হাঁটলে পায়ের কাদা মাথায় ওঠে।
কোথাও আবার প্ল্যাটফর্ম বসে গেছে। এই যখন অবস্থা, তখন ‘ফাস্ট অ্যান্ড ফ্রি ওয়াইফাই’ কথাটি হাস্যকর লাগে। নির্মম রসিকতা। পৃথিবীর ব্যস্ততম রেল স্টেশনের যদি এ রকম ভগ্নদশা হয়, তা হলে বিষয়টি ভীষণ বেদনাদায়ক হয়ে ওঠে। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
গৈরিক পত্রনবীশ রাজপুর, দক্ষিণ ২৪ পরগনা
চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা
সম্পাদক সমীপেষু,
৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট, কলকাতা-৭০০০০১।
ই-মেল: letters@abp.in
যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy