Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

সম্পাদক সমীপেষু

আজ ইলিশপ্রেমীদের বড়ই দুঃসময়। দূষিত নদী তথা জলে নুনের পরিমাণ বেড়ে যাওয়ায় ইলিশের উপর দিকে যাওয়া বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছে। বঙ্গোপসাগরের মুখে যন্ত্রচালিত নৌকার দাপট ইলিশের ঝাঁককে ছত্রভঙ্গ করছে।

শেষ আপডেট: ২০ জুলাই ২০১৭ ০০:০০
Share: Save:

শ্রাবণ এল, ইলিশ নয়

আবহমান কাল ধরে বাঙালি সংস্কৃতির সঙ্গে ইলিশের অবিচ্ছেদ্য সম্পর্ক। দই ইলিশ, ভাপা ইলিশ, বেগুন ইলিশ, ইলিশ পাতুরি— কত যে রান্না বাঙালি হেঁশেলকে জমিয়ে দিয়েছে, তার ইয়ত্তা নেই। আষাঢ় শেষে শ্রাবণের পদধ্বনি; কিন্তু ইলিশ কই? বাজারে যেটুকু আমদানি, তার দাম আকাশচুম্বী! তাকাতেও ছ্যাঁকা লাগে। তবে ইলিশ নিয়ে বাঙালির আদিখ্যেতা আদ্যিকালের। চর্বিতে ঠাসা এই মাছ খুব তাড়াতাড়ি পচে গেলেও স্বাদ থাকে ষোলো আনা। রবীন্দ্রনাথ তাঁর ‘খাপছাড়া’ কাব্যগ্রন্থে ইলিশের বর্ণনা দিয়েছেন, ‘ইলিশ মাছ আর পাকা কাঁঠাল জমল পরের হাটে/কেনা বেচার ভিড় লাগল নৌকা বাঁধা ঘাটে।’ সত্যেন্দ্রনাথের ‘ইলশেগুঁড়ি’ তো বাঙালির প্রিয় কবিতা। কিন্তু ইলিশ যে প্রাণঘাতীও হতে পারে সেই ইতিহাস শুনিয়েছেন সৈয়দ মুজতবা আলি। এই ইলিশপ্রেমীর কথায়, রোজা রাখা অবস্থায় ইলিশ খেয়ে প্রাণ হারান মহম্মদ বিন তুঘলক।

কিন্তু আজ ইলিশপ্রেমীদের বড়ই দুঃসময়। দূষিত নদী তথা জলে নুনের পরিমাণ বেড়ে যাওয়ায় ইলিশের উপর দিকে যাওয়া বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছে। বঙ্গোপসাগরের মুখে যন্ত্রচালিত নৌকার দাপট ইলিশের ঝাঁককে ছত্রভঙ্গ করছে। মোহনার মিষ্টি জলে প্রবেশের আগেই বড় বড় ট্রলার সরকারি বিধিনিষেধের তোয়াক্কা না করেই নির্বিচারে খোকা ইলিশ ধরছে। বাংলাদেশ থেকে ইলিশ আমদানি পুরোপুরি বন্ধ থাকায় সংকট আরও বেড়েছে। এক সময় নবমী তিথিতে দুর্গা ঠাকুরকে ইলিশভোগ দেওয়া অপরিহার্য ছিল। দশমী থেকে শ্রীপঞ্চমী পর্যন্ত ইলিশ খাওয়া ছিল বারণ। শ্রীপঞ্চমীতে দেবী সরস্বতীকে ইলিশভোগ নিবেদন করে বাঙালি ইলিশ খেত। কিন্তু আজ তা অতীত। বাঙালির অদূরদর্শিতায় ইলিশ প্রাপ্তির হ্রাস উদ্বেগের। আশঙ্কা হয়, বাঙালি ভবিষ্যতে ইতিহাসে ইলিশ-হন্তারক রূপে পরিচিত হবে না তো?

ভাস্কর দেবনাথ নবপল্লি, কারবালা রোড ,বহরমপুর

দমনমূলকই তো

নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেনকে নিয়ে সুমন ঘোষের তথ্যচিত্রে সেন্সর বোর্ড নামক জ্যাঠামশাইয়ের নির্দিষ্ট কয়েকটি শব্দে (গরু, গুজরাত, হিন্দুত্ব ও হিন্দু) আপত্তি জানানোয় অবাক হইনি। অধ্যাপক সেন বহু দিন ধরে বিজেপি তথা সংঘ পরিবারের অপছন্দের তালিকায়। তিনি ২০০২ সালে গুজরাত কাণ্ডের সমালোচনা করেছিলেন। গত লোকসভা নির্বাচনের প্রাক্কালে এক বেসরকারি টিভি চ্যানেলে সাক্ষাৎকার দিতে গিয়ে মন্তব্য করেছিলেন, ‘ভারতীয় নাগরিক হিসাবে আমি মোদীকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে চাই না। তিনি এমন কিছু করেননি যাতে সংখ্যালঘুরা নিরাপদ বোধ করেন। সংখ্যাগরিষ্ঠ হিসেবেই আমি চাইব না যে সংখ্যালঘুরা নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে থাকুন (২৩-৭-১৩)।’ সংসদ ভবনে ঢোকার আগে যতই সিঁড়িতে প্রণাম করে মোদী গণতন্ত্রের মন্দিরে প্রবেশে অতিনাটকীয়তা আনুন না কেন, গণতন্ত্রের তিনটি ডি, অর্থাৎ ডিবেট, ডিসকাশনস ও ডিসিশন–এর প্রতি আদৌ সম্মান দেখাতে পেরেছেন কি? নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অমর্ত্য সেনের অপসারণ যদি বৈরিতার সূচনা হয়, তবে সেন্সর বোর্ডকে কাজে লাগিয়ে ওঁর মন্তব্যের কাটছাঁট করা ইন্টেলেকচুয়াল ক্রোধের বহিঃপ্রকাশ।

অবশ্য এ দেশ কখনওই বাক্ স্বাধীনতার পক্ষে অনুকূল ছিল না। ষাটের দশকের গোড়ায় নিষিদ্ধ হয়েছিল ‘নাইন স্টেপস টু রাম’ নামক সিনেমা। রাজীব গাঁধীর আমলে নিষিদ্ধ হয়, ‘দ্য লাস্ট টেম্পটেশন অব ক্রাইস্ট’, সলমন রুশদি থেকে গোবিন্দ পানেসর, অসীম ত্রিবেদী থেকে নরেন্দ্র দাভোলকর, ‘ওয়াটার’ সিনেমা থেকে ‘পদ্মাবতী’র সেট ভাঙচুর— তালিকা দীর্ঘ। এক ডজন বুদ্ধিজীবীর পরামর্শে বুদ্ধবাবু রাতারাতি নিষিদ্ধ করে দিয়েছিলেন তসলিমার বই। ‘আরেকটি প্রেমের গল্প’ (২০১০), ‘হারবার্ট’ (২০০৬), ‘ওয়ান ডে ফ্রম আ হ্যাংম্যানস লাইফ’ (২০০৫), ‘টরাস’ (২০০১) নিষিদ্ধ হয় বাম আমলে। আর ব্যঙ্গচিত্র ফরওয়ার্ড করে বা নিরীহ সার-সংক্রান্ত প্রশ্ন তোলায় কারাবাসের নজির রয়েছে এই আমলে।

বহু বছর আগে দার্শনিক বারুচ স্পিনোজা লিখেছিলেন, ‘মানুষ নিজের স্বাধীন চিন্তা এবং স্বাভাবিক অধিকার বা সামর্থ্য অন্য কাউকে দিতে পারে না। কিংবা অন্য কাউকে তা দিতে বাধ্যও করা যায় না। সেই কারণে যে সরকার মানুষের মন (চিন্তা) নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে, সে স্বভাবে দমনমূলক...।’ নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদের কথার গুরুত্ব আন্তর্জাতিক স্তরে সাংঘাতিক। তাই তাঁর শব্দে লাগাম পরানোর চেষ্টাও এক কথায় দমনমূলক।

সরিৎশেখর দাস নোনা চন্দনপুকুর, ব্যারাকপুর

এত দেরি কেন

শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের বক্তব্য স্কুলে পাশ-ফেল প্রথা ফিরিয়ে আনতে চায় কেন্দ্র, রাজ্যের মতও একই (‘পাশ-ফেল নিয়ে...’, ১২-৭)। প্রশ্ন হল, বিলম্ব কেন? অনেক আগেই তাঁরা করতে পারতেন। কেন্দ্র কি বাধা দিচ্ছিল? কিন্তু শিক্ষা যুগ্ম তালিকায় থাকার সুবাদে রাজ্য সরকারই এটা করতে পারে। সে ক্ষমতা না থাকলে তাঁরা কেন্দ্রের সঙ্গে তাঁরা লড়াইয়ে যেতে পারতেন। তা তো হয়নি। তবে, পার্থবাবুরা হয়তো সত্যিই চান পাশ-ফেল চালু হোক। হয়তো এখানে বাধা বেসরকারি স্কুলগুলি। তাদের ব্যবসা মার খায় এমন কোনও সিদ্ধান্ত তারা সহজে মেনে নিতে পারে না। তাদের রক্তচক্ষুই কি শেষ পর্যন্ত পার্থবাবুদের মনোবাঞ্ছা পূর্ণ করতে দিচ্ছে না? না কি পার্থবাবুরাই চান না জনগণ শিক্ষার আলো পেয়ে সচেতন হোক। কোনও স্বৈরতান্ত্রিক সরকারই তা চায় না। এ প্রসঙ্গে ভারতীয় নবজাগরণের পথিকৃৎ রাজা রামমোহন রায় বলেছিলেন, ‘স্বৈরতান্ত্রিক সরকারগুলি সর্বদাই এ কথা বোঝাতে চায় যে, জ্ঞানের প্রসার ঘটলে প্রতিষ্ঠিত প্রশাসনিক কর্তৃত্বটাই বিপন্ন হয়ে পড়বে। কারণ, তাঁরা জানেন যে, মানুষ যদি এক বার জ্ঞানের আলো পায়, তা হলে তারা উপলব্ধি করতে পারবে যে, ব্যাপক মানুষের সংঘশক্তি মুষ্টিমেয় ক্ষমতাধিকারীর চাপিয়ে দেওয়া জুলুমের জোয়ালটিকে উৎখাত করতে পারবে...।’

গৌরীশঙ্কর দাস সাঁজোয়াল, খড়্গপুর

তাবিজ-মাদুলি

কিছু ভ্রান্ত ধারণা ও সংস্কারের বেড়াজালে আকৃষ্ট হয়ে মানুষ তার সম্যক জ্ঞান হারিয়ে ফেলছে। কারণ কিছু অর্থপিপাসু ব্যক্তি ক্ষমতা ও স্বার্থ অটুট রাখতে মানুষের মনে ভয় ও ভ্রান্ত ধারণার বিষ ঢেলে মানসিক ভাবে দুর্বল করে রাখছেন। এঁরাই ওঝা, গুণিন, মোড়ল, তান্ত্রিক বা জ্যোতিষী। প্রত্যন্ত গ্রামে কেউ অসুস্থ হলে বা বিপদে পড়লেই আগে এঁদের কাছে ছুটে যান। এঁদের জলপড়া, তেলপড়া, তাবিজ, মাদুলিতে যেন অমরত্ব লাভ করা যায়! তাই জলে ডোবা শিশুকে জলের মধ্যে মাথায় নিয়ে নাচানাচি হয়, সাপে-কাটা রোগীর ওপর চলে ঝাড়ফুঁক। কোথাও আবার মোড়লের নির্দেশে গ্রামের বধূকে পিটিয়ে মারা হয় ডাইনি অপবাদে। আর, শহরের শিক্ষিত সমাজের জন্য রয়েছে কিছু অর্থলোভী জ্যোতিষী, তান্ত্রিক। বহু মানুষ ডাক্তারের চেম্বারে যাওয়ার চেয়ে জ্যোতিষীর চেম্বারে যাওয়া বেশি পছন্দ করেন। সরকারি উদ্যোগে দ্রুত বিভিন্ন সচেতনতামূলক বিজ্ঞাপন, প্রচার অভিযান চালিয়ে মানুষের এই ধরনের ভ্রান্ত বিশ্বাস দূর করা একান্ত প্রয়োজন।

মানব দাস বাসন্তী, দক্ষিণ ২৪ পরগনা

ভ্রম সংশোধন

‘ছাত্র ভর্তির টাকা নিয়ে জয়ার সামনেই গ্রেফতার’ (১৮-৭, পৃ ১) শীর্ষক খবরে মণীন্দ্রচন্দ্র কলেজের পড়ুয়া বলে এক ছাত্রীকে উল্লেখ করা হয়েছে। এই তথ্য ঠিক নয়। এই অনিচ্ছাকৃত ভুলের জন্য আমরা দুঃখিত এবং ক্ষমাপ্রার্থী।

চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা

সম্পাদক সমীপেষু,

৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট, কলকাতা-৭০০০০১।

ই-মেল: letters@abp.in

যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE