এত রক্ত কেন
আগামী ১৯ অক্টোবর কালীপুজো। এই পুজোতে বহু মানুষ কুসংস্কারাচ্ছন্ন হয়ে দেবীর উদ্দেশ্যে লক্ষ লক্ষ ছাগ বলি দেবেন। এখানে একটি প্রশ্ন, কোনও মা কি তাঁর সন্তানের রক্তের বিনিময়ে প্রসন্ন হতে পারেন? এই দৃশ্য দেখে অনেকে অসুস্থ হয়ে পড়েন, অনেকে মানসিক যন্ত্রণার শিকার হন। আবার এই দৃশ্য দেখে অনেক শিশু পশুদের প্রতি অমানবিক আচরণও করতে পারে। মহামান্য উচ্চ আদালতও প্রকাশ্যে পশুহত্যা নিষিদ্ধ করার কথা বলেছিলেন। কিন্তু আজ পর্যন্ত সেই আদেশ কেন কার্যকর হয়নি, জানতে ইচ্ছে করছে। আমরা কি মানুষ হয়ে এই নিরীহ পশুদের প্রতি একটু সদয় হতে পারি না?
রাধিকানাথ মল্লিক কলকাতা-৭
গণতন্ত্র?
‘টিকিট শুধু শাসক দলের বিধায়কদের’ (৮-১০) শীর্ষক সংবাদটি সরকারের দলতন্ত্র প্রীতিকে আবার উসকে দিল। যুব বিশ্বকাপ দেখার জন্য শাসক দলের বিধায়কদের প্রত্যেককে চারটি করে টিকিট দেওয়ার ব্যবস্থা হয়েছে। বিরোধী বিধায়কগণ রয়ে গেলেন ব্রাত্য। বিরোধীরা জেনে যাওয়ায় এবং সংবাদমাধ্যমে প্রচারিত হওয়ায় হয়তো সামাল দেওয়ার চেষ্টা করা হবে। কিন্তু সরকারের মনোভাবটা পরিষ্কার। অথচ প্রশাসনের কাছে সকল দলের জনপ্রতিনিধির সমান গুরুত্ব পাওয়া উচিত। কিন্তু বাস্তবে অনেক ক্ষেত্রেই তা হচ্ছে না।
ক্ষমতাসীন দলের সদস্যরা সরকারি প্রকল্পের জন্য শয়ে শয়ে বেনিফিশিয়ারি বেছে দিচ্ছেন। ত্রাণের ত্রিপল, জামাকাপড়, চাদর, কম্বল, শাড়ি, ধুতি-সহ নানা সামগ্রী পাচ্ছেন এলাকার জনগণের মধ্যে বিলি করার জন্য। অথচ বিরোধী দলের সদস্যরা কলকে পাচ্ছেন না। দুটো কারণ হতে পারে। হয় বিরোধীরা বেনিফিশিয়ারি বাছাই করতে পারবেন না, অথবা বিরোধীদের এলাকায় বেনিফিশিয়ারি নেই। কিন্তু বাস্তবে কোনওটিই নয়।
আগে বাম সরকারও বিরোধীদের হাতে থাকা গ্রাম পঞ্চায়েত এবং পঞ্চায়েত সমিতিগুলিকে ছলে-বলে-কৌশলে অকেজো করে রাখত। পৃথিবীর বৃহত্তম গণতন্ত্রে গণতান্ত্রিক ভাবে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের ক্ষমতা কেড়ে নিজেদের দলের জনপ্রতিনিধি বা দলীয় লোক দিয়ে উন্নয়নের কাজ করানো হত। জনগণ দেখেছেন, কিন্তু তখন আটকাতে পারেননি। কারণ সাহসে কুলোয়নি। বর্তমান সরকারও একই পথে হাঁটছে। বিরোধীরা কিছু জানে না, প্রশাসনে তাদের কোনও স্থান নেই— এমন মনোভাব তৈরি হয়েছে। ফল দেখা যাচ্ছে জেলাস্তরের প্রশাসনিক সভাগুলিতে। মাননীয় মুখ্যমন্ত্রী সরকারি টাকা খরচ করে প্রশাসনিক সভা করছেন, যেখানে বিরোধী এমএলএ, এমপি-দের স্থান নেই। এই মনোভাব ত্যাগ করে গণতন্ত্রের প্রতি উদারতা দেখানো উচিত। বিরোধীদেরও উচিত গঠনমূলক সমালোচনায় অংশ নেওয়া, যা সরকারকে ভাবতে বাধ্য করে।
কৃষ্ণা কারফা বিষ্ণুপুর, বাঁকুড়া
বিজ্ঞানে নেই
প্রতাপ রুদ্র’র (‘ব্রেকথ্রু’, সম্পাদক সমীপেষু, ৮-১০) বক্তব্যের সঙ্গে আমি আরও কিছু যোগ করতে চাই। আশপাশে যে সব বাঙালি দেখি, তাদের প্রতিবাদের ভাষা বা চিন্তার বিষয়গুলো বড় ঠুনকো। এই যে পাঁচটি বিষয়ে নোবেল পুরস্কারজয়ীদের নাম ঘোষিত হল, কোনও ভারতীয় বা বাঙালি আছেন? আছে কোনও ভারতীয় সংগঠন?
মাদার টেরেসা (১৯৭৯), দলাই লামা (১৯৮৯) শান্তির জন্য নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন। কিন্তু এঁরা কেউই ভারতীয় বংশোদ্ভূত ছিলেন না। চিকিত্সা বিজ্ঞান বা বিজ্ঞানের উপর কাজ করে ব্যাপক সাড়া ফেলেছেন ভারতীয়রা, সে উদাহরণ খুব কম বা প্রায় নেই বললেই চলে। স্বাধীনতার আগে ব্রিটিশ-ভারতে স্যর রোনাল্ড রস (১৯০২) ম্যালেরিয়ার কারণ ও তার প্রতিকারের জন্য নোবেল পুরস্কার পান। অথচ ডেঙ্গির কারণ জানা সত্ত্বেও একে দমন করা সম্ভব হচ্ছে না। সি ভি রমন নোবেল পুরস্কার পান পদার্থবিদ্যায় (১৯৩০)।
হর গোবিন্দ খোরানা (১৯৬৮, ইউএসএ); এস চন্দ্রশেখর (১৯৮৩, ইউএসএ); বেঙ্কটরমন রামকৃষ্ণন (২০০৯, ইউকে)— এঁরা প্রত্যেকে বিদেশে কাজ করে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন। স্বাধীন ভারতে গবেষণা করে বিজ্ঞান বা চিকিত্সা শাস্ত্রে কেউই নোবেল আনতে পারেননি। অথচ স্বাধীনতার পূর্বে বিজ্ঞানের প্রতি অগাধ আগ্রহ ছিল। এখনকার তুলনায় সুযোগসুবিধা কম ছিল, তবুও নিরলস পরিশ্রম ও একাগ্রতার দ্বারা ভারতীয় বিজ্ঞানীরা অনেক কাজ করে গেছেন।
পৃথিবী আজ বিপন্ন, একমাত্র রাজনীতির বাড়বাড়ন্ত। পরিবেশ দূষণ, জল সংকট, ভূগর্ভস্থ জল উত্তোলন, প্রাকৃতিক জলাশয়গুলি বোজানো, নদীখাত অগভীর হয়ে যাওয়া, নির্বিচারে অরণ্য নিধন— সব মিলিয়ে প্রকৃতিকে ধ্বংস করে দেওয়া হচ্ছে। প্রকৃতিও শোধ নিচ্ছে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের মাধ্যমে। এই সব বিষয় নিয়ে কারও মাথাব্যথা নেই।
বিজ্ঞানের চর্চা কি বাঙালির দ্বারা আর সম্ভব? রাজনীতির করাল বদন তা গ্রাস করেছে এবং কৃষ্ণগহ্বরে প্রেরণ করেছে।
অর্চনা ভট্টাচার্য ক্রুকেড লেন, চুঁচুড়া, হুগলি
ধর্মের নামে
সুব্রত পাল লিখেছেন, ‘বিজ্ঞান ও বেদান্ত বিবেকানন্দের তৃতীয় দৃষ্টির জ্যোতি ছিল’(‘সাফ কথাটি কী’, সম্পাদক সমীপেষু, ২-১০)। আরও বলেছেন, ‘শিকাগো বক্তব্যে তিনি ব্যাঙের গল্প বলে ধর্মীয় কূপমণ্ডূকতাকে উপহাস করেছেন, তেমনই তিনি মানব জাতির উন্নতির পাথেয় যে ধর্ম, সে কথাও বার বার স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন।’ আবার কিছু পরেই তিনি লিখেছেন, ‘ধর্ম বিবেকানন্দের মাতৃভূমিকে ভাগ করে দিয়েছে।’ আমার প্রশ্ন, ‘ধর্ম’ যদি মানব জাতির উন্নতির পাথেয় হয়, তা হলে বিবেকানন্দের মাতৃভূমিকে ‘ধর্ম’ ভাগ করে কী করে? তবে কি ‘ধর্ম’-র নামে দেশভাগ করাটা মানব জাতির অনুন্নতির মধ্যে পড়ে না?
কৃষ্ণ ঘোষ সুভাষপল্লি, খড়্গপুর
রামানন্দ
শিবাজীপ্রতিম বসুর ‘বড় বাঙালিদের জগতে’ শীর্ষক লেখাটি (৮-১০) পড়ে কিছু বলতে চাই। ১৮৮৩ খ্রিস্টাব্দে এন্ট্রান্স পরীক্ষায় চতুর্থ, এফ এ ১৮৮৫-এ চতুর্থ, ১৯৮৮-তে ইংরেজি অনার্সে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম, ১৮৯০-এ এম এ পরীক্ষায় চতুর্থ স্থানাধিকারী মানুষটি রামানন্দ চট্টোপাধ্যায়। ‘ইন্ডিয়ান মেসেঞ্জার’, ‘তত্ত্বকৌমুদি’, ‘ইন্ডিয়ান মিরর’ পত্রিকার লেখক রামানন্দের বাংলা ও ইংরেজি উভয় ভাষাতেই সমান ব্যুৎপত্তি ছিল। কলকাতার সিটি কলেজে অধ্যাপনার পাশাপাশি ১৮৯২ সালে প্রকাশিত হল রামানন্দ সম্পাদিত প্রথম পত্রিকা ‘দাসী’।
১৮৯৫ সালে তিনি যোগ দিলেন ইলাহাবাদের কায়স্থ পাঠশালার (কে পি কলেজ) অধ্যক্ষ পদে। ১৮৯৭-এ তাঁর সম্পাদনায় প্রকাশিত হয় ‘প্রদীপ’। ১৯০১-এর এপ্রিলে প্রকাশিত হল কলকাতার বাইরে এক সর্বাঙ্গসুন্দর মাসিক পত্রিকা ‘প্রবাসী’। রামেন্দ্রসুন্দর ত্রিবেদী লিখেছিলেন, ‘একালের অতি উচ্চদরের মাসিক পত্রিকারও বারো আনা পড়িয়া উঠিতে পারি না, প্রবাসীর ষোল আনাই পড়িয়াছি ও তৃপ্তি লাভ করিয়াছি’।
পরবর্তী সময়ে ইন্ডিয়ান প্রেসের চিন্তামণি ঘোষ এক জন প্রুফ রিডার ঠিক করে দেওয়ার দায়িত্ব দেন রামানন্দকে। তিনি নির্বাচন করেন চারুচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়কে। কলেজ ট্রাস্টিদের সঙ্গে মত পার্থক্যের জন্য ১৯০৬-এ পদত্যাগ করেন রামানন্দ। তখন ইন্ডিয়ান প্রেসের চিন্তামণি ঘোষ তাঁকে মাসিক ১০০০ টাকা পারিশ্রমিকে প্রেসের কর্মাধ্যক্ষ হিসেবে চেয়েছিলেন। স্বাধীনতা বিসর্জন দিতে চাইলেন না রামানন্দ। তখন চিন্তামণি ঘোষ ‘প্রবাসী’ ও ‘মডার্ন রিভিউ’ ছেপে দিতে লাগলেন। বললেন, ‘আপনার যখন হাতে টাকা আসিবে আমার ঋণ শোধ করিবেন। আমি আগে চাহিব না’।
নন্দগোপাল পাত্র সটিলাপুর, পূর্ব মেদিনীপুর
চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা
সম্পাদক সমীপেষু,
৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট, কলকাতা-৭০০০০১।
ই-মেল: letters@abp.in
যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy