Advertisement
১১ মে ২০২৪

সম্পাদক সমীপেষু

ছাত্রজীবন থেকেই আমি ওঁর গান শুনতে ভীষণ ভালবাসি। দুঃখের বিষয়, আজকের দিনে ও রকম দরদি কণ্ঠস্বর পাওয়া দুষ্কর

শেষ আপডেট: ১৯ অক্টোবর ২০১৭ ০০:০২
Share: Save:

মা তোর কত রঙ্গ...

আজও বেশ মনে পড়ে, কিশোর বয়সে পাড়ার কয়েক জন বন্ধু মিলে গভীর রাতে ঘুরে ঘুরে কালী প্রতিমা দর্শন করার কথা। তবে সেই সময় আজকের মতো এত কালীপুজো হত না। দেখতাম, অধিকাংশ পুজোয় পান্নালাল ভট্টাচার্যের জনপ্রিয় শ্যামাসংগীতের রেকর্ডগুলো বাজছে। মনটা কেমন আপ্লুত হয়ে উঠত! আজ সে সব স্মৃতি। আগের তুলনায় পুজোর সংখ্যা বেড়েছে ঠিকই, কিন্তু তেমন ভাবে আর শ্যামাসংগীত শোনা যায় না।

সেই সময়ে শিল্পী পান্নালাল ভট্টাচার্য কী দারুণ গানগুলো গেয়েছিলেন! কালো মেয়ের পায়ের তলায়, মা তোর কত রঙ্গ দেখব বল, আমার সাধ না মিটিল, সদানন্দময়ী কালী কিংবা মায়ের পায়ে জবা হয়ে ওঠ না ফুটে মন— এই সব গান এখনও যখন কোথাও শুনি, আর কিছু না হোক, মনটা ক্ষণেকের জন্য স্নিগ্ধ হয়ে যায়।

ছাত্রজীবন থেকেই আমি ওঁর গান শুনতে ভীষণ ভালবাসি। দুঃখের বিষয়, আজকের দিনে ও রকম দরদি কণ্ঠস্বর পাওয়া দুষ্কর। যেমন সুন্দর গায়নশৈলী, তেমনই কথা ও সুর। অমাবস্যার রাতে মা যেন গান শুনে জেগে উঠতেন। বর্তমানে অনেক নবীন শিল্পীদের কণ্ঠে শ্যামাসংগীত শুনি বটে, তবে পান্নালালবাবুর মতো সেই মধুমাখা মিষ্টি সুর আর কানে আসে না।

সনৎ বন্দ্যোপাধ্যায় শ্রীরামপুর, হুগলি

উৎসবের সুরা

সম্পাদকীয়তে শারদীয়া দুর্গোৎসবের বাড়াবাড়ি ঠিক ভাবেই তুলে ধরা হয়েছে (‘অধিকন্তু দোষায়’, ২-১০)। আর সেটা যে গর্হিত-তম পর্যায়ে চলে গেছে তা চোখ, মন খোলা রাখলেই ধরা পড়বে।

বিশেষ করে ‘সুরাপান’ বিগত কয়েক বছরে যে ভাবে বেড়ে চলেছে, তা সমাজের কাছে গভীর উদ্বেগের বিষয়। পাশের রাজ্য বিহারে ২০১৬ সালের এপ্রিল থেকে মদ বিক্রি, মজুত ও পান করা দণ্ডনীয় অপরাধ। আর এই বাংলায় মদের বিক্রির পরিমাণ বাড়াতে এবং সেই সঙ্গে রাজস্ব বাড়াতে কত না অভিনব ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে! আগে বিলিতি মদের দোকানে বিলিতি মদ পাওয়া যেত, দেশি মদের দোকানে দেশি। এখন সব দোকানেই সব রকম মদ পাওয়া যায়। মদের দোকান এখন পাড়ায় পাড়ায়।

আগে বছরে ১৪ দিন দোকান বন্ধ থাকত। এখন সেটা চার দিনে নেমে এসেছে। প্রকাশ্য স্থানে মদ্যপান বেড়ে গেছে। এর বিরোধিতা করতে গিয়ে অনেককেই শারীরিক ভাবে নিগৃহীত হতে হচ্ছে, মাঝে মাঝে খুনও করা হচ্ছে। মদ্যপান করে পথেঘাটে শ্লীলতাহানির ঘটনাও বাড়ছে।

বিহার সরকারের এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, বিগত এক বছরে মদ্যপান বন্ধ থাকার জন্য রাজস্ব ঘাটতি ৫০০০ কোটি টাকা হলেও, মানুষের হাতে ১০০০০ কোটি টাকা এসেছে, যা দিয়ে সেলাই মেশিন বিক্রি ১৯% বেড়েছে, রেডিমেড পোশাক বিক্রি বেড়েছে ৪৪%, দুধ বিক্রি ১১%। আর অন্য দিকে, রাস্তায় দুর্ঘটনা কমেছে ৫৫%, খুন ২৪%, লুট ১৬% ইত্যাদি। যে গুটিকতক রাজ্যে মদ্যপান আইন করে বন্ধ আছে, সেখানে সামাজিক, পারিবারিক শান্তিশৃঙ্খলা কতটা উন্নত হয়েছে, পরিবারে শিক্ষা, স্বাস্থ্যে, খাদ্যে কতটা অর্থ ব্যয় বেড়েছে, সে ব্যাপারে কোনও নিরপেক্ষ সংস্থা দিয়ে সমীক্ষা করা হলে এবং তার ফল সমাজের পক্ষে সদর্থক হলে মদ্যপানের বিরুদ্ধে প্রচার জোরদার হত। কিন্তু আমাদের দেশে এ সব নিয়ে কোনও নিরপেক্ষ সমীক্ষা হয় না।

মদ্যপান যে স্বাস্থ্যের পক্ষে এবং সেই সঙ্গে পরিবার ও সমাজের পক্ষে ক্ষতিকর, তা সিনেমা শুরুর আগের সতর্কবার্তায় দেখানো হয়। এবং এটা মাননীয় শীর্ষ আদালতের নির্দেশেই করা হয়েছে। বাইক আরোহীদের হেলমেট পরার সচেতনতা বাড়াতে নানা গণ উদ্যোগ নিতে দেখা গেছে, গান রচনা হয়েছে। এর জন্য অবশ্যই সাধুবাদ প্রাপ্য। মদ্যপানও তো ক্ষতিকারক, মৃত্যুও হয়। তা হলে এ ব্যাপারে সরকারের সে রকম বহুল প্রচার নেই কেন? অবশ্য, চোলাই মদ না খাওয়ার প্রচার হয়।

২০০৫ সালে বিহার সরকার রাজস্ব বাড়াতে প্রতিটি পঞ্চায়েতে, এমনকী গ্রামেও মদের দোকান খোলার অনুমতি দিয়েছিল। ফল ভাল হয়নি। পারিবারিক, সামাজিক অশান্তি এতটাই বেড়ে গিয়েছিল যে, মহিলারা মদের দোকান বন্ধে লাগাতার আন্দোলন চালিয়েছিলেন। মদ বিক্রি বন্ধ হলে সবচেয়ে উপকৃত হবেন মহিলা এবং শিশুরা।

রাজস্ব বাড়ানোর জন্য মদ বিক্রির পরিমাণ বাড়ানোর মরিয়া চেষ্টা কখনও সমর্থন করা যায় না এবং সেটা সমাজের মঙ্গলের জন্যই। একটি জনস্বার্থ মামলার পরিপ্রেক্ষিতে সুপ্রিম কোর্ট জাতীয় সড়কের ৫০০ মিটারের মধ্যে মদের দোকান বন্ধের নির্দেশ দিয়েছিল। কিন্তু রাজ্য সরকারগুলি কয়েক দিনের মধ্যেই জাতীয় সড়কের সংজ্ঞাটাই পরিবর্তন করে দিল, শুধুমাত্র রাজস্ব হারানোর হাত থেকে বাঁচতে। মানুষের জীবনের কথা ভাবাটা সেখানে অবান্তর!

অসিতকুমার রায় ভদ্রেশ্বর, হুগলি

নম্বর নেই

গত ৫ অক্টোবর দিঘা থেকে সাউথ বেঙ্গল স্টেট ট্রান্সপোর্ট কর্পোরেশন-এর বারাসতগামী এসি বাসে চড়েছিলাম। বাসের নম্বর ছিল ডব্লিউ বি ৩৯এ ৯৫৫৪। বাসে উঠে সিট নম্বর খুঁজতে গিয়ে অবাক হয়ে গেলাম। কোনও সিটেই নম্বর লেখা নেই। শুধু একদম পিছনের সিটে ৩৭ থেকে ৪০ নম্বর লেখাটা পড়া যাচ্ছে। বাসের লোকদের জিজ্ঞাসা করলে তারা যা উত্তর দিল, তাতে পিলে চমকে গেল। বলল, পিছনের সিটের যে নম্বরটা লেখা আছে, সেখান থেকে ব্যাক ক্যালকুলেশন করে বসে পড়ুন। আমি প্রতিবাদ করায় বলল যে, কর্তৃপক্ষ সব জানে এবং রোজ নাকি এ ভাবেই যাত্রীরা যাতায়াত করেন। পরিবহণ মন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।

সমীরবরণ সাহা কলকাতা-৮১

মুড়ি-মিছরি

গল্পটা এ রকম— কোনও এক গ্রামে এক অশিক্ষিত বয়স্ক লোক বাস করতেন, যিনি আবার চোখে কম দেখেন। যাঁর কাছে বাইরের দুনিয়া বলতে তাঁর বাড়ির উঠোন। এই লোকটি সব সময় বাড়ির বারান্দায় বসে থাকেন আর বাড়ির উঠোন দিয়ে যাওয়া যে কোনও লোকের কাছ থেকে বাইরের খবর নেওয়ার চেষ্টা করেন। এক দিন পাড়ার স্কুলের এক মাস্টারমশাই বয়স্ক লোকটির বাড়ির উঠোন দিয়ে যাওয়ার সময় অভ্যাসবশত বয়স্ক লোকটি জিজ্ঞাসা করেন, ‘কে যায়?’ মাস্টারমশাই বললেন, ‘আজ্ঞে আমি মাস্টার।’ তখন বয়স্ক লোকটি বললেন, ‘ও, আমাগো মাস্টার! আমি ভাবলাম কোন ভদ্দরনোক (ভদ্রলোক) যায়।’

এটি গল্প হলেও আজ ভয়ংকর বাস্তবের মুখোমুখি স্কুল শিক্ষকরা। যাঁরা সমাজ তৈরির কারিগর, আজ তাঁরাই সমাজে অবহেলিত। দীর্ঘ দিন ধরেই সামাজিক সম্মান কমতে কমতে আজ এইট পাশ সিভিক ভলান্টিয়ারদের সঙ্গে ভারতবর্ষের সর্বোচ্চ ডিগ্রিধারী মাস্টারমশাইদের অবস্থান একই লাইনে। হসপিটালে স্বাস্থ্যসাথীর কার্ড নিয়ে আশা কর্মী, সিভিক ভলান্টিয়ার, পুরসভার অস্থায়ী কর্মীদের সঙ্গে একই লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন মাস্টারমশাইরা। যখন মুড়ি ও মিছরি একই দামে বিক্রি হয়, তখন গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের পক্ষে তা ভাল বার্তা বহন করে না।

জ্যোতিপ্রকাশ ঘোষ শেখ পাড়া লেন, হাওড়া

ভ্রম সংশোধন

‘ধর্ম-তাস’ শীর্ষক চিঠিটিতে লেখা হয়েছে ‘...প্রধানমন্ত্রী-পদপ্রার্থী মোদীও বার বার রাজ্যে এসে হিন্দু শরণার্থীদের জন্য সীমান্ত বন্ধ করার কথা বলেছিলেন’ (সম্পাদক সমীপেষু, ১৫-১০)। এখানে শব্দটি ‘বন্ধ’ নয়, ‘উন্মুক্ত’ হবে। অনিচ্ছাকৃত এই ভুলের জন্য আমরা দুঃখিত ও ক্ষমাপ্রার্থী।

চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা

সম্পাদক সমীপেষু,

৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট, কলকাতা-৭০০০০১।

ই-মেল: letters@abp.in

যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE