নোটবন্দি: কিছু কথা
এক জন প্রবীণ নাগরিক হিসেবে নোটবাতিল বিষয়ে আমার কিছু মতামত জানালাম।
১) নোট বদল করতে গিয়ে আমজনতাকে অনেক দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে। আগাম পরিকল্পনা করে যদি বিকল্প নোটের ব্যবস্থা রাখা থাকত, তা হলে এই হেনস্তা হত না। কেন কেন্দ্রীয় সরকার তড়িঘড়ি এই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, তা এখনও পর্যন্ত স্পষ্ট জানা যায়নি।
২) রিজার্ভ ব্যাংক জানিয়েছে, যত নোট বাতিল হয়েছে, তার ৯৯ শতাংশই বদল করে নতুন নোট বাজারে ছাড়া হয়েছে। যদি ৫০০ ও ১০০০ টাকায় জমা রাখা ‘কালো টাকা’ সাদা টাকায় পরিণত হয়ে থাকে, তা হলে সেই ব্যর্থতার দায় তো কেন্দ্রীয় সরকারকেই নিতে হবে।
৩) মিডিয়ার দৌলতে জানতে পেরেছি, আয়কর দফতর ২.৯ লক্ষ কোটি টাকার সন্দেহজনক ‘কালা ধন’-এর সন্ধান পেয়েছে। খুবই ভাল খবর। এর মধ্যে কত কোটি টাকা কত বছর পর সরকারি কোষাগারে জমা পড়বে, তা কে বলতে পারে? বিদেশে গচ্ছিত কালো টাকার কত শতাংশ গত ৭০ বছরে সরকারি কোষাগারে জমা পড়েছে, তার ঠিক তথ্য কি মিডিয়ার জানা আছে?
৪) সরকার কিছু দিন আগে কালো টাকার ওপর কিছু জরিমানা করে সাদা করার সুযোগ করে দিয়েছিল। এটা কি ঠিক পদক্ষেপ ছিল? আমি মনে করি, আয়কর আইন পরিবর্তন করে কালো টাকার পুরোটাই সরকার বাজেয়াপ্ত করুক। আয়কর রিটার্ন-কে ‘অ্যাফিডেভিট’ হিসেবে মান্যতা দিলে কোনও ব্যক্তির কাছে যদি তাঁর ঘোষিত স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তির বাইরে কিছু পাওয়া যায়, তা হলে সরকার সেই অঘোষিত সম্পত্তির পুরোটাই বাজেয়াপ্ত করতে পারবে না কেন? অঘোষিত সম্পত্তি খুঁজে বার করতে সরকারের প্রচুর অর্থ ব্যয় হয়, তাই সরকার উপযুক্ত আইন করে এই খরচের পুরোটাই দোষী ব্যক্তির থেকে আদায় করুক।
৫) সরকারের কি জানা নেই যে, লক্ষ লক্ষ ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ও বিভিন্ন স্বাধীন পেশায় নিযুক্ত ব্যক্তিদের অনেকেই ঠিকমত আয় দেখান না? অথচ চাকরিজীবী কোনও ব্যক্তি যদি ২.৫ লক্ষ টাকার ওপর আয় করেন, তাঁর আয়কর ‘উৎসমূল’ থেকে কেটে নেওয়া হয়। যখন সেই ব্যক্তি নিজের ও পরিবারের জন্য চিকিৎসা খাতে অর্থ ব্যয় করতে বাধ্য হন, সেই ব্যক্তিকে কি আয়কর আইনে কোনও রকম ছাড় দেওয়া হয়? এই বৈষম্য সহজেই দূর করা যায়, যদি সরকারের রাজনৈতিক সদিচ্ছা ও সকল নাগরিকের প্রতি সমদৃষ্টি থাকে।
৬) প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী রাজীব গাঁধী বলেছিলেন, সরকার এক টাকা ব্যয় করলে ১৫ পয়সা ঠিক ব্যক্তির কাছে পৌঁছয়। তা হলে টাকা প্রতি ৮৫ পয়সা কালো টাকায় পরিণত হয়৷ সরকার বিভিন্ন প্রকল্পের পিছনে যে বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় করে, সেখানেও দুর্নীতির শেষ নেই। উদাহরণ, বফর্স থেকে অগুস্তা হেলিকপ্টার৷ বর্তমান সরকার এ ব্যাপারে কিছু পদক্ষেপ করেছে ঠিকই, কিন্তু যত দিন না সমস্ত লেনদেন পরিপূর্ণ স্বচ্ছ ভাবে হচ্ছে, তত দিন অবধি বদনাম সরকারের পিছু ছাড়বে না।
সরোজ মুখোপাধ্যায় বাবুবাগান লেন, কলকাতা
অনুকরণ
রাজ্য সিপিএম বর্তমান রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে ইতিহাস মুছে ফেলার অভিযোগ তুলেছে। অভিযোগ, অনূর্ধ্ব-১৭ বিশ্বকাপের জন্য যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গন নব কলেবরে সেজে ওঠার পরে স্টেডিয়াম থেকে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসুর নামের ফলকটি সরিয়ে ফেলা হয়েছে। তার জায়গায় বসেছে ‘স্টেডিয়ামের নব কলেবর উদ্বোধন করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়’ লেখা ফলক। প্রাসঙ্গিক প্রতিবেদনে সংবাদদাতা বলেছেন, বাম জমানায় তৎকালীন ক্রীড়ামন্ত্রী সুভাষ চক্রবর্তীর উদ্যোগে ‘যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গন’ তৈরি হয়েছিল। তথ্যটি অসম্পূর্ণ।
বিধাননগর, তথা সল্ট লেক স্টেডিয়াম গড়ার পরিকল্পনাটি ছিল প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী সিদ্ধার্থশংকর রায়ের। ‘নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়াম’ গড়ার কাজ শেষ করার পর তিনি ওই কাজে হাত দেন; স্টেডিয়ামের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করে স্টেডিয়াম নির্মাণের কাজও শুরু করেন। কিন্তু কাজটি শেষ করার অবকাশ তিনি পাননি। পরবর্তী বামফ্রন্ট সরকারের ক্রীড়ামন্ত্রী সুভাষ চক্রবর্তী সিদ্ধার্থশংকর রায়ের পরিকল্পিত ওই স্টেডিয়ামের সার্থক রূপায়ণ করেন। কিন্তু সিদ্ধার্থশংকর রায়ের নামাঙ্কিত ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের ফলকটি আজ আর দেখতে পাওয়া যায় না। সুতরাং, বর্তমান সরকার যদি জ্যোতি বসুর নামের ফলক সরিয়ে ফেলে থাকে, তা হলে তো তারা পূর্বসূরি বামফ্রন্ট সরকারকেই অনুসরণ করেছে।
বিমলেন্দু ঘোষ কলকাতা-৬০
পরিবেশে ব্রেকথ্রু
প্রতাপ রুদ্রর ‘ব্রেকথ্রু’ শীর্ষক (সম্পাদক সমীপেষু, ৮-১০) চিঠি প্রসঙ্গে কিছু বিষয় উত্থাপন করতে চাই। গত ৯ অগস্ট ঐতিহাসিক ‘মার্চ ফর সায়েন্স’-এ দেশের বিজ্ঞানী সমাজ, শিক্ষক সমাজ, ছাত্র, গবেষক এবং বিজ্ঞান অনুরাগী মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত যোগদান ভারতের ইতিহাসে এক নতুন ঘটনা, সন্দেহ নেই। ‘বিজ্ঞানীর প্রতিপক্ষ’ (১২-০৮) শীর্ষক সম্পাদকীয়তে এ বিষয়ে বলা হয়েছে। বিজ্ঞানকে রক্ষার জন্য, বিজ্ঞানের মহৎ উদ্দেশ্যকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য বিশ্বের যে কোনও প্রান্তের ছোট, সামান্য উদ্যোগ আমাদের কাছে অনুপ্রেরণার। তাই ২২ এপ্রিল বসুন্ধরা দিবসে বিশ্বের ৬০০টি শহরে অনুষ্ঠিত ‘মার্চ ফর সায়েন্স’-এর সঙ্গে দক্ষিণ ভারতে অনুষ্ঠিত পদযাত্রা কোনও ভাবেই ম্লান হয়ে যায়নি। ‘মার্চ ফর সায়েন্স’ ছিল ভারতীয় বিজ্ঞান ও বিজ্ঞানীদের নানা সমস্যাকে সামনে তুলে এনে ঐক্যবদ্ধ ভাবে সমাধান করার প্রয়াস ও প্রথম পদক্ষেপ। তাই এটিকে ভারতীয় বিজ্ঞানে নেমে আসা ‘অন্ধকার’ দূর করার ‘ব্রেকথ্রু’ উদ্যোগ বলা যায়।
১৯৯৫ সালে ‘ব্রেকথ্রু সায়েন্স সোসাইটি’ বিজ্ঞান সংগঠনের জন্ম হয়, আর ১৯৪৮ সাল থেকে ইংরেজি জার্নাল ‘ব্রেকথ্রু’ প্রকাশিত হয়ে আসছে। ‘ব্রেকথ্রু’ বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরিবেশ রক্ষার আন্দোলনে শামিল হয়েছে এবং কিছু নতুন বিষয়ও আন্দোলনের দাবিতে সংযোজন করেছে। যেমন, আর্সেনিক সমস্যা। সরকারি সাহায্য ছাড়াই এবং ক্ষমতাসীন দলের হুমকির মুখে দাঁড়িয়ে গ্রামেগঞ্জে ঘুরে সংগঠনের স্বেচ্ছাসেবকেরা প্রায় কুড়ি হাজার নলকূপের জল পরীক্ষা করেছেন। এই আন্দোলনেরই ফলশ্রুতিতে বিখ্যাত চিকিৎসক প্রয়াত ডা. কে সি সাহা-র নেতৃত্বে ‘সারা বাংলা আর্সেনিক দূষণ প্রতিরোধ কমিটি’ তৈরি হয়। আন্দোলনের চাপে তৎকালীন সরকার সমস্যার কথা স্বীকার করতে এবং কিছু পদক্ষেপ করতে বাধ্য হয়।
জৈব বৈচিত্র, জৈব সম্পদে ভরপুর এবং প্রাকৃতিক ভাবে অত্যন্ত সংবেদনশীল এবং স্পর্শকাতর এলাকা সুন্দরবনে পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে ব্রেকথ্রু সায়েন্স সোসাইটি শামিল হয় এবং আন্দোলনের চাপেই তৎকালীন কেন্দ্রীয় সরকার সেই পরিকল্পনা বাতিল করতে বাধ্য হয়েছিল। আজও পূর্ব মেদিনীপুর জেলার হরিপুরে পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের বিরুদ্ধে আন্দোলন এই সোসাইটির নেতৃত্বেই পরিচালিত হচ্ছে। ১৯৮৭ সালে ওডিশার বালিয়াপালে ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ কেন্দ্র নির্মাণের বিরুদ্ধে প্রয়াত বিজ্ঞানী সুশীলকুমার মুখোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে আন্দোলন গড়ে তুলেছিল এই সোসাইটি। সার্ন গবেষণাকেন্দ্রে হিগস বোসন কণা এবং লাইগো ডিটেক্টর-এ মহাকর্ষ তরঙ্গ আবিষ্কারের পর ব্রেকথ্রু সায়েন্স সোসাইটি ভারতের প্রথম বিজ্ঞান সংগঠন যে এর সঙ্গে যুক্ত ভারতীয় বিজ্ঞানীদের সংবর্ধনা দেয়।
এই সোসাইটি মনে করে, আধুনিক বিজ্ঞানের সঙ্গে তাল মিলিয়ে, হাইপোথেসিস নির্মাণ এবং বস্তুনিষ্ঠ ভাবে পরীক্ষানিরীক্ষার মাধ্যমে তার যাচাইয়ের মাধ্যমেই আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের উন্নতি সম্ভব। এ বিষয়ে কোনও রকম ঐতিহ্যের মোহ বা আকর্ষণ থাকা উচিত নয়। তাই সকল প্যাথির চিকিৎসকদের সম্মিলিত হয়ে ব্যক্তিগত বিশ্বাস দূরে সরিয়ে বিজ্ঞান প্রদর্শিত পথে চিকিৎসা বিজ্ঞানকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া প্রয়োজন।
নীলেশ মাইতি কলকাতা-১৪
চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা
সম্পাদক সমীপেষু,
৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট, কলকাতা-৭০০০০১।
ই-মেল: letters@abp.in
যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy