Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

সম্পাদক সমীপেষু

উত্তর কলকাতার গলি থেকে পুণের এফটিআইআই থেকে পাশ করে প্রথম ছবি ‘মৃগয়া’-র জন্য জাতীয় পুরস্কার পাওয়ার পরও চরম দারিদ্রের সঙ্গে লড়াই করে হিন্দি ছবির সুপারস্টার হওয়া মিঠুন চক্রবর্তী?

স্বজোরে: ‘কলঙ্কিনী কঙ্কাবতী’ ছবির একটি দৃশ্যে উত্তমকুমার, রবীন বন্দ্যোপাধ্যায় এবং মিঠুন চক্রবর্তী (বাঁ দিক থেকে)

স্বজোরে: ‘কলঙ্কিনী কঙ্কাবতী’ ছবির একটি দৃশ্যে উত্তমকুমার, রবীন বন্দ্যোপাধ্যায় এবং মিঠুন চক্রবর্তী (বাঁ দিক থেকে)

শেষ আপডেট: ১৫ নভেম্বর ২০১৭ ০০:০০
Share: Save:

আরও অনেকেই

‘...অমিতাভ বচ্চনকে বাদ দিলে শাহরুখ খান একমাত্র ব্যক্তিত্ব ইন্ডাস্ট্রিতে যাঁর খুঁটির জোর ছিল না...’ (‘শাহ-জাহান’, আনন্দ প্লাস, ২-১১)— কথাটা পড়ে কিঞ্চিৎ ব্যথিত হলাম। কোনও খুঁটির জোর ছাড়াই সম্পূর্ণ নিজের দক্ষতায় চলচ্চিত্রপ্রেমীর কাছে বিরল উদাহরণ হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন যে নায়করা, তেমন উদাহরণ অনেক আছে। আমি এমনই কয়েক জনের কথা উল্লেখ করছি, যাঁদের ছাড়া ভারতীয় ছবি অপূর্ণ থেকে যায়। যেমন, ইউসুফ খান তথা দিলীপকুমার, বা পঞ্জাবের প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে স্বপ্ননগরী বোম্বাই (তৎকালীন) গিয়ে রুপোলি পরদায় ঝড় তোলা ধর্মেন্দ্রর পরিবারের কেউই আগে থেকে ছবির জগতের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না। ‘হিন্দি ছবির প্রথম সুপারস্টার’ রাজেশ খন্নাও কিন্তু ‘নেপোটিজম’-এর ‘প্রোডাক্ট’ নন। কিংবা, উত্তর কলকাতার গলি থেকে পুণের এফটিআইআই থেকে পাশ করে প্রথম ছবি ‘মৃগয়া’-র জন্য জাতীয় পুরস্কার পাওয়ার পরও চরম দারিদ্রের সঙ্গে লড়াই করে হিন্দি ছবির সুপারস্টার হওয়া মিঠুন চক্রবর্তী? তাঁরও তো পরিবারের কেউই চলচ্চিত্রে কাজ করেননি।

আর শুধু হিন্দি ছবির নায়কদের কথাই বা কেন বলব? মহানায়ক উত্তমকুমার, গোড়ার দিকে ফিল্মে ব্যর্থতার জন্য যাঁর নামকরণ করা হয়েছিল ‘ফ্লপ মাস্টার জেনারেল’, তিনিও তো নিজের অসামান্য প্রতিভাবলেই মহানায়ক হয়েছিলেন। সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য।

সেই কারণেই বলছি, ‘...অমিতাভ বচ্চনকে বাদ দিলে শাহরুখ খান একমাত্র ব্যক্তিত্ব ইন্ডাস্ট্রিতে যাঁর খুঁটির জোর ছিল না...’ উদাহরণ অসম্পূর্ণ নয় কি?

শঙ্খশুভ্র চট্টোপাধ্যায় ঢাকুরিয়া, কলকাতা

উন্নয়ন কী নয়

ব্যক্তি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আপসহীন সংগ্রামী মানসিকতা, অনাড়ম্বর জীবনযাপন, সাধারণ মানুষের প্রতি সহানুভূতি, সীমিত সাধ্যের মধ্যেও রাজ্যের উন্নয়নের জন্য নিরলস লড়াই ইত্যাদি গুণের জন্য আমি তাঁর প্রতি শ্রদ্ধাশীল (‘বিশ্বকাপে চ্যালেঞ্জ জিতলে...’, দেবাশিস ভট্টাচার্য, ৩-১১)। কিন্তু ঝাঁ চকচকে যুবভারতী স্টেডিয়ামে দিনের পর দিন ৬৬০০০ দর্শক যুব বিশ্বকাপ দেখার জন্য মাঠ ভর্তি করেছে, আর ফিফার অকুণ্ঠ প্রশংসা অর্জন করেছে কলকাতা— এটা কিন্তু ইতিহাসের নিরপেক্ষ দৃষ্টিতে উন্নয়নের মাপকাঠি নয়। এর আগে আমরা বহু বার ইডেনে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ম্যাচে এর চেয়ে অনেক বেশি দর্শক সমাগম দেখেছি, যুবভারতী স্টেডিয়ামেও আশি হাজার, এক লক্ষ দর্শক সমাগম দেখেছি। স্টেডিয়ামে দর্শক সমাগম দিয়ে উন্নয়ন মাপা যায় না।

নিউটাউনের ইকো পার্ক আমাদের চোখ ও হৃদয়কে তৃপ্ত করে ঠিকই, কিন্তু কলকাতা ও পার্শ্ববর্তী বহু এলাকায় অসংখ্য ঝুপড়ি, নোংরা বস্তি, আবর্জনার স্তূপ, দূষিত জঞ্জাল ভর্তি জলাশয়, নোংরা নালা, মফস্সল ও প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে এবড়োখেবড়ো রাস্তাঘাট কি আমাদের চোখ ও হৃদয়কে সমান ভাবেই পীড়িত করে না? কলকাতার কিছু পার্কের সবুজায়ন, আলোকমালায় সজ্জিত কিছু উদ্যান নির্মাণ যদি উন্নয়নের মাপকাঠি হয়, তা হলে নির্বিচারে বৃক্ষচ্ছেদন, জলাশয় ভরাট করে বহুতল নির্মাণ, বৃক্ষরোপণের স্বল্পতা, হাসপাতালের মেঝেতে অসংখ্য রোগীর শুয়ে থাকা, একটামাত্র বেডে একাধিক রোগীর অবস্থান, দালালের দৌরাত্ম্য, তোলাবাজি— এগুলোও কি সমভাবে অনুন্নয়নের সূচক নয়?

রাজ্যের অসংখ্য ক্লাব লক্ষাধিক করে টাকা পেয়েছে, কিন্তু এই কোটি কোটি টাকা খরচ করে কি আমাদের রাজ্যে খেলাধূলার সামগ্রিক মানের সে রকম উন্নতি হয়েছে? না। কন্যাশ্রী বা যুবশ্রী প্রকল্পের মাধ্যমে অসংখ্য দরিদ্র ছেলেমেয়ে শিক্ষার সুযোগ পেয়েছে, কিন্তু সেই সব ছেলেমেয়েরা সবাই কি মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক বা স্নাতক স্তরের গণ্ডি পেরোতে পেরেছে? না। কিংবা তারা পেরে থাকলেও শিক্ষান্তে কি চাকরি পেয়েছে? না। সাইকেল বিতরণের জন্য অনেক ছেলেমেয়ে বাড়ি থেকে বহু দূরের স্কুলে সহজে যাতায়াত করতে পেরেছে, কিন্তু তারা কি সবাই মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক বা স্নাতক স্তরের গণ্ডি পেরোতে পেরেছে? না। খেলা-মেলা-উৎসব ইত্যাদির মাধ্যমে মানুষ একটা সাময়িক আনন্দ পেতে পারে। কিন্তু এগুলো আর্থ-সামাজিক সমস্যা ও সংকটের স্থায়ী সমাধান হতে পারে না, যেমন পারে না কন্যাশ্রী বা যুবশ্রী প্রকল্প। অনুদান অবশ্যই প্রয়োজন, সেটা সমস্যার তাৎক্ষণিক সমাধান হতে পারে, কিন্তু দীর্ঘমেয়াদি সমাধান হতে পারে কি? না।

দেবাশিসবাবু লিখছেন, মমতার দূরদৃষ্টি আছে বলেই তিনি এত দূর এগোতে পেরেছেন এবং কলকাতায় বিশ্বকাপের আয়োজনে তিনি যেমন চ্যালেঞ্জ নিয়ে জিতেছেন, ডেঙ্গিতেও চ্যালেঞ্জ নিয়ে জিততে পারেন। হয়তো পারেন। ব্যক্তির জয় বড় কথা নয়, বড় কথা গোটা রাজ্যের সত্যিকারের সামগ্রিক অর্থনৈতিক উন্নয়ন। ইতিহাস বলে, অন্তর্দৃষ্টি, বৈজ্ঞানিক পরিকল্পনা, নিরাসক্ত নিরপেক্ষ বিচারবোধ, সকলের মতামত শুনে ও জেনে গ্রহণ ও বর্জনের মধ্য দিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া, ইতিহাস ও সমাজবিজ্ঞানের নিরন্তর পাঠ এবং যুগোপযোগী প্রয়োগ ছাড়া শুধু রাজনৈতিক দূরদৃষ্টি দিয়ে পূর্ববর্তী শাসকের অপশাসনকে দূর করা যায়, কিন্তু দীর্ঘমেয়াদি আর্থ-সামাজিক-সাংস্কৃতিক উন্নয়ন করা যায় না।

পাহাড় হাসছে, জঙ্গল হাসছে। হয়তো হেসেছে অনেক আশায়, কিন্তু শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা যে ভাবে বেড়ে চলেছে, তাতে হয়তো মানুষ আর হাসবে না। সে দিনটা যেন আমাদের দেখতে না হয়।

দেবব্রত ঘোষ কলকাতা-১৫৩

শব্দদানব

কালীপূজা সেই কবে শেষ হয়েছে, কিন্তু তারস্বরে মাইক কিংবা সাউন্ডবক্স বাজানো বন্ধ হয়নি। আইন অনুযায়ী, রাত দশটার পর মাইক বা সাউন্ডবক্স বাজানো নিষিদ্ধ। রাত দশটা পর্যন্ত বাজালেও তা নির্দিষ্ট শব্দসীমা মেনে বাজানো উচিত। কিন্তু সর্বত্র তা মানা হয় না। বাধ্য হয়ে বহু মানুষকে শব্দদানবের অত্যাচার সহ্য করতে হয়। প্রতিবাদ যদি কেউ করেন, তাঁকে প্রত্যাঘাতের জন্য তৈরি থাকতে হয়। জীবন বাজি রেখে তারস্বরে মাইক বা সাউন্ডবক্স বাজানো আর শব্দবাজি ফাটানোর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নামতে হয়।

শব্দসীমা লঙ্ঘন করে যারা, ক্ষতি কি তাদের নিজেদেরও হয় না? অন্যের সঙ্গে তাদেরও যে চরম ক্ষতি হয়, তারা আর কবে বুঝবে? কালীপুজোর সাত-আট দিন পর এক জনবহুল রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় দেখলাম রাস্তার পাশে আটটি সাউন্ডবক্সে বেজে চলেছে বিকট শব্দে গান। তার তালে কতকগুলি ছোট ছেলে নাচছে। জায়গাটা পেরিয়ে যাওয়ার সময় বুকে বিকট শব্দের এক ধাক্কা অনুভব করলাম। ভাবলাম এই রাস্তা দিয়ে যাওয়া প্রত্যেক মানুষকেই তো এই শব্দদানবের আঘাত সহ্য করতে হচ্ছে। বিকট শব্দগানে মত্ত হয়ে যে সব ছেলে নাচানাচি করছে, তারাও তো ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এদের ভবিষ্যতের কথা বাবা-মায়েরা কি একটু ভাববেন না? এদের হৃদ্‌যন্ত্র আর শ্রবণযন্ত্র কর্মক্ষম থাকবে তো? দয়া করে ভবিষ্যৎ নাগরিকদের সুস্থ রাখার দায়িত্ব এড়াবেন না।

সত্যকিংকর প্রতিহার যমুনা, দেশড়া, বাঁকুড়া

ভ্রম সংশোধন

• ২ নভেম্বর দিনপঞ্জিকায় প্রকাশিত হয়েছে ‘ঠাকুরের স্নেহধন্য বিশিষ্ট চিকিৎসক ও ‘কথামৃত’-র লেখক ডা. মহেন্দ্রলাল সরকার তথা ‘শ্রীম’-র জন্মদিবস।’ ডা. মহেন্দ্রলাল সরকার (জন্ম: ২ নভেম্বর ১৮৩৩) শ্রীরামকৃষ্ণের চিকিৎসক ছিলেন, কিন্তু তিনি কথামৃত রচনা করেননি। কথামৃত-র লেখক মহেন্দ্রনাথ গুপ্ত (শ্রীম)। তাঁর জন্মদিন ১৪ জুলাই।

• ‘এক নজরে’ কলামে ছবির ক্যাপশনে আগ্নেয়গিরির নাম ‘মাউন্ট শিনাবাগ’ লেখা হয়েছে (বিদেশ, ১৪-১১, পৃ ৮)। নামটি হবে ‘মাউন্ট সিনাবুঙ্গ’।

এই অনিচ্ছাকৃত ত্রুটিগুলির জন্য আমরা দুঃখিত ও ক্ষমাপ্রার্থী।

চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা

সম্পাদক সমীপেষু,

৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট, কলকাতা-৭০০০০১।

ই-মেল: letters@abp.in

যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE