শামিম আহমেদের ‘নিষ্কৃতি মৃত্যুও শাস্ত্রসম্মত’ (রবিবাসরীয় ১৮-৩) পড়ে সমৃদ্ধ হলাম। স্বেচ্ছামৃত্যু বা আত্মহত্যা কেবল মহাভারতেই নয়, বিশ্বের অন্যান্য কাব্যসাহিত্য ও দর্শনেও অনেক ক্ষেত্রেই সমর্থিত। রোমানরা আত্মহত্যার সমর্থক ছিলেন। ইওলাঁদ গ্রিজে রচিত ‘প্রাচীন রোমে আত্মহত্যা’ নামক ফরাসি গ্রন্থে খ্রিস্টপূর্ব ৫ম শতাব্দী থেকে ২য় শতাব্দী পর্যন্ত ৩১৪টি আত্মহত্যার নমুনা পেশ করা হয়েছে; যেখানে কোনও নিষেধ বা আইনি সমস্যা ছিল না, শেষকৃত্য সম্পন্ন হত স্বাভাবিকভাবে।
১৫১৫ সালে টমাস মোর লিখেছিলেন, ইউটোপিয়ার দ্বীপের দুরারোগ্য রোগে আক্রান্ত বাসিন্দারা পাদ্রিদের সঙ্গে পরামর্শ করে আত্মহনন করতে পারে; সে-ক্ষেত্রে সেটা হয় পরম মহত্ত্বের কাজ।
এ প্রসঙ্গে মনে করা যায় সেনেকা-র সেই কথা, ‘যখন জানব যে আমার কষ্টের শেষ হবে না, তখন নিজেই জীবন থেকে সরে যাব।’ ১৬১০ সাল নাগাদ কবি ও ধর্মযাজক জন ডান ‘বিয়াথানাটাস’ নামে একটি বই লেখেন আত্মহত্যার পক্ষে, যেখানে তিনি খ্রিস্টীয় ধর্মতত্ত্বের কেন্দ্রে অবস্থান করে ধার্মিক যুক্তি দিয়ে আত্মহত্যাকে অনুধাবন করতে চেয়েছেন।
শেক্সপিয়রের নাটকগুলিতে ৫২টি আত্মহত্যার ঘটনা ঘটে। ওফেলিয়ার নিঃশব্দ আত্মহত্যা, অ্যান্টনি, ক্লিয়োপেট্রা, রোমিয়ো-জুলিয়েটের আত্মহত্যা আমাদের অন্য এক জগতে নিয়ে যায়। আত্মহত্যা প্রসঙ্গে ফ্রয়েড তাঁর প্রাথমিক ব্যাখ্যায় বলেন, এ হল নিজের প্রতি আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠা। মানুষের আক্রমণ যদি সামাজিক চাপের জন্য উদ্দিষ্ট বস্তু বা ব্যক্তির বিরুদ্ধে প্রকাশিত হতে না পারে, তবে তা নিজের দিকে ঘুরে যায়। আর কার্ল মার্ক্স চেয়েছিলেন, আত্মহত্যা আত্মহত্যাকারীর অপরাধ হিসাবে না গণ্য হয়ে সমাজের অপরাধ হিসাবে গণ্য হোক। আজকের ভারতে কৃষকের গণ-আত্মহত্যার বিষয়ে যা ভীষণভাবে প্রণিধানযোগ্য।
স্বেচ্ছামৃত্যু বা আত্মহত্যা বাস্তবিক এক অন্তহীন জটিল মনস্তাত্ত্বিক অঙ্ক। অবস্থাবিশেষে আত্মহত্যা শুধু সমর্থনযোগ্যই নয়, শ্রদ্ধেয়ও হয়ে ওঠে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, দেবরাজ ইন্দ্রের আয়ুধ নির্মাণের নিমিত্ত দধীচির আত্মোৎসর্গ। যাঁরা শহিদ বলে মান্য ও পূজিত তাঁদের ক্ষেত্রেও একই যুক্তি প্রযোজ্য। আত্মহত্যা সম্পর্কে নির্ণায়ক মন্তব্য বোধহয় পাওয়া যায় ‘ল্য ত্রেজিয়েম সেজার’ গ্রন্থে মঁতেরলাঁর কথায়: ‘আত্মহত্যার চেয়ে রহস্যমেদুর কিছু নেই। কাউকে যখন অন্যের আত্মহত্যার কারণ দর্শাতে দেখি, আমার মনে হয় সেটা চূড়ান্ত অনধিকারচর্চা। কারণ শুধু আত্মহত্যাকারীই জেনেছে ও বুঝেছে সেই সব কারণ। কোনও তৃতীয় ব্যক্তির তা ধরাছোঁয়ার বাইরে।’
এ যেমন ভারতীয় মহাকাব্যের চরিত্রদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য, তেমনই প্রযোজ্য বিশ শতকে আত্মহত স্টেফান ৎসোয়াইগ, মঁতেরলাঁ, মায়াকোভস্কি, চেজারে পাভেজে, ম্যাক্স লিন্ডার, আর্থার কোয়েলসার, ইভ লোরাঁ, মিশিমা, মেরিলিন মনরো, সিলভিয়া প্লাথ সম্পর্কেও।
শুভ্রজিৎ রায় টেম্পল স্ট্রিট, জলপাইগুড়ি
বৌদ্ধ মতেও
বৌদ্ধদের ধর্মগ্রন্থ ত্রিপিটকের মজ্ঝিম নিকায়ের ছন্নোবাদ সুত্তে (১৪৪) পাওয়া যায়, বুদ্ধ রোগভোগের অসহনীয় যন্ত্রণা থেকে নিষ্কৃতি পেতে আত্মহত্যাকে কিছু ক্ষেত্রে বৈধ বলে স্বীকৃতি দিয়েছেন।
শাক্যরাজ্যে ছন্দক ছিলেন রথের প্রধান সারথি। সিদ্ধার্থের নগর পরিভ্রমণ ও গৃহত্যাগ বা মহাভিনিষ্ক্রমণের সময় তিনিই ছিলেন সিদ্ধার্থের রথের সারথি।
বুদ্ধত্ব লাভ করার পর, রাজা শুদ্ধোদনের আমন্ত্রণে বুদ্ধ ভিক্ষুসঙ্ঘসহ শাক্যরাজ্যের রাজধানী কপিলবাস্তুতে আসেন। তাঁর ধর্মবাণী শুনে রাজ্যের মন্ত্রী, অমাত্য ও জ্ঞাতিদের মধ্যে অনেকেই গৃহত্যাগ করে দলে দলে তাঁর ভিক্ষুসঙ্ঘে যোগ দেন।
তাঁদের মধ্যে ছিলেন ছন্দক, যিনি পরে সাধনার দ্বারা অর্হৎ হয়েছিলেন। কালক্রমে ছন্দক এক দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হলেন। কিছু দিনের মধ্যে শারীরিক কষ্ট এমন পর্যায়ে চলে যায় যে বেঁচে থাকাই তাঁর পক্ষে চরম যন্ত্রণাদায়ক হয়ে ওঠে। এই অসহনীয় যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পেতে ছন্দক অস্ত্র দিয়ে তাঁর কণ্ঠনালী ছেদন করে আত্মহত্যা করতে বাধ্য হন।
সাধারণ ভাবে বৌদ্ধধর্মে আত্মহননের স্বীকৃতি নেই। কিন্তু যেহেতু ছন্দক অর্হৎ ছিলেন, তাই ভিক্ষুদের কাছ থেকে এই ঘটনা শুনে বুদ্ধ ছন্দকের এই আত্মহননকে বৈধ স্বীকৃতি দিয়েছিলেন।
রাহুল বড়ুয়া কলকাতা-৭৪
সামান্য কারণ
সম্প্রতি সামান্য একটি ট্রেনের যাত্রাপথ সম্প্রসারণ নিয়ে উত্তরবঙ্গের কতিপয় জেলার মধ্যে যে ‘রে-রে’ রব উঠেছিল, তা আর যা-ই হোক সমর্থনযোগ্য নয়। এখানে এইমস ধাঁচের মহার্ঘ হাসপাতাল অন্যত্র সরে যায়। হাই কোর্টের সার্কিট বেঞ্চ নির্মাণের কাজ অনন্ত কাল ধরে ঝুলে থাকে। মহাসড়ক নির্মাণের কাজ মুখ থুবড়ে পড়ে থাকে। স্মার্ট সিটির দৌড়ে এ বঙ্গের শহরকে ব্রাত্য রাখা হয়। অথচ এ সব নিয়ে কারও কোনও হেলদোল নেই। অবাক কাণ্ড, একটা ট্রেন নিয়ে যেন ঝড় বয়ে গেল।
চন্দন নাগ সেবক রোড, শিলিগুড়ি
সহনশীলতা!
মানুষ কতটা সহনশীল, তা বোঝা যাবে, যদি কেউ একবার দ্বিতীয় হুগলি সেতু পেরিয়ে আন্দুল রোড হয়ে আলমপুরের কাছে ৬নং জাতীয় সড়ক ধরেন। মনে করিয়ে দিলে ভাল হয়, বর্তমান পশ্চিমবঙ্গের মহাকরণ নবান্ন-এর ঠিক পিছন থেকে শুরু হয়েছে এই আন্দুল রোড, যা এক কালে হাওড়া জেলা থেকে মেদিনীপুর, হুগলি বা ৬নং জাতীয় সড়ক ধরে যে কোনও জায়গায় যাওয়ার একমাত্র রাস্তা ছিল— কিছু বছর আগে, যখন সাঁতরাগাছি হয়ে কোনা এক্সপ্রেসওয়ে হয়নি।
আজ এই গুরুত্বপূর্ণ রাজ্য সড়কে হাজার-হাজার টোটো চলছে। কীভাবে তারা বৈধ লাইসেন্স পাচ্ছে জাতীয় সড়কে চলার, কে জানে। এমন অবস্থা যে টোটোর পিছনে গাড়ি, বাস ইত্যাদি যানবাহনকে চলতে হচ্ছে। টোটো সাইড দেয় না, যেখানে-সেখানে দাঁড়িয়ে পড়ে। মোড়ে-মোড়ে দল বেঁধে টোটো দাঁড়িয়ে থাকে।
শুধু নীল পোশাকের সিভিক পুলিশ দেখা যায়, না আছেন পুলিশ, না আছেন সারজেন্ট। এ ছাড়াও এঁরা কিছুর বিনিময়ে বড়-বড় ট্রাক/ট্রেলর দিনের বেলায় বা অফিসটাইমে কোনা এক্সপ্রেসওয়ে-তে না পাঠিয়ে, শর্টকাট রাস্তা আন্দুল রোড দিয়ে যাওয়ার অনুমতি দিয়ে দেন।
এর ফলে এই সংকীর্ণ রাস্তায় যানজট হয়ে এক ভয়ঙ্কর অবস্থার সৃষ্টি হয় প্রতিদিন। রাস্তার দু’পাশের দোকানগুলো রাস্তার উপর ডালা সাজিয়ে বসছে, কেউ বলার নেই। বাস প্যাসেঞ্জার না পেয়ে রাস্তার উপর দাঁড়িয়ে থাকে বহু সময় ধরে, কেউ বলার নেই। যে যেখানে পারছে রাস্তার অর্ধেক জুড়ে গাড়ি পার্ক করে চলে যাচ্ছে, কেউ বলার নেই।
বাচ্চাদের বেশ কয়েকটি স্কুল রয়েছে এই রাস্তার ওপরে, তা ছাড়া এই এলাকার অনেক বাচ্চা কলকাতার স্কুলগুলোতে পড়ে, তাদের অবস্থা তো ভয়ঙ্কর। স্কুল গাড়ি/পুলকারগুলো ঠিক সময়ে স্কুলে পৌঁছনোর জন্য কী যে করে, তা দেখার মতো। যে কোনও সময়ে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। কোনও অফিসযাত্রীই কোনও দিন এই রাস্তা ধরে গিয়ে ঠিক সময়ে অফিস পৌঁছতে পারবেন না, এটা সবাই ধরে নিয়েই বাড়ি থেকে বেরোন। আন্দুল, মৌড়িগ্রাম, চুনাভাটি, বকুলতলা, দানেশ শেখ লেন— এ সব জায়গায় বসবাসকারী মানুষদের কোনও বিকল্প রাস্তা নেই। দ্বিতীয় হুগলি সেতুর ফ্লাইওভার থেকে আন্দুল বাজার যেখানে ২০-৩০ মিনিটের রাস্তা, যেখানে দুই থেকে আড়াই ঘণ্টা সময় লাগছে।
সৌমেন বসু আন্দুল, হাওড়া
চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা
সম্পাদক সমীপেষু,
৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট, কলকাতা-৭০০০০১।
ই-মেল: letters@abp.in
যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy