Advertisement
০১ নভেম্বর ২০২৪
Hemant Kumar

সম্পাদক সমীপেষু: বিশ্বজনীন হেমন্ত

আপাদমস্তক বাঙালি মহাশিল্পী হেমন্ত, মননে ও আবেদনে কম ‘আন্তর্জাতিক’ ছিলেন না।

শেষ আপডেট: ০৩ জুন ২০২০ ০০:৪১
Share: Save:

আগামী ১৬ জুন, হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের শতবর্ষ পূর্তি হতে চলেছে। তার প্রাক্-লগ্নে কিছু কথা।

‘‘অর হইল গিয়া ইন্টারন্যাশনাল ভয়েস। অ চিনদ্যাশে সুর কইর্যা খবরের কাগজ পড়লেও লোকে খাড়াইয়া শুনব’’, বলেছিলেন দেবব্রত বিশ্বাস, হেমন্ত সম্পর্কে। আপাদমস্তক বাঙালি মহাশিল্পী হেমন্ত, মননে ও আবেদনে কম ‘আন্তর্জাতিক’ ছিলেন না। তাঁর প্রথম প্রযোজিত ছবি ‘নীল আকাশের নীচে’-র গল্প নির্বাচনেও সেই আন্তর্জাতিক চেতনার আভাস। মহাদেবী বর্মার হিন্দি গল্প ‘চীনী ফেরিওয়ালা’ অবলম্বনে তৈরি এ ছবি। সম্ভবত সেই প্রথম সর্বভারতীয় স্তরের এক লেখিকার কাহিনি উঠে এল বাংলা ছবিতে— যা ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে, বিশ্বমানবতার পক্ষে মর্মস্পর্শী দলিল। মৃণাল সেন-কৃত প্রাথমিক খসড়া পছন্দ না হওয়ায়, শান্তু মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে বসে হেমন্ত নিজেই চিত্রনাট্যের ছক তৈরি করে দেন পরিচালককে, দ্বিতীয় বার লেখার জন্য।

ছবিতে ‘নীল আকাশের নীচে’ গানটির জায়গাও ‘খুঁজে’ বার করেছিলেন তিনি। আবার ‘ও নদী রে’ গানটির দৃশ্যায়নে দেখি নদীপথে চিনদেশীয় নেয়েদের আনাগোনা (শুটিং হয় উত্তরবঙ্গে)।

পরে কনরাড রুক্স-এর ইংরেজি ‘সিদ্ধার্থ’ (১৯৭২) ছবিতে সুরারোপের দায়িত্ব পান হেমন্ত। হেরমান হেস-এর গল্প নিয়ে ভারতীয় পটভূমিতে ছবি। পরিচালক চেয়েছিলেন নদীপথের দৃশ্যে ভারতীয় গান রাখতে। সেখানেই ‘ও নদী রে’ ব্যবহার করলেন হেমন্ত; অন্য একটি যাত্রাদৃশ্যে ‘পথের ক্লান্তি ভুলে’।

হেমন্তর প্রথম বিদেশযাত্রা ১৯৫৯-এ, পূর্ব আফ্রিকা, রোম ও লন্ডনে। আফ্রিকার মানুষজন ধ্রুপদী সঙ্গীতের ভক্ত; তাই ‘লাইট ক্লাসিকাল’ই গাইতে হত বেশি— গীত, গজ়ল। আমরা আর বাংলা গানের বাইরে তাঁকে তেমন শুনলাম কোথায়? প্রবাসী ভারতীয় ও বিদেশিরা কিন্তু সে-ধারার মর্যাদা দিতে ভোলেননি।

বিদেশের অনুষ্ঠানে স্যুট পরতেন, তবে কানাডায় এক বার শ্রোতাদের দাবিতে তাঁকে গ্রিনরুমে গিয়ে ধুতি-শার্ট পরে আসতে হয়েছিল। ওয়েস্ট ইন্ডিজ়ে প্রথম ভারতীয় শিল্পী হিসেবে গিয়ে পেয়েছিলেন বিপুল অভ্যর্থনা। তাঁকে ছুঁয়ে ভারত-স্পর্শের অনুভূতি পেতে চাইতেন ভারতীয় বংশোদ্ভূতরা। বিদেশি ভক্তদের উন্মাদনাও কম ছিল না। আমেরিকার যে কোনও শহরে তাঁর অনুষ্ঠান থাকলে তিন-চারশো মাইল দূর থেকেও ঠিক পৌঁছে যেতেন লস অ্যাঞ্জেলেসের জ্যান স্টুয়ার্ট।

কিশোরকুমারকে দিয়ে গাইয়েছেন পশ্চিমি ধাঁচে ‘শিং নেই তবু নাম তার সিংহ’; ‘লালঝুঁটি কাকাতুয়া’তে এনেছেন ‘পোলকা’ ছন্দ, ‘চুরি করা মহাপুণ্য’র শুরুতে স্প্যানিশ ‘লা পালোমা’, ‘সপ্তপদী’তে ‘পার্টি সং’ আর চার্চ-বেলের আবহ। বিবিধ ভারতী-র এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন সঙ্গীতের বিশ্বায়নের কথা, “পৃথিবী আজ খুব ছোট হয়ে গেছে। আমরাও ওয়েস্টার্ন শুনছি, ওরাও আমাদের গান শুনছে। কথা একটাই— সঙ্গীত যেন চিৎকার না হয়। যাতে মেলডি আছে, গভীরতা আছে, তা-ই সঙ্গীত।”

পাকিস্তানের গজ়ল-সম্রাট মেহেদি হাসান এসেছেন তাঁর কলকাতার ফ্ল্যাটে। বিদেশ সফর থেকে হেমন্ত পেয়েছেন প্রচুর উপহার ও সংবর্ধনা, বাল্টিমোর সিটির সাম্মানিক নাগরিকত্বও। লন্ডন বিবিসি একাধিক বার প্রচার করেছে তাঁর সাক্ষাৎকার, গান। অবশ্য তাঁর মনপ্রাণ জুড়ে থাকত বাংলাই। জীবনের শেষ বিদেশ সফরও করে এসেছিলেন বাঙালিদের মধ্যেই— বাংলাদেশে।

পৃথা কুণ্ডু,কলকাতা -৩৫

ভুলের তালিকা

করোনা নিয়ন্ত্রণে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার একের পর এক যে ভুলগুলি করেছে: ক) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর অস্বাভাবিক দেরি করে বন্ধ করা, খ) ট্রাম্পের সংবর্ধনা সভায় দিল্লিতে বহু মানুষের বিশাল জমায়েত করা, গ) দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ধর্মীয় সভায় বিরাট জমায়েতের অনুমতি দেওয়া, ঘ) বিদেশ থেকে আগত মানুষদের কোয়রান্টিন বা করোনা পরীক্ষার ব্যবস্থা না করা, ঙ) পরিযায়ী শ্রমিকদের প্রথমেই বাড়িতে ফিরিয়ে না দেওয়া। এবং ফেরানো নিয়ে কেন্দ্র-রাজ্যের বিবাদ। ফেরার পরে তাঁদের উপযুক্ত পরীক্ষা ও সরকারি কোয়রান্টিনের ব্যবস্থাটুকুও না করা, চ) প্রথম থেকেই সাধারণ মানুষকে রেশনের মাধ্যমে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস পৌঁছে না দেওয়া এবং রেশন নিয়ে চূড়ান্ত দুর্নীতি, ছ) মদের দোকান খুলে দেওয়া, জ) লকডাউন চালু করা, শিথিল করা বা বন্ধ করা কোনও ক্ষেত্রেই জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ, ভাইরোলজিস্ট, এপিডেমিয়োলজিস্টদের নিয়ে গঠিত কোনও কমিটির মতামত না নেওয়া।

উপরন্তু চতুর্থ দফা লকডাউনের শেষে সরকার করোনা নিয়ন্ত্রণের সব দায়িত্ব থেকেই হাত গুটিয়ে নিয়ে এবং সব দায় মানুষের উপর চাপিয়ে দিয়ে দেশকে ঘোর বিপদে ঠেলে দিচ্ছে।

সজল বিশ্বাস, সাধারণ সম্পাদক, সার্ভিস ডক্টরস ফোরাম

কিসের ভুল?

‘সরকারের দায়’ (৩০-৫) চিঠিতে লেখক বলেছেন, ভারতে প্রথম করোনা ধরা পড়ে ৩০ জানুয়ারি। এই দিনেই যদি লকডাউন ঘোষণা হত, হলফ করে কি বলা যায়, তা হলে করোনা-মুক্ত ভারত পেতাম আমরা? দিল্লির ভোট, নমস্তে ট্রাম্প ইত্যাদি কাজে ব্যস্ত না হওয়া, অতি দক্ষ, সংবেদনশীল সরকার যদি আমাদের থাকত, সেই সরকারও কি পারত জানুয়ারি কি ফেব্রুয়ারিতে লকডাউন ঘোষণা করতে? ইউরোপের প্রথম সারির সব দেশ আজ বিপর্যস্ত, তারাও কি ঠিক সময়ে লকডাউন ঘোষণা করতে পেরেছে? না কি তারাও কিছু বোঝে না কিংবা রাজনৈতিক ফায়দা তুলতে ব্যস্ত ছিল? ১৩০ কোটির দেশ ভারতে যদি জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারিতে লকডাউন ঘোষণা হত, আমরা সে পদক্ষেপের সমালোচনা করতাম না? প্রথম দিকে অনেক দেশই করোনার এই ভয়ঙ্কর রূপ আন্দাজ করতে পারেনি, ইউরোপের দেশগুলি লকডাউন ঘোষণা করেছিল মার্চের দ্বিতীয় কি তৃতীয় সপ্তাহে এবং তাদের লোকসংখ্যা আমাদের দশ ভাগের এক ভাগও নয়, তারা মাশুল দিয়েছে আমাদের বহু গুণ বেশি। বর্তমান পরিস্থিতির বিচারে অন্য দেশগুলির তুলনায় আমরা কি খুব পিছিয়ে আছি? চিনে উহানে যখন প্রথম করোনা আক্রান্তের খবর পাওয়া যায়, তা জানানো হয়েছিল চিনের আঞ্চলিক হু-র দফতরে ডিসেম্বরেই, প্রায় তিন মাস পর হু একে অতিমারি আখ্যা দিল, কেন? দিল্লির ভোট, কমল নাথ, এ সব সমস্যা তো হু-র ছিল না?

শেখর চক্রবর্তী, কলকাতা-৮

বেচারি ছাগল

আমাদের দেশে অর্থনৈতিক সঙ্কট দেখা দিলে, সরকারের প্রধান কাজ ব্যাঙ্ক এবং বিভিন্ন স্বল্প সঞ্চয় প্রকল্পে আমানতকারীদের দেয় সুদের হার কমিয়ে দেওয়া। এমনকি বরিষ্ঠ নাগরিকদের জন্য সিনিয়র সিটিজ়েনস সেভিংস স্কিম-কেও (পেনশনহীন অবসরপ্রাপ্ত বরিষ্ঠ নাগরিকদের বেঁচে থাকার একমাত্র রসদ) রেহাই দেওয়া হচ্ছে না। অথচ সাংসদ বা বিধায়কদের গায়ে বিন্দুমাত্র আঁচ লাগতে দেওয়া হয় না। চাকুরিজীবীদের প্রতি মাসের এক দিনের বেতন কেটে নিয়ে ত্রাণ তহবিল গঠন করা যেতে পারে। কিন্তু তা হলে ইউনিয়নগুলি ধর্মঘট ডেকে দেশ অচল করে দিতে পারে। অতএব, একটা সংস্কৃত শ্লোক অনুযায়ী: অশ্ব নয়, গজ নয়, ব্যাঘ্র কখনওই নয়, অজ বলি দিয়ে দেবগণকে তৃপ্ত করো। ঘোড়া বলি দেওয়া চলবে না, কোথায় চাঁট মারবে ঠিক নেই। হাতি এক কোপে কাটা যাবে না, অতএব বাদ। বাঘ তো কখনওই নয়, বাঘ ধরবে কে? অনেক বিবেচনার পর দয়ালু দেবতারা ছাগলকে বলির পশু নির্ধারণ করলেন। ছাগলের অপরাধ, সে কাউকে আক্রমণ করতে পারে না। শিংয়ে ধার নেই, দাঁতে বিষ নেই, নিরামিষাশী নিরীহ জীব। ওই ফর্মুলা মেনেই বোধহয়, বর্ষীয়ান নাগরিকের ওপরই বারংবার আঘাত হানা হচ্ছে।

শুভব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়, বড়বাজার, চন্দননগর

চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা

সম্পাদক সমীপেষু,

৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট,

কলকাতা-৭০০০০১।

ইমেল: letters@abp.in

যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়। চিঠির শেষে পুরো ডাক-ঠিকানা উল্লেখ করুন, ইমেল-এ পাঠানো হলেও।

অন্য বিষয়গুলি:

Hemant Kumar Singer Music
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE