বিশ্বজিৎ রায় ‘মহামারির তখন এখন’ (১৯-৪) শীর্ষক নিবন্ধে তুলে ধরেছেন, নিবেদিতা উনিশ শতকে ‘প্লেগ’ বিষয়ে কী অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করেছিলেন। ১৮৯৯ সালে প্লেগ যখন মহামারির আকার নিল কলকাতায়, স্বামীজি বলেছিলেন বস্তি পরিষ্কারের কথা। এই কাজে উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছিল রামকৃষ্ণ মিশন। স্বামীজি বাগবাজারে শ্রমিকদের সঙ্গে থাকতে শুরু করেন। সেই সময়ে ক্লাসিক থিয়েটারে সভা ডাকা হয়েছিল, সভাপতি ছিলেন স্বয়ং স্বামীজি। সভায় ছাত্র, অধ্যাপক ও ইউরোপীয়দের উপস্থিতি ছিল নজর কাড়ার মতো। নিবেদিতা বক্তৃতায় বলেছিলেন, “এই শহরে যারা নিজেকে মানুষ বলে পরিচয় দেয় এমন প্রতিটি মানুষের সাহায্য আমরা চাই। …কলকাতার ছাত্রবৃন্দ! তোমাদের মধ্যে কতজন আছ, যারা আমাদের ভ্রাতৃগণের জীবনের এই মহা দুর্দৈবের কালে বিশ্বাসের জ্বলন্ত শক্তি নিয়ে সাহায্যের জন্য এগিয়ে আসতে পারবে? …তোমাদের মধ্যে কতজন আছ বল যারা বস্তি পরিষ্কারের কাজে এগিয়ে আসবে? এক্ষেত্রে যদি উঠে দাঁড়াতে হয়—একসঙ্গে উঠব; যদি লুটিয়ে পড়তে হয়— একসঙ্গে পড়ব।”
রাধাগোবিন্দ কর বলেছেন, “১৮৯৯ খ্রিস্টাব্দে প্লেগ সংহারক রূপে দেখা দেয়। পূর্ব বৎসর তাহার আবির্ভাব সূচনায়, বিধিব্যবস্থা-বিভীষিকা ভয়ে ভীত জনগণ শহর হইতে পলায়ন করে। এই বৎসর স্যার জন উডবার্ন আশ্বাস দেন, কোন রোগীকে বলপূর্বক গৃহান্তরিত করা হইবে না।… সেই সময়ে একদিন চৈত্রের মধ্যাহ্নে রোগী পরিদর্শনান্তে গৃহে ফিরিয়া দেখিলাম, দ্বারপথে ধূলিধূসর কাষ্ঠাসনে একজন য়ুরোপীয় মহিলা উপবিষ্টা। ইনিই ভগিনী নিবেদিতা; একটি সংবাদ জানিবার জন্য আমার আগমন প্রতীক্ষায় বহুক্ষণ অপেক্ষা করিতেছেন। সেইদিন প্রাতে বাগবাজারে কোন বস্তিতে আমি একটি প্লেগাক্রান্ত শিশুকে দেখিতে গিয়াছিলাম। রোগীর অবস্থা সম্পর্কে অনুসন্ধান ও ব্যবস্থা গ্রহণের জন্যই সিস্টার নিবেদিতার আগমন। আমি বলিলাম ‘রোগীর অবস্থা সঙ্কটাপন্ন’। বাগদীবস্তিতে কিরূপে বিজ্ঞানসম্মত পরিচর্যা সম্ভব, তাহার আলোচনা করিয়া আমি তাঁহাকে বিশেষ সাবধান হইতে বলিলাম। অপরাহ্ণে পুনরায় রোগী দেখিতে যাইয়া দেখিলাম, সেই অস্বাস্থ্যকর পল্লীতে, সেই আর্দ্র-জীর্ণ কুটিরে নিবেদিতা রোগগ্রস্ত শিশুটিকে ক্রোড়ে লইয়া বসিয়া আছেন। দিনের পর রাত্রি, রাত্রির পর দিন তিনি স্বীয় আবাস পরিত্যাগ করিয়া সেই কুটিরে রোগীর সেবায় নিযুক্ত রহিলেন। গৃহ পরিশোধিত করা প্রয়োজন। তিনি স্বয়ং একখানি ক্ষুদ্র মই লইয়া গৃহে চুনকাম করিতে লাগিলেন। রোগীর মৃত্যু নিশ্চিত জানিয়াও তাঁহার শুশ্রূষায় শৈথিল্য সঞ্চারিত হইল না। দুইদিন পরে শিশু এই করুণাময়ীর স্নেহ-তপ্ত অঙ্কে অন্তিম নিদ্রায় নিদ্রিত হইল।” তিনি আরও বলেছেন, “এই সংকট-সময়ে বাগবাজারে পল্লীর প্রতি বস্তিতে ভগিনী নিবেদিতার করুণাময়ী মূর্তি লক্ষিত হইত। আপনার আর্থিক অবস্থার প্রতি লক্ষ্য না রাখিয়া তিনি অপরকে সাহায্য দান করিতেন। একবার একজন রোগীর ঔষধপথ্যাদির ব্যয়-নির্বাহার্থে তাঁহাকে কিছুদিনের জন্য দুগ্ধপান পরিত্যাগ করিতে হইয়াছিল। তখন দুগ্ধ ও ফলমূলই ছিল তাঁহার আহার।”
নিবেদিতা ইউরোপ থেকে ভারতে এসে এখানকার মানুষকে ভালবেসে, তাদের দুঃখ-যন্ত্রণা মোচনে যে আলোকোজ্জ্বল অবদান রেখে গিয়েছেন, তা এই গভীর সঙ্কটকালে আলোকবর্তিকা স্বরূপ।
পঙ্কজ পাঠক, শ্রীপল্লি, বর্ধমান
প্লাস্টিকের দিকে
লকডাউনে আর্তের সহায়তা করতে যাঁরা ত্রাণ বিলি করছেন, প্রায় প্রত্যেকেই, এমনকি যে সমস্ত সংগঠন সারা বছর প্লাস্টিকের বিরুদ্ধে প্রচার চালায় তাদের সদস্যরাও, ত্রাণ বিলির জন্য সিঙ্গল ইউজ় প্লাস্টিক ব্যবহার করছেন। যা পরিবেশের পক্ষে খুবই ক্ষতিকর। এমনিতেই চারিদিকে প্লাস্টিকের ছড়াছড়ি। তার ওপর এই সব অতিরিক্ত প্লাস্টিক, দূষণকে আরও বাড়িয়ে তুলবে, নিকাশি ব্যবস্থার আরও অসুবিধা করবে। তাই, যদি রেশনের মতো নির্দিষ্ট জায়গা থেকে এবং তুলাযন্ত্রের ব্যবহারের মাধ্যমে এই ত্রাণ বিলি করা হয় এবং গ্রহীতাদের বাড়ি থেকে ব্যাগ আনতে বলা হয়, খুব সহজেই অতিরিক্ত প্লাস্টিক দূষণ রোধ হতে পারে।
জয়িতা কুণ্ডু কুঁতি, সম্পাদক, মাধবপুর পরিবেশ চেতনা সমিতি, উলুবেড়িয়া, হাওড়া
বেতার ব্যাপার
আকাশবাণী’ (২০-৪) শিরোনামে প্রকাশিত পত্র এবং তার উত্তরে ‘ঠিকই আছে’ (২৬-৪) শীর্ষক পত্র দুটি সম্বন্ধে কয়েকটি কথা। প্রথম চিঠিটি পড়ে, করোনা-ত্রাসের সময় বিনা নোটিসে নিশ্চুপ হয়ে যাওয়া আকাশবাণী কলকাতা-কে, যুদ্ধক্ষেত্র থেকে পলায়নরত সৈনিক মনে হয়। শ্রোতাদের প্রতিবাদের ফলে আকাশবাণী কলকাতার গীতাঞ্জলি কয়েক দিন পর ফিরে আসে। তবে তাকে বীরোচিত প্রত্যাবর্তন বলা যায় কি না, সন্দেহ।
যদিও দ্বিতীয় পত্রটিতে পত্রকার দাবি করেছেন, অনুষ্ঠান সব ‘ঠিকই আছে’, এবং দাবি করেছেন, ‘‘সকাল ছটা থেকে রাত এগারোটা পর্যন্ত বাংলা অনুষ্ঠান...’’ জানাই, সকাল ছটা থেকে রাত এগারোটা পর্যন্ত অন্তত ১১ বার দিল্লি কেন্দ্রের হিন্দি অথবা ইংরেজি খবর প্রচার করা হয় এবং বিবিধ ভারতী চ্যানেলটিকেও চালানো হচ্ছে গীতাঞ্জলির সঙ্গে।
করোনা সম্পর্কিত আকাশবাণীর লাইভ অনুষ্ঠান মাত্র দুটি। ‘সুরক্ষিত ভারত’, দুই পর্বে বেলা একটা থেকে এবং একটা পঁয়তাল্লিশ থেকে প্রচারিত হয়। ‘কেমন আছেন’, দুই পর্বে বিকেল চারটা থেকে এবং পাঁচটা পনেরো থেকে বাজানো হয়। এ ছাড়া করোনা সম্পর্কিত কিছু অনুষ্ঠানের রেকর্ড এবং সচেতনতামূলক বিজ্ঞাপন হিসেবেও কিছু রেকর্ডিং বাজানো হয় ঘুরিয়ে ফিরিয়ে।
সবচেয়ে বড় কথা হল, ‘আকাশবাণী মৈত্রী’ এখনও নীরব। ২০১৬ সালের ২০ অগস্ট ঝকঝকে প্রচারতরঙ্গের মাধ্যমে এই চ্যানেলটি উদ্বোধন করেন তৎকালীন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়। দুই বাংলার মৈত্রী স্থাপনের সেতু হিসেবে এটিকে দেখানো হয়। ভারত এবং বাংলাদেশ ছাড়াও এশিয়ার অনেকগুলো দেশে এই চ্যানেল শোনা যেত। মহামারির পরিস্থিতিতে যেখানে এটিকে দারুণ ভাবে ব্যবহার করার সুযোগ ছিল, তখন তা একেবারে নিশ্চুপ।
শঙ্খ অধিকারী, সাবড়াকোন, বাঁকুড়া
চাষিদের কষ্ট
দেশ জুড়ে লকডাউন চলছে। এ দিকে জেলায় জেলায় বোরো ধান পেকে মাঠে পড়ে রয়েছে। গোদের ওপর বিষফোড়ার মতো কয়েক দিনের ঝড়বৃষ্টি ধানের ব্যাপক ক্ষতি করছে। সরকার লকডাউনের মধ্যে ধান তোলার ছাড়পত্র দিলেও, চাষিরা জলকাদার মধ্যে ধান মাঠ থেকে বাড়িতে আনতে পারছেন না। প্রচণ্ড পরিশ্রম হচ্ছে। ধানের বীজ, সার, সেচের জল, কীটনাশকে যা খরচ, তা পুষিয়ে লাভ থাকছে না চাষিদের। ফলে মজুর দিয়ে কাজ করানো দুষ্কর। এ দিকে সরকার ১০০ দিনের কাজের ছাড়পত্র দিয়েছে। গ্রাম পঞ্চায়েতগুলি যদি এনরেগা প্রকল্পে ১০০ দিনের কাজে বোরো ধান কাটার ব্যবস্থা করে, তা হলে এক দিকে চাষিরাও বাঁচবেন, অন্য দিকে সাধারণ মানুষ ১০০ দিনের কাজ পাবেন।
শম্ভু মান্না, বহিচাড়, পূর্ব মেদিনীপুর
এটা কৌশল
‘মানবিক বিজ্ঞাপন’ (২৬-৪) শীর্ষক চিঠির সঙ্গে একমত হতে পারলাম না। ‘আমার সংস্থার দ্রব্য না কিনলেও চলবে’ এই মহত্ত্বও একটি বিজ্ঞাপন কৌশল মাত্র। বহু বছর পূর্বে ইংল্যান্ডের লোকাল ট্রেনে একটি বিজ্ঞাপনকে পুরস্কার দেওয়া হয়। বিজ্ঞাপনটি ছিল: "You can't smoke here, even if it is Abdulla." প্রসঙ্গত, Abdulla ছিল ইংল্যান্ডের একটি অতি জনপ্রিয় সিগারেট ব্র্যান্ড।
গোপাল কৃষ্ণ সরকার, কোন্নগর
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy