উত্তরপ্রদেশে ভোটের প্রাক্কালে ওই রাজ্যের মাহোবা জেলা থেকে স্বল্পবিত্ত মানুষের জন্য নিখরচায় রান্নার গ্যাস সংযোগের প্রকল্প ‘উজ্জ্বলা’-র দ্বিতীয় পর্ব ভিডিয়ো মাধ্যমে উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী (‘নজরে উত্তরপ্রদেশ, মোদীর হাতে শুরু উজ্জ্বলার দ্বিতীয় পর্ব’, ১১-৮)। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথও পর্দায় উপস্থিত ছিলেন। দ্বিতীয় পর্বের প্রকল্পটি প্রায় এক। ভোটের কৌশল হিসেবে মোড়ক বদলানো হল। সংবাদটি পাঠ করে প্রশ্ন জাগে, তা হলে কি পরবর্তী রাজ্যগুলিতে ভোটের সময় উজ্জ্বলা ৩, উজ্জ্বলা ৪ ইত্যাদি নতুন নতুন নাম দেগে দৃষ্টি কাড়ার চেষ্টা হবে? প্রকল্পটির চাকচিক্য বাড়িয়ে কি সত্যিই সাধারণ মানুষের মন জয় করা যাবে? অল্প হলেও দেশে শিক্ষার হার বাড়ছে। বাড়ছে সচেতনতা। রাজনীতির কারবারিরা একটু খতিয়ে দেখলেই বুঝবেন, পুরনো মন্ত্রে আর সম্মোহন-জাল আগের মতো মজবুত হয় না। বাস্তব আর ভেলকিবাজির পার্থক্য অধিকাংশ ভোটারই এখন হয়তো মুখে প্রকাশ করেন না, কিন্তু দিব্যি বুঝে ফেলতে পারেন।
২০১৬ সালে এই প্রকল্পের সূচনা থেকে দারিদ্রসীমার নীচে কিছু মানুষ সাময়িক ভাবে উপকৃত হয়েছিলেন। কিন্তু করাল বেকারত্ব, নতুন করে কর্মহীনতা, হাতে অর্থের অপ্রতুলতা, নতুন সিলিন্ডারের দামে উপর্যুপরি মাত্রাহীন লাফ, এ সবই নিম্ন আয়ের মানুষদের ভাগ্য আক্ষরিক অর্থেই ধোঁয়াচ্ছন্ন রেখেছে। তাই সরকারের সাফল্য-কেতন উঁচুতে তুলে ধরতে যতই ভিডিয়ো সাক্ষাৎকারে গ্যাস ব্যবহারকারীদের কৃতজ্ঞতার হাওয়া তোলার চেষ্টা হোক, আসল বৃত্তান্ত বুঝতে অসুবিধা হয় না। খিদের সঙ্গে নিত্য যুদ্ধ তাঁদের, গ্যাস ফুরোলেই রিফিল সিলিন্ডার নেওয়ার মতো রোজগার তাঁদের আছে নাকি? তাই রান্নার জায়গায় ফাঁকা গ্যাসের সিলিন্ডারটির উপর চাপানো থাকে বন-জঙ্গল থেকে কুড়িয়ে আনা কুটো, শুকনো ডাল কিংবা বড় গাছের কাণ্ড চেরাই করে পাওয়া লকড়ি। ক্ষতিকারক গ্যাসে বিষাক্ত হয়ে ওঠে বাতাস। আরও গরম হয় পৃথিবী।
বিশ্বনাথ পাকড়াশি
শ্রীরামপুর, হুগলি
চাই স্বাবলম্বন
‘লক্ষ্মীর ভান্ডার থেকে টাকা লক্ষ্মীমন্তদেরও’ (১১-৮) সংবাদের প্রেক্ষিতে কিছু কথা। রাজ্যের প্রায় ১ কোটি ৬৯ লক্ষের বেশি মহিলা এই প্রকল্পের মাধ্যমে সরাসরি সরকারি (জনগণের করের টাকা) আর্থিক সহায়তা পেতে চলেছেন। ওই প্রকল্পের জন্য ১২,৯০০ কোটি টাকা বাজেট বরাদ্দ করেছে রাজ্য সরকার। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, প্রকল্পটি বাস্তবায়নের সঙ্গে সঙ্গে রাজ্যের পল্লি ও নগর অর্থনীতি আরও শক্তিশালী হবে। ভাল কথা। কিন্তু কী করে হবে, তার কোনও সঠিক ব্যাখ্যা নেই। এই প্রকল্পের উদ্দেশ্য সত্যিই কি নারীদের আর্থিক ভাবে স্বাবলম্বী করা, না কি তাঁদের ভোটমুখী করে শিরদাঁড়া ভেঙে দেওয়া? আমাদের করের টাকা এ ভাবে অনুৎপাদক কাজে ব্যয় করার কারণ কী?
লক্ষ্মীর ভান্ডারের ভাল দিক কিন্তু কিছু নেই। লাভ শুধু শাসকশ্রেণির। গদি টিকিয়ে রাখতে কর্মসংস্থান ধ্বংস করে মানুষকে সকল চাহিদা ও অধিকার থেকে বঞ্চিত করে শুধু দু’মুঠো খাবার দিয়ে টিকিয়ে রাখার কাজটাই করছে শাসক দল। মুখ্যমন্ত্রী যদি মাসে ৫০০ বা ১০০০ টাকা করে না দিয়ে নারীদের স্বাবলম্বী করার কথা ভাবতেন, তবে অবশ্যই তা হত প্রশংসনীয় উদ্যোগ। কিন্তু এ সব করলে মহিলারা কাজে ব্যস্ত থাকবেন যে! ডাকলে যখন তখন কাজ ফেলে তো আর ছুটে আসবেন না!
এই প্রকল্পে কারা টাকাটা পাবেন, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। যে সকল পরিবারের আয় অনেক, কোনও অভাব নেই, যে সকল পরিবার চাকরিজীবী, তাদের ঘরের মহিলারাও যদি এই সুযোগ পান, তবে এটা যে পুরোপুরি ভোটব্যাঙ্ক সুরক্ষিত রাখার উদ্দেশ্যে শুরু করা হচ্ছে, তা নিয়ে সংশয় থাকে না। খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, স্বাস্থ্য— সবই মানুষের অধিকার। কিন্তু এই অধিকারগুলি সংসদীয় রাজনীতির ছোঁয়ায় মানুষের কাছে ‘সুযোগ’ হয়ে ধরা দিচ্ছে।
প্রতাপচন্দ্র দাস
নবদ্বীপ, নদিয়া
নাম লাঠিশাল
‘দেশি ধান অমৃত সমান’ (১২-৮) প্রসঙ্গে কয়েকটি কথা। হাজারো রকমের ধান বাঙালির ঘর থেকে চিরতরে হারিয়ে গেল, কেউ তার খোঁজ রাখল না। বাঙালির রীতিনীতিতে, উৎসবে, ব্রততে, গৃহদেবতার ভোগে, পরবে ব্যবহৃত হয়ে কয়েকটি মাত্র কোনও ক্রমে বেঁচে রইল। পেট ভরার জন্য চলে এল উন্নত ফলনশীল সঙ্কর ধান। বাঙালি জীবনচরিত নিয়ে চর্চা করা বিখ্যাত লেখক আবদুল জব্বার তাঁর লেখার মধ্যে বাঙালি ঘরের শতাধিক ধানের উল্লেখ করে গিয়েছেন। সে সব বেশির ভাগ ধানের স্বাদ, গন্ধ তো দূরস্থান, আমরা নামই জানি না। কতকগুলি দেশি ধানের নাম দেওয়া গেল। ভাত, চিঁড়ে, খইয়ের ধানের মধ্যে রয়েছে কমলভোগ, দুর্গাভোগ, কাটারিভোগ, বাঁকতুলসী, কিশোরীভোগ, চামরমণি, দাদখানি, রূপশাল, সীতাশাল, রাজঝিঙেশাল, ঝিঙেশাল, সাবানশাল, কেউটেশাল, কলমিশাল, কুমড়োশাল, আঙুরশাল, লাঠিশাল। ভাত, পিঠে-পায়েস, চিঁড়ে-খই হয় যে সব চাল থেকে, তার মধ্যে রয়েছে বাসকামিনী, বাসমতী, গোলাপসরু, গোবিন্দতুলসী, পর্বতজিরে, বাদশাভোগ, কর্পূরশাল, পেশোয়ারী, দেহরাদূন, কনকচূড়া, মাগুরডিমে। আরও আছে মুড়ির ধান— পানবটি, পানকলস, ভাসাকলম, হামাই, হোগলা, ভাসামানিক, বাছাকলম, কলামোচা, বাবণ, ঘোটাব্যানা, গেঁড়িমুটি, পোলবিড়ে, রামকানাই, পাতাবাহার, বাঁশকাঠ, সাদামোটা, কালিন্দী, মালাপতি, সোমরা, কানাহেঁড়ে। চমৎকার সব নাম, বেশির ভাগই হারিয়ে গেল।
চম্পা খাতুন
কলকাতা-৯৯
ময়দানে সেই দিন
অর্ণব সাহার ‘কলকাতা ময়দানের কালো দিন’ (রবিবাসরীয়, ১৫-৮) নিবন্ধটি পড়লাম। আমার দাদু উপস্থিত ছিলেন সেই ভয়ঙ্কর দিনে। ১৬ অগস্ট ১৯৮০, ইডেন গার্ডেন্সে। কট্টর ইস্টবেঙ্গল সমর্থক ছিলেন দাদু। বলতেন, এমনিতেই ইস্টবেঙ্গল-মোহনবাগান ম্যাচে দারুণ ভিড় হত, কিন্তু সেই দিন নাকি অস্বাভাবিক ভিড় হয়েছিল ইডেনে। সারা ইডেন টগবগ করে ফুটছিল উত্তেজনায়। আর খেলার সময় যত গড়াচ্ছিল, তত সেই উত্তেজনার পারদ চড়ছিল একটু একটু করে। কিন্তু, দ্বিতীয়ার্ধের মাঠের মধ্যে সেই অবাঞ্ছিত ঘটনার পরই গ্যালারিতে মুহূর্তের মধ্যে বিশৃঙ্খলতা শুরু হয়ে যায়। দুই দলের সমর্থকদের মধ্যে প্রথমে হাতাহাতি, তার পর দেদার ইট ছোড়াছুড়ি হতে থাকে। চোখের সামনে দাদু দেখেছিলেন, গন্ডগোলের সময় কী ভাবে উপরের গ্যালারি থেকে নীচের গ্যালারিতে দু’হাত ধরে ঝুলিয়ে নামানো হচ্ছে একের পর এক অসুস্থ ও আহত মানুষকে। দাদুর তখন ষাটের কোঠায় বয়স। ওই সব দেখে, শরীরটা খুবই খারাপ লাগতে শুরু করায়, তিনি এক পুলিশকর্মীর সাহায্যে কোনও মতে স্টেডিয়াম থেকে বেরোন। বুঝতেই পারেননি, ওই বিশৃঙ্খলা ১৬ জন ফুটবল-প্রিয় মানুষের প্রাণ কেড়ে নেবে। দুঃসংবাদটি পান পর দিন সকালে, বাড়িতে খবরের কাগজ আসার পর।
সৌরীশ মিশ্র
কলকাতা-৯১
ট্রামের টায়ার
পুলিশের আবেদনের প্রেক্ষিতে সরকার অব্যবহৃত ট্রামলাইন তুলে নিতেই পারে (‘অব্যবহৃত ট্রামলাইন তুলতে পুলিশের আবেদন’, ১১-৮)। তবে সরকারের কাছে আবেদন, মাথার উপরে ইলেকট্রিক সার্কিটগুলো এখনই ধ্বংস করবেন না। সান ফ্রান্সিসকোতে দেখেছিলাম, টায়ারের চাকা লাগানো ট্রাম উপরের সার্কিট থেকে পাওয়ার নিয়ে দিব্যি চলছে। বরং তার চলার স্বাধীনতা আরও বেড়েছে, একই সঙ্গে ব্যাটারির ব্যবস্থা থাকার জন্য।
অনুপ কুমার তোকদার
কলকাতা-৫৯
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy