‘সুরক্ষাহীন’ (৮-৬) শীর্ষক সম্পাদকীটি অত্যন্ত সময়োপযোগী। সম্প্রতি আধার কার্ডের জালিয়াতি ও প্রতারণা রুখতে ও জনস্বার্থের কথা চিন্তা করে কেন্দ্রীয় সরকার এক নয়া নির্দেশিকায় মাস্কড আধার কার্ডের সুবিধা ব্যবহার করার কথা ঘোষণা করে। এবং আটচল্লিশ ঘণ্টা না কাটতেই আধারের দায়িত্বপ্রাপ্ত ইউআইডিএআই-এর মাধ্যমে তা প্রত্যাহারও করে নেয়। জানা গেল, ওই নির্দেশিকায় আধারের প্রতিলিপি ব্যবহার না করার ও আধারের শেষ চারটি নম্বর ব্যবহারের সুবিধার কথা উল্লেখ করা ছিল। কিন্তু কোন অজ্ঞাত কারণে আদেশনামাটি প্রত্যাহৃত হয়ে গেল, বোঝা গেল না।
অস্বীকার করার উপায় নেই যে, বর্তমান সামাজিক প্রেক্ষাপটে আধার কার্ড প্রতিটি ভারতীয় নাগরিকের ব্যক্তিগত স্বার্থে অতি প্রয়োজনীয় ও মূল্যবান এক দলিল, যার মধ্যে সরকারি ব্যবস্থাপনায় গোপনে সুরক্ষিত থাকে তাঁর যাবতীয় ব্যক্তিগত তথ্য। ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতায় আমরা জানি যে, প্রত্যেক নাগরিকের দৈনিক কর্মজীবনের প্রায় প্রতি মুহূর্তে, অফিস-আদালত থেকে শুরু করে ব্যাঙ্ক-বিমা-পুরসভা-স্কুল-কলেজের বিভিন্ন দরকারি কাজের ক্ষেত্রেও প্রায়শই চরম হয়রানির সম্মুখীন হতে হয় এবং হতে হচ্ছে। এটাও লক্ষণীয়, অনেক সময় কারণে-অকারণে ক্ষেত্রবিশেষে এই কার্ড বিভিন্ন স্থানে জমা দেওয়ার জন্য পীড়াপীড়ি করা হয়। প্রশ্ন জাগে, সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের আধার কার্ড চাওয়ার এক্তিয়ার কতটুকু? এই বিষয়ে জনসাধারণের সম্যক ধারণা থাকে না বলে বাধ্য হয়েই গুরুত্বপূর্ণ এই আধার কার্ড তাঁদের জমা রাখতে হয় বা অজানতেই অন্যের হাতে সঁপে দিতে হয়। সুতরাং, এই দিকটাও সরকারকে পরিষ্কার ভাবে ব্যাপক প্রচারের মাধ্যমে জানানো দরকার। নয়তো দুষ্কৃতীদের পাতা ফাঁদে মানুষের পা দেওয়ার প্রভূত সম্ভাবনা থেকে যায়।
আমরা প্রায় প্রতি দিনই সংবাদমাধ্যমে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ঘটে যাওয়া সাইবার ক্রাইমের কথা জানতে পারি। তা সত্ত্বেও মানুষ এই দুষ্টচক্রের পাতা ফাঁদের শিকার হয়ে জীবনের শেষ সম্বলটুকুও হারিয়ে ফেলেন। তাই সরকারকে সবার আগে আধার কার্ডের তথ্যের নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তার ব্যবস্থা করে জনগণের আধার তথ্যের যথাযথ সুরক্ষা প্রদান করতে হবে। আধার কার্ডের তথ্য সুরক্ষিত রাখার দায়িত্ব স্বাভাবিক ভাবেই সরকারের উপরই বর্তায়, দেশবাসীর স্বার্থে তা ভুলে গেলে চলবে না।
শ্রীকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়, নবদ্বীপ, নদিয়া
বিস্মৃত চিকিৎসক
পয়লা জুলাই, অর্থাৎ ‘ডক্টরস ডে’। এই দিনটিকে সকলে প্রখ্যাত চিকিৎসক বিধানচন্দ্র রায়ের জন্ম ও মৃত্যুদিন হিসেবেই জানেন। কিন্তু এই তারিখে জন্ম হয়েছিল বাংলার আরও এক খ্যাতনামা চিকিৎসক যামিনী ভূষণ রায়ের। সে কথা খুব বেশি মানুষ মনে রাখেননি। তাঁর জন্মদিন পালন নিয়ে সরকারি বা বেসরকারি কোনও মহলে তেমন আগ্রহ চোখে পড়ে না।
১৮৭৯ সালের ১ জুলাই বাংলাদেশের খুলনা জেলার পয়গ্রামে যামিনী ভূষণের জন্ম। ১৯০৫ সালে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ থেকে তিনি ব্যাচেলর অব মেডিসিন ডিগ্রি অর্জন করেন এবং মেধার মূল্যায়নে স্বর্ণপদক পান। কিন্তু আয়ুর্বেদ চিকিৎসাবিজ্ঞান তাঁর মনকে গভীর ভাবে নাড়া দেয় এবং আয়ুর্বেদচর্চায় তিনি মনোনিবেশ করেন। তৎকালীন মাদ্রাজে সপ্তম জাতীয় বৈদ্য সম্মেলন থেকে ফিরে তিনি রাজবৈদ্য বিরজাচরণ গুপ্তের সহযোগিতায় তখনকার ২৯ নং ফড়িয়াপুকুর স্ট্রিটে তিন বৎসরের চুক্তিতে এক ভাড়াবাড়িতে ১২ জন বিদ্যার্থী ও তিন জন শিক্ষক নিয়ে অষ্টাঙ্গ আয়ুর্বেদ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯২৫ সালের ২ মে মহাত্মা গান্ধীর মাধ্যমে বিদ্যালয়ের ভিত্তি স্থাপন উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। এটি বর্তমানে এশিয়া মহাদেশের প্রাচীনতম আয়ুর্বেদ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ‘জে বি রায় স্টেট আয়ুর্বেদ মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল’। আয়ুর্বেদ সিলেবাসে অ্যানাটমি ও ফিজ়িয়োলজি-র সংযোগ এবং শব-ব্যবচ্ছেদকে যোগ করা তাঁর মস্তিষ্কপ্রসূত। মৃত্যুর আগে তিনি তাঁর সঞ্চিত লক্ষাধিক টাকা ও সম্পত্তি আয়ুর্বেদের উন্নতিকল্পে দান করে যান। ১৯২৬ সালের ১১ অগস্ট মাত্র ৪৭ বৎসর বয়সে তাঁর মৃত্যু হয়।
সুমিত সুর, গোয়ালাগেরিয়া, পশ্চিম মেদিনীপুর
উচিত শিক্ষা
কিছু দিন পূর্বে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়-সহ তাঁর মন্ত্রিসভার কিছু মন্ত্রী সম্পর্কে সমাজমাধ্যমে কুরুচিকর মন্তব্য করে গ্রেফতার হয়েছিলেন রোদ্দূর রায়। এই পদক্ষেপ সমর্থনযোগ্য। বহু দিন ধরে তিনি বাক্স্বাধীনতার নামে সমাজমাধ্যমে নানা আপত্তিকর কথা বলে চলেছেন। এর আগে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গান বিকৃত করে গেয়েছিলেন। তাতে ‘উদ্বুদ্ধ’ হয়ে তরুণ প্রজন্মের অনেকেই সেই গান গাইতে শুরু করে। আজ রাজ্যের বিরোধী দলের অনেকেই রোদ্দূর রায়ের গ্রেফতারে উষ্মা প্রকাশ করেছেন। তিনি যদি জ্যোতি বসু, বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য, প্রণব মুখোপাধ্যায় বা অটলবিহারী বাজপেয়ীর সম্পর্কে কটূক্তি করতেন, তা হলেও কি তাঁরা ‘মতপ্রকাশের অধিকার’ হিসেবে সেটা মেনে নিতে পারতেন? রোদ্দূর রায় যদি কোনও বাম, কংগ্রেস বা বিজেপিশাসিত রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী সম্পর্কে কুমন্তব্য করেন, তা হলে কি সংশ্লিষ্ট রাজ্য সরকারের তরফ থেকে কোনও ব্যবস্থাই করা হবে না?
রোদ্দূর রায়ের বিরুদ্ধে যে সব ধারা দেওয়া হয়েছে, তা নিয়ে বিতর্ক থাকতে পারে, কিন্তু মতপ্রকাশের স্বাধীনতার নামে সমাজমাধ্যমে গালাগাল করা সমর্থনযোগ্য নয়। ভারতের সংবিধান কাউকে সেই অধিকার দেয়নি।
অভিজিৎ ঘোষ, কমলপুর, উত্তর ২৪ পরগনা
বাইরের মানুষ?
মাননীয় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে কেন বাংলা সাহিত্য আকাদেমির বিশেষ সম্মান দেওয়া হয়েছে, বিধানসভায় এই বিতর্কের ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে আকাদেমির চেয়ারম্যান তথা রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী বলেছেন যে, এই পুরস্কার তাঁকে দেওয়া হয়েছে সাহিত্য জগতের বাইরের মানুষ হিসাবে ধারাবাহিক ভাবে সাহিত্য চর্চার জন্য।
প্রশ্ন হল ‘সাহিত্য জগতের বাইরের মানুষ’ বলতে আমরা কী বুঝব? কোনও ব্যক্তি যখন সাহিত্য চর্চায় নিয়োজিত হন, তখন কি তিনি সাহিত্য জগতের বাইরের মানুষ থাকেন? সাহিত্য চর্চা মানেই তো সাহিত্য জগতের অঙ্গ হয়ে ওঠা। তা ছাড়া পেশায় সাহিত্য জগতের মানুষ নন, অথচ নিরলস ভাবে সাহিত্য চর্চা করে গিয়েছেন, এমন দৃষ্টান্ত বাংলা সাহিত্যে অপ্রতুল নয়। বঙ্কিমচন্দ্র, দ্বিজেন্দ্রলাল, বনফুল, বুদ্ধদেব গুহ, নবকুমার বসু— এঁরা কেউই সেই অর্থে ‘সাহিত্য জগতের মানুষ’ নন। অথচ, সৃজনশীল সাহিত্যের প্রসঙ্গ এলে এঁদের নাম উচ্চারিত হবেই। পেশা যা-ই হোক না কেন, এঁদের নেশা সাহিত্য রচনা বলে এঁরা অবশ্যই সাহিত্য জগতের মানুষ।
বাংলা সাহিত্যে এমন সাহিত্যিকের সংখ্যা নেহাত কম নয়, যাঁরা জীবিকার প্রয়োজনে অন্য কাজে নিযুক্ত, কিন্তু সাহিত্য ভালবাসেন বলেই নিরলস সাহিত্য সাধনার সঙ্গে যুক্ত। এ-হেন আর্থ-সামাজিক কাঠামোয় ক’জন আর আছেন, যাঁরা একমাত্র সাহিত্যকেই জীবিকা হিসাবে বেছে নিতে পারেন? সেই অর্থে এক বিপুল পরিমাণ সাহিত্যসেবীই তো সাহিত্য জগতের বাইরের মানুষ। সুতরাং, এমন অনেক দৃষ্টান্তই দেখানো যেতে পারে। আর যদি সেই দৃষ্টান্ত স্থাপন করা না-ই যায়, তা হলে ভবিষ্যতে এই পুরস্কারের জন্য কাকে নির্বাচিত করা হবে? কেবলমাত্র রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বকে?
পুরস্কার তাঁকেই দেওয়া হোক যাঁর সাহিত্যে কালোত্তীর্ণ হওয়ার লক্ষণগুলি বর্তমান। মাননীয় মুখ্যমন্ত্রীর সাহিত্যে যদি সেই লক্ষণ থাকে, অবশ্যই তিনি বেঁচে থাকবেন বাঙালি পাঠকের মনে। নয়তো পুরস্কারের স্মারকটি শুধুমাত্র প্রাপকের ঘর সমৃদ্ধ করবে। তার দ্বারা সাহিত্যের মহৎ উপকার কিছু হবে না।
অচিন্ত্য বিশ্বাস, কলকাতা-৬৭
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy