কৃষি আইনের জটিলতা কাটার আগেই আসন্ন সংসদের শীতকালীন অধিবেশনে ব্যাঙ্ক বেসরকারিকরণের বিল আনতে চলেছে মোদী সরকার (‘৩ কৃষি আইনের জট রেখেই কেন্দ্র আনছে ব্যাঙ্ক বিল’, ২৪-১১)। এ কথা ঠিক যে, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলির ক্রমবর্ধমান অনাদায়ি ঋণের পরিমাণ খুবই উদ্বেগজনক। কিন্তু এর জন্য দায়ী বড় কর্পোরেট সংস্থাগুলি, যাদের সঙ্গে রাজনৈতিক নেতাদের গাঁটছড়ার কথা সর্বজনবিদিত। কেন্দ্রীয় সরকার রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলির গায়ে ‘অলাভজনক’ তকমা লাগিয়ে বিক্রি করে দিতে চাইছে। চিরদিন কিন্তু রাষ্ট্রায়ত্ত ও বেসরকারি ব্যাঙ্কের অনাদায়ি ঋণের অনুপাতে এতটা তফাত ছিল না। ২০০৭-০৮ সালের হিসাব অনুযায়ী, নতুন বেসরকারি ব্যাঙ্কগুলির অনাদায়ি ঋণ ছিল তাদের মোট ঋণের ২.৫%, সেখানে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কে অনাদায়ি ঋণ ছিল ২.২%। রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের পরিসংখ্যান বলছে, ২০১৪-১৫ সাল থেকে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কে অনাদায়ি ঋণ লাফ দিয়ে বেড়েছে। তাই দায়টা কেন্দ্রীয় সরকার অস্বীকার করতে পারে না।
রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের টাকা রাখার ক্ষেত্রে আমানতকারীদের ভরসা এটাই যে, জমা টাকা সুরক্ষিত রাখার দায়িত্ব কেন্দ্রের। স্বভাবতই প্রশ্ন জাগে, তা হলে কি সেই দায়িত্ব ঝেড়ে ফেলতেই ব্যাঙ্ক বেসরকারিকরণে এতটা তৎপর কেন্দ্রীয় সরকার? মুনাফার কথা না ভেবে প্রত্যন্ত অঞ্চলে পরিষেবা দেয় রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক। কৃষিঋণ বণ্টন থেকে শুরু করে বহু সরকারি প্রকল্প বিনা মুনাফায় কার্যকর করে। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক সর্বসাধারণের জন্য পরিষেবা দেয়, যাকে বলে ‘মাস ব্যাঙ্কিং’। অন্য দিকে, বেসরকারি ব্যাঙ্কের সর্বসাধারণের প্রতি কোনও দায়বদ্ধতা নেই। মুনাফা যেখানে, সেখানেই তাদের পরিষেবা, যাকে বলে ‘ক্লাস ব্যাঙ্কিং’। তা হলে
কি কেন্দ্রীয় সরকার চাইছে সর্বসাধারণের জন্য ব্যাঙ্কের দরজা বন্ধ হয়ে যাক?
২০১৭ থেকে ২০২০ পর্যন্ত চার হাজারের বেশি বেসরকারি সংস্থা দেউলিয়া ঘোষণা হওয়ার অপেক্ষায়। এদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের কয়েক লক্ষ কোটি টাকা ঋণ না মেটানোর অভিযোগ। তাদের হাতেই কেন্দ্রীয় সরকার তুলে দিতে চাইছে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলিকে। ওই টাকার নিরাপত্তার গ্যারান্টি কে দেবে? দেরিতে হলেও মোদী সরকার জনবিরোধী নীতির ভুল বুঝে কৃষি আইন প্রত্যাহার করেছে। বেসরকারি হাতে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলিকে তুলে ভবিষ্যতে দেশবাসীর কাছে জবাবদিহি করতে হবে।
রবীন রায়, শ্যামনগর, উত্তর ২৪ পরগনা
আলাদা কাউন্টার
সব ধরনের ব্যাঙ্কে গ্ৰাহকদের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। বেড়েছে ব্যাঙ্কের চাপ। এটা ভাল দিক। সরকারেরও উদ্দেশ্য মানুষকে ব্যাঙ্কমুখী করে তোলা। বিভিন্ন ধরনের পেনশন, বার্ধক্য ভাতা, বিধবা ভাতা, প্রতিবন্ধী ভাতা, মানবিক ভাতা প্রভৃতি পরিষেবা ব্যাঙ্কেই ভাল পাওয়া যায়। মুশকিল হল, কোনও ব্যাঙ্কে বয়স্ক, অসুস্থ, বা প্রতিবন্ধী মানুষের জন্য কোনও কাউন্টার নেই। এই মানুষদের সাধারণ গ্ৰাহকদের সঙ্গে একই লাইনে দাঁড়াতে হয়। ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়ানোর হয়রানি স্বীকার করতে হয়। অনেকে অসুস্থ বোধ করেন। লাইনের ভয়ে এঁরা ব্যাঙ্কে না এসে বাড়িতে থাকেন, তাই হতাশায় ভোগেন। এঁদের অনেকে অনলাইন পরিষেবাতেও অভ্যস্ত নন। বয়স্ক, অসুস্থ ও প্রতিবন্ধী নাগরিকদের জন্য সব ব্যাঙ্কে একটা করে কাউন্টার খুলে পরিষেবা দেওয়া হোক।
কাটুক ব্যাঙ্কভীতি।
দীপংকর মান্না, আমতা, হাওড়া
অ্যাপ হয়রানি
বিভিন্ন পরিষেবার বিল মেটানো বা ‘পেমেন্ট’ করার জন্য মানুষ বিভিন্ন অ্যাপ ব্যবহার করেন। সরকার কর্তৃক বা সমাজমাধ্যমে এমন নানা অ্যাপের বিজ্ঞাপন মানুষকে প্রলুব্ধ করে। বর্তমানে বিদ্যুতের বিল মেটানোর ক্ষেত্রে ‘কিউ আর কোড’ দেওয়া হয়। কিন্তু সেটি ব্যবহার করে পেমেন্ট করলে বিপদ ঘটে। দেখা যায়, অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা কেটে নিয়েছে, কিন্তু পেমেন্ট হয়নি। এর পর অ্যাপ-এর কর্মীরা গ্রাহককে ব্যাঙ্কে পাঠায়, আর ব্যাঙ্ক বলে অ্যাপ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করার জন্য। মাঝে পরিষেবা-প্রদানকারী ‘মার্চেন্ট’ অভিযোগ করে, পেমেন্ট করা হয়নি। এই করোনাকালে ভরসা করতেই হয় ‘প্রিপেড পেমেন্ট ইনস্ট্রুমেন্টস’ (পিপিআই)-এর উপর, কিন্তু তার পর গ্রাহককে হয়রান হতে হয়। এর পর ‘ন্যাশনাল পেমেন্টস কর্পোরেশন অব ইন্ডিয়া’ বা এনপিসিআই-তে অভিযোগ দায়ের করতে হবে। তার পরে কিছু হলে ভাল, না হলে টাকাগুলো গেল। তা ছাড়া এনপিসিআই-তে বাংলা ভাষা নেই। এর সহজ সমাধান চাই।
গিয়াসুদ্দিন মণ্ডল, আটঘরা, দক্ষিণ ২৪ পরগনা
এই পুরস্কার?
সংসদের শীতকালীন অধিবেশনে কেন্দ্রীয় সরকার ব্যাঙ্ক বেসরকারিকরণের উদ্দেশে ‘ব্যাঙ্কিং আইন সংশোধনী বিল ২০২১’ আনতে চলেছে। ১৯৬৯ ও ১৯৮০ সালে দুই দফায় মোট ৩৪টি ব্যাঙ্ক জাতীয়করণ করা হয়েছিল। ইন্দিরা গাঁধীর জনপ্রিয়তার অন্যতম কারণ এই সিদ্ধান্ত। সেই থেকে সমাজের প্রান্তিক অংশের বিকাশে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলি উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে আসছে। নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্তের সঞ্চয়ের অন্যতম ভরসাস্থল বলতে সাধারণ মানুষ আজও ব্যাঙ্ক ও পোস্ট অফিসকে চিনে থাকেন। প্রাইভেট ব্যাঙ্ক ফেল করে সর্বস্বান্ত হওয়ার ছবি ভেসে ওঠে মহানগর-এর অনিল চট্টোপাধ্যায় অভিনীত সুব্রতর চরিত্রে। দীর্ঘ কয়েক দশক ধরে চলে আসা ৩৪টি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক সংযুক্তিকরণের মাধ্যমে ১২টি করা হয়েছে। কোটি কোটি টাকা ঋণ খেলাপ করে বিদেশে পালিয়ে গিয়ে বহাল তবিয়তে রয়েছেন বিজয় মাল্য থেকে নীরব মোদী। নেতাদের প্রশ্রয় না পেলে তছরুপের এই ঘটনা ঘটতে পারে না। এ বার সেই ১২টি ব্যাঙ্কের মধ্যে দু’টি সরাসরি বেসরকারি হাতে তুলে দিতে বিল আনা হচ্ছে। সাফল্য বুঝে আরও দুই ব্যাঙ্ক বিলগ্নিকরণ করে রাজকোষ ভরানো হবে। নোট বাতিল ও অতিমারি পর্বে গ্রাহকদের ধারাবাহিক পরিষেবা জুগিয়ে ব্যাঙ্ক কর্মচারীরা পুরস্কৃত হতে চলেছেন এই পথে। প্রত্যন্ত এলাকায় শাখা খোলার দায় নেই, নেই স্বনির্ভর গোষ্ঠী ও চাষের জন্য স্বল্প ঋণ জোগানোর দায়। কেবল রয়েছে কর্মী সঙ্কোচন ও আমানতের উপর সুরক্ষা প্রত্যাহারের সিঁদুরে মেঘ। ব্যাঙ্ক পরিষেবার ফাঁক ভরানোর জন্য সদা তৎপর চিটফান্ড নামক ভুঁইফোঁড় সংস্থা। সরকার কি আমজনতার সঞ্চয় ছেড়ে দিতে চায় কর্পোরেট আর চিটফান্ডের উপরে?
সরিৎশেখর দাস, ব্যারাকপুর, উত্তর ২৪ পরগনা
দুর্নীতির গেরো
‘সিবিআই অনুসন্ধান স্থগিত, স্বস্তি রাজ্যের’ (২৫-১১) সংবাদের প্রেক্ষিতে প্রশ্ন করতে চাই, এই স্বস্তি কী ইঙ্গিত করে? স্কুল সার্ভিস কমিশনের গ্রুপ ডি পদে নিয়োগের যে ভয়ঙ্কর দুর্নীতি হাই কোর্টে উন্মোচিত হয়েছে, তা অভূতপূর্ব। কেউ জানে না, কী ভাবে এত মানুষ বেআইনি ভাবে নিয়োগ হয়ে গেলেন! সারদা-নারদ কাণ্ডের তদন্ত এখনও শেষ হয়নি। ছাত্র ভর্তিতে লেনদেনের অভিযোগ নিয়ে শিক্ষামন্ত্রী নাজেহাল। কিছু দিন আগে মুখ্যমন্ত্রী আহ্বান করেছিলেন, যাঁরা কাটমানি নিয়েছেন তাঁদের ফেরত দিতে হবে। দুর্নীতি নতুন কিছু নয়, কিন্তু প্রশাসনিক পদ থেকে তার সমর্থন এলে অবস্থাটা কঠিন হয়ে ওঠে। অধ্যক্ষকে ছাত্রেরা নিগ্রহ করলে বলা হচ্ছে, ‘ছেলেমানুষ বাড়াবাড়ি করে ফেলেছে’। আমপানে দুর্নীতির অভিযোগ উঠলে বলা হচ্ছে, ‘তাড়াতাড়িতে ভুল হয়ে গিয়েছে’।
ভয় হয়, আমরা নতুন প্রজন্মের কাছে কী রেখে যাচ্ছি? ছেলেবেলা থেকে চোখের সামনে যদি দেখে ‘সমব্যথী’ (অন্তিম কাজের জন্য আর্থিক সহায়তা) প্রকল্পের জন্যও কাটমানি দিতে হয়, তা হলে রাষ্ট্রের প্রতি সম্মানের বোধ গড়ে তোলা সম্ভব হবে কি?
অজয় দাস, উলুবেড়িয়া, হাওড়া
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy