Advertisement
০২ মে ২০২৪
Southern Avenue

সম্পাদক সমীপেষু: বিসদৃশ মূর্তি

ঘরের পাশেই সাদার্ন অ্যাভিনিউতে তাঁর মূর্তির নীচের নামফলক না পড়লে পথচলতি মানুষ বুঝতেও পারবেন না এটি কার প্রতিমূর্তি।

শেষ আপডেট: ২১ জুন ২০২২ ০৫:২৫
Share: Save:

‘জন্মদিনে হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের মূর্তিতে মালা দিয়ে শ্রদ্ধাজ্ঞাপন’ (১৭-৬) চিত্রসংবাদটি দেখে এই চিঠি। ছবির নীচে ক্যাপশনটি না পড়লে কোনও ভাবে বোঝা সম্ভব ছিল না মূর্তিটি প্রবাদপ্রতিম সঙ্গীতশিল্পীর। এই মূর্তিটি যাঁরই হোক, তিনি হেমন্ত মুখোপাধ্যায় নন। এক সময় বম্বের রাস্তাতে তাঁর মার্সিডিজ়টিকেও লোকে দেখামাত্র চিনতে পারতেন। একাধারে প্রযোজক, গায়ক, সঙ্গীত পরিচালক হিসেবে অমন যশস্বী মানুষ তখন ভূ-ভারতে একটিও ছিল না। আর আজ ঘরের পাশেই সাদার্ন অ্যাভিনিউতে তাঁর মূর্তির নীচের নামফলক না পড়লে পথচলতি মানুষ বুঝতেও পারবেন না এটি কার প্রতিমূর্তি। বাংলায় সরকারি ভাস্কর্য বলতে বহু দিন যাবৎই কেবল পুতুল গড়া বোঝায়। বাংলায় সরকারি উদ্যোগে যে জাতীয় মূর্তি স্থাপিত হয়ে আসছে, সেখানে শিল্পীর কল্পনা, বিমূর্ত ধারণা ইত্যাদি কথা বলে পার পাওয়ারও অবকাশ নেই। হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের মূর্তি দেখলে মনে হয়, পুতুল গড়ার কাজটুকু করার নিষ্ঠাও বুঝি বিরল হয়েছে।

হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের গান বাঙালি জীবনের অংশ। এখনকার বাঙালি প্রজন্মও বোধ হয় চোখ বুঝলেই দেখতে পায় তাঁর সাদা ধুতি, কনুইহাতা শার্ট, কালো চশমার বাঙালিয়ানা! তিনি জন্মশতবর্ষ পেরিয়েছেন, তিন দশকেরও বেশি প্রয়াত। তবু তিনি ও তাঁর অবয়ব মুছে যাননি একেবারেই। তা হলে কেন এই অসম্মান? অবশ্য, শুধু হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের মূর্তিই নয়, টালিগঞ্জে মহানায়ক উত্তমকুমারের মূর্তিও একই রকম— কী লেখা আছে, না পড়ে কার মূর্তি বোঝে, সাধ্য কার!

কর্তৃপক্ষেরও কি কোনও দায়িত্ব নেই? শহরের রাজপথের মূর্তিগুলি তার শোভা, ইতিহাসের বাহক এবং সাংস্কৃতিক গৌরবগাথার পরিচায়ক। ইদানীং এমন অনেক মূর্তিই চোখে পড়ে, যেগুলির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট মনীষীদের চেহারার মিলই নেই। সম্মান দেখানোর আতিশয্যে মানের সঙ্গে আপস হচ্ছে কি? মূর্তি গড়ার পরে মানুষটির পরিবারের থেকে অনুমোদনের বিষয়টি চালু হলে শিল্পীরা হয়তো সতর্ক থাকবেন।

মূর্তি নিয়ে রাজনীতি দেশ-বিদেশে কম হচ্ছে না। ফলে ধরে নেওয়া যায়, মূর্তি বিষয়টি হেলাফেলার নয়। কিন্তু নিজেদেরই কৃষ্টির কোনও পুরোধা ব্যক্তির এমনধারা বিসদৃশ মূর্তি? দাবি রইল, হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের এই মূর্তির, এবং অনুরূপ বাকি ভুল মূর্তিগুলির অবিলম্বে সংস্কার করা হোক— যদি মানুষগুলিকে সত্যিই যথাযথ সম্মান দেখাতে হয়।

শুভ্রা মুখোপাধ্যায়, কলকাতা-৯৬

সীমাবদ্ধ

‘সাহিত্যে স্বীকৃতি’ শীর্ষক পত্রের (২৯-৫) প্রেক্ষিতে কিছু কথা। পত্রলেখক রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে উদ্ধৃত করে বলতে চেয়েছেন যে, কোনও পুরুষ গ্রন্থকার মেয়েদের কথা তেমন করে লিখতে পারেন না, মেয়েরা মেয়েদের কথা যেমন করে লেখেন। তা বলে রবীন্দ্রনাথ ‘শাস্তি’ কিংবা ‘দেনাপাওনা’ গল্পে মেয়েদের মনের দুঃখটুকু বুঝতে পারেননি, সে কথা বলা যাবে না। তাই বিভাজনের অতিসরলীকরণে আস্থা রাখা যায় না। তা হলে সতীনাথ ভাদুড়ীর ‘ঢোঁড়াই চরিত মানস’ থেকে মুন্সী প্রেমচন্দের ‘সদ্‌গতি’-র মতো গল্পগুলির সৃষ্টি হত না।

সমাজের প্রান্তিক শ্রেণির কথা যদি কোনও নিম্নবর্গের লেখকের হাত ধরে উঠে আসে, তা সাধুবাদযোগ্য। আবার পুরুষশাসিত সমাজে নারীরা কলম ধরে নিজেদের কথা লিখতে পারলে, সেটাও তেমনই সাধুবাদের বিষয়। পরিশেষে শুধু এটুকুই বলা যায় যে, বিভাজনের মাধ্যমে সমাজের প্রতিটি কাজকে যদি নির্দিষ্ট বর্ণ, সম্প্রদায় বা শ্রেণির মধ্যে আটকে রাখা হয়, তা হলে বিভেদের সমস্যাটিই তীব্রতর হয়ে ওঠে। এক জন লেখক কিংবা লেখিকা নির্মোহ দৃষ্টিভঙ্গিতে সমাজজীবনের প্রতিটি বিষয়ের প্রতিই সুবিচার করতে পারেন, যদি তিনি লিখিত বিষয়টির উপাদান-উপকরণের গভীরে গিয়ে পর্যাপ্ত জ্ঞান আহরণের মাধ্যমে বিষয়ের প্রতি আলোকপাত করেন।

সঞ্জয় রায়, দানেশ শেখ লেন, হাওড়া

পীড়নের বিধি

বিধবাদের উপর যে বৈষম্যের অত্যাচার চাপিয়ে দেওয়া হয়, তা হটানোর পক্ষে সওয়াল করেছে ‘একটি আলোকরেখা’ (২৭-৫) সম্পাদকীয়টি। মহারাষ্ট্র যা পারে, সারা দেশেই তা দ্রুত চালু হতে পারে। থান কাপড়, অলঙ্কারাদি বর্জন, নিরামিষ আহার, চুলের কোনও বাহার চলবে না— এ রকম হাজার বিধি-নিষেধ চাপিয়ে দেওয়ার প্রথা সেই প্রাচীন যুগ থেকে চলে এসেছে! এ-হেন রীতিনীতি মানা বাধ্যতামূলক— এ কথা আমি অন্তত বিশ্বাস করি না। গত বছর আমার এক দিদি তাঁর স্বামীকে হারিয়েছেন করোনার করাল গ্রাসে। তার পর পারলৌকিক কাজ সমাধা হওয়ার পর তাঁর অব্যক্ত ব্যথা-যন্ত্রণা মোছার জন্য যথেষ্ট চেষ্টা করি আমরা। রঙিন শাড়ি, গয়না পরা, মাছ-ডিম পাতে দেওয়া থেকে শুরু করে উপোস প্রথা প্রত্যাহার— সব কিছুতেই তাঁকে আগের মতো প্রাত্যহিক যাপনে ফিরতে উৎসাহ দেওয়া হয়েছে। দেখা গিয়েছে, এতে তাঁর অন্তর-বেদনা অনেকটাই লাঘব হয়েছে।

অথচ, এখনও অনেক গৃহস্থবাড়িতেই বিধবাদের পৃথক ভাবে রাখা হয়। এবং সেখানে এই ধরনের চাপিয়ে-দেওয়া বিধিনিষেধ মানতে তাঁদের বাধ্য করা হয়! প্রশ্ন জাগে, তাঁদের মধ্যে ঔদার্য, বিজ্ঞানচেতনা, স্বাস্থ্য সচেতনতার কোনও আলোকবর্তিকা পৌঁছয়নি, না কি মেয়েদের উপর এক ধরনের অত্যাচারের পরম্পরা চলছে? এই অত্যাচারের বিরুদ্ধে সকল শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষকে একজোট হতেই হবে। না হলে নারী-পুরুষের মধ্যে বৈষম্য আরও প্রকট হবে।

বিবেকানন্দ চৌধুরী, কাটোয়া, পূর্ব বর্ধমান

গ্রন্থাগারের সদস্য

২০১৯ সালে পশ্চিমবঙ্গ সরকার মানুষকে গ্রন্থাগারমুখী করে তোলার জন্য সরকারি গ্রন্থাগারে ‘বার্ষিক সদস্য ফি’ মকুব করে দেয়। কিন্তু বর্তমানে গ্রন্থাগার বিভাগের একটা নতুন নিয়মের জন্য বইপ্রেমীদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দিচ্ছে। নতুন নিয়মটি হল, এক জেলা থেকে অন্য জেলায় এসে সরকারি গ্রন্থাগারগুলিতে সদস্য পদ নেওয়া যাবে না। তাই বিভিন্ন জেলা থেকে বহরমপুর শহরে পড়তে আসা বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের ছাত্রছাত্রীরা মুর্শিদাবাদ জেলা গ্রন্থাগারের সদস্য হতে পারছেন না।

আজ ‘এক দেশ এক রেশন কার্ড’-এর মাধ্যমে ভারতের যে কোনও প্রান্ত থেকেই এক জন সাধারণ নাগরিক তাঁর রেশন দ্রব্য তুলতে পারছেন। অথচ, গ্রন্থাগারের সদস্য হওয়ার মতো একটা সামান্য কাজে এত বাধা কেন? ভিনজেলার ছাত্রছাত্রীরা নিজেদের কলেজের আইডি কার্ড এবং হস্টেল বা মেসের টেম্পোরারি ঠিকানা দেখিয়ে কেন ওই জেলার গ্রন্থাগারের সদস্য হতে পারবেন না?

বিশ্বজিৎ সাহা, ফরাক্কা, মুর্শিদাবাদ

সংযোগ নেই

গত তিন দশক ধরে আমরা বিএসএনএল-এর গ্রাহক। আমাদের এলাকায় ল্যান্ডলাইন এবং ব্রডব্যান্ড নিয়ে প্রায়ই দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে। প্রায়ই সংযোগ বিচ্ছিন্ন থাকে। বালি ঘোষপাড়া এক্সচেঞ্জে এর কারণ জানতে গেলে অদ্ভুত অদ্ভুত যুক্তি শুনতে হয়। কখনও শুনি লাইন বসে গিয়েছে, কখনও শুনি কেব্‌ল কেটে গিয়েছে, কখনও রাস্তা কেটেছে। গত ২১ মে, ২০২২ থেকে ঘোষপাড়া এক্সচেঞ্জের মাকালতলা ইউনিটের দুর্গাপুর এলাকা সংযোগবিচ্ছিন্ন, কর্তৃপক্ষের বক্তব্য রাস্তা কাটা হয়েছে, কেব্‌ল কাটা গিয়েছে। কেব‌্‌ল কাটা গেলে তা এত দিনে জোড়া হল না কেন? বার বার রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি হলেও কেন আগাম সতর্কতা নেই? অথচ, দিনের পর দিন সংযোগ বিচ্ছিন্ন হলেও পুরো মাসের পুরো ভাড়া গুনতে হচ্ছে আমাদের।

মধুমিতা সরকার, বালি, হাওড়া

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Southern Avenue Lake Gardens Hemanta Mukherjee
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE