সামসুন নিহার-এর ‘অনেকটা পথ পেরিয়ে তবে...’ (২৯-১) প্রসঙ্গে বলতে হয় ব্যাপারটা একমুখী নয়, পারস্পরিক। এবং এটাই একমাত্র চিত্র নয়। আজ থেকে প্রায় ৪০ বছর আগে পর্যন্ত আমার কৈশোর এবং প্রথম যৌবন কেটেছিল কলকাতার দক্ষিণ-পশ্চিম প্রান্তের এক মিশ্র এলাকায়। সেখানে একই ক্লাসে একসঙ্গে সকলে পড়েছি, ধর্মীয় কারণে নিজেদের মধ্যে কোনও পার্থক্য আছে— এ কথা কখনও মনে স্থান পায়নি। একসঙ্গে সরস্বতী পুজো ও রবীন্দ্র জয়ন্তী উদ্যাপন ও উপভোগ করেছি। অন্য ধর্মাবলম্বী বন্ধুর বাড়িতে গিয়েছি ও খেয়েছি, কখনও মনে অন্য কোনও চিন্তা উদয় হয়নি; কোনও সমস্যাও হয়নি। এক জনের কাছ থেকে ইদ উপলক্ষে রান্না করা মাংস পাওয়ার অভিজ্ঞতা বিস্মরণীয় নয়। এর পরেও কর্মক্ষেত্রে সহকর্মী হিসেবে অনেককে পেয়েছিলাম, যাঁদের মধ্যে স্বামী-স্ত্রী ভিন্ন ধর্মালম্বীও ছিলেন; কিন্তু সৌহার্দ্য আন্তরিকতায় বা বাড়িতে যাতায়াতে অসুবিধা হয়নি কোনও তরফেই।
অতএব শ্রীমতী নিহারের অভিজ্ঞতা দুঃখজনক হলেও, সেটিকেই সাধারণ চিত্র ভাবা বোধ করি অতিসরলীকরণ হবে। এবং বিপরীত অভিজ্ঞতাও আছে— পুতুলপুজোর জন্য কটাক্ষ, সহকর্মীদের ফিস্টে বিশেষ পদ্ধতিতে কাটা না হলে মুরগির মাংস গ্রহণে অনীহা হেতু একটি মুরগিকে বিশেষ পদ্ধতিতে জবাই করার পর সেটি ওই অবস্থায় এনে দেখিয়ে পৃথক রান্নার ব্যবস্থা ইত্যাদি। তবে এর মধ্যে দ্বেষ বা ঘৃণার চেয়েও বেশি আছে ধর্মীয় আচার-বিচারের ভিন্নতা জনিত কুসংস্কার।
শান্তনু রায়
কলকাতা-৪৭
স্বাস্থ্যসাথী
‘স্বাস্থ্যসাথী: চিঠি দিতে ৩ কোটি’ (২৩-২) শীর্ষক খবরটি ঠিক নয়। স্বাস্থ্যসাথী কর্মসূচি সম্বন্ধে জনগণকে অবহিত করার জন্য জেলাকে নিয়মিত ভাবে ‘কন্টিনজেন্সি ফান্ড’ পাঠানো হয়। স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্প সম্বন্ধে সকলে যাতে জানতে পারেন ও তার সুবিধা নেন, সে জন্য নিয়মিত প্রচার অভিযান চালানো হয়।
সম্প্রতি এই খাতে জেলাকে কিছু অর্থ বরাদ্দ করা হয় এবং এটি সত্য নয় যে চিঠি পাঠানোর জন্য এই অর্থ প্রদান করা হয়েছে।
অজয় কুমার চক্রবর্তী
স্বাস্থ্য অধিকর্তা, পশ্চিমবঙ্গ সরকার
প্রতিবেদকের উত্তর: রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের এক নির্দেশিকার প্রেক্ষিতেই এই প্রতিবেদন। গত ১৯ ফেব্রুয়ারি স্বাস্থ্য ভবন থেকে জেলাগুলোয় ওই নির্দেশিকা পাঠানো হয়। নির্দেশিকার মেমো নম্বর: HFW- 12018 (11)/1/2018- SWASTHYASATHI SEC dept of H&FW/1064। তাতে উল্লেখ রয়েছে, ‘স্বাস্থ্যসাথী’ প্রকল্পের প্রত্যেক উপভোক্তাকে মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রীর বার্তা প্রদান করার উদ্দেশ্যেই ওই অর্থ বরাদ্দ করা হয়েছে। সঙ্গে এ-ও জানানো হয়েছে যে, পরবর্তী সময়ে বরাদ্দ অর্থের অতিরিক্ত অর্থের প্রয়োজন হলে ‘কন্টিনজেন্সি ফান্ড’ থেকে তা দেওয়া যাবে। গত শুক্রবার হুগলির প্রশাসনিক জনসভায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজেও প্রকাশ্যেই ঘোষণা করেন, ‘‘আপনাদের (উপভোক্তাদের) বাড়ি বাড়ি স্বাস্থ্যসাথীর চিঠি যাবে।’’ স্বাস্থ্যসাথীর উপভোক্তাদের বাড়ি বাড়ি যে চিঠি যাবে এবং জেলায় যে তার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে, তা স্বীকার করেছেন পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলাশাসক পি মোহন গাঁধীও। তাঁর বক্তব্যও প্রতিবেদনে ছাপা হয়েছে।
কেশবচন্দ্র নাগ
কেশবচন্দ্র নাগ সম্পর্কে শিশির রায়ের লেখাটি (‘অঙ্কে ভুল করলেও পিঠে ধাঁইধপাধপ নয়’, রবিবাসরীয়, ১৭-২) পড়ে অনাবিল আনন্দ পেয়েছি। মিত্র স্কুলে আমি চল্লিশের দশকের মাঝামাঝি ভর্তি হয়ে ১৯৫১ সালে ম্যাট্রিক পরীক্ষা দিয়ে বেরিয়েছি। লেখাটি পড়তে পড়তে নিজের অজান্তেই আমার চুরাশি বছর বয়সের অনেকগুলো বছর টপকে ফিরে গিয়েছিলাম স্কুলে। কেশববাবু স্যরকে আমরা জানতাম গুরুগম্ভীর, রাশভারী অঙ্কের জাহাজ বলে। কিন্তু স্কুলের বাইরে যে তাঁর এমন চমৎকার বহুমুখী, সর্বাঙ্গসুন্দর, বৈচিত্রময়, রসময় জীবন ছিল তা জানতাম না।
একটি ঘটনা উল্লেখ করার ইচ্ছা সংবরণ করতে পারছি না। তখন ক্লাস টেন-এ পড়ি। এক দিন সংস্কৃতের এক মাস্টারমশাইয়ের ক্লাসে আমরা ভীষণ গোলমাল করছি। স্যর ভীষণ চটে গিয়ে একটি খাতার পাতা ছিঁড়ে ছ’জন ছেলের নাম লিখে, কাগজ ভাঁজ করে টেবিলের একপাশে রেখে দিলেন। আমাদের মধ্যে এক জন ঠিক ওই রকম একটি কাগজ ভাঁজ করে, জল খাওয়ার নাম করে নিমেষে ম্যাজিশিয়ানের মতো স্যরের লেখা কাগজটি নিয়ে সাদা কাগজটা রেখে বেরিয়ে গেল। সঙ্গে সঙ্গে গোলমাল আরও বাড়ল। ক্লাস শেষ না হতেই স্যর কাগজ নিয়ে সোজা চলে গেলেন হেডমাস্টারমশাইয়ের ঘরে। বললেন, এই নাম লেখা ছেলেগুলো ভারী দুষ্টু, ক্লাস চলতে দেয় না, এদের শাস্তি দিতে হবে।
হেডস্যর উল্টেপাল্টে দেখলেন, ওতে কিছুই লেখা নেই। তখন ওখানে কেশববাবু বসে ছিলেন। উনি হেডস্যরকে বললেন, আপনাকে কিছু করতে হবে না, ব্যাপারটা আমি দেখছি। উনি আমাদের ক্লাসে এসে বললেন, ছুটির পরে কেউ বাড়ি যাবে না। তোমরা ডিটেন্ড থাকবে। আমি আসব পড়াতে। এ কথা শুনে তো আমাদের রক্ত চলাচল বন্ধ, হৃৎস্পন্দন স্তব্ধ। ছুটির পরে তিনি যখন এলেন তখন দেখলাম তাঁর অন্য এক রূপ। সোজা চলে গেলেন ব্ল্যাকবোর্ডে। হাসিমুখে বোর্ড ভর্তি করে বহু সংখ্যা আর নানা রকম অঙ্ক লিখে দেখালেন, অঙ্ক দিয়ে কত রকম মজার আর অবিশ্বাস্য ব্যাপার ঘটানো যায়। আমরা অঙ্কের অন্য রূপ তো দেখছিই, সেই সঙ্গে মুগ্ধ বিস্ময়ে সসম্ভ্রমে স্যরকে দেখছি আর ভাবছি, ইনিই কি আমাদের পরিচিত কেশবচন্দ্র নাগ?
তুষারকান্তি মজুমদার
বার্নপুর রোড, আসানসোল
চেনা শত্রু
চন্দ্রিল ভট্টাচার্যের ‘একটু বুদ্ধি করে চলতে হবে না!’ (২০-২) লেখাটির ভণিতায় ঠিক সুর বাজলেও উপসংহারটি বেসুরো ঠেকল। লেখক যে পদ্ধতিতে বুদ্ধিপ্রয়োগের বিধান দিয়েছেন, তা যদি কোনও সপ্রতিভ ক্ষমতাকেন্দ্রের নীতি হয়, তা হলে সেটা সমাজের শিরায় স্লো পয়জ়নিং-এর শামিল হত। পুকুরে তরঙ্গও উঠত না এবং ব্যঙ্গকৌতুকের বিষদাঁত এমন ভাবে ভাঙত, যে আখেরে তা বর্ধমানের রাজার ‘বাংলা মহাভারত’-এর মতো হত, যা বুঝিয়ে না দিলে বোঝা যায় না। এটা আমাদের সৌভাগ্য যে, হায়ার অথরিটি ক্রোধের বশ, তাই বিচিত্র কাণ্ডকারখানার মাঝে রকম-সকমটাও জানা হয়ে যায়। যতই হোক ‘অচেনা বন্ধু’র চেয়ে ‘চেনা শত্রু’ ঢের ভাল। নয় কি?
বিদ্রোহী রায়
কলকাতা-৫৬
বিদ্যাশ্রী
স্কুলে পড়ুয়াদের ভোটে কিছু শিক্ষককে যদি ‘বিদ্যাশ্রী’ উপাধি, শংসাপত্র ও পুরস্কার দেওয়া হয়, তা হলে যাঁরা ভোট পেলেন না, বা কম পেলেন, তাঁদের অবস্থা কী হবে? স্কুলে তো শিক্ষকদের মধ্যে দুটো শ্রেণি তৈরি করে দেওয়া হল। এই শ্রেণিবৈষম্য শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীদের সম্পর্কের ক্ষেত্রে বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে, শিক্ষার্থীরা হয়তো অার সব শিক্ষককে সমান চোখে দেখবে না।
রতন চক্রবর্তী
উত্তর হাবরা, উত্তর ২৪ পরগনা
জ্যামার
এ বারের মাধ্যমিক পরীক্ষায়, প্রশ্ন পরীক্ষার হলের বাইরে চলে গেল। সে জন্য কখনও শিক্ষক, কখনও ছাত্রকে দায়ী করা হল। যে প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে শিক্ষক বা ছাত্র প্রশ্ন পাচার করছে, সেটিকে বন্ধ করলেই তো হয়। পরীক্ষাকেন্দ্রে যদি ‘জ্যামার’ ব্যবহার করা হয়, তা হলেই তো আর মোবাইল ব্যবহার করা যাবে না। প্রশ্নও বাইরে পাঠানো যাবে না।
বিজয় কুমার দাশ
বহরমপুর, মুর্শিদাবাদ
চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা
সম্পাদক সমীপেষু,
৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট, কলকাতা-৭০০০০১।
ইমেল: letters@abp.in
যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়। চিঠির শেষে পুরো ডাক-ঠিকানা উল্লেখ করুন, ইমেল-এ পাঠানো হলেও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy