Advertisement
২৩ মে ২০২৪
Jawaharlal Nehru

সম্পাদক সমীপেষু: প্রথম থেকেই

রীতি অনুযায়ী, সংবিধানে প্রথম স্বাক্ষর করার কথা সংবিধান সভার সভাপতি রাজেন্দ্রপ্রসাদের এবং তার পরে অন্য সদস্যদের।

—ফাইল চিত্র।

—ফাইল চিত্র।

শেষ আপডেট: ০১ জানুয়ারি ২০২০ ০০:০২
Share: Save:

সুগত বসুর ‘সামনে দীর্ঘ সত্যাগ্রহ’ (২৫-১) শীর্ষক প্রবন্ধের সঙ্গে সংবিধানে স্বাক্ষররত জওহরলাল নেহরুর ছবি প্রকাশিত হয়েছে। ছবিটি আমার মনে হয়েছে, প্রতীকী। মূল সংবিধানের শেষে সংবিধান সভার সকল সদস্যের স্বাক্ষর আছে। আর মজার ব্যাপার হল, এই স্বাক্ষর করার প্রক্রিয়ার সময়েই শুরু করা হয়েছিল সংবিধান-সংক্রান্ত ঝামেলা। আর তা শুরু করেছিলেন স্বয়ং নেহরু!

রীতি অনুযায়ী, সংবিধানে প্রথম স্বাক্ষর করার কথা সংবিধান সভার সভাপতি রাজেন্দ্রপ্রসাদের এবং তার পরে অন্য সদস্যদের। কিন্তু জওহরলাল, সভাপতি রাজেন্দ্রপ্রসাদের স্বাক্ষরের কোনও জায়গা না রেখেই প্রথম স্বাক্ষরটি করে দেন, ফলে রাজেন্দ্রপ্রসাদ উষ্মা প্রকাশ করেন এবং জওহরলালের স্বাক্ষরের উপরে কোনাকুনি ভাবে কোনও রকমে স্বাক্ষর করতে বাধ্য হন। স্বাক্ষররত জওহরলালের ছবিটি প্রকাশের সঙ্গে এই তথ্যটিও প্রকাশ পেলে, ভাল হত।

বিনয়ভূষণ দাশ

গোপজান, মুর্শিদাবাদ

সামাজিক বিশ্বাস
কৌশিক বসু তাঁর সাক্ষাৎকারে (‘পথ দেখানোর লোক নেই’, ১৪-১) বলেছেন, ‘‘ধরো, আমি ব্যাঙ্ক থেকে বাড়ি তৈরি করার জন্য ঋণ নিচ্ছি। সে ক্ষেত্রে ব্যাঙ্কের খুব একটা ভাবার দরকার নেই আমি ভাল লোক না খারাপ লোক— ...বড় কর্পোরেট সংস্থার আর্থিক লেনদেন মূলত চুক্তিভিত্তিক হয়, ফলে সামাজিক বিশ্বাসের ওপর ততটা গুরুত্ব তাদের না দিলেও চলে।’’ এই ভাবনা মানতে অসুবিধে হচ্ছে।
১৯৮০-র দশক। সবে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কে কাজ পেয়েছি। আমানত বা ঋণ যে ক্ষেত্রেই হোক, আমাদের শেখানো হয়েছিল গ্রাহক চেনার পদ্ধতি। বিচার করতে হবে five Cs of credit— character, capacity, capital, collateral, and conditions. গ্রাহকের চরিত্র, ক্ষমতা, মূলধন, সমান্তরাল সামর্থ্য ও শর্ত পালনের ইচ্ছা। সব মিলিয়ে ঋণ পরিশোধ করার আন্তরিক ইচ্ছা, সামর্থ্য ও বিশ্বাসযোগ্যতা। ঋণ ফেরত দেওয়ার সামর্থ্য থাকলেই হবে না। ভাল না খারাপ বিবেচনা করতে সামাজিক বিশ্বাসের বিচার করতে হবে।
শুরুতে দেখেছি, সামর্থ্য থাকলেও কিছু গ্রাহকের অনিচ্ছা। ‘সরকারি ব্যাঙ্ক থেকে লোন নিলে শোধ না দিলেও চলে’, ‘কিস্যু করতে পারবে না’ ইত্যাদি। কিছু করা যায়নি, বুঝেছি পরে। খুব খারাপ লেগেছিল। কর্পোরেট বা খুব বড় গ্রাহক ছাড়া অনেকের সঙ্গে কথা হয়েছে। ভাবিনি, ঋণ নেওয়ার আগে ও পরে কারও চরিত্র এতখানি বদলাতে পারে। মনে প্রশ্ন জেগেছিল, রাষ্ট্র এই যে এঁদের সবার ওপর বিশ্বাস করে ঋণ দিচ্ছে, তাঁদের এক অংশ এমন বিশ্বাসঘাতকতা করতে পারে? উত্তর পেলাম ঠকে শিখে।
প্রথমে অনুৎপাদক আর খেলাপি ঋণ থেকে প্রাপ্য সুদ-আসল, ব্যালান্স শিটে ‘প্রাপ্তি’, অর্থাৎ ভবিষ্যতে কোনও এক দিন পাওয়া যাবে— এই বিশ্বাসে হিসেব করা হয়েছিল। ভুল অঙ্কে লাভ বাড়ছিল। ১৯৯০ নিয়ে এল নয়া অর্থনীতির স্বচ্ছ হিসেব। বাস্তব হিসেবে দেখা গেল— ভুল, সবই ভুল।
এ বার ঋণ আদায়ের প্রক্রিয়া। সংবাদপত্রে ছবি-সহ বিজ্ঞাপন দেওয়া হল। ফের বিশ্বাস জাগল: লজ্জার মাথা খেয়ে লাইন দিয়ে শোধ হবে ঋণ। প্রচার হল, বাজার সব ধাক্কা সামলাবে। বাজারের গুণগানে ভেবেছিলাম এ বার বুঝি বিশ্বাস ফিরে এল। হায় ছায়াবৃতা। সামাজিক বিশ্বাসের এত অবক্ষয়।
আজ ২০২০। প্রায় ৪০ বছর হয়ে গিয়েছে। সংবাদপত্রে খেলাপি ঋণের বিরাট অঙ্ক মুখস্থ হয়ে গিয়েছে পাঠকের। ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক ঋণগ্রহীতার অধিকাংশই ঋণ শোধ করেছেন। সে পরিমাণ মোট ঋণের ক্ষুদ্র অংশ। তার তুলনায় মাত্র কয়েক জন বড় বড় ঋণগ্রাহকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ অনেক বেশি। এদের সবার সামর্থ্য ছিল, সমান্তরাল সম্পদ ছিল। ছিল না আত্মবিশ্বাস, ঋণকে উপযোগী করার দূরদৃষ্টি, দেশপ্রেম, আন্তর্জাতিক অর্থনীতির জ্ঞান আর ব্যবসা-বাণিজ্য করার সততা। এক কথায়,
সামাজিক বিশ্বাস। এ সবই চরিত্রের গুরুত্বপূর্ণ গুণাবলি।
ঋণ আদায় করার কত নয়া আইন, পদ্ধতি এল। কিন্তু সম্পদের বৈষম্যের উল্লম্ফনে সামাজিক বিশ্বাস অগস্ত্য-যাত্রা করেছে।
শুভ্রাংশু কুমার রায়
ফটকগোড়া, হুগলি

দুর্বল ভিত্তি
সিএএ’র ফলে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষ কতখানি বিপন্ন হবেন কিংবা এই আইন দেশের সংবিধানের কতখানি পরিপন্থী, সে আলোচনাকে দূরে সরিয়েও, এর দুর্বল ভিত্তি নিয়ে প্রশ্ন তোলা যায়। প্রথমত, কোন ব্যক্তি কোন দেশ থেকে বিতাড়িত হয়েছেন, তা কি কেবল ওই ব্যক্তির জবানবন্দি দিয়েই প্রমাণিত হবে, না কি এ জন্য প্রমাণস্বরূপ কোনও কাগজপত্র লাগবে? বিতাড়িত মানুষের কাগজপত্র ঠিক না-ই থাকতে পারে। আবার, কাগজ দেখানোর প্রয়োজন না থাকলে, অন্য দেশ থেকেও কেউ এসে নাগরিকত্ব
চাইতে পারেন।
দ্বিতীয়ত, যিনি বিতাড়িত হয়ে এলেন, তিনি হিন্দু বা অন্য ‘অনুমোদিত’ ধর্মের কোনও একটির অন্তর্ভুক্ত কি না, জানা যাবে কি করে? কেবল নাম দিয়ে প্রমাণিত হবে? আমার বাবা হিন্দু ছিলেন বলে আমাকেও হিন্দু হতে হবে, তেমন কোনও বাধ্য-বাধকতা তো নেই।
তৃতীয়ত, ধর্মীয় উৎপীড়নের কারণেই তিনি দেশ ছেড়েছেন কি না, তা-ই বা প্রমাণ হবে কী করে? যিনি উৎপীড়ন করবেন তিনি কি উৎপীড়িতকে এ-সংক্রান্ত সার্টিফিকেট দিয়ে বিতাড়ন করবেন?
গৌরীশঙ্কর দাস
সাঁজোয়াল, খড়্গপুর

এঁদের কী হবে
এনআরসি চালু হলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবেন এ দেশের আদিবাসীরা। এ কথা বললে অত্যুক্তি হবে না, তাঁদের অবস্থা সংখ্যালঘু মুসলমানদের চেয়েও খারাপ। যদি তর্কের খাতিরে ধরে নিই, হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষকে তাড়ানো হবে না, তবুও নিরাপদ নন আদিবাসীরা। কারণ, তাঁরা তো হিন্দু নন, ‘ট্রাইবাল’। তাঁদের কাগজপত্র না থাকলে কী হবে? জানা নেই কারও। তাঁদের ক’জনের কাগজপত্র আছে, তাও জানা নেই সমাজের বড় মানুষদের, শহুরে মানুষদের।
তা জানতেই সে দিন হাজির হয়েছিলাম অশোকনগর কল্যাণগড় পুরসভার ২২ নম্বর ওয়ার্ডের আদিবাসী পাড়ায়। এলাকাবাসীর কাছে সর্দার পাড়া নামে পরিচিত।
স্বামী-পরিত্যক্তা ফুলবাসি মুন্ডার বয়স ৬২/৬৫ বছর। তাঁর কোনও কাগজ নেই। ভোটার কার্ড নেই, আধার কার্ড নেই, রেশন কার্ড নেই। অন্যের বাড়িতে পরিচারিকার কাজ করেন। তিনি নার্ভের রোগী, তাই কাজেই বা নেবে কে? দু’একটা পরিবার করুণা করেই রেখেছে তাঁকে। অনাহারে, অর্ধাহারে কোনও রকমে দিন কাটে।
সারথি মুন্ডা নিজের বয়স নিজেই জানেন না। বেঁটেখাটো আদিবাসী রমণী। পরিচারিকার কাজ করছেন ৪০/৪৫ বছর। বয়স ৬৫-র কম নয়। নিজেকে ভারতীয় প্রমাণ করার একটিও কাগজ নেই তাঁর। জিজ্ঞেস করলাম ‘তুমি ভোট দাও না?’ বললেন, ‘না’। ‘রেশন তোলো না?’ অকপটে জবাব, ‘‘কী দিয়ে তুলব? আমার কি ‘কাট’ আছে?’’ নেই-রাজ্যে বাস করেন তিনি। নেই নেই আর নেই। কিচ্ছু নেই।
অসহায়, রুগ্ণ নাসপাতি মুন্ডারও একই অবস্থা। অনেক কষ্ট করে একটা কার্ড তিনি তৈরি করতে পেরেছেন। কী কার্ড, তা বলতে পারলেন না। হবে হয়তো আধার বা ভোটার কার্ড। ওই একটাই। আর কিচ্ছু নেই। মাত্র কয়েক জনের কথা উদাহরণ হিসেবে তুলে ধরলাম। আরও কত মানুষের কাগজ নেই কে জানে? অথচ ওঁরাই এ দেশের আদি বাসিন্দা। এঁরা কিন্তু অজ পাড়াগাঁয়ে থাকেন না। রীতিমতো পুরসভার স্থায়ী বাসিন্দা। আর যাঁরা একেবারে প্রান্তিক অঞ্চলে, প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে থাকেন, তাঁদের যে কী অবস্থা, তা সহজেই অনুমেয়।
সোফিয়ার রহমান
অশোকনগর, উত্তর ২৪ পরগনা

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Jawaharlal Nehru Rajendra Prasad
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE