Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

লন্ডন ডায়েরি

বান্ধবীকে হারিয়ে ফেলা এক জনকে হাসপাতালে নিয়ে গেলেন, সেখানে পৌঁছে জানা গেল, বান্ধবী মারা গিয়েছেন। শিখ ট্যাক্সিচালকরা সে রাতে বার্মিংহাম সহ দূরদূরান্তে মানুষকে পৌঁছে দিয়েছেন। গুরু গোবিন্দ সিংহ গুরুদ্বারও এগিয়ে এসেছিল খাবার ও আশ্রয় দিয়ে।

শ্রাবণী বসু
শেষ আপডেট: ২৮ মে ২০১৭ ১২:৫০
Share: Save:

মানুষ বড় কাঁদছে, তাই ট্যাক্সি নিয়ে পাশে

ম্যাঞ্চেস্টারের ঘটনা যখন ‘ব্রেকিং নিউজ’ হল, শিখ ট্যাক্সিচালক এ জে সিংহ একটাই কথা ভেবেছিলেন: ‘ম্যাঞ্চেস্টার আমাদের সাহায্য চায়’। ভয়ংকর সেই রাতে এ জে সিংহের গাড়ি চালানোর ডিউটি ছিল না, কিন্তু খবর পেয়েই তিনি তাঁর ট্যাক্সি নিয়ে অকুস্থলে চলে যান— ছোটাছুটি-করা, আতঙ্কিত, সাহায্যপ্রার্থী মানুষকে ‘ফ্রি রাইড’ দিতে। এ জে সিংহ পরে বলেছেন, ‘মানুষের কাছে টাকাপয়সা নেই, মোবাইল নেই। ছোট্ট একটা মেয়ে কাঁদছিল, যেন এটা একটা যুদ্ধক্ষেত্র। ভয়ংকর অবস্থা!’ এক টুকরো কাগজে ‘ফ্রি ট্যাক্সি ইফ নিডেড’ লিখে সেলোটেপ দিয়ে তিনি সেঁটে দেন ট্যাক্সির গায়ে। আটকে-পড়া মানুষকে সারা রাত ধরে গন্তব্যে পৌঁছে দিয়েছেন, তাঁরা যাতে ফোনে প্রিয়জনকে খবর দিতে পারেন, নিশ্চিত করেছেন তা-ও।

বন্ধু: নিজের ট্যাক্সির সামনে এ জে সিংহ

এমনকী থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থাও করেছেন। ৪০টা ট্রিপের পর গোনা ছেড়ে দিয়েছিলেন সে রাতে। বান্ধবীকে হারিয়ে ফেলা এক জনকে হাসপাতালে নিয়ে গেলেন, সেখানে পৌঁছে জানা গেল, বান্ধবী মারা গিয়েছেন। শিখ ট্যাক্সিচালকরা সে রাতে বার্মিংহাম সহ দূরদূরান্তে মানুষকে পৌঁছে দিয়েছেন। গুরু গোবিন্দ সিংহ গুরুদ্বারও এগিয়ে এসেছিল খাবার ও আশ্রয় দিয়ে।

লন্ডনে জয়পুর

শনিবার সকালে যাঁরা পড়াশোনার কাজে ব্রিটিশ লাইব্রেরিতে আসেন, ভক্তিসংগীত, সকালের রাগ বা কবীরের সুর সচরাচর তাঁদের কানে আসে না। গত সপ্তাহান্তে অবশ্য ব্যাপারটা অন্য রকম ছিল। ‘জেএলএফ’ বা ‘জয়পুর লিটারেচার ফেস্টিভ্যাল’ এসে হাজির খোদ ব্রিটিশ লাইব্রেরিতে। ভারতের স্বাধীনতার সত্তর বছর পূর্তি ও ভারত-ইংল্যান্ড সংস্কৃতিবর্ষের উদ্‌যাপন উপলক্ষে ভারতীয় ও ব্রিটিশ লেখকরা আলোচনার বিষয় ছিল দেশভাগ, মুঘল শিল্প, কোহিনুর, রানি ভিক্টোরিয়া, পি জি উডহাউস। ফেস্টিভ্যালের প্রযোজক সঞ্জয় রায় বললেন, ‘জেএলএফ বিশ্বকে ভারতে এনেছে, আর ভারতকে বিশ্বে।’ ছিলেন শশী তারুর, তহমিনা আনম, কর্ণ জোহর, কুনাল বসু, অমিত চৌধুরী, প্যাট্রিক ফ্রেঞ্চ। ফেস্টিভ্যাল ডিরেক্টর উইলিয়ম ডালরিম্পল আর নমিতা গোখলে তো ছিলেনই। প্রায় ৫০০ টিকিট বিক্রি হয়েছে অনুষ্ঠানে।

ভুল বিরিয়ানি

সাউথ ব্যাংকের রয়াল ফেস্টিভ্যাল হল-এ প্রতি বছর মে মাসে অনুষ্ঠিত হয় ‘অ্যালকেমি ফেস্টিভ্যাল’। এশীয় সংস্কৃতি— তার সংগীত, নাচ, এমনকী খাবারদাবার— এই উৎসব এই সব কিছুরই সগর্ব উদ্‌যাপন করে থাকে। তবে এ বারের উৎসবে একটু তাল কেটেছে। উৎসব-কর্তৃপক্ষ একটা ‘এশিয়ান ডাইনিং রুম’ করে, বিরিয়ানি জিনিসটা কী, বোঝানোর আয়োজন করেছিলেন। কিন্তু গোড়াতেই রসভঙ্গ, মস্ত ফ্লেক্সের উপর ‘বিরিয়ানি’ শব্দটাই ভুল বাংলা বানানে লেখা!

লিসা আর লেয়োনার্দো

ফ্লোরেন্সের মেয়ে লিসা দেল জ্যকোন্দো-ই লেয়োনার্দো দা ভিঞ্চি-র ‘মোনা লিসা’র প্রেরণা, বলা হয়। অক্সফোর্ডের শিক্ষক মার্টিন কেম্প ও ফ্লোরেন্সের ঐতিহাসিক গিউসেপ্পে পালান্তি সম্প্রতি মোনা লিসা, দ্য পিপল অ্যান্ড দ্য পেন্টিং বইয়ে জানিয়েছেন লিসার কথা। ফ্লোরেন্সে ১৪৭৯ সালে তাঁর জন্ম, বিয়ে হয় ফ্রাঞ্চেসকো দেল জ্যকন্দো-র সঙ্গে, তিনিই শিল্পীকে স্ত্রীর পোর্ট্রেট আঁকার বরাত দেন। বইয়ে আছে লেয়োনার্দোর মা কাতেরিনা-র কথাও। কুমারী কাতেরিনার অবৈধ সন্তান লেয়োনার্দো বড় হন দাদুর কাছে, ‘দা ভিঞ্চি’ নামও তাঁর থেকেই নেওয়া।

ডাউনিং স্ট্রিটে দুই বেড়াল

রাজকীয়: টেরেসা মে-র বেড়াল ল্যারি

১০ ডাউনিং স্ট্রিটের বাসিন্দা টেরেসা মে, আর ঠিক তার পাশের ঠিকানা, ১১ নম্বর ডাউনিং স্ট্রিটের অধিবাসী ও অর্থমন্ত্রী ফিলিপ হ্যামন্ডকে রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী বলেই জানেন সবাই। দুজনের মধ্যে বড় একটা সদ্ভাবও নেই। মজার ব্যাপার, দুই প্রতিবেশীর প্রতিদ্বন্দ্বিতার আঁচ এ বার গিয়ে পড়েছে তাঁদের পোষ্যদের উপরেও। কান পাতলে শোনা যাচ্ছে, ফিলিপের স্ত্রী সুজান হ্যামন্ড-এর ‘রেক্স’ নামের এক পোষা টেরিয়ার খুব জ্বালাতন করছে ১০ ডাউনিং স্ট্রিটের পোষা বেড়াল ল্যারি-কে। টেরেসা মে’র বাড়িতে কাজ বা খবর সংগ্রহের প্রয়োজনে যে সাংবাদিকরাই আসেন, তাঁরা সবাই চেনেন ল্যারিকে। ১০ ডাউনিং স্ট্রিট থেকে যে কোনও সরকারি ঘোষণার আগে চার পা ফেলে ল্যারির রাজকীয় ভঙ্গিমায় হাঁটাহাঁটির দৃশ্য সবার খুবই পরিচিত। আর ল্যারি মোটেই রেক্স-এর ভয়ে ভীত নয়, মাঝেমধ্যেই সে বরং ১১ নম্বর বাড়ির বেড়াল পামারস্টন-এর সঙ্গে লড়াই বাধায়। ও দিকে রেক্স নাকি ল্যারিকে দেখলেই তেড়ে যাচ্ছে। ডাউনিং স্ট্রিটে কাজে আসা রিপোর্টাররা কাজের ফাঁকে দিব্যি উপভোগ করছেন বেড়াল আর কুকুরের এই দ্বৈরথ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Taxi driver Cat
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE