Advertisement
১৯ মে ২০২৪

লন্ডন ডায়েরি

প্রথম যখন ওঁদের দেখা হয়েছিল, মেয়েটি তেরো, ছেলেটি আঠেরো। ১৯৪৭ সালে ওঁদের বিয়ে হয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ দু’বছর হল মুড়িয়েছে, ব্রিটেন তখনও তার ধাক্কা সামলে উঠতে পারেনি।

শ্রাবণী বসু
শেষ আপডেট: ২৬ নভেম্বর ২০১৭ ০৬:০০
Share: Save:

রূপকথার বিয়ে পেরোল ৭০ বছর

প্রথম যখন ওঁদের দেখা হয়েছিল, মেয়েটি তেরো, ছেলেটি আঠেরো। ১৯৪৭ সালে ওঁদের বিয়ে হয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ দু’বছর হল মুড়িয়েছে, ব্রিটেন তখনও তার ধাক্কা সামলে উঠতে পারেনি। একুশ বছর বয়সি রাজকুমারী এলিজাবেথ আর তাঁর স্বামী, বছর ছাব্বিশের প্রিন্স ফিলিপ-এর বিয়েটা ছিল ঠিক যেন রূপকথার মতো। সারা দেশকে চাগিয়ে দিয়েছিল। সদ্য-স্বাধীন ভারত থেকে মহাত্মা গাঁধী নববধূকে একটা শাল পাঠিয়েছিলেন, তাঁর নিজের হাতে বোনা। গত ২০ নভেম্বর পূর্ণ হল সেই ঐতিহাসিক বিয়ের ৭০ বছর।

যুগল: বিয়ের প্লাটিনাম জয়ন্তী উদ্‌যাপনে রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ ও প্রিন্স ফিলিপ

ঢংঢং ঘণ্টা বাজল ওয়েস্টমিনস্টার অ্যাবিতে, যেখানে তাঁরা বিয়ের শপথবাক্য পাঠ করেছিলেন। ব্রিটেনের রাজপরিবারের ইতিহাসে এই বিয়ে সবচেয়ে দীর্ঘস্থায়ী, আর রাজত্বকালের নিরিখে রানি এলিজাবেথের শাসনকালও দীর্ঘতম। এতগুলি দশক ধরে প্রিন্স ফিলিপ সুখেদুঃখে রানির পাশে আছেন। ভালবাসা, রসিকতা, ধৈর্য, এগুলোই ওঁদের সম্পর্কের বাঁধুনি মজবুত করেছে। ফিলিপ যেমন মনে করেন, রানিকে তিনি এখনও হাসাতে পারেন, এটাই ওঁর তরফ থেকে সবচেয়ে বড় উপহার। এখন রানির বয়স ৯১, ফিলিপের ৯৬। প্লাটিনাম জয়ন্তী উদ্‌যাপন হয়েছে ঘরোয়া ভাবে, পরিবার ও কাছের বন্ধুদের নিয়ে উইন্ডসর কাস্‌ল-এ ডিনার করেছেন ওঁরা। রাজপ্রাসাদ থেকে তিনটে ছবি প্রকাশিত হয়েছে, ডাক বিভাগ বের করেছে নতুন ডাকটিকিট। বিবাহবার্ষিকীর আগের দিন রানি তাঁর প্রিয় ঘোড়ায় চড়ে পার্কে বেড়িয়েছেন কিছুক্ষণ।

ভারতীয় চমক নাটকে

শেক্সপিয়রের নাটকগুলির নতুন, আধুনিক রূপদানের জন্য রয়াল শেক্সপিয়র কোম্পানির খুব নাম। তারাই এ বার নিয়ে এসেছে ‘টুয়েলফ্‌থ নাইট’-এর নবতম সংস্করণ। ‘ভিক্টোরিয়া অ্যান্ড আবদুল’ ছবির প্রতি শ্রদ্ধায় নাটকের নির্দেশক ক্রিস্টোফার লুসকম্ব নাটকে ‘ভারতীয় চমক’ও রেখেছেন। ফেস্টে চরিত্রটি নাটকে অলিভিয়ার ভারতীয় মুনশি! জাহাজডুবির শিকার ভায়োলা মঞ্চে ঢুকছে শাড়ি পরে! নাটকের প্রেক্ষাপট পালটে করা হয়েছে ১৮৯০-এর ইংল্যান্ড, রানি ভিক্টোরিয়ার রাজত্বকাল। আসল মুনশি যেমন বর্ণবিদ্বেষের শিকার হয়েছিলেন, নাটকেও তেমন খানিকটা দেখানো হয়েছে। মালভোলিয়ো চরিত্রটি ফেস্টের বিরোধিতা করে, কারণ সে অলিভিয়ার প্রিয়। শেষে অবশ্য মধুরেণ সমাপয়েৎ!

প্রদর্শনীতে আয়ুর্বেদ

পাশ্চাত্যে এখন আয়ুর্বেদের রমরমা। ম্যাডোনা, গিনেথ প্যালট্রো ভক্ত হয়ে উঠেছেন। এই আবহেই ওয়েলকাম ইনস্টিটিউট ফর দ্য হিস্ট্রি অব মেডিসিন আয়োজন করেছে এক প্রদর্শনীর, নাম ‘আয়ুর্বেদিক ম্যান: এনকাউন্টার্স উইথ ইন্ডিয়ান মেডিসিন’। ভারতীয় চিকিৎসাবিদ্যার ইতিহাস, তার বিবর্তন উঠে এসেছে এখানে। প্রদর্শনীর শিরোনামটি নেওয়া আঠেরো শতকের এক নেপালি ছবি থেকে, সেখানে প্রাচীন আয়ুর্বেদ অনুসারে পুরুষশরীরের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ ও ধমনী ইত্যাদি বোঝানো হয়েছে। আয়ুর্বেদের পুব থেকে পশ্চিম যাত্রা তুলে ধরা হয়েছে বহু ছবি ও জিনিসপত্রের মাধ্যমে। আছে সংস্কৃত, পার্সিয়ান, তিব্বতি পাণ্ডুলিপি, গুয়াশ-মাধ্যমে আঁকা ছবি, প্রাণী-আকৃতির নানা শল্যচিকিৎসা সামগ্রী। একটা ছবিতে দেখা যাচ্ছে বেগুনগাছ। ভারতের বহু স্থানে ওষুধ তৈরিতে তা ব্যবহৃত হত— কলেরা, হাঁপানি, জ্বর, ব্রঙ্কাইটিসসহ বহু রোগের চিকিৎসায়। ১৮২৫ সালে আঁকা এক ছবিতে দেখা যাচ্ছে, রোগী বিছানায় শুয়ে, শল্যচিকিৎসক মাটিতে বসে তাঁর পা পরীক্ষা করছেন। ছবিতে আছে ভারতীয় চিকিৎসাশাস্ত্রের অন্যতম প্রাচীন গ্রন্থ ‘সুশ্রুতসংহিতা’-র উদ্ধৃতিও। ভারতীয় শিল্পী রঞ্জিত কান্দালগাঁওকর ১৮৯৬-এর ‘বম্বে প্লেগ’-কে এঁকেছেন নতুন কল্পনায়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

London Diaries লন্ডন ডায়েরি
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE