Advertisement
১৯ মে ২০২৪

লন্ডন ডায়েরি

তিন তিনটে সাম্রাজ্যের পতন ঘটেছিল— অস্ট্রো-হাঙ্গেরিয়ান সাম্রাজ্য, রাশিয়ায় জারের সাম্রাজ্য ও অটোমান সাম্রাজ্য। ইউরোপ ও পশ্চিম এশিয়ার মানচিত্র আঁকা হয় নতুন করে।

আকাশনায়ক: ইন্দ্রলাল রায়

আকাশনায়ক: ইন্দ্রলাল রায়

শ্রাবণী বসু
শেষ আপডেট: ০৭ জানুয়ারি ২০১৮ ০৬:০০
Share: Save:

জীবনে অসমসাহসী, মরণেও অকুতোভয়

এ বছরই প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শেষ হওয়ার শতবর্ষ। চার বছর ধরে চলা প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শেষ হয়েছিল ১৯১৮ সালের নভেম্বরে। ঠিক হয়েছিল, বছরের একাদশ মাসটির এগারোতম দিনে ঠিক সকাল এগারোটায় অস্ত্রবিরতি বলবৎ হবে। পৃথিবীর ইতিহাসটাই পালটে গিয়েছিল তার পর। তিন তিনটে সাম্রাজ্যের পতন ঘটেছিল— অস্ট্রো-হাঙ্গেরিয়ান সাম্রাজ্য, রাশিয়ায় জারের সাম্রাজ্য ও অটোমান সাম্রাজ্য। ইউরোপ ও পশ্চিম এশিয়ার মানচিত্র আঁকা হয় নতুন করে। পনেরো লক্ষ ভারতীয় সেনা জীবনে প্রথম বার বিদেশের রণাঙ্গনে যুদ্ধ করতে যান। ৭২,০০০-এরও বেশি সৈন্য মারা গিয়েছিলেন। প্রথম ভারতীয় ‘ফ্লায়িং এস’, রয়াল এয়ার ফোর্স-এর ইন্দ্রলাল রায়ের মৃত্যুর শতবর্ষও এ বছর। প্রথম বিশ্বযুদ্ধে ফ্রান্সের আকাশে মৃত্যুর সময় তাঁর বয়স ছিল মাত্র উনিশ। বিশ্বযুদ্ধ শেষ হওয়ার চার মাস আগে, ১৯১৮ সালের ২২ জুলাই ফ্রান্সের কারভ্যানে যুদ্ধবিমান নিয়ে উড়ে যাওয়ার সময় ইন্দ্রলালের বিমান চারটি জার্মান যুদ্ধবিমানের দ্বারা আক্রান্ত হয়। ইন্দ্রলাল— ওঁকে ডাকা হত ‘ল্যাডি’ বলে— অসম সাহসিকতার সঙ্গে লড়েছিলেন, কিন্তু শত্রুবিমানের আক্রমণে ওঁর বিমানটি জার্মান সীমান্তের কাছে সোজা মাটিতে এসে পড়ে, মুহূর্তে আগুন ধরে যায় তাতে। বিস্ময়ের কথা, প্লেন আকাশ থেকে মাটিতে পড়ার সময়েও ইন্দ্রলাল দুটো জার্মান বিমানকে গুলি করে ধ্বংস করেন। ওঁকে মরণোত্তর ‘ডিসটিংগুইশড ফ্লায়িং ক্রস’ সম্মানে ভূষিত করা হয়েছিল। ভারতীয় কোনও বৈমানিকের এই সম্মানপ্রাপ্তি সেই প্রথম।

বন্ধুতার গান

ঠিক রাত বারোটায় বিগ বেন-এর ঘণ্টাধ্বনি যখন নতুন বছর সূচনা করে, ব্রিটেনে তখন সব মানুষ গলা মেলান ‘অল্ড লাং সেইন’-এর সুরে। ১৭৮৮ সালে স্কটিশ কবি রবার্ট বার্নস লিখেছিলেন এই গান। ‘অল্ড লাং সেইন’-কে বাংলা করলে মোটামুটি ভাবে দাঁড়ায় ‘পুরনো দিনের জন্য’। গানটারও ভাব তা-ই, পুরনো বন্ধুতাকে ধরে রাখা, অতীতকে ফিরে দেখা। শোনা যায়, নিউ ইয়ার্স ইভ-এ স্বয়ং রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথও এই গানটি গেয়ে থাকেন। এই গান তথা কবিতাটি থেকে পরে রবীন্দ্রনাথের কথায়-সুরে তৈরি হয়ে ওঠে ‘পুরানো সেই দিনের কথা’— বিশ্ব জুড়ে সব বাঙালির প্রিয় গান। সম্প্রতি বিবিসি রেডিয়ো-র এক তথ্যচিত্রে জানা গেল, ‘অল্ড লাং সেইন’ আদৌ রবার্ট বার্নস-এর রচিত নয়, তাঁর সংগৃহীত। ওটা নাকি একটা সুপ্রাচীন স্কটিশ লোকগান, রবার্ট পেয়েছিলেন এক বৃদ্ধের কাছে। ১৭৮৮ সালে রবার্ট তাঁর এক বন্ধু, মিসেস অ্যাগনেস ডানলপকে গানটি লিখে পাঠান। লিখেছিলেন, এই গানের মধ্যে দেশজ প্রতিভার আগুন লুকিয়ে আছে। পরে গানটি পাঠান স্কটস মিউজিকাল মিউজিয়াম-এ, এবং দাবি করেন যে প্রাচীন এই গানটি তিনিই প্রথম লিপিবদ্ধ করেছেন। রবার্টের নিজের ভাষায়, ‘‘অতীত কাল বিষয়ক এই প্রাচীন গানটি আজ পর্যন্ত কোথাও মুদ্রিত হয়নি, এক বৃদ্ধের কাছে শুনে আমি লিখে নেওয়ার আগে পর্যন্ত জ্ঞানত এর কোনও পাণ্ডুলিপিও ছিল না!’’

ফ্রাঙ্কেনস্টাইন ২০০

মেরি শেলির বিখ্যাত উপন্যাস ‘ফ্রাঙ্কেনস্টাইন, অর দ্য মডার্ন প্রমিথিউস’ দুশো বছর পূর্ণ করল। ১৮১৮ সালের ১ জানুয়ারি প্রকাশিত হয়েছিল এই উপন্যাস, মেরির বয়স তখন মোটে কুড়ি। ভেবে আশ্চর্য হতে হয়, উপন্যাসের সেই দানব সুদীর্ঘ সময় পেরিয়ে আজও পাঠককে আকর্ষণ করছে, হলিউডে জন্ম দিয়েছে একের পর এক হরর ছবি। ১৯৩১-এর বিখ্যাত ছবিতে দানবের চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন বরিস কার্লফ। মজার কথা, বইটি প্রকাশিত হওয়ার পর সবাই ভেবেছিলেন, এটি আসলে মেরির স্বামী পার্সির লেখা, যিনি কিনা উপন্যাসের ভূমিকাও লিখেছিলেন। ১৮২৩-এ ফ্রান্সে প্রকাশিত বইটির দ্বিতীয় সংস্করণে মেরি লেখক হিসেবে প্রকৃত মর্যাদা পেয়েছিলেন।

শতবর্ষে সাফ্রাজেট

সমর্থক: লন্ডনে সোফিয়া দলীপ সিংহ

সাফ্রাজেটদের সুদীর্ঘ আন্দোলনের ফলে ব্রিটেনের নারীদের ভোটদানের অধিকার লাভের শতবর্ষ এ বছর। স্মরণ করা হচ্ছে এমেলিন প্যাঙ্কহার্স্ট ও তাঁর মেয়ে ক্রিস্টাবেলকে, যাঁরা সরকারের বিরুদ্ধে পথে নেমেছিলেন। ১৯১৩ সালের এক ডার্বি ঘোড়দৌড়ে এমিলি ডেভিডসন নামের এক আন্দোলনকারী রাজার ছুটন্ত ঘোড়ার সামনে লাফিয়ে পড়েন। আন্তর্জাতিক স্তরে খবর হয় তা, এমিলি হন আন্দোলনের প্রথম শহিদ। পুলিশের মার, গ্রেপ্তার সয়েছিলেন সাফ্রাজেটরা, ওঁদের অনশন পরে উদ্দীপিত করেছিল মহাত্মা গাঁধীকেও। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় সাফ্রাজেটরা তাঁদের আন্দোলন স্থগিত রাখেন, পরে ১৯১৮ সালে ‘রেপ্রিজেন্টেশন অব পিপলস অ্যাক্ট’-এর মাধ্যমে ৩০ বছরের বেশি বয়সি নারীদের (সঙ্গে উপযুক্ত যোগ্যতা অর্জনের শর্তও ছিল) ভোটাধিকার দেওয়া হয়। সব নারী পূর্ণ ভোটাধিকার পান ১৯২৮ সালে। লন্ডনে সাফ্রাজেটদের সমর্থক ভারতীয় নারীদের মধ্যে ছিলেন পঞ্জাবের মহারাজার কন্যা রাজকুমারী সোফিয়া দলীপ সিংহ, ইন্দ্রলাল রায়ের মা ললিতা রায় প্রমুখ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Sophia Duleep Singh Indranil Roy London Diaries
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE