লন্ডন ডায়েরি। —ফাইল চিত্র।
বহুমূল্য রত্নখচিত মর্মরপ্রস্তরে তৈরি হয়েছিল মোগল সম্রাট শাহজাহানের হামাম। গভর্নর জেনারেল লর্ড ওয়ারেন হেস্টিংস ভারত থেকে নিয়ে চলে গিয়েছিলেন সেটি। তাঁর দাবি ছিল, মেরামতির অভাবে শিল্পের এই উৎকৃষ্ট নিদর্শনটি ভেঙে পড়তে বসেছে, তাই তিনি এটিকে রক্ষা করছেন। আসল কথা হল, এই বহুমূল্য হামামটি তিনি রাজা চতুর্থ জর্জকে উপহার দিতে চেয়েছিলেন, তা আর হয়ে ওঠেনি। রানি ভিক্টোরিয়ার শাসনকালে উপনিবেশ ও ভারত বিষয়ক প্রদর্শনীতে এটিকে প্রথম দেখা যায়। পঞ্চাশের দশক পর্যন্ত এটি রাখা ছিল ইন্ডিয়ান মিউজ়িয়মে, পরে সলসবেরির কাছে মিলিটারি বাঙ্কারের গুদামে ঠাঁই পায়। এ বার ভিক্টোরিয়া অ্যান্ড অ্যালবার্ট মিউজ়িয়ম স্থির করেছে, এটিকে সংস্কার করে ইস্ট লন্ডনে তাদের নতুন গ্যালারিতে রাখবে। ২০২৫-এ গ্যালারিটির উদ্বোধন হওয়ার কথা। সেখানে লেখা থাকবে কী ভাবে ঔপনিবেশিক আমলে এটিকে ভারত থেকে নিয়ে আসা হয়েছিল। উপনিবেশ থেকে লুণ্ঠিত শিল্পসামগ্রীগুলি একেবারে ফেরত দেওয়া উচিত, না কি দেশগুলি অনুরোধ জানালে সেগুলি ঋণ হিসাবে দেওয়া উচিত, তা নিয়ে ব্রিটেনে বিতর্ক অব্যাহত। এই প্রসঙ্গে ভিক্টোরিয়া অ্যান্ড অ্যালবার্ট মিউজ়িয়মের মুখপাত্র জানিয়েছেন, আগরার স্তম্ভসারণি ঋণ নিতে ভারত থেকে কোনও অনুরোধ আসেনি। মার্বেল পরিষ্কার করে ও হারানো রত্নগুলো আবার খোদাই করে বহু কষ্টে জমকালো এই খিলানসারির পুনর্নবীকরণ চলছে।
‘দুনিয়ার সেরা চাকরি’
প্রথম মহিলা এবং প্রথম দক্ষিণ এশীয় বংশোদ্ভূত হিসাবে লন্ডনের ন্যাশনাল থিয়েটারের ডিরেক্টরের পদে নিযুক্ত হয়ে ইতিহাস গড়লেন ৫৩ বছর বয়সি ইন্দু রুবাসিংহম। শেফিল্ডে এক তামিল শ্রীলঙ্কান পরিবারে তাঁর জন্ম। তাঁর কথায়, এটি পৃথিবীর সর্বোত্তম চাকরি। এই যাত্রায় তাঁর পূর্বসূরি স্যর লরেন্স অলিভিয়ের, স্যর পিটার হল, স্যর ট্রেভর নান, স্যর নিকোলাস হাইটনারের মতো বিখ্যাত পরিচালকরা। ন্যাশনালের মঞ্চ মাতিয়েছেন ব্রিটেনের শ্রেষ্ঠ প্রতিভাধরেরা। তাঁদের মধ্যে আছেন জুডি ডেঞ্চ থেকে ভেনেসা রেডগ্রেভ, র্যালফ ফাইনস, কেনেথ ব্রানা। এক দশকেরও বেশি কিল্ থিয়েটারে ক্রিয়েটিভ ডিরেক্টর ছিলেন রুবাসিংহম। হোয়াইট টিথ, হ্যান্ডব্যাগড (রানি ও মার্গারেট থ্যাচারের সম্পর্ক নিয়ে) প্রভৃতি নাটকের বরাত দিয়েছিলেন। ন্যাশনাল থিয়েটারে নাথুরাম গডসে সম্পর্কিত বহুল প্রশংসিত নাটক দ্য ফাদার অ্যান্ড দি অ্যাসাসিন-এর পরিচালক তিনি। ২০২৪-এ বর্তমান ডিরেক্টর রুফুস নরিসের থেকে কার্যভার নিতে চলেছেন। এ বার তাঁর দায়িত্ব তিনটি প্রেক্ষাগৃহ ভরানোর ও নতুন জমজমাট নাটক আনার।
নিলামে দ্য ক্রাউন
বছর শেষ। তার সঙ্গেই বহু পুরস্কার ও মানুষের মন জয়ের পর শেষ হল নেটফ্লিক্সের সিরিজ় দ্য ক্রাউন। প্রযোজকরা বলেছেন, রানি দ্বিতীয় এলিজ়াবেথের মৃত্যু বা হ্যারি-মেগানকে নিয়ে ঝামেলা পর্যন্ত কাহিনি টেনে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা নেই। ছয় পর্বে ব্যবহার করার জন্য যে সব চমকদার পোশাক, সাজসরঞ্জাম, আসবাব তৈরি হয়েছিল, সব এ বার লন্ডনের বনহ্যামস-এ নিলামে উঠবে। ৪৫০টি সামগ্রীর মধ্যে থাকবে রানি দ্বিতীয় এলিজ়াবেথের ভূমিকায় ক্লেয়ার ফয়ের পরিধানের রাজ্যাভিষেকের জোব্বা ও মাটি ছোঁয়া আবরণী (প্রত্যাশিত মূল্য ২০০০০-৩০০০০ পাউন্ড), রাজকীয় ঘোড়ার গাড়ি (আনুমানিক ৩০০০০-৫০০০০ পাউন্ড) ও রাজ্যাভিষেকের সেন্ট এডওয়ার্ড’স চেয়ারের অনুকৃতি (১০০০০-২০০০০ পাউন্ড)। প্রিন্স চার্লস ক্যামেরার সামনে ডায়ানার বিশ্বাস ভাঙার কথা স্বীকার করার পর যুবরানি যে কালো পোশাকটি পরেছিলেন, ডায়ানার চরিত্রে এলিজ়াবেথ ডেবিকি পরিহিত সেই ‘রিভেঞ্জ ড্রেস’-এর দাম উঠতে পারে ৮০০০-১২০০০ পাউন্ড। ১০ ডাউনিং স্ট্রিটের সদর দরজাটির প্রতিরূপ বিক্রি হতে পারে ২০০০০-৩০০০০ পাউন্ডে। জানুয়ারি, ফেব্রুয়ারি মাসে অনলাইনে এবং বন্ড স্ট্রিটের অফিসে নিলামের আসর বসবে। অর্জিত অর্থের কিছুটা ন্যাশনাল ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন স্কুলে ‘লেফট ব্যাঙ্ক পিকচার্স— দ্য ক্রাউন স্কলারশিপ প্রোগ্রাম’-এর খাতে ব্যয় হবে।
বড়দিনের বড় শিক্ষা
উচ্চতা দু’ফুট, ২৫টা ডাল, ১২টা ফল, ছ’টা খুদে মোমদানি। অল্প নকশা করা ছোট্ট লাল কাঠের উপর বসানো অতি সাধারণ এই ক্রিসমাস ট্রি-টি আট বছরের ডরোথি গ্রান্টের পরিবারে এসেছিল ১৯২০-তে, মাত্র ছয় পেন্সের বিনিময়ে। ১০১ বছর বয়সে গ্রান্টের মৃত্যু অবধি এটাই ছিল তাঁর ক্রিসমাস ট্রি। পরে সেটি পান তাঁর মেয়ে, ৮৪ বছরের শার্লি হল। আশা ছিল, নিলামে গাছটি বিকোবে ৬০ থেকে ৮০ পাউন্ডে। কিন্তু হাতুড়ির শেষ ঘা পড়ল ৩৪১১ পাউন্ডে। নিলামদার বলেছেন, গাছটি মনে করিয়ে দেয় বড়দিন মানেই বেশি খরচ ছিল না, পরিবারটি একই ক্রিসমাস ট্রি চালিয়ে গিয়েছে শতবর্ষেরও বেশি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy