Advertisement
১১ মে ২০২৪
সম্পাদকীয় ২

নূতন প্রভাত

যাত্রাপথটি সহজ নহে। ‘মি টু’ বা ‘আমিও’ আন্দোলনটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র হইতে বিশ্বের পঁচাশিটি দেশে দ্রুত ছড়াইয়াছে।

শেষ আপডেট: ১২ জানুয়ারি ২০১৮ ০০:৩১
Share: Save:

মেয়েদের জন্য দিগন্তে এক নূতন দিনের উদয় হইয়াছে, বলিয়াছেন টিভি তারকা ওপ্রা উইনফ্রে। ‘গোল্ডেন গ্লোবস’ পুরস্কারের মঞ্চ হইতে ওপ্রার কথাটি সাড়া জাগাইয়াছে, সম্ভ্রমও আদায় করিয়াছে। কারণ যৌন হয়রানির বিরুদ্ধে হলিউডের তারকাদের প্রতিবাদকে শূন্য বাগাড়ম্বর বলিয়া উড়াইলে ভুল হইবে। যথেষ্ট ঝুঁকি লইয়া প্রভাবশালী প্রযোজক, অভিনেতাদের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে অভিযোগ আনিয়াছেন অভিনেত্রীরা। তাহাতেই যে মর্যাদার লড়াই শেষ হয় নাই, সম্ভবত সেই ইঙ্গিত দিতেই ওই অনুষ্ঠানে বেশ কিছু তারকা সঙ্গীরূপে আনিয়াছিলেন নারী আন্দোলনের নেত্রীদের। নারী শ্রমিকদের শোষণ, গৃহবধূদের নির্যাতন প্রতিরোধের আন্দোলনে তাঁহারা নেতৃত্ব দিতেছেন। এই নেত্রীদের ক্যামেরার সম্মুখে আনিয়া, কালো পোশাকে লাল গালিচায় হাঁটিয়া, অভিনেত্রীরা স্পষ্টতই বহুল-সম্প্রচারিত অনুষ্ঠানটিকে এক বৃহত্তর উদ্দেশ্যে ব্যবহার করতে চাহিয়াছেন। তারকাদের প্রচারকৌশল বলিয়া ইহাকে লঘু করা চলিবে না। যে আন্দোলন চলিতেছে, হলিউড বুঝাইল তাহা সহজে থামিবে না।

যাত্রাপথটি সহজ নহে। ‘মি টু’ বা ‘আমিও’ আন্দোলনটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র হইতে বিশ্বের পঁচাশিটি দেশে দ্রুত ছড়াইয়াছে। যৌন হয়রানির অভিযোগে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এক সেনেট-সদস্য ইস্তফা দিয়াছেন, ব্রিটেনে এক প্রবীণ মন্ত্রী পদত্যাগ করিয়াছেন, নরওয়ে এবং অস্ট্রিয়াতে উচ্চ পর্যায়ের নেতাদের সরিতে হইয়াছে। সংবাদ, চলচ্চিত্র, সংগীত, উচ্চ শিক্ষা, শিল্প, প্রতিটি ক্ষেত্রেই আলোড়ন পড়িয়াছে। তবে প্রশ্ন উঠিয়াছে এই আন্দোলনের যৌক্তিকতা ও নৈতিকতা লইয়া। তদন্ত না করিয়া, আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়া যে কাহারও নামে সোশ্যাল মিডিয়াতে অভিযোগ প্রকাশ করা কি উচিত? কেবল অভিযোগের ভিত্তিতে পদত্যাগে বাধ্য করা কি অন্যায় নহে? ফরাসি অভিনেত্রী ক্যাথরিন দ্যুনভ ও তাঁহার নিরানব্বইজন সহযোগী এই ‘নয়া নীতিবাদ’ সম্পর্কে সতর্ক করিয়াছেন। কিছু পূর্বে ভারতেও যৌন হয়রানিতে অভিযুক্ত অধ্যাপকদের একটি তালিকা সোশ্যাল মিডিয়াতে প্রকাশিত হইলে নারীবাদীদের একাংশ প্রায় একই আপত্তি তুলিয়াছিল।

সমস্যা হইল, ক্ষমতার অসাম্য থাকিলে সমাজ ন্যায়ের ভারসাম্য রক্ষা করিতে পারে না। মস্ত অন্যায়কেও তুচ্ছ বলিয়া উপেক্ষা করে। এই আন্দোলনের জেরে কয়েক লক্ষ মহিলার বয়ান প্রকাশিত হইয়াছে। তাহাতে কাজের সুযোগ-প্রত্যাশী মেয়েদের ধর্ষণ, যৌন হয়রানি, ভীতিপ্রদর্শন, বরখাস্ত ও বঞ্চনার যে ছবি সম্মুখে আসিয়াছে, তাহার ব্যাপকতা বিস্ময়কর। তাহাতে স্পষ্ট, পুরুষ যখন প্রবল, তখন যে মেয়ে ‘অসম্মত’, সে ‘অযোগ্য’ বিবেচিত হইবে। তাই হলিউডের প্রথম সারির অভিনেত্রীরাও হার্ভে উইনস্টাইনের ন্যায় প্রযোজকের নির্যাতন নীরবে সহিয়াছেন। সেই অসম্মানই তাঁহাদের খামারে কর্মরত অভিবাসী মেক্সিকান মেয়ে, রেস্তরাঁয় কর্মরত কৃষ্ণাঙ্গ মেয়েদের সহিত যুক্ত করিয়াছে। নারী আন্দোলনের শক্তি নিহিত এই সম্পর্কের শক্তিতে। ‘আমিও’ সমর্থকেরা অন্যায় করিল কি না, বিতর্ক চলিবে। কিন্তু মেয়েদের প্রতি অন্যায়ের ব্যাপকতা তাহারা প্রকাশ করিল। অসাম্যের অবসানের আশা যদি আজ জাগিয়া থাকে, তাহার কৃতিত্ব ওই অবুঝ মেয়েদেরই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Oprah Winfrey MeToo inequality
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE