Advertisement
৩০ এপ্রিল ২০২৪
Sexual Harassment

হন্তারক তন্ত্র

একটি কথা নিঃসংশয়ে বলা যায়, ভারতের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলি, বিদ্যালয় শিক্ষা এবং উচ্চশিক্ষা নির্বিশেষে, শিক্ষার্থীদের প্রয়োজনীয় নিরাপত্তার ব্যবস্থা করতে অনেকাংশে ব্যর্থ।

—প্রতীকী চিত্র।

শেষ আপডেট: ০৩ এপ্রিল ২০২৪ ০৮:০০
Share: Save:

বিশাখাপত্তনমের একটি পলিটেকনিক কলেজের সতেরো বছরের ছাত্রী আত্মহননের আগে তার অন্ধ্রপ্রদেশের আনকাপাল্লে জেলাস্থিত পরিবারকে জানিয়েছিল, কলেজে যৌন হেনস্থার শিকার হতে হয়েছে তাকে। হেনস্থার কথা সে পুলিশকে বা কলেজ কর্তৃপক্ষকে জানাতে পারেনি, কারণ হেনস্থাকারীরা তার ছবি সমাজমাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দেয়। এই বার্তার কিছু পরেই তার দেহ উদ্ধার হয়। সমগ্র ঘটনাটি মর্মান্তিক, তদুপরি অত্যন্ত উদ্বেগজনক। উদ্বেগ অভিভাবকদের, উচ্চশিক্ষার উদ্দেশ্যে অন্যত্র পাড়ি দেওয়া শিক্ষার্থীদেরও। পরিবারবিচ্ছিন্ন হয়ে থাকার সময়ে যৌন হেনস্থার মতো অপরাধের শিকার হলে এবং সেই কথা কাউকে জানাতে না পারলে শিক্ষার্থীর মনোজগৎটি যে ভেঙে চুরমার হয়ে যায়, বিশাখাপত্তনমের ঘটনাটি তা প্রমাণ করে দিল।

এই ঘটনায় প্রকৃত অপরাধী কে বা কারা, তা তদন্তসাপেক্ষ। কিন্তু একটি কথা নিঃসংশয়ে বলা যায়, ভারতের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলি, বিদ্যালয় শিক্ষা এবং উচ্চশিক্ষা নির্বিশেষে, শিক্ষার্থীদের প্রয়োজনীয় নিরাপত্তার ব্যবস্থা করতে অনেকাংশে ব্যর্থ। শিক্ষক, শিক্ষাকর্মী বা সহপাঠীর দ্বারা যৌন হেনস্থার অভিযোগ প্রায় নিয়মিতই ওঠে। বাদ পড়ে না প্রাথমিকের শিশুরাও। শহরাঞ্চলের বিদ্যালয় এবং উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিতে সিসিটিভি ক্যামেরা, অভিযোগ জানানোর নির্দিষ্ট সুরক্ষাব্যবস্থা সত্ত্বেও এই জঘন্য অপরাধে পুরোপুরি লাগাম টানা যায়নি। গ্রাম ও মফস্‌সলের অবস্থা আরও সঙ্গিন। অনেক ক্ষেত্রেই সুষ্ঠু তদন্তের পরিবর্তে কর্তৃপক্ষের নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগটিও একই সঙ্গে উচ্চারিত হয়। বিশাখাপত্তনমের পলিটেকনিক কলেজটির কর্তৃপক্ষ যেমন দৃঢ় ভাবে জানিয়েছেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে তাঁরা যেমন ব্যবস্থা করেছেন, তাতে যৌন হেনস্থার প্রশ্নই ওঠে না। তাঁকে মনে করিয়ে দেওয়া প্রয়োজন, এত ব্যবস্থা সত্ত্বেও যে এমন একটি অভিযোগ উঠেছে, এবং তাঁদেরই এক ছাত্রী আত্মহননের পথ বেছে নিয়েছে, তাতে গৃহীত ব্যবস্থার সম্ভাব্য ত্রুটিবিচ্যুতিগুলি সর্বাগ্রে খতিয়ে দেখা উচিত ছিল, আত্মপক্ষ সমর্থন নয়। বস্তুত, এই ঘটনা অনেকটা র‌্যাগিং ঠেকাতে ভারতের উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলির ব্যর্থতার কথা মনে করিয়ে দেয়। র‌্যাগিং নির্মূল করতে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সুস্পষ্ট নির্দেশিকা সত্ত্বেও র‌্যাগিং বন্ধ হয়নি। একের পর এক শিক্ষার্থীর আত্মহত্যার ঘটনাও ঘটেছে। ক্যাম্পাসের মধ্যেই নির্যাতনের শিকার হয়ে শিক্ষার্থী যদি তার অভিযোগই জানাতে না পারে, জানালেও সুবিচার না পায়, তবে সে যাবে কোথায়?

উপরোক্ত ঘটনাটির অবশ্য একটি অন্য দিকও আছে। সামাজিক দিক। যৌন হেনস্থার মতো ঘটনায়, এখনও, প্রায়শই নির্যাতিতার দিকে সমাজ আঙুল তোলে। তার আচরণ, পোশাক ইত্যাদি নানাবিধ অপ্রাসঙ্গিক বিষয় গুরুত্ব পেতে থাকে। অভিযুক্ত প্রভাবশালী হলে তো আরও বেশি। সেই কারণেই কি পরিবার পাশে থাকা সত্ত্বেও মেয়েটি নিশ্চিন্ত হতে পারেনি? সমাজমাধ্যমে তার ছবি প্রকাশ পেলে সেই গ্লানি তার এবং পরিবারের জীবনভর সঙ্গী হবে, সেই ভয়ই কি তাকে আচ্ছন্ন করেছিল? মেয়েদের সুরক্ষার আইনগুলি যতই খাতায়-কলমে কঠোর হোক, তার যথাযোগ্য প্রয়োগ না হলে এবং সামগ্রিক ভাবে সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি না বদলালে ‘সুবিচার’ এখনও দূর অস্ত্।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Sexual Harassment Suicide Visakhapatnam
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE