Advertisement
০৫ মে ২০২৪
mid-day meal

এতই দরাজ

মিড-ডে মিলের মান দেখে অনেক ছেলেমেয়ে নাকি স্কুলমুখো হচ্ছে না, এমনও অভিযোগ এসেছে সংবাদে।

মিড-ডে মিল।

মিড-ডে মিল।

শেষ আপডেট: ১৭ অক্টোবর ২০২২ ০৬:২২
Share: Save:

হীরক রাজার সভায় গুপী-বাঘা গেয়েছিল, ‘রাজা এতই রসিক, রাজা এতই দরাজ’। সেই গানের কথা ধার করে আজ কেন্দ্রীয় সরকারের জয়গান গাওয়া চাই। কতটা রসিক আর দরাজ হলে দু’বছর পর মিড-ডে মিলে দৈনিক মাথাপিছু আটচল্লিশ পয়সা (প্রাথমিকে) অথবা বাহাত্তর পয়সা (উচ্চ প্রাথমিকে) বাড়ানো যায়, মূর্খেরা তা না বুঝে কেবলই বিবিধ প্রশ্ন তুলছে। গ্যাস সিলিন্ডারের দাম হাজার টাকা ছাড়িয়েছে, ডাল-আনাজ শ্রমজীবীর সাধ্যাতীত, সরকারি তথ্যেই খাদ্য মূল্যবৃদ্ধির হার সাধারণ মূল্যবৃদ্ধির চেয়ে অনেকখানি বেশি, তবু শিশুদের খাবারের বরাদ্দ মাথাপিছু কেন এক টাকাও বাড়ল না, তাই নিয়ে কত গোসা। মূল্যবৃদ্ধির হিসাব করলে আদৌ একে ‘বৃদ্ধি’ বলা চলে না, এমনও বলছে নিন্দকে। সত্যজিৎ রায়ের ছবিতে তার উত্তর দিয়েছিলেন হীরক রাজার সভাকবি— ‘অনাহারে নাহি খেদ, বেশি খেলে বাড়ে মেদ’। সরকারি মতে ‘অচ্ছে দিন’ এসেছে; প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছেন, ভারত এ বার উন্নত দেশ হবে। উন্নত দেশের শিশুদের বড় সমস্যা ওবিসিটি, অর্থাৎ দেহে অতিরিক্ত মেদ জমার কারণে তারা নানা অসুখে ভোগে। অতএব ভারত সরকার সতর্ক রয়েছে। প্রাথমিক স্কুলে প্রতি পড়ুয়ার (প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণি) মিড-ডে মিল রান্নার জন্য বরাদ্দ ৪ টাকা ৯৭ পয়সা থেকে বাড়িয়ে করছে ৫ টাকা ৪৫ পয়সা। উচ্চ প্রাথমিক স্কুলের পড়ুয়াদের (ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণি) ক্ষেত্রে মাথাপিছু বরাদ্দ ৭ টাকা ৪৫ পয়সা থেকে হবে ৮ টাকা ১৭ পয়সা। সাবধান আছে পশ্চিমবঙ্গ সরকারও। অন্য অনেক রাজ্যে মিড-ডে মিলের জন্য কেন্দ্রের বরাদ্দের সঙ্গে কিছু যোগ করে থাকে রাজ্য সরকার। এই রাজ্যে তা হয়নি। কারণ, শিশুদের বেশি খাইয়ে অসুস্থ করে ফেলার অবিবেচনার পথে সরকার হাঁটেনি।

মুশকিল শিশুদের নিয়ে। তারা সয়াবিন, আলুর ঝোল দেখলে পালাতে চায়। একটা ডিম দিলে ওই ছেলেমেয়েরা হাসি মুখে ভাত খাবে, কিন্তু ‘বিশুদ্ধ নিরামিষ ভোজন’ দেখলে মুখ ভার করে। আর তেমনই তাদের শিক্ষক-শিক্ষিকারা। ডিমের দাম যদি হয় ছ’টাকা, আর মোট বরাদ্দ ৫ টাকা ৪৫ পয়সা, তা হলে এক-এক জনের খাবার পাতে ক’টা ডিম পড়তে পারে, এই সামান্য ঐকিক নিয়মের অঙ্কটুকু তাঁরা কষতে পারেন না? কেবল চাল বাদে রান্না-খাওয়ার সব খরচ, অর্থাৎ ডাল, আনাজ, মশলা, ডিম, জ্বালানি, সবই কিনতে হবে বরাদ্দ টাকায়। তা হলে শিশুর পাতে কী কী পড়তে পারে, হিসাব কষে অভিভাবকদের বুঝিয়ে দিলেই হয়।

তা ছাড়া কোভিডের পরে ড্রপ আউট হয়েছে প্রচুর, মিড-ডে মিলের খরচ তাই কমারই কথা। মিড-ডে মিলের মান দেখে অনেক ছেলেমেয়ে নাকি স্কুলমুখো হচ্ছে না, এমনও অভিযোগ এসেছে সংবাদে। বহু জায়গায় স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলি বাজার থেকে ধার করে রান্না করছে, সরকারি বরাদ্দে নাকি কুলোতে পারছে না। কেন্দ্রের কর্তারা নিশ্চয়ই বোঝেন, এ হল মিড-ডে মিল কর্মীদের অদক্ষতা। দেড়শো গ্রাম তেলে একশো কুড়ি জন পড়ুয়ার রান্না যারা করতে পারে না, তারা স্কুলে রান্না করার কাজের যোগ্যই নয়। শিশুর ক্ষুধার্ত মুখ দেখলে যাদের কষ্ট হয়, তারা নাহয় চোখ ঘোরাক অন্য দিকে— হাসিমুখ নেতার ছবি কি কম পড়েছে? শিশু অপুষ্টি, স্কুল ড্রপ আউট, শিশু শ্রমিক, এ সব ছোটখাটো বিষয় তুলে বড় বড় নেতার বিরক্তি উৎপাদন না করাই ভাল।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

mid-day meal price Government
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE