Advertisement
২৯ এপ্রিল ২০২৪
Encroachment of Footpaths

জবরদখল

ফুটপাতের দুই-তৃতীয়াংশ জায়গা পথচারীদের জন্য ছেড়ে হকারদের পসরা সাজিয়ে বসতে বলা হলেও সেই নিয়ম সর্বত্র যথাযথ মানা হয় না।

Encroachment of Footpaths.

ফুটপাতের অপব্যবহার হলে রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বটি যাঁদের উপর ন্যস্ত, তাঁদের জবাবদিহি, এবং শাস্তির ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। ফাইল চিত্র।

শেষ আপডেট: ১২ এপ্রিল ২০২৩ ০৫:২৭
Share: Save:

কলকাতার ফুটপাত-চুরি নিয়ে প্রশাসনিক মাথাব্যথা নতুন নয়। বিশেষত যেখানে ক্ষেত্রবিশেষে ফুটপাতের দখল হওয়া জমিও প্রতি বর্গফুট ১৫ লক্ষ টাকা দরে বিকোয় বলে অভিযোগ। কলকাতা পুর-প্রশাসনও অন্তত খাতায়-কলমে যে চুরি আটকানোর চেষ্টা করে গিয়েছে, অস্বীকার করা চলে না। সম্প্রতি ফুটপাতের জবরদখল ঠেকাতে অন্তঃদফতর সমন্বয়ে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে পুর-প্রশাসনের তরফে। দায়িত্ব ভাগ করে দেওয়া হয়েছে পুর এঞ্জিনিয়ারিং (সিভিল), জঞ্জাল অপসারণ ও বিল্ডিং দফতরের মধ্যে। জবরদখল তোলার ক্ষেত্রে উক্ত তিনটি দফতর নিজেদের মধ্যে প্রতিনিয়ত যোগাযোগ রক্ষা করে চলবে, উপরতলা থেকে এমন নির্দেশও মিলেছে। অর্থাৎ, শহরের ফুটপাত-চুরি ঠেকাতে কলকাতা পুরসভা সতর্ক এবং উদ্যোগী, আপাতদৃষ্টিতে এমনটাই বোধ হয়।

কিন্তু বাস্তব অভিজ্ঞতা কিছু অন্য কথা বলে। ফুটপাতের দুই-তৃতীয়াংশ জায়গা পথচারীদের জন্য ছেড়ে হকারদের পসরা সাজিয়ে বসতে বলা হলেও সেই নিয়ম সর্বত্র যথাযথ মানা হয় না। কলকাতা পুর আইন, ১৯৮০-র ৩৭১ নম্বর ধারায় বলা হয়েছিল, রাস্তা এবং ফুটপাতে বাধা সৃষ্টিকারী স্থায়ী বা অস্থায়ী যে কোনও কাঠামোয় নিষেধাজ্ঞা জারি এবং প্রয়োজনে তা ভেঙে দেওয়ার পূর্ণ ক্ষমতা পুর কমিশনারকে দেওয়া হয়েছে। এখনও অবধি ক’টি ক্ষেত্রে সেই আইনের যথাযথ প্রয়োগ হয়েছে? কোনও সভ্য শহরে যা অকল্পনীয়, এ রাজ্যে সেটাই রাজনৈতিক প্রশ্রয়ে কার্যত স্বাভাবিকতায় পরিণত। ফুটপাতের জবরদখল সরানো নিয়ে পুর-প্রশাসনের তরফে কড়া নির্দেশিকা জারি হয় বছর চারেক আগে। বলা হয়েছিল, ফুটপাত জবরদখল হলে সংশ্লিষ্ট বরো ইঞ্জিনিয়ারকে অভিযোগ দায়ের করতে হবে পুলিশে। একই সঙ্গে জানাতে হবে মেয়র, বরো চেয়ারপার্সন-সহ উচ্চ পর্যায়েও। অন্য দিকে, উচ্ছেদের কাজটি যে-হেতু করবে জঞ্জাল অপসারণ দফতর, তাই জানাতে হবে তাদেরও। অন্যথায় সংশ্লিষ্ট বরো ইঞ্জিনিয়ারের বিরুদ্ধেই শাস্তিমূলক পদক্ষেপ করা হবে। কিন্তু এমন আঁটসাঁট ব্যবস্থা সত্ত্বেও উচ্ছেদ-অভিযান সুষ্ঠু ভাবে পালন সম্ভব হয়নি বিভিন্ন ক্ষেত্রে। ফলে ফের সাম্প্রতিক নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, অভিযোগ দায়েরের পাশাপাশি উচ্ছেদ-অভিযানে উপস্থিত থাকতে হবে সিভিল এঞ্জিনিয়ারিং দফতরের প্রতিনিধিকে।

ফুটপাতের অপব্যবহার হলে রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বটি যাঁদের উপর ন্যস্ত, তাঁদের জবাবদিহি, এবং শাস্তির ব্যবস্থা করা প্রয়োজন বইকি। পুরসভার নির্দেশিকাগুলিতে ত্রুটি নেই। ত্রুটি, সেই নির্দেশিকার বাস্তব প্রয়োগের ক্ষেত্রে। ঠিক একই চিত্র দেখা গিয়েছে পুকুর বোজানোর ক্ষেত্রেও। ইতিপূর্বে মেটিয়াবুরুজে একটি পুকুর ভরাটের ক্ষেত্রে অভিযোগ জানিয়েও লাভ না হওয়ায় ওসি-র বিরুদ্ধে এফআইআর-এর নির্দেশ দিয়েছিলেন মেয়র ফিরহাদ হাকিম। কিন্তু সামগ্রিক ভাবে একাধিক ব্যবস্থা করা সত্ত্বেও পুকুর বোজানোতে লাগাম পরেছে কি? না-পরার অন্যতম কারণ, আইন অমান্যকারী এবং তাঁদের সহায়কদের ক’জন প্রকৃতই শাস্তি পেয়েছেন, সেই তথ্য প্রকাশ্যে আসেনি। ফলে বেআইনি কাজে শাস্তির ভয়টিও উধাও হয়ে গিয়েছে। ফুটপাতের জবরদখল ঠেকাতেও তাই শুধুই নিখুঁত নির্দেশিকায় চিঁড়ে ভিজবে না। আইন অমান্যে রাজনীতি-নির্বিশেষে শাস্তির ব্যবস্থাটিও করতে হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

footpaths hawkers
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE