Advertisement
০৩ মে ২০২৪
Madras High Court

সমানাধিকার

হিন্দু উত্তরাধিকার আইন ১৯৫৬ অনুযায়ী, স্বামীর মৃত্যুর পর তাঁর অর্জিত সম্পত্তি স্ত্রী, পুত্র, কন্যা এবং মায়ের মধ্যে সমান অংশে ভাগ হওয়ার কথা।

Madras High Court.

মাদ্রাজ হাই কোর্ট। —ফাইল চিত্র।

শেষ আপডেট: ০৪ জুলাই ২০২৩ ০৬:৩০
Share: Save:

সংসারে স্ত্রীর অবদান উপার্জনকারী স্বামীর তুলনায় কোনও অংশে কম নয়। তাই স্বামীর ক্রয় করা সম্পত্তির অর্ধাংশ স্ত্রীরও প্রাপ্য। সাম্প্রতিক এক রায়ে জানিয়েছে মাদ্রাজ হাই কোর্ট। মূল মামলাটি করেছিলেন কান্নাইয়ান নায়ডু, বেশ কিছু বছর পূর্বে। অভিযোগ ছিল, তিনি বিদেশে থাকাকালীন তাঁর অর্থে কেনা সম্পত্তি আত্মসাৎ করতে চাইছেন তাঁর স্ত্রী। কান্নাইয়ান নায়ডু-র মৃত্যুর পর তাঁর সন্তানেরা নিজেদের আইনসম্মত উত্তরাধিকারী দাবি করে হাই কোর্টে আবেদন জানায়। পাঁচটি সম্পত্তি নিয়ে মামলা। এই সব সম্পত্তিতেই সমান অধিকার চেয়েছিলেন তাঁর স্ত্রী কমসালা আম্মাল। আবেদন খারিজ হয়েছিল নিম্ন আদালতে। অবশেষে উচ্চ আদালতের তাঁর দাবিটি স্বীকৃতি পেল। বিচারপতি কৃষ্ণন রামস্বামী আরও বলেছেন, সংসার নামক যানটিকে মসৃণ ভাবে চালিয়ে নিয়ে যেতে স্বামী এবং স্ত্রী, দুই চাকারই সমান প্রয়োজন। স্বামীর উপার্জনই হোক বা পরিবারের দেখাশোনায় স্ত্রীর ভূমিকা— উভয়ই সম্পন্ন হয় পরিবারের কল্যাণের কথা মাথায় রেখেই।

স্বামীর অর্জিত সম্পত্তিতে স্ত্রীর আইনসঙ্গত অধিকার নিয়ে অজস্র মামলায় নানা সময়ে নানা রায় দেওয়া হয়েছে। হিন্দু উত্তরাধিকার আইন ১৯৫৬ অনুযায়ী, স্বামীর মৃত্যুর পর তাঁর অর্জিত সম্পত্তি স্ত্রী, পুত্র, কন্যা এবং মায়ের মধ্যে সমান অংশে ভাগ হওয়ার কথা। পারিবারিক সম্পত্তি, যা স্বামীর প্রাপ্য, তার ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। কিন্তু, আইনের কেতাবের সঙ্গে বাস্তবের ফারাক হামেশাই অসেতুসম্ভব। স্বল্পশিক্ষিত, আইন সম্পর্কে অনভিজ্ঞা বিধবাকে হামেশাই তাঁর প্রাপ্যটুকু থেকে বঞ্চিত করার প্রয়াস দেখা যায়। কখনও সন্তানরাও মায়ের ন্যায্য সম্পত্তি লাভের পথে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে। বহু ক্ষেত্রেই তাই সুবিচারের লক্ষ্যে আদালতকে এগিয়ে আসতে হয়। আবার, স্বামী উইল করে স্ত্রী’কে সম্পত্তি-বঞ্চিত করে গেলে, লড়াইয়ের জমিটুকুও অবশিষ্ট থাকে না। স্বামীর সম্পত্তিতে স্ত্রীর অধিকারের প্রশ্নটিকে দু’ভাগে ভাগ করা যায়। প্রথমটি উত্তরাধিকারের প্রশ্ন, তার সঙ্গে অন্য কোনও কর্তব্য সম্পাদনের কোনও সংযোগ নেই। পিতার সম্পত্তিতে সন্তানের অধিকার যেমন সন্তানের দায়িত্বপালনের সঙ্গে সংযুক্ত নয়, জন্মসূত্রেই স্বীকৃত, তেমনই স্ত্রীর অধিকারটিও বিবাহসূত্রে স্বীকৃত। উত্তরাধিকার আইনকে সে ভাবে পাঠ করাই বিধেয়।

অন্য দিকে, আদালতের রায়ে স্ত্রীর অধিকারের স্বীকৃতির পিছনে রয়েছে একটি ভিন্নতর, অর্থনৈতিক কারণ। গৃহশ্রম বস্তুটি মেয়েরা সচরাচর বিনামূল্যে দিয়ে থাকেন। তাকে ‘মূল্যহীন’ ভাবার পুরুষতান্ত্রিক অভ্যাসটিকে প্রশ্ন করে আদালতের অবস্থান। স্ত্রী সংসারে যে কর্তব্যগুলি পালন করেন, তা কোনও গৃহকর্মী নিয়োগ করে করানো হলে তাঁকে বাজারচলতি মজুরি দিতেই হত। পাশাপাশি রয়েছে ‘ম্যানেজারিয়াল’ দায়িত্ব— বাইরের কর্মী নিয়োগ করলে তাঁর কাজের তত্ত্বাবধান, ব্যবস্থাপনা ইত্যাদি কাজ— সংসারে স্ত্রী সেই কর্তব্যটিও সম্পাদন করেন অনায়াসে। অতএব, স্ত্রীর অর্থনৈতিক অবদানের মূল্য হিসাব করা একেবারেই কঠিন নয়। আপাতদৃষ্টিতে যাকে শুধুমাত্র ‘স্বামীর উপার্জন’-এ কেনা সম্পত্তি বলে ভ্রম হয়, তার মধ্যে স্ত্রীর এই অবদানগুলি নিহিত রয়েছে। অতএব, সেই সম্পত্তিতে অধিকার কারও দয়া বা বিবেচনানির্ভর হতে পারে না। আদালতের রায় থেকে এই শিক্ষাটি গ্রহণীয়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Madras High Court Relationship Husband Wife
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE