Advertisement
১৬ মে ২০২৪
Bharat Jodo Nyay Yatra

গণতন্ত্রের যাত্রাপথ

‘ভারত জোড়ো ন্যায় যাত্রা’ নামক প্রাক্-নির্বাচনী অভিযানে অবতীর্ণ কংগ্রেসের সাংসদ ও ভূতপূর্ব সভাপতি রাহুল গান্ধী তাঁর পূর্বসূরির এই অভিজ্ঞতা সম্পর্কে কতখানি অবহিত আছেন বা এই বিষয়ে কতটা চিন্তাভাবনা করেছেন, বলা শক্ত।

An Image Of Rahul Gandhi

রাহুল গান্ধী। —ফাইল চিত্র।

শেষ আপডেট: ২৮ জানুয়ারি ২০২৪ ০৮:২০
Share: Save:

এই বিশাল দেশে আমি যেন এক প্রবল ঝড়ের বেগে ছুটেছি, দিনে ও রাতে কখনও থামিনি, কার্যত কোথাও থাকিনি, কোনও বিশ্রাম নিইনি।... বেশির ভাগ পথটাই ঘুরেছি মোটরগাড়িতে, কিছুটা বিমানে ও ট্রেনে। কখনও কখনও কাছাকাছি যাওয়ার জন্য হাতি, উট বা ঘোড়ায় সওয়ার হয়েছি, স্টিমার, পেডাল-বোট বা নৌকায় চড়েছি, বাইসাইকেল চালিয়েছি, কিংবা হেঁটেছি— লেখকের নাম জওহরলাল নেহরু। ১৯৩৭ সালে ব্রিটিশ ভারতের প্রাদেশিক আইনসভায় নির্বাচনের আগে কয়েক মাস ধরে জাতীয় কংগ্রেসের সভাপতি যে বিরামহীন সফর করেছিলেন, তার বিবরণ তাঁর দ্য ডিসকভারি অব ইন্ডিয়া-র একটি বিশেষ সম্পদ। প্রতি দিন সকাল থেকে সন্ধ্যা, এমনকি গভীর রাত্রি অবধি জনসভা করে চলা, চলাচলের পথে গাড়িতে যতটুকু সম্ভব দু’চোখের পাতা এক করে পরের সভার জন্য শারীরিক রসদ সংগ্রহ করা— এই ভাবেই অন্তত এক কোটি মানুষের সামনে ভাষণ দিয়েছিলেন নেহরু, যাত্রাপথে আরও কত মানুষের কাছাকাছি পৌঁছেছিলেন, তার হিসাব কারও পক্ষেই রাখা সম্ভব ছিল না। কী ভাবে এই অমানুষিক পরিশ্রম চালিয়ে যেতে পেরেছিলেন পঞ্চাশের কাছাকাছি বয়সি মানুষটি? তাঁর বক্তব্য: “যে জিনিসটা আমাকে জাগ্রত এবং সজীব রেখেছিল তা হল এক বিপুল আগ্রহ ও প্রীতি, যা অনুক্ষণ আমাকে চার দিকে ঘিরে রেখেছিল, আমি যেখানে গিয়েছি সেখানেই অনুসরণ করেছিল। এই ব্যাপারটাতে আমি অভ্যস্ত ছিলাম, অথচ কখনওই ঠিক অভ্যস্ত হয়ে উঠতে পারিনি, এবং প্রত্যেকটা দিন আমার সামনে নতুন করে এক বিস্ময়ের সৃষ্টি করত।”

‘ভারত জোড়ো ন্যায় যাত্রা’ নামক প্রাক্-নির্বাচনী অভিযানে অবতীর্ণ কংগ্রেসের সাংসদ ও ভূতপূর্ব সভাপতি রাহুল গান্ধী তাঁর পূর্বসূরির এই অভিজ্ঞতা সম্পর্কে কতখানি অবহিত আছেন বা এই বিষয়ে কতটা চিন্তাভাবনা করেছেন, বলা শক্ত। ১৯৩৬-৩৭ সালের সেই সফর ও রাহুল গান্ধীর এই অভিযানের মধ্যে প্রায় নয় দশক এবং চার প্রজন্মের ব্যবধান। কিন্তু সেই দীর্ঘ দূরত্ব পার হয়ে নেহরুর ‘ভারত আবিষ্কার’-এর ওই অধ্যায়টি আজও— হয়তো বা আজই আরও বেশি— প্রাসঙ্গিক। কেবল তাঁর পারিবারিক উত্তরপ্রজন্মের পক্ষেই নয়, বৃহত্তর পরিপ্রেক্ষিতেই প্রাসঙ্গিক। রাজনীতিকদের নির্বাচনী সফরে আজ আর উট বা নৌকার প্রাদুর্ভাব নেই, তাঁদের এক জোড়া মাইক্রোফোন এবং লাউডস্পিকার সঙ্গে নিয়েও ঘুরতে হয় না, বহু মানুষের কাছে পৌঁছনোর অ-পূর্ব সব প্রকরণ তাঁদের আয়ত্ত হয়েছে। তাঁরা সেই সব প্রকরণ প্রবল তৎপরতায় ব্যবহার করে চলেছেন, যার কল্যাণে উদাসীন নাগরিকের পক্ষেও এখন নায়কনায়িকাদের ছাতির মাপ বা পাদুকার গড়ন না জেনে বেঁচে থাকা অসম্ভব। প্রচার এবং বিপণনের মহিমায় তাঁদের জনসংযোগের ধারণায় আমূল পরিবর্তন ঘটে গিয়েছে— রাজনীতিকদের সম্পর্কে জনতার উৎসাহ উদ্দীপনা ইদানীং বহুলাংশে অর্থ ও প্রযুক্তির সাহায্যে ‘নির্মিত’ হয়, নির্বাচনী তথা রাজনৈতিক অভিযানও সেই নির্মাণ প্রক্রিয়ার অংশমাত্র, ফলে বিবিধ জনসভায় ও মিছিলে তাঁদের আবির্ভাব থেকে বিদায় অবধি গোটা পর্বটিই সচরাচর এক বিশদ চিত্রনাট্যের রূপায়ণে পর্যবসিত।

২০২৪ লোকসভা নির্বাচনের সমস্ত খবর জানতে চোখ রাখুন আমাদের 'দিল্লিবাড়ির লড়াই' -এর পাতায়।

চোখ রাখুন

এই ছকটিকে ভেঙে তার যান্ত্রিকতার শাসন থেকে মুক্ত হয়ে কোনও রাজনীতিক যদি সত্য সত্যই মানুষের কাছে পৌঁছতে চান, তবে তাঁর যাত্রার পথটিকে সেই সত্যের অনুসারী হতে হবে। বাইরের নয়, অন্তরের পথ। ন্যায়, ইনসাফ বা অন্য যে নামেই সেই অভিযান চিহ্নিত হোক না কেন, একটি মৌলিক আদর্শে বা ধর্মে তাকে সুস্থিত থাকতে হবে। তার নাম: শুশ্রূষা। মানুষের কথা শোনার আন্তরিক ইচ্ছা। কেবল মুখের কথা নয়, তাঁদের চোখের দৃষ্টি, শরীরের ভাষা পড়বার সামর্থ্য অর্জন করাও একটি বড় কাজ। দীর্ঘ এবং বিচিত্র যাত্রাপথের দু’ধারে অগণন মানুষের সঙ্গে, তাঁদের দৈনন্দিন জীবনযাপনের বিবিধ খুঁটিনাটির সঙ্গে সরাসরি পরিচয়ের মধ্য দিয়েই সেই সামর্থ্য তৈরি হতে পারে। ইতিহাসে এমন সৃষ্টিশীল ‘লং মার্চ’-এর নজির বিরল নয়। সেই যাত্রাগুলি কেবল রাজনীতিকদের সামর্থ্য সৃষ্টি করেনি, রাজনীতির নতুন সামর্থ্য এবং সম্ভাবনাও সৃষ্টি করেছিল। ভারতীয় সাধারণতন্ত্র তার সাড়ে সাত দশকের অভিযাত্রায় যে কঠিন পথসন্ধিতে এসে দাঁড়িয়েছে, সেখানে এই নতুন সম্ভাবনার সন্ধান অত্যন্ত জরুরি। সেই কাজ কোনও একক নায়ক বা নায়িকার নয়, কেবল রাজনীতি-কর্মীদেরও নয়, তার দায় ও দায়িত্ব সচেতন এবং সুচেতন সমস্ত নাগরিকের। গণতন্ত্র এবং সাধারণতন্ত্র, দু’টি শব্দেই সেই কর্তব্যের অনুশাসন নিহিত আছে।

২০২৪ লোকসভা নির্বাচনের সমস্ত খবর জানতে চোখ রাখুন আমাদের 'দিল্লিবাড়ির লড়াই' -এর পাতায়।

চোখ রাখুন
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE