—প্রতীকী ছবি।
ভারত-পাকিস্তান সম্পর্কের মধ্যে এক অসাধারণ পারস্পরিক ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া নিয়ত বহমান। এই যেমন, ভারতের বিরুদ্ধে পাকিস্তানের মাটিতে পরিকল্পিত গুপ্তহত্যার অভিযোগ আনল ইসলামাবাদ। পাক বিদেশ মন্ত্রকের তরফে এক বিবৃতিতে দাবি করা হল, গত বছর শিয়ালকোট এবং রাওয়ালকোটে এক মাসের ব্যবধানে দুই জঙ্গি সংগঠন জইশ-ই-মহম্মদ এবং লস্কর-ই-তইবা’র দুই নেতার ‘নির্বিচার’ খুনের পিছনে হাত রয়েছে ভারতীয় গুপ্তচরদের, যার প্রমাণও নাকি রয়েছে তাদের হাতে। ভারতের এ-হেন ‘পদক্ষেপ’কে তাদের সার্বভৌমত্বের লঙ্ঘন হিসাবে দেখছে তারা। এ দিক থেকে ভারতেরও পাল্টা দাবি, হত্যার অভিযোগটি তাদের কালিমালিপ্ত করার প্রচেষ্টা ছাড়া কিছু নয়। ‘মিথ্যা প্রচার’ তো বটেই, তার সঙ্গে কাশ্মীর সীমান্তে আবারও পাকিস্তান সক্রিয় উস্কানি দিচ্ছে, দিল্লির সংবাদ। লক্ষণীয়, এ সব অভিযোগ ও প্রত্যভিযোগ উঠছে এমন সময়ে যখন কানাডা এবং আমেরিকা দুই দেশ থেকেই আলাদা ভাবে ভারতের বিরুদ্ধে তাদের মাটিতে খলিস্তান আন্দোলনের সমানুভাবীদের কয়েক জনকে হত্যা তথা হত্যা-পরিকল্পনার দোষারোপ করা শুরু হয়েছে।
জন্মাবধি পাকিস্তানের বিদেশনীতিতে বিশেষ একটি ভূমিকায় অবতীর্ণ সেখানকার সামরিক বাহিনী। পড়শি রাষ্ট্রদ্বয়ের সরকার শান্তি-প্রক্রিয়ায় আগ্রহী হলেও সে প্রচেষ্টা ব্যাহত হয়ে যায় সামরিক নেতৃত্বের উস্কানির কারণে, এমনটাই অভিমত আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের। দৃষ্টান্তস্বরূপ, ১৯৯৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে লাহোরে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী অটলবিহারী বাজপেয়ী এবং পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ় শরিফের মধ্যে লাহোর চুক্তির কয়েক মাসের মধ্যে কার্গিল যুদ্ধ শুরু হয়েছিল, যার অন্যতর ব্যাখ্যা অসম্ভব। তৎপরবর্তী কালে গদিচ্যুত হন প্রধানমন্ত্রী শরিফও, যা সে দেশের প্রশাসনিক কার্যকলাপে সামরিক বাহিনীর প্রভাবের সম্ভাবনাকেই আরও পোক্ত করে। গত দশ বছরে নরেন্দ্র মোদীর প্রধানমন্ত্রিত্ব কালে পাকিস্তানের ক্ষেত্রে ভারতের বিদেশনীতি সমানেই নিম্নমুখী ঝাঁপ নিয়েছে। ক্রমশ কট্টর হয়েছে দুই দেশের ভাষা ও অসহযোগী হয়েছে তাদের সম্পর্ক। ২০১৫ সালের মাঝামাঝি পাকিস্তানের কমান্ডারস অধিবেশনে প্রথম আনুষ্ঠানিক ভাবে ভারতীয় গুপ্তচর সংস্থা র-এর বিরুদ্ধে সে দেশে জঙ্গি কার্যকলাপের মদত দেওয়ার অভিযোগ তোলা হয়। অভিযোগের তির ছিল বালুচিস্তান, করাচি এবং অন্যান্য আদিবাসী অঞ্চলে জঙ্গি কার্যকলাপে ভারতীয় যোগের পরিপ্রেক্ষিতে, যা সে বারও অস্বীকার করে ভারত। ওই সময়েই ভারতের তৎকালীন প্রতিরক্ষা মন্ত্রী মনোহর পর্রীকর বলেছিলেন ‘সন্ত্রাসবাদকে সন্ত্রাসবাদ দিয়েই নিরস্ত করা উচিত’ জাতীয় একটি অকারণ উস্কানিমূলক বাক্য।
মাত্র কয়েক দিন পরেই পাকিস্তানে জাতীয় নির্বাচন, ভারতের নির্বাচনও আর কয়েক মাস পরেই। পড়শি রাষ্ট্রটির আর্থিক পরিস্থিতিও বর্তমানে সঙ্কটজনক। আগেও যেমন দেখা গিয়েছে, নানা সঙ্কট থেকে অভ্যন্তরীণ মনোযোগ সরাতেই যেন ভারত ও পাকিস্তান পরস্পরের বিরুদ্ধে তিক্ত অভিযোগের তরজায় নামে। অথচ ঠিক তার উল্টো কাজটিই করা উচিত। দুই পক্ষেরই উচিত নতুন সংঘাতে বা বাদানুবাদে লিপ্ত না হয়ে সঙ্কটপূর্ণ সময়ে নিজেদের অবস্থান সুস্থিত রাখা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy