—প্রতীকী ছবি।
রান্নার গ্যাসের আধার-সংযুক্তি নিয়ে গ্রাহকদের যে হয়রানি হল, তার দায় কার? মানুষের কাছে প্রশাসন দায়বদ্ধ হলে গ্রাহকদের বৃথা সময় ব্যয়ের জন্য জনসমক্ষে ক্ষমা প্রার্থনা করতেন গ্যাস সরবরাহকারী সংস্থার শীর্ষ কর্তারা। সেই সঙ্গে কারণ দর্শানোর চিঠি পাঠানো হত সংশ্লিষ্ট নানা মন্ত্রকের আধিকারিকদের। কেন নতুন একটি ব্যবস্থার সূত্রপাতে স্বচ্ছতা থাকবে না? আধার-সংযুক্তির প্রয়োজন, পদ্ধতি ও সময়সীমা সম্পর্কে যথাযথ তথ্য কেন অনেক আগেই প্রচার করা হয়নি? তথ্য প্রচারে সরকারি গাফিলতির সুযোগ নিয়েই এই গুজব ছড়াতে পেরেছে যে, ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে আধার-সংযুক্তি না করলে গ্যাসের সিলিন্ডার মিলবে না, ভর্তুকি কাটা যাবে। তাই পাড়ায় পাড়ায় গ্যাসের ডিলারদের দফতরের সামনে দীর্ঘ লাইন পড়েছে। বহু প্রবীণ গ্রাহক দীর্ঘ ক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তাঁদের জানার উপায় ছিল না যে, তাঁদের উদ্বেগ ভিত্তিহীন। আধার-সংযুক্তি না হলে ভর্তুকি বাতিল, বা গ্যাসের সিলিন্ডার সরবরাহ বন্ধ করার কোনও নির্দেশই আসেনি। ডিলাররাও যথাযথ তথ্য সরবরাহ করেননি, বরং মানুষের উদ্বেগের সুযোগ নিয়েছেন। আধার কার্ড সংযুক্তির জন্য গ্যাস ওভেনের নল, বা তেমন কোনও সরঞ্জাম কিনতে বাধ্য করেছেন। এই অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করাও মন্ত্রকেরই দায়িত্ব।
কিন্তু দেশটির নাম ভারত, যেখানে সাধারণ মানুষের ক্ষতি প্রশাসকদের মনে বিন্দুমাত্র রেখাপাত করে না। আকস্মিক ভাবে নোটবন্দি বা লকডাউনের মতো গুরুতর সিদ্ধান্ত ঘোষণা, এবং তার জেরে কয়েক কোটি লোকের আতঙ্ক, হয়রানি, এমনকি প্রাণনাশ— এ সবই গত কয়েক বছরে যেন গা-সওয়া হয়ে গিয়েছে। বিশেষ করে আধার কার্ডের সংযুক্তি দেশের অধিকাংশ মানুষের কাছে এক বিভীষিকা। আধার সংযোগ না থাকায় রেশন কার্ড তামাদি হয়ে গিয়েছে, শিশু ভর্তি হয়নি স্কুলে, শ্রমিক একশো দিনের কাজ হারিয়েছেন। এই অন্যায় বঞ্চনা নিয়ে শোরগোল উঠেছে। অথচ, আধার-সংযুক্তি না থাকায় নাগরিককে যে সরকারি সুযোগ-সুবিধা থেকে বাদ দেওয়া চলে না, ব্যাঙ্ক বা টেলিফোনের মতো অত্যাবশ্যক পরিষেবায় আধার-সংযুক্তি বাধ্যতামূলক নয়, আদালত তা বার বার জানিয়েছে। তা সত্ত্বেও রান্নার গ্যাসের মতো একটি জরুরি পরিষেবার জন্য আধার-সংযুক্তিকে বাধ্যতামূলক বলে দেখানোর চেষ্টা দেখা গেল। ভিত্তিহীন গুজবের জেরে ফের অগণিত মানুষকে অসীম ক্লেশ ভোগ করতে হল, অর্থদণ্ড দিতে হল।
এমন অস্বচ্ছ, অসংবেদী সিদ্ধান্তই যেন এখন প্রশাসনের লক্ষণ। নাগরিকও ভুলতে বসেছে যে, গণতান্ত্রিক প্রশাসনের প্রধান লক্ষণ স্বচ্ছতা। কেবল গণমাধ্যমে বিজ্ঞাপনের জন্যই সরকারি বরাদ্দ কম নয়— গত অর্থবর্ষে ৩৭৫ কোটি টাকা খরচ করেছিল কেন্দ্রীয় সরকার। নির্বাচনের আগের বছরগুলিতে ওই খরচ বেড়ে যায়। সরকারি প্রকল্পের প্রচারের কৌশলে ক্ষমতাসীন দলের সাফল্যের প্রচার চলে। বিভিন্ন উৎসব উপলক্ষে শুভেচ্ছার বার্তাও সরকারি বিজ্ঞাপনে দেখা যায়। অথচ, জরুরি পরিষেবা নিয়ে নিয়মে পরিবর্তনগুলি প্রচারিত হয় না। ডিজিটাল মাধ্যমে আবেদন করার নির্দেশ দরিদ্রকে বাধ্য করে দালাল ও ফড়েদের উপর নির্ভর করতে। রেশন ডিলার, গ্যাসের ডিলারও নাগরিকের অসহায়তার সুযোগ নেয়। প্রবঞ্চনা সওয়াই যেন ভারতবাসীর নিয়তি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy