Advertisement
০১ মে ২০২৪
Diploma Doctors

চিকিৎসার দ্রুতপাঠ

শহর এবং শহরতলিতে চিকিৎসকের আধিক্য, আর গ্রামাঞ্চলে চিকিৎসকের ঘাটতি, এই চিত্র সারা দেশেই। পশ্চিমবঙ্গও তার ব্যতিক্রম নয়।

An image representing doctor

বর্তমানে সরকারের না আছে যথেষ্ট চিকিৎসক তৈরি করার সাধ্য, না আছে চিকিৎসকদের গ্রামের হাসপাতালে ধরে রাখার ক্ষমতা। প্রতীকী ছবি।

শেষ আপডেট: ১৭ মে ২০২৩ ০৬:০১
Share: Save:

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ‘ডিপ্লোমা ডাক্তার’ তৈরির প্রসঙ্গ তুলতেই তাতে তড়িঘড়ি জল ঢাললেন আধিকারিকরা। স্বাস্থ্য দফতর ‘চিকিৎসক’-এর পরিবর্তে ‘স্বাস্থ্যক্ষেত্রে পেশাদার’ তৈরির জন্য কমিটি বানাবে বলে ঘোষণা করেছে। সংশোধনটি বেশ, তবে মূল সমস্যাটি কিন্তু রয়েই গেল, চিকিৎসকের কাজ স্বাস্থ্যকর্মী দিয়ে হবে না। বর্তমানে সরকারের না আছে যথেষ্ট চিকিৎসক তৈরি করার সাধ্য, না আছে চিকিৎসকদের গ্রামের হাসপাতালে ধরে রাখার ক্ষমতা। এই জন্যই সহজতর পথে চিকিৎসক জোগান দেওয়ার উপায় খোঁজার ক্রমাগত চেষ্টা। বামফ্রন্ট সরকার এ রাজ্যে গ্রামীণ চিকিৎসক তৈরির জন্য তিন বছরের পাঠক্রম শুরু করেছিল, তুমুল সমালোচনার জেরে তা বন্ধ হয়ে যায়। ২০২০ সালে বিজেপি সরকার যে জাতীয় শিক্ষানীতি ঘোষণা করে, তাতে ‘আয়ুষ’ প্রথার চিকিৎসার সঙ্গে আধুনিক চিকিৎসার মেলবন্ধনের (ইন্টিগ্রেশন) কথা ছিল। সেই ঘোষণাকে কেন্দ্র করে বিরাট আলোড়নও পড়েছিল। তবু ২০২২ সালে কেন্দ্রীয় সরকার সংসদে দাবি করে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দিষ্ট ন্যূনতম অনুপাতের চেয়ে (এক হাজার জনসংখ্যায় এক জন ডাক্তার) আরও বেশি চিকিৎসক রয়েছে ভারতে। এই উজ্জ্বল চিত্র মিলেছিল, কারণ তেরো লক্ষ আধুনিক চিকিৎসকের সঙ্গে প্রায় সাড়ে পাঁচ লক্ষ আয়ুষ চিকিৎসককেও হিসাবে ধরেছিল কেন্দ্রীয় সরকার। ‘হু’ অবশ্য কেবল আধুনিক চিকিৎসকদেরই গণ্য করে।

তবে কেবল চিকিৎসকের সংখ্যার ঘাটতি দিয়ে ভারতের চিকিৎসার সঙ্কট ধরা পড়ে না। শহর এবং শহরতলিতে চিকিৎসকের আধিক্য, আর গ্রামাঞ্চলে চিকিৎসকের ঘাটতি, এই চিত্র সারা দেশেই। পশ্চিমবঙ্গও তার ব্যতিক্রম নয়। সমাধান খুঁজতে জেলা হাসপাতালগুলির সঙ্গে সংলগ্ন নতুন নতুন মেডিক্যাল কলেজ তৈরির পরিকল্পনা নিয়েছে রাজ্য সরকার। কিন্তু সমাধানের মধ্যেই লুকিয়ে রয়েছে সঙ্কট। অর্থ এবং লোকবলের অভাবে জেলার নতুন মেডিক্যাল কলেজগুলি কার্যত দ্বিতীয় শ্রেণির কলেজ হয়ে রয়ে যাচ্ছে। উন্নত এবং জটিল চিকিৎসার জোগান দিয়ে সেগুলি কলকাতার উপর জেলার মানুষের নির্ভরতা কমাবে, সেই সম্ভাবনা আজও বাস্তবে পরিণত হয়নি। আবার, মেডিক্যাল কলেজের সংখ্যা বাড়িয়ে গ্রামীণ চিকিৎসার উন্নতি আদৌ সম্ভব কি না, উঠেছে সে প্রশ্নও। ভারতের অধিকাংশ মেডিক্যাল কলেজ দক্ষিণ ভারতে, তবু সে রাজ্যগুলিতে গ্রামাঞ্চলে চিকিৎসার দশা তেমন আশাপ্রদ নয়। চিকিৎসক সংগঠনগুলি বরাবরই দাবি করে এসেছে, গ্রামীণ চিকিৎসার পরিকাঠামো উন্নত না করলে তা চিকিৎসকদের কাছে আকর্ষণীয় হয়ে উঠবে না। কিন্তু বাস্তব এই যে, নাগরিক জীবনের আকর্ষণের বিপরীতে গ্রামীণ চিকিৎসার প্রতি আগ্রহ প্রায় কোনও রাজ্যেই দেখা যায় না। এই জন্যই চিকিৎসাশাস্ত্রের চটজলদি পাঠ পড়িয়ে কেবল গ্রামের জন্য ‘বিকল্প চিকিৎসক’ তৈরির প্রস্তাব বার বার উঠেছে।

সোজা কথাটি হল, চিকিৎসাবিদ্যার ‘দ্রুতপাঠ’ রাজনৈতিক প্রচারে যত আকর্ষণীয়, কার্যক্ষেত্রে ততই অসঙ্গত। চিকিৎসক তৈরির সুনির্দিষ্ট পদ্ধতি রয়েছে, তাকে কাটছাঁট করলে স্বাস্থ্যব্যবস্থাই দুর্বল হবে। ‘প্রায়-চিকিৎসক’ বলে কিছু হয় না। শহরের মেডিক্যাল কলেজের চিকিৎসকদের দিয়ে গ্রামে ‘চিকিৎসা শিবির’-এর আয়োজনও ছলমাত্র। আপাতত উপায়, স্বল্প চিকিৎসক দিয়েও গ্রামের হাসপাতাল থেকে সর্বাধিক পরিষেবার ব্যবস্থা। যথেষ্ট স্বাস্থ্যকর্মী, উন্নত ল্যাবরেটরি, টেকনিশিয়ানের জোগান চাই। টেলি-মেডিসিনের মতো প্রযুক্তি, যা বিশেষজ্ঞদের মতামত পৌঁছতে পারে প্রত্যন্ত গ্রামেও, তারও প্রয়োগ দরকার। টেলি-মেডিসিন বৈধতা পেয়েছে, কিন্তু তার রূপায়ণের জন্য যথেষ্ট প্রশিক্ষিত কর্মী বা পরিকাঠামো নেই। গ্রামে চিকিৎসকের সংখ্যা বাড়ানোর দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার পাশাপাশি, গ্রামীণ মানুষের জন্য সরকারি চিকিৎসকের উপযোগিতা বাড়াতে হবে দ্রুত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE