Advertisement
১৭ মে ২০২৪
Women Cricket

সেই তিমিরে

পুরুষ নাম নিয়ে, বা ছেলেদের প্রতিযোগিতায় মেয়েরা খেললে খেলার গৌরববৃদ্ধি ঘটে না, বরং খেলার মাঠে মেয়েদের অজস্র অভাব ও অপ্রাপ্তিই প্রকট হয়ে পড়ে।

A Photograph of Titas Sadhu

ফাইনালে সেরা খেলোয়াড় এ রাজ্যের তিতাস সাধু। ফাইল ছবি।

শেষ আপডেট: ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ০৬:৩৩
Share: Save:

মেয়েদের অনূর্ধ্ব-১৯ ক্রিকেট বিশ্বকাপ জয়ে উচ্ছ্বসিত দেশ, গাওয়া হচ্ছে নারীশক্তির জয়গান। বাংলা দৃশ্যত একটু বেশি খুশি, ফাইনালে সেরা খেলোয়াড় এ রাজ্যের তিতাস সাধু। সাক্ষাৎকারে সেই ‘সফল মেয়ে’ই জানালেন, জেলা স্তরের ক্লাব ক্রিকেটে তাঁকে ছেলেদের পরিচয়েও খেলতে হয়েছে। কারণটা পরিষ্কার, মেয়ে বলে খেলতে দেওয়া হচ্ছিল না, তাই পুরুষ নাম নিয়ে মাঠে নামা। এমনকি এর আগে খেলেছেন অনূর্ধ্ব-১৫ স্তরে ছেলেদের প্রতিযোগিতাতেও। বিশ্বকাপ জয়ের পরে এখন এই সবই শুনলে মনে হবে স্বপ্নবৎ, কিংবা তিতাসের সাফল্যপথের অজস্র প্রতিবন্ধকতার একটি, হয়তো বা ভবিষ্যতে কোনও দিন এই বিজয় বা বিজয়ীকে নিয়ে কোনও চলচ্চিত্র তৈরি হলে তার অবশ্যম্ভাবী উপকরণ হয়ে উঠবে এই ‘গল্প হলেও সত্যি’।

কিন্তু এহ বাহ্য। আসল কথাটি এই, পুরুষ নাম নিয়ে, বা ছেলেদের প্রতিযোগিতায় মেয়েরা খেললে খেলার গৌরববৃদ্ধি ঘটে না, বরং খেলার মাঠে মেয়েদের অজস্র অভাব ও অপ্রাপ্তিই প্রকট হয়ে পড়ে। মেয়েদের খেলা নিয়ে এই একুশ শতকেও সমাজভ্রুকুটি, বিধিনিষেধ ও ফতোয়ার বিরাম নেই, তদুপরি যে কোনও খেলায় মেয়েদের জন্য সুযোগ-সুবিধা এখনও অনেক কম, পরিকাঠামো দুর্বল। সে কারণেই প্রতিভাময়ী নারী খেলোয়াড়কে পুরুষের নাম নিতে হয়, কিংবা ছেলেদের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় নামতে হয়, নইলে তাঁর খেলাই হবে না। এ ঘটনা বাস্তবে ঘটেছে বহু বার। দঙ্গল ছবি দেখিয়েছিল গীতা ও ববিতা ফোগতের জীবন, গোড়ায় ছেলেদের সঙ্গে কুস্তি লড়ার কাহিনি। একদা সাহিত্যজগতে মেয়েদের পুরুষ নাম নিয়ে লেখালিখি প্রায় স্বতঃসিদ্ধের মতো ছিল, যুদ্ধে বা তদন্তমূলক সাংবাদিকতায় মেয়েরা ছেলে সেজে কার্যোদ্ধার করেছেন, আবার স্রেফ মেয়ে হওয়ার জন্য হাতছাড়া হয়েছে গবেষণাপত্র বা আবিষ্কারের কৃতিত্ব— বিজ্ঞানবিশ্বে এমন উদাহরণও বহু। যুগ পরিবর্তনের সঙ্গে এই সব পরিসরে বিভেদ কমেছে, কিন্তু ক্রীড়াক্ষেত্র সেই তিমিরেই। সেখানে পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতার সঙ্গে এখনও বহাল বিরুদ্ধ পরিকাঠামো: মেয়েদের ড্রেসিং রুম ও শৌচালয়ের চরম দুর্দশা, দূরে কোথাও খেলতে গেলে যাতায়াত বা খাওয়াদাওয়ার অব্যবস্থা, ম্যাচ ফি বা পুরস্কার ইত্যাদি ক্ষেত্রে ছেলেদের সঙ্গে তুলনা নাহয় অকথিতই থাকল।

ক্রীড়া-পরিকাঠামোয় সরকারের যা ব্যয়-বরাদ্দ তার কতটা মেয়ে খেলোয়াড়দের জন্য, তারও কতটুকু তাঁদের কাজে লাগছে, বিশেষত জেলা স্তরে— এ প্রশ্ন কি সঙ্গত নয়? স্কুল স্তরে মেয়েদের খেলাধুলার জন্য অর্থ আছে, ব্লক ও জেলা স্তরেও; রাজ্য সরকার ক্লাবগুলিকে নানা কাজে অর্থ বরাদ্দ করে থাকে— এই সমগ্র চিত্রটিতে মেয়ে খেলোয়াড়দের স্থান কোথায়, কতটুকু? কলকাতার কথা আলাদা, প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে আসা যে মেয়েটি জেলাসদর শহরে আসছে প্রশিক্ষণ নিতে, কিংবা খেলছে বড় প্রতিযোগিতায়, তার থাকার ব্যবস্থাটুকুও বহু ক্ষেত্রে অনুপস্থিত, প্রশিক্ষকরা নিজেদের বাড়িতে তাঁদের রাখার ব্যবস্থা করতে বাধ্য হন। ক্লাব তো দূরস্থান, বড় স্টেডিয়ামেও অনেক সময় মেয়েরা জায়গা ও সময় পান না, কারণ ‘ছেলেরা খেলছে’। মেয়েরা বড় টুর্নামেন্ট জিতলে তাঁদের কৃতিত্বের ভাগ নেওয়া, অথচ সারা বছর তাঁদের অবহেলা উপেক্ষায় দূরে সরিয়ে রাখা— এই দ্বিচারিতার শেষ হোক।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE