Advertisement
১৯ মে ২০২৪
Civil Society

নিরপেক্ষ

বর্তমানে যে ভাবে ক্রমেই একাধিপত্যকামী শাসকদের দাপট বাড়ছে, তাতে নাগরিক সমাজের গুরুত্ব প্রশ্নাতীত।

নাগরিক সমাজ।

নাগরিক সমাজ।

শেষ আপডেট: ১৪ অক্টোবর ২০২২ ০৬:২৪
Share: Save:

এই বছরের নোবেল শান্তি পুরস্কারের থেকে যদি ঠান্ডা যুদ্ধের স্মৃতিগন্ধটিকে সরিয়ে রাখা যায়, তা হলে পড়ে থাকে একটি প্রয়োজনের কথা— রাষ্ট্র ও জনসাধারণের মধ্যবর্তী পরিসরে একটি দৃঢ়, নৈতিক কণ্ঠস্বরের গুরুত্বের কথা। কথাটি বেলারুস-রাশিয়া-ইউক্রেনের ভৌগোলিক পরিসরে যেমন সত্য, ঠিক তেমনই সত্য আমেরিকা বা ভারত বা তুরস্কেও। সেই সিভিল সোসাইটি বা নাগরিক সমাজের চরিত্র ঠিক কেমন হবে, তার কর্তব্যের পরিধি কতখানি, সে বিষয়ে বিস্তর তাত্ত্বিক আলোচনা, এবং মতান্তর রয়েছে। কিন্তু, নোবেল কমিটির বিবৃতির প্রথম অনুচ্ছেদেই ধরা রয়েছে নাগরিক সমাজের প্রধানতম কর্তব্যের কথা— তার কাজ রাষ্ট্রশক্তিকে প্রশ্ন করা, তার সমালোচনা করা; এবং নাগরিকের মৌলিক অধিকার রক্ষার জন্য লড়াই চালিয়ে যাওয়া। এই কাজটির গুরুত্ব চিরকালই ছিল, কিন্তু বর্তমানে যে ভাবে ক্রমেই একাধিপত্যকামী শাসকদের দাপট বাড়ছে, তাতে নাগরিক সমাজের গুরুত্ব প্রশ্নাতীত।

নাগরিক সমাজের কণ্ঠস্বরকে— যদি তা শাসকের বিরোধী হয়— দমন করার প্রচেষ্টা বৈশ্বিক। এই বছরের নোবেলজয়ী আলেস বিয়ালিয়াৎস্কি এখনও বিনা বিচারে কারাবন্দি। ঠিক যেমন ভারতে জেলবন্দি অবস্থাতেই মারা গিয়েছেন স্ট্যান স্বামী, বহু দিন বন্দি থাকার পর ছাড়া পেয়েছেন ভারাভারা রাও; এখনও জেলে বন্দি আরও অনেকে। তাঁদের কারও বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগ, কেউ অভিযুক্ত ষড়যন্ত্রে যুক্ত থাকায়, কারও বিরুদ্ধে ইউএপিএ নামক দানবিক আইনে মামলা করা হয়েছে। কারও বিরুদ্ধে আর্থিক নয়ছয়ের অভিযোগ এনে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাগুলিকে ব্যবহার করা হচ্ছে উদ্দিষ্ট ব্যক্তিকে হেনস্থা করার কাজে। একের পর এক অসরকারি সংস্থার টাকার জোগান বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। নাগরিক সমাজের বিরুদ্ধে ভারতীয় রাষ্ট্র এমন কঠোর কেন, সেই প্রশ্নের উত্তরে তার বৈশ্বিক উত্তরটিরই প্রতিধ্বনি শোনা যাবে— নাগরিক সমাজের যে প্রতিনিধিরা রাষ্ট্রীয় রোষানলে পড়েছেন, তাঁরা প্রত্যেকেই সরকারের বৈষম্যমূলক, অগণতান্ত্রিক আচরণের বিরোধিতা করেছেন। এক অর্থে, শাসকের রোষে পড়া নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের কাছে নিজেদের দায়িত্বপালনের স্বীকৃতিস্বরূপ। যাঁরা এই দায়িত্ব পালন করেন, তাঁরা নিজেদের বিবেকের ডাকে সাড়া দিয়েই এই পথটি বেছে নেন। এ পথে প্রাথমিক ‘পুরস্কার’ রাজদণ্ডের প্রহার, কিন্তু দীর্ঘমেয়াদি পুরস্কার হল গণতন্ত্রের দীর্ঘায়ু। আগামী প্রজন্মের জন্য সমাজকে বাসযোগ্য রেখে যেতে পারা।

ভারতের সাম্প্রতিক অভিজ্ঞতা বলছে যে, নাগরিক সমাজের সঙ্গে শাসক শ্রেণির একটি লেনদেনের সম্পর্ক গড়ে ওঠে, এবং নাগরিক সমাজের প্রাণকেন্দ্রে যে গণতান্ত্রিক অধিকারের অধিষ্ঠান, সে প্রসঙ্গ নিক্ষিপ্ত হয় ক্ষুদ্র স্বার্থের আঁস্তাকুড়ে। কিন্তু তাকেই নাগরিক সমাজের একমাত্র রূপ হিসাবে কল্পনা করে নিলে ভুল হবে। নাগরিক সমাজ কোনও স্থবির সত্তা নয়, তার রূপ অনবরত পাল্টাতে থাকে। ভারতের সাম্প্রতিক অভিজ্ঞতাই বলবে যে, নয়া নাগরিকত্ব আইন বিরোধী আন্দোলনই হোক অথবা কৃষি বিলের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ, প্রতিরোধ সংঘটিত হয়েছে নতুনতর সামাজিক জোট তৈরি হওয়ার মাধ্যমেই। এই প্রতিরোধই নাগরিক সমাজের হৃৎস্পন্দন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Civil Society Society Politics
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE