Advertisement
০২ মে ২০২৪
Bhutan

সুখ যদি নাহি পাও

নানা দশকের নানা সমীক্ষা এত দিন বলেছিল, ভুটান এই গ্রহের সুখীতম দেশ। সত্তরের দশকে ‘গ্রোস ন্যাশনাল হ্যাপিনেস’ পরিভাষাটি প্রথম চালু করেন ভুটানে চতুর্থ রাজা জিগমে সিংঘে ওয়াংচুক।

কামাখ্যা মন্দিরে প্রার্থনারত ভূটানের রাজা জিগমে ওয়াংচুক।

কামাখ্যা মন্দিরে প্রার্থনারত ভূটানের রাজা জিগমে ওয়াংচুক। —ফাইল চিত্র।

শেষ আপডেট: ০৬ নভেম্বর ২০২৩ ০৬:১৫
Share: Save:

ওপারেতে সর্বসুখ আমার বিশ্বাস: এত দিন তাবৎ বিশ্বের মনে এই কবিবাক্য গুঞ্জরিত হলেও ভুটান ছিল অন্য রকম, ব্যতিক্রমী। অন্তত তাই ছিল বিশ্বজনমত। সম্প্রতি কি পরিস্থিতি পাল্টাচ্ছে? ইদানীং বিশেষত তরুণ ভুটানিদের মধ্যে ‘সুখের সন্ধান’-এ বিদেশ-বিভুঁইতে পাড়ি দেওয়ার প্রবণতা বাড়ছে দ্রুত। ‘আরও ভাল’ জীবন কিংবা জীবিকার খোঁজে দেশান্তর গমন বিশ্ব জুড়েই পরিচিত ধারা। কিন্তু মাত্র ৭.৭ লক্ষ মানুষের দেশে যদি কর্মক্ষম মানুষেরা ক্রমশ আরও ভাল বা স্বচ্ছন্দ জীবনের খোঁজে দেশছাড়া হন, তবে সে দেশের কাছে তা উদ্বেগের বিষয় বটে। কোনও আনুষ্ঠানিক সংখ্যা প্রকাশিত না হলেও ভুটানের এক সমীক্ষা বলছে, গত দেড় বছরে মোট জনসংখ্যার অন্তত পনেরো শতাংশ দেশছাড়া হয়েছেন। ছাত্রছাত্রী তো বটেই, এমনকি সরকারি আধিকারিক, চিকিৎসক, শিক্ষক বা প্রতিষ্ঠিত সাংবাদিক, যাঁদের চাকরির কোনও অনিশ্চয়তা নেই, তাঁদেরও অনেকে সপরিবারে দেশত্যাগী।

নানা দশকের নানা সমীক্ষা এত দিন বলেছিল, ভুটান এই গ্রহের সুখীতম দেশ। সত্তরের দশকে ‘গ্রোস ন্যাশনাল হ্যাপিনেস’ পরিভাষাটি প্রথম চালু করেন ভুটানে চতুর্থ রাজা জিগমে সিংঘে ওয়াংচুক। তিনি বলেছিলেন, মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদন বা জিডিপি-র তুলনায় মোট জাতীয় সুখ (জিএনএইচ) অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। গ্রোস ন্যাশনাল হ্যাপিনেস আসলে বোঝায়, দেশের প্রগতির ভাবনায় ‘সাসটেনেবল ডেভলপমেন্ট’ বা সুস্থায়ী উন্নয়নের সার্বিক ভূমিকা আছে, এবং মানুষের সুখ-শান্তি ও ভাল-থাকার মধ্যে অর্থনীতিরও বাইরে যে দিকগুলি আছে, সেগুলিতেও সমান গুরুত্ব দেওয়া দরকার। যার ফলে জীবনযাত্রার মান, স্বাস্থ্য ও শিক্ষার মতো গুরুত্বপূর্ণ আর্থ-সামাজিক বিষয়ের পাশাপাশি সামাজিক উন্নয়ন, জ্ঞাতিভাব, আধ্যাত্মিকতা, মানসিক সুস্থতার মতো বিষয়ও গত কয়েক দশক ধরে সরকারের জাতীয় নীতিতে গুরুত্ব পেয়ে এসেছে। শুধু তা-ই নয়, গত মে মাসেই এই মোট জাতীয় সুখ সূচকে গত সাত বছরে সাড়ে তিন শতাংশ বৃদ্ধির কথা জানিয়েছিল সরকার।

দিন পাল্টায়। দিনযাপনও। কঠিন ভূসংস্থানগত ও জলবায়ু পরিস্থিতি-সহ ভূবেষ্টিত এই পার্বত্য রাষ্ট্রটি দীর্ঘ কাল ধরেই সীমিত অর্থনৈতিক বৃদ্ধি ও বেকারত্বের চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন। দেশের সর্বজনীন শিক্ষা ও স্বাস্থ্যনীতি দেশবাসীর জীবনযাত্রার মান ও শ্রমশক্তির বৃদ্ধি ঘটালেও, কর্মসংস্থানের বাজারে চাহিদা-জোগানের বিরাট ফারাক। ভুটানের অর্থনীতি মূলত পর্যটন এবং জলবিদ্যুৎ উৎপাদনের উপরে নির্ভরশীল। অতিমারির কোপ পড়েছে সে দেশের পর্যটনকেন্দ্রিক কর্মসংস্থানের উপরে। বাকি কর্মসংস্থানের চিত্রও আশাব্যঞ্জক নয়। এর মাঝে দক্ষ কর্মীদের এমন দেশান্তর গমন কৃষি, শিল্প এবং পরিষেবা ক্ষেত্রের উপরে প্রভাব ফেলতে বাধ্য। আবার, আজ বিশ্বায়নের যুগে ভুটানের নতুন প্রজন্মের কাছে ‘সুখ’-এর সংজ্ঞাটিও আর এক রকম নেই। আগের তুলনায় সে তার জীবনের উচ্চাকাঙ্ক্ষাকে বেশি গুরুত্ব দেয় এখন, যা সে দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে অযৌক্তিক তো নয়ই, খুবই স্বাভাবিক। নানা কারণেই সে দেশের সরকার এখন জাতীয় অর্থনীতির হাল পরিবর্তন নিয়ে চিন্তায় আছে। জনগণ কী করে আক্ষরিক অর্থেই ‘সুখের মুখ’ দেখতে পান, সেটাই এখন তাদের দুর্ভাবনা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Bhutan
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE