Advertisement
২২ মে ২০২৪
Budget 2021

প্রত্যাশা

শেষ আপডেট: ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ০৫:৩১
Share: Save:

দুই দিনে তিন হাজার পয়েন্টেরও বেশি বাড়িল বম্বে স্টক এক্সচেঞ্জের প্রধান সূচক সেনসেক্স। ২০২১-২২ অর্থবর্ষের বাজেটের প্রতিক্রিয়ায়। শিল্পমহলও উচ্ছ্বসিত। আশাবাদী হইবার কারণগুলি স্পষ্ট— রাজকোষ ঘাটতির পরোয়া না করিয়াই খরচ করিবার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করিয়াছেন অর্থমন্ত্রী; বিমা ও ব্যাঙ্কিং ক্ষেত্রে প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগের দরজা আরও বেশি করিয়া খুলিয়াছেন; এবং, এই প্রথম বার, কোনও রাখঢাক না করিয়াই জানাইয়াছেন যে, রাষ্ট্রের হাতে থাকা আর্থিক সম্পদের বেসরকারিকরণ করা হইবে। অর্থাৎ, বাজার যেমন বাজেট প্রত্যাশা করে, নির্মলা সীতারামনের বাজেটটি বহুলাংশে তেমনই। ফলে, বাজারের প্রত্যাশা, লগ্নির পরিমাণ বাড়িবে, অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডও বাড়িবে, চাহিদা ফিরিবে। অর্থশাস্ত্রের তত্ত্ব বলিবে, প্রত্যাশার সহিত অনিশ্চয়তার যোগসূত্র অবিচ্ছেদ্য। অর্থাৎ, এই বাজেট হইতে যে প্রত্যাশাগুলি তৈরি হইয়াছে, সেগুলি সম্ভাবনামাত্র, নিশ্চয়তা নহে— তাহার বাস্তবায়নের জন্য এখনও বহু পথ হাঁটিতে হইবে। সেই পথে যেন পদস্খলন না ঘটে, তাহা নিশ্চিত করাই এই মুহূর্তে সরকারের প্রধানতম কর্তব্য।

প্রথম কাজ, পরিকাঠামো নির্মাণের যে কর্মসূচি সরকার ঘোষণা করিয়াছে, তাহার সময়সীমা নির্দিষ্ট করা; কোন সময়ে কতখানি লগ্নি হইবে, তাহা স্পষ্ট করিয়া দেওয়া। সেই লগ্নির গুণগত মানের প্রশ্নটিও জরুরি। কাজের কুশলতা বা গুণের সহিত আপস না করিয়া যাহাতে সর্বোচ্চ কর্মসংস্থান নিশ্চিত করা যায়, তাহা দেখিতে হইবে। পরিকাঠামো ক্ষেত্রে লগ্নি এক দিক হইতে তাহার নিজের কারণেই বিভিন্ন মূলধনী পণ্যের চাহিদা বৃদ্ধি করিবে। কিন্তু, বাজারের সার্বিক চাহিদা বৃদ্ধির জন্য কর্মসংস্থান বৃদ্ধির গুরুত্ব অনস্বীকার্য। দ্বিতীয়ত, পরিকাঠামোগুলি নির্মাণের সময় খেয়াল রাখিতে হইবে, তাহা যেন শুধুমাত্র শহরকেন্দ্রিক না হইয়া থাকে— গ্রামাঞ্চলকে জুড়িয়া লইতে পারিলে সেই পরিকাঠামো গ্রামীণ আয়বৃদ্ধির ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করিতে পারে। ভুলিলে চলিবে না, রাজকোষ ঘাটতির তোয়াক্কা না করিয়া পরিকাঠামো খাতে ব্যয় করা তখনই যুক্তিযুক্ত, যখন তাহা সর্বাধিক মানুষের উন্নয়নের সহায় হইয়া উঠিতে পারে। বিলগ্নিকরণের প্রশ্নটিকেও সেই ভাবে দেখাই বিধেয়— রাষ্ট্রের সম্পদ বিক্রয়ের সময় যেন স্মরণে রাখা হয় যে, যাহা হইতেছে, তাহা সর্বজনহিতায়। সর্ব ক্ষেত্রেই শুধুমাত্র কুশলতাকে মাপকাঠি হিসাবে মান্য করিতে হইবে, অন্য কোনও বিবেচনার অবকাশ নাই।

এই সূত্রেই হাওয়ায় কিছু সংশয়ও ভাসিতেছে। বন্দর, সড়ক ইত্যাদির ক্ষেত্রে যে সরকারি-বেসরকারি যৌথ উদ্যোগের কথা বাজেটে ঘোষিত হইয়াছে, তাহা ক্রোনি ক্যাপিটালিজ়ম বা সাঙাততন্ত্রের জন্য খিড়কির দরজা খুলিবার ব্যবস্থা নহে তো? প্রাকৃতিক বা সর্বজনীন সম্পদের বণ্টনের ক্ষেত্রে ভারতের অভিজ্ঞতা সর্বত্র সুখের নহে। ফলে, আশঙ্কার অবকাশ আছে। এই আশঙ্কা দূর করাও সরকারেরই কর্তব্য। দেখিতে হইবে, এই জাতীয় সম্পদ বণ্টনের ক্ষেত্রে যেন অর্থনৈতিক কুশলতাই একমাত্র বিবেচ্য হয়— সরকারের সহিত কোনও শিল্পগোষ্ঠীর ঘনিষ্ঠতা নহে। ভারতের অর্থনৈতিক প্রসারের জন্য সড়ক, বন্দর বা বিমানবন্দরের ন্যায় পরিকাঠামো নির্মাণ ও বৃদ্ধির গুরুত্ব অনস্বীকার্য। বিশ্বের সহিত দেশ, এবং দেশের এক প্রান্তের সহিত অন্য প্রান্তের সংযোগ যত বাড়িবে, ততই বাণিজ্যের কুশলতাও বৃদ্ধি পাইবে। ভারতে লগ্নি ও বাণিজ্য ততই লাভজনক হইবে। সেই সম্ভাবনা তৈরি হওয়াতেই বাজার ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া জানাইয়াছে। সম্ভাবনাটিকে বাস্তবায়িত করিবার দায়িত্ব পালনে ভুল করিবার কোনও অবকাশ সরকারের নাই। একই অস্ত্রে বর্তমান ও ভবিষ্যতের সুরাহা করিবার যে সুযোগ তৈরি হইয়াছে, তাহার সদ্ব্যবহার করিতেই হইবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE