বিকাশ বরালা ও বর্ণিকা কুণ্ডু। ছবি: ফেসবুকের সৌজন্যে।
উচ্চপদস্থ সরকারি আমলার মেয়ে বিপদে পড়েছিলেন বলেই হয়তো পুলিশ তত্পরতা দেখিয়েছিল। তবু সে তত্পরতা নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়। চণ্ডীগড়ে রাতের হাইওয়েতে তরুণীকে উত্যক্ত করা হচ্ছে খবর পেয়েই যে ভাবে সক্রিয় হয়েছিল পুলিশ, যে ভাবে উদ্ধার করা হয়েছিল বর্ণিকাকে, যে ভাবে গ্রেফতার করা হয়েছিল দুই অভিযুক্তকে, তা অবশ্যই প্রশংসার দাবি রাখে। কিন্তু সাফল্যের সৌধটার নির্মাণ সম্পূর্ণ হল না, নির্মীয়মাণ অবস্থাতেই জল ঢেলে দেওয়া হল তাতে, পুলিশ নিজেই করল সে কাজ। অতএব দলদাসত্বের মাপকাঠিতে ভারতের আর যে কোনও প্রান্তের পুলিশের সঙ্গে চণ্ডীগড়ের পুলিশের কোনও ফারাক খুঁজে বার করা গেল না।
গুচ্ছ প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে চণ্ডীগড়ের পুলিশ। অত্যন্ত গুরুতর অপরাধে অভিযুক্ত যাঁরা, তাঁরা কী ভাবে অনায়াস জামিন পেলেন? অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে অপহরণ বা অপহরণের চেষ্টার অভিযোগ কেন আনা হল না? গভীর রাতের হাইওয়েতে যুবতীর গাড়িকে তাড়া করার ফুটেজ রাস্তার সিসিটিভি ক্যামেরায় কয়েদ হয়েছে কি না, সে নিয়ে অনাবশ্যক ধোঁয়াশাটা তৈরি হল কেন? আপাতত কোনও প্রশ্নের সদুত্তরই পুলিশের কাছে নেই।
‘সদুত্তর’ পুলিশের কাছে না থাকলেও, রাজনৈতিক নেতাদের কাছে কিন্তু রয়েছে। রাজ্য বিজেপির সভাপতির ছেলের নাম জড়িয়েছে জঘন্য অপরাধে, ‘সদুত্তর’ তো হরিয়ানার বিজেপিকে খুঁজতেই হবে। তাই হরিয়ানার মুখ্যমন্ত্রী ঘটনাটিকে যথাসম্ভব লঘু করে দেখালেন, বিষয়টি নিয়ে যথাসম্ভব কম কথা বললেন। আর হরিয়ানার বিজেপি নেতারা আক্রান্ত তরুণীর চিত্র নিয়ে সংশয় উস্কে দেওয়ার চেষ্টা করলেন, অত রাতে মেয়েদের গাড়ি চালানোর অধিকার রয়েছে কি না, তা নিয়েই প্রশ্ন তুললেন।
এ ধরনের মন্তব্য আপত্তিকর তো বটেই, অনভিপ্রেতও। এমন গুরুতর অপরাধের অভিযোগ উঠেছে, অথচ শাসক দল বোঝাতে চাইছে, এই অভিযোগকে যথোপযুক্ত গুরুত্ব দেওয়ার প্রয়োজনই নেই। শাসকের বার্তা পেয়ে পুলিশ-প্রশাসনের যাবতীয় তত্পরতাতেও হঠাত্ ইতি পড়ছে, কিছুই অস্বাভাবিক ঘটেনি, অভিযোগটাই অস্বাভাবিক ছিল বরং— পুলিশকে এমন এক ধার করা বুলি আওড়াতে হচ্ছে। এমন বুলিই যে আওড়াতে হবে শেষ পর্যন্ত, সে কথা কি আগেই আঁচ করেছিল পুলিশ? আঁচ করেছিল বলেই কি সহজে জামিন হয়ে গিয়েছিল বিকাশ-আশিসদের? আঁচ করেছিল কি বলেই অপহরণের চেষ্টার অভিযোগ নথিবদ্ধ হয়নি? প্রশ্নগুলো তো উঠছেই, উত্তরও স্পষ্ট হয়ে যাচ্ছে একইসঙ্গে। জনসাধারণের প্রতি ন্যূনতম দায়বদ্ধতা এবং ন্যূনতম নীতি-নৈতিকতা অবশিষ্ট থাকলে কোনও রাজনৈতিক দল এমন ঘটনায় এই রকম অবস্থান নিতে পারে না। কর্তব্যের প্রতি বিন্দুমাত্র নিষ্ঠা থাকলে পুলিশ এ ভাবে মাথা নোয়াতে পারে না। নিম্নগামী হওয়ার আর কোন মাইলফলকে পৌঁছতে চাই আমরা?
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy