ফাইল চিত্র।
আগুন আরও ছড়াচ্ছে। একই দাবানল ক্রমশ পরিধি বিস্তার করছে, এমন নয়। আগুন বিচ্ছিন্ন ভাবেই বরং জ্বলে উঠছে নানা প্রান্তে। পাহাড়ে আগুন জ্বলছিলই। এ বার রায়গঞ্জও ভয়াবহ আগুন দেখল। এত বড় অশান্তি যে ঘনিয়ে উঠছে রায়গঞ্জের মতো নিরীহ-নিরিবিলি শহরকে ঘিরে, পুলিশ-প্রশাসন তার আঁচই পায়নি। স্বাভাবিক ভাবেই বড়সড় গোয়েন্দা ব্যর্থতার অভিযোগ উঠছে। পাহাড়ে অশান্তি শুরু হওয়ার পরও কিন্তু এই একই অভিযোগ উঠেছিল। এত বড় এবং সুদীর্ঘ অশান্তির ক্ষেত্র যে তলে তলে প্রস্তুত হয়েছে, রাজ্যের গোয়েন্দারা নাকি তা ঘুণাক্ষরেও টের পাননি।
গোয়েন্দা ব্যর্থতা অবশ্যই অশান্তি রুখতে না পারার অন্যতম কারণ। কিন্তু সম্প্রতি যে কোনও উত্তপ্ত পরিস্থিতিতে পুলিশের কিংকর্তব্যবিমূঢ় দর্শকসুলভ ভূমিকাও এই সব পরিস্থিতির জন্য অনেকাংশেই দায়ী। ব্যবস্থা নিতে গেলে যদি বাড়াবাড়ি কিছু ঘটে যায়—এই আশঙ্কায় পুলিশ বার বার নিষ্ক্রিয় থাকছে এবং অবাধে আগুন বাড়তে দিচ্ছে।
পুলিশের এই আত্মবিশ্বাসহীনতা কিন্তু আচমকা আসা অসুখ নয়। অসুখ অনেকদিনের। দীর্ঘ অবহেলায়, চিকিৎসার অভাবে পরিস্থিতি এত ভয়াবহ আজ। রাজনৈতিক চাপের কাছে বার বার নতি স্বীকার, প্রশাসনিক কর্তব্য পালনের আগে রং দেখে নেওয়ার অভ্যাস, দলদাসত্বের প্রবণতা—সব মিলিয়েই আজ এত হীনবল, হতোদ্যম দশা পুলিশের। দায়টা রাজনৈতিক দলগুলোকেও নিতে হবে। ক্ষমতায় থাকলেই পুলিশকে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা, গোটা পুলিশ বিভাগকেই দলের অনুগত বাহিনী হিসেবে কাজ করানোর ইচ্ছা, ক্ষমতায় না থাকলেও থানায় গিয়ে পুলিশকে ধমক-ধামক, শাসানি-তড়পানি—গোটা পশ্চিমবঙ্গ জুড়ে এই ছবি। এবং এই ছবি দীর্ঘ দিনের। অগত্যা রাজ্যের পুলিশ বিভাগ আজ নখদন্তহীন, অথর্ব বাঘের সঙ্গেই তুলনীয়।
কর্তব্যের প্রতি যদি বিন্দুমাত্র দায়বদ্ধতা থাকে, ভারতীয় সংবিধানের প্রতি যদি বিন্দুমাত্র দায়বদ্ধতা থাকে, তা হলে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টাটা এ বার হওয়া উচিত। পুলিশ বিভাগ থেকেই সে চেষ্টা শুরু হওয়া উচিত। নাগরিকের ভালবাসা বা শ্রদ্ধা পুলিশ অনেক আগেই হারিয়েছে। অবশিষ্ট ছিল শুধু ভয়। দুষ্কৃতীরা পুলিশকে ভয়টা অন্তত পেত। কিন্তু কখনও রাজনৈতিক নেতার ধমকে গুটিয়ে গিয়ে, কখনও রাজনৈতিক তাণ্ডবের মুখে টেবিলের তলায় বা ফাইলের আবডালে আশ্রয় নিয়ে এরাজ্যের পুলিশ সেটুকুও হারিয়েছে।
এই পরিস্থিতি চলতে থাকলে এমন দিন বোধ হয় দূরে নয়, যখন পুলিশি ব্যবস্থার অস্তিত্বটাই অনেকটা গুরুত্বহীন হয়ে পড়বে। সেই দিনও কি দেখতে চায় পুলিশ? যদি না চায়, অবিলম্বে কর্তব্যে ফেরা জরুরি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy