ছবি পিটিআই।
বেচারা রবীন্দ্রনাথ! জন্মদিনটি ভোটের বাজারে পড়িয়া গিয়াছে। ফলে, জনসভায় বিরোধী পক্ষের মুণ্ডপাত করিবার পূর্বে প্রধানমন্ত্রী ‘চিত্ত যেথা ভয়শূন্য’ ইত্যাদি আওড়াইয়া লইয়াছেন। মুখ্যমন্ত্রীও একই পঙ্ক্তি টুইট করিয়াছেন। অবশ্য, রাজনীতির ময়দানে কবিতাটি, যাহাকে বলে, টাইমলেস ক্লাসিক। রবীন্দ্রনাথ বলিলেই নেতাদের মুখে ‘হোয়্যার দ্য মাইন্ড ইজ় উইদাউট ফিয়ার’ ফুটিয়া উঠে। সন্দেহ হয়, গোটা কবিতাটি তাঁহারা অনেকেই পড়িবার অবকাশ পান নাই। পাইলে, ভারতকে যে স্বর্গে জাগরিত করিবার প্রার্থনা কবি করিয়াছিলেন, তাহার সহিত নিজেদের শত আলোকবর্ষ দূরত্বে হয়তো খানিক লজ্জা পাইতেন নেতারা। কিন্তু, সে কথা থাকুক। এই দফায় ফেসবুক-হোয়াটসঅ্যাপে আরও আছে। ‘রাশিয়ার চিঠি’র উপসংহার হইতে তুলিয়া আনা কয়েকটি বাক্য। হঠাৎ ‘রাশিয়ার চিঠি’ কেন? কারণ, তাহাতে ‘চৌকিদার’ শব্দটি আছে। নেটজনতা তাহার পূর্বে একটি সশ্রদ্ধ হ্যাশট্যাগ বসাইয়া লইয়াছে মাত্র। অবিলম্বে ভাইরাল। সংস্কৃতিমান বাঙালি রবীন্দ্রনাথকে উত্তরাধিকারসূত্রে পাইয়াছে, অতএব মিম ফরওয়ার্ড করিবার অবসরে দুই কলম রবীন্দ্রনাথও পাঠাইয়া দিয়াছে। দুই এক দিনের মধ্যে হয়তো কেহ রচনাবলির ধুলা ঝাড়িয়া ‘গোরা’ বাহির করিবে, ‘চৌকিদারের শাসন’-এরও ভাইরালভাগ্য খুলিবে। এখনই বা কী প্রমাণ হইতেছে, তখনও বা কী হইবে? ট্রাফিক সিগনালে রবীন্দ্রসঙ্গীত শুনিয়া বৌদ্ধিক বিকাশ ঘটা বঙ্গসন্তানের নিকট উত্তর নাই। ইহা রবীন্দ্রনাথ ও নস্ট্রাদামুসকে সমাসনে বসাইবার ফিকিরও হইতে পারে। দুর্জনে বলে, মোদীভক্তরা কিছু দিন পূর্বেও সোশ্যাল মিডিয়ায় মেসেজ পাঠাইতেন, নস্ট্রাদামুস নাকি বলিয়া গিয়াছিলেন, একবিংশ শতকে ভারতে এক মহানায়ক (অর্থাৎ নরেন্দ্র মোদী) আবির্ভূত হইবেন। অতঃপর, মোদীবিরোধীরা ভক্তদের দিকে রাশিয়ার চিঠি বা গোরা ছুড়িয়া বলিতে পারেন, রবীন্দ্রনাথও তখনই জানিতেন চৌকিদারের নামে হরেক নষ্টামি হইবে।
চৌকিদার শব্দটি ভক্ত ও বিরোধী, উভয়ের কল্যাণেই ডানা মেলিয়াছে। চাওয়ালার সেই সৌভাগ্য হয় নাই। কে জানে, দইওলা হইলে হয়তো তাহারও কপাল ফিরিত। সে কথা থাকুক। মা যাহা ছিলেন এবং যাহা হইয়াছেন তাহার মধ্যে মিল না থাকাই স্বাভাবিক। কিন্তু প্রান্তিক চৌকিদার যে ভাবে রাজনীতির কেন্দ্রীয় চরিত্র হইল, এক পক্ষের টুইটার হ্যান্ডল হইতে উড়িয়া অন্য পক্ষের ‘চোর হ্যায়’ স্লোগানে বসিল, সেই উত্থান বিস্ময়কর। আদিতে জাতিবাচক বিশেষ্য, টুইটারে গুণবাচক বিশেষণ হইয়া বিরোধী স্লোগানে সংজ্ঞাবাচক বিশেষ্যরূপে সংস্থিত হইল। সেই শব্দ লইয়া চর্চা হইবে তো বটেই। তবে কবিপক্ষ কাটিলে রবীন্দ্রনাথকে রেহাই দিয়া রাজকুমার হিরানির দিকেও তাকানো যায়। তাঁহার ‘থ্রি ইডিয়টস’ ছবিতেও গ্রামের এক চৌকিদারের গল্প ছিল, যিনি ‘অল ইজ় ওয়েল’ হাঁক পাড়িয়া প্রহরা দিতেন, আর গ্রামের মানুষ নিশ্চিন্তে ঘুমাইতেন। শেষ পর্যন্ত এক দিন চুরি হইবার পর বোঝা গেল, সেই চৌকিদার চোখে দেখিতেন না। গোরা অথবা রাশিয়ার চিঠির চৌকিদারের তুলনায় এই চৌকিদার ভারতের বর্তমান গল্পের কাছাকাছি থাকিবেন। আর, যদি রবীন্দ্রপ্রীতি একান্ত না ঘোচে, তবে মেহের আলিকে লইয়া আসা যায়। ঠিক চৌকিদার নহেন, কিন্তু সত্যদ্রষ্টা বটে— ‘সব ঝুট হ্যায়’, তিনিই বলিয়াছিলেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy