মেহবুবার সঙ্গে দেখা করতে যেদিন গিয়েছিলেন জাইরা।ছবি: পিটিআই।
আমরা স্বাধীনতার পক্ষে সব সময়ই জোর সওয়াল করি। ব্যক্তিস্বাধীনতা, বাকস্বাধীনতা, মত প্রকাশের স্বাধীনতা— এই সব পরিসরে কারও বিন্দুমাত্র হস্তক্ষেপ আমরা বরদাস্ত করি না। স্বাধীনতা সঙ্কুচিত করার যে কোনও অপচেষ্টার বিরুদ্ধে আমরা গর্জে উঠি। ঠিকই করি, অবশ্যই ঠিক করি। বহু কষ্টার্জিত এ স্বাধীনতা, কেউ ছিনিয়ে নিতে চাইলে রুখে দাঁড়াতেই হবে। কিন্তু স্বাধীনতা কি শুধু আমার? নাকি স্বাধীনতা শুধুমাত্র আপনার? জাইরা ওয়াসিমের যে অপরিসীম হেনস্থা দেখতে পেলাম, তার পর গুলিয়ে যাচ্ছে স্বাধীনতার আসল মালিকটা কে।
ষোড়শী জাইরা চলচ্চিত্রের পর্দায় অসামান্য সাফল্যের নজির রেখেছে। বিভিন্ন মহলে প্রশংসিত হয়েছে। রাজ্যের কৃতী সন্তানকে মুখ্যমন্ত্রী মেহবুবা মুফতি সৌজন্য সাক্ষাতে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। জাইরা মুখ্যমন্ত্রীর আমন্ত্রণে সাড়া দিয়েছে এবং মুখ্যমন্ত্রী তাকে জম্মু-কাশ্মীরের যুব সমাজের ‘রোল মডেল’ আখ্যা দিয়েছেন। এই গোটা ঘটনাপ্রবাহের মধ্যে অপরাধের কণামাত্র সন্ধান কোথাও মেলে না। গরিমার উপাদানই খুঁজে পাওয়া যায় বরং।
কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী-জাইরা সাক্ষাতে এক হিমালয়প্রমাণ অপরাধ খুঁজে পেলেন হিমালয়ের উপত্যকার বাসিন্দারা এবং অন্য অনেকে। সোশ্যাল মিডিয়ায় তীব্র আক্রমণের শিকার হতে হল ষোলো বছরের মেয়েটাকে। অপরিসীম তিক্ততার বর্ষণ চলল অনর্গল। বর্ষণ চলল তত ক্ষণ, যত ক্ষণ না পর্যন্ত ষোলো বছরের মেয়েটা সোশ্যাল মিডিয়ায় ক্ষমা চাইল এবং মুখ্যমন্ত্রীর দেওয়া ‘রোল মডেল’ তকমা প্রত্যাখ্যান করতে বাধ্য হল।
সামাজিক মাধ্যমের চরিত্র যদি এই রকম হয়ে দাঁড়ায়, তা হলে প্রশ্ন করতেই হচ্ছে, এটা কোন সমাজ? জাইরা ওয়াসিমকে তীব্র আক্রমণে বিদ্ধ করতে সোশ্যাল মিডিয়ায় উদ্দীপনার আঁচ দেখা গিয়েছে যতটা, তার সিকিভাগ উদ্দীপনাও কিন্তু জাইরার অনবদ্য কৃতিত্ব নিয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশের ক্ষেত্রে টের পাওয়া যায়নি। একে নেতির সাধনা ছাড়া আর কি বলা যেতে পারে?
কে আমাকে আমন্ত্রণ জানাবেন, আমি কার আমন্ত্রণে সাড়া দেব, কোন মহল থেকে আসা প্রশংসা আমি গ্রহণ করব এবং কোন মহল থেকে এলে প্রশংসাকে বর্জন করব, কার সঙ্গে উঠব, কার সঙ্গে বসব, কার সঙ্গে জীবন কাটাব— এই সব কিছু কি আজ অন্য কেউ নির্ধারণ করবেন? সামাজিক প্রবণতা আজ অনেকটা সে রকমই! আজ তাই প্রশ্ন করতে ইচ্ছা করছে, আমরা এর পর স্বাধীনতার পক্ষে সওয়াল করব কোন মুখে?
স্বাধীনতার সংজ্ঞাটা আমাদের সবার কাছে স্পষ্ট তো? স্বাধীনতার অর্থ কিন্তু যা খুশি তাই করার অধিকার নয়। এক জনের অবাধ এবং অপরিমেয় স্বাধীনতা সর্বদাই অন্যের স্বাধীনতার সঙ্কোচনের কারণ হয়ে ওঠে। তাই সুনির্দিষ্ট একটা সীমার মধ্যে থেকেই স্বাধীনতার স্বাদটা নিতে হয়। যে কোনও সভ্য নাগরিকই সেই সীমারেখাটা চেনেন। যাঁরা চেনেন না, তাঁরাই চূড়ান্ত অসংবেদনশীল, অসহিষ্ণু এবং অসামাজিকের মতো প্রতিক্রিয়ায় ভেসে এক নাবালিকাকে সর্বসমক্ষে এমন চরম হেনস্থার মুখে ঠেলে দিতে পারেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy