Advertisement
১৬ মে ২০২৪
Anjan Bandyopadhyay

শাপমুক্তি চেয়েছি, কিন্তু ক্লেদমুক্তির চেষ্টাটাই সে ভাবে করিনি

প্রশ্নটা শুনে স্তম্ভিত হয়ে যেতে হল! সরাসরি আমাকে বা আমাদের করা হয়নি প্রশ্নটা। এক গণধর্ষিতাকে প্রশ্নটা করা হয়েছে। প্রশ্ন করেছেন আইনের রক্ষকরা। প্রশ্ন শুনে সে দিন একই ভাবে তিনিও স্তম্ভিতই হয়েছিলেন নিশ্চয়ই। আজ আমাদের যে পীড়া হচ্ছে, তার চেয়ে সে দিন নিঃসন্দেহে তাঁর পীড়া অনেক বেশি ছিল।

পুলিশই আজ ধর্ষকের সামনে নির্যাতিতার দিকে ছুড়ে দিল চরম অশালীন প্রশ্নটা। সংগৃহীত ছবি।

পুলিশই আজ ধর্ষকের সামনে নির্যাতিতার দিকে ছুড়ে দিল চরম অশালীন প্রশ্নটা। সংগৃহীত ছবি।

অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ০৪ নভেম্বর ২০১৬ ০০:০৩
Share: Save:

প্রশ্নটা শুনে স্তম্ভিত হয়ে যেতে হল!

সরাসরি আমাকে বা আমাদের করা হয়নি প্রশ্নটা। এক গণধর্ষিতাকে প্রশ্নটা করা হয়েছে। প্রশ্ন করেছেন আইনের রক্ষকরা।

প্রশ্ন শুনে সে দিন একই ভাবে তিনিও স্তম্ভিতই হয়েছিলেন নিশ্চয়ই। আজ আমাদের যে পীড়া হচ্ছে, তার চেয়ে সে দিন নিঃসন্দেহে তাঁর পীড়া অনেক বেশি ছিল। অনেকেই হয়তো আজ আন্দাজ করতে পারছি সে পীড়ার প্রাবল্য, সে অপমানের তীব্রতা। কিন্তু সে দিন ওই মারাত্মক প্রশ্নটা যে বা যাঁরা করেছিলেন, তাঁরাও তো আমাদের মতো সমাজবদ্ধ মানুষই। প্রশ্নটার মুখোমুখি তাই আজ দাঁড়াতে হচ্ছে আমাদের সবাইকেই। গোটা সমাজকেই।

নারীর সঙ্গে অশালীন আচরণ, শ্লীলতাহানি, ধর্ষণ, গণধর্ষণ— প্রায় রোজ কানে আসে গনগনে লাভার মতো শব্দগুলো। এই ক্লেদের থেকে মুক্তি পেতে অনেক শব্দ আমরা খরচ করেছি, এখনও করছি। কঠোর আইন কঠোরতর করেছি। কিন্তু, অপরাধের লেখচিত্রে কোনও পতন দেখতে পাইনি। তবু, ভরসা রাখতে চেয়েছি আইনে-পুলিশে-বিচারে। বিশ্বাস করতে চেয়েছি, এই জঘন্য অপরাধের কোনও ক্ষমা আর হবে না। ভাবতে চেয়েছি, আদালতের রায়গুলো দৃষ্টান্ত হয়ে উঠবে, আতঙ্কে রাখবে প্রতিটি দুর্বৃত্ত মনকে। কিন্তু, পুলিশই আজ ধর্ষকের সামনে নির্যাতিতার দিকে ছুড়ে দিল চরম অশালীন প্রশ্নটা। অবিশ্বাস্য মর্ষকাম মিশে ছিল ওই বিদ্রূপটায়।

আস্থার ভিতটা টাল খেয়েছে আবার। কাকে বিশ্বাস করব? ভরসার পীঠস্থান বলে কি কিছুই থাকবে না? এত কঠিন-কঠোর আইন বানিয়ে লাভ কি তা হলে?

আসলে আইনটাই সব নয়। সে হাতিয়ার মাত্র। হাতিয়ার প্রয়োগের দায়িত্বটা যাঁর উপরে, আসল চরিত্র সেই। কিন্তু, সেও দিনান্তে সেই সমাজেরই ফসল, যে সমাজ ধর্ষকদের জন্মও দেয়। ক্লেদ ওই ধর্ষকদের অস্তিত্বে যতটা, এই পুলিশের মধ্যেও ততটাই। শুধু ঘটনাচক্রে এক জন ধর্ষক, এক জন পুলিশ আজ।

ভূতটা তাই সর্ষের মধ্যে থেকেই তাড়াতে হবে এ বার। ক্লেদমুক্ত করতে হবে সমাজটাকে। নচেৎ, শাপমুক্তি নেই। সামাজিক ক্লেদমুক্তির সেই বিরাট আন্দোলনটা যদি গড়ে তুলতে পারি কখনও, তা হলে হাতিয়ার ঘোরানোর প্রয়োজনটাও হয়তো এক দিন কমে আসতে পারে।

কিন্তু, সে দিনের পথ চেয়ে হাপিত্যেশ অপেক্ষায় থাকাটা যথেষ্ট নয়। দায়িত্বটা ভাগ করে নেওয়ার সময় হয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Anjan Bandyopadhyay Rape Survivor
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE