Advertisement
০১ নভেম্বর ২০২৪

পাটের সংকট

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মাঝে মাঝে পাট নিগমকে যথেষ্ট পাট না কিনিবার জন্য সমালোচনা করিয়াছেন বটে, কিন্তু নিধিরাম সর্দার কুপোকাত হইলে তাহাকে ভর্ৎসনা করিয়া লাভ কী?

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

শেষ আপডেট: ৩০ অক্টোবর ২০১৭ ১০:১৯
Share: Save:

অবশেষে নড়িয়া বসিয়াছে তৃণমূল সরকার। পাট লইয়া রাজ্যের অবস্থান কী, সেই বিষয়ে শ্বেতপত্র প্রকাশ করিবে কৃষি মন্ত্রক। পরিস্থিতির গুরুত্ব বুঝাইয়া চিঠি লিখিবে কেন্দ্রকে। শুনিয়া সর্বস্বান্ত পাটচাষিরা কি আশ্বস্ত হইলেন? না কি, রোগীর মৃত্যুর পরে রক্তপরীক্ষার রিপোর্ট পাইলে আত্মীয়ের যে মনোভাব হয়, বাংলার ত্রিশ লক্ষ পাটচাষি তেমনই অনুভব করিলেন? পাটশিল্প ও পাটচাষির দুর্দশা যে ঘনাইয়া আসিতেছে, তাহা বহু দিন স্পষ্ট। বস্তার নির্মাণে পাটের ব্যবহার কমাইবার দিকে ঝুঁকিয়াছে কেন্দ্র। যত পাট ব্যবহার হইবার কথা, কার্যক্ষেত্রে তাহাও হয় না। এ রাজ্যেও চালকল মালিকরা অবাধে প্লাস্টিকের বস্তায় রেশনের খাদ্যশস্য ভরিয়া থাকেন, সে বিষয়ে কেন্দ্রই সতর্ক করিয়াছে। সেই সঙ্গে, ভারতের পাট নিগম ক্রমাগত দুর্বল হইয়াছে। তাহার জন্য বরাদ্দ অর্থ এবং কর্মীর সংখ্যা কমিয়াছে। অনেক ক্রয়কেন্দ্র বন্ধ, বহু গুদাম পরিত্যক্ত। অতএব যথেষ্ট পাট ক্রয় করিবার সাধ্য নিগমের আর নাই। এই পরিস্থিতিতে পাটের দর কমিবে, এবং আড়তদারের দাপট বাড়িবে, তাহা অনুমান করা কি এতই দুঃসাধ্য ছিল? এই বৎসর সংকট আরও তীব্র করিয়াছে কেন্দ্র। আরও উন্নত মানের পাট, আরও শুষ্ক পাট, আরও হালকা বস্তা দাবি করিয়াছে। তাহা পাটচাষ ও পাটশিল্পকে আঘাত করিবে, বুঝিয়াও রাজ্যের কর্তারা চোখে-মুখে কুলুপ আঁটিয়া বসিয়াছিলেন। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মাঝে মাঝে পাট নিগমকে যথেষ্ট পাট না কিনিবার জন্য সমালোচনা করিয়াছেন বটে, কিন্তু নিধিরাম সর্দার কুপোকাত হইলে তাহাকে ভর্ৎসনা করিয়া লাভ কী?

দুঃখের বিষয়, নীতি প্রণয়নের নামে এ রাজ্যে যাহা হয়, অনেক সময়েই তাহার অর্ধেক আস্ফালন এবং বাকি অর্ধেক আকাশকুসুম কল্পনা। পাট নীতিও না প্রহসন হইয়া উঠে। রাজ্য রেশনের প্রয়োজনে পাটের বস্তার ব্যবহার বাড়াইবে, পাট নিগম রাজ্যে উৎপন্ন সকল পাট কিনিয়া লইবে, নূতন প্রযুক্তির সাহায্যে আরও উন্নত পাট ফলাইবে চাষি, এমন নানা কথা কর্তারা বলিয়া থাকেন। ভয় হয়, শ্বেতপত্রে হয়তো এই অর্থহীন কথাগুলিরই পুনরাবৃত্তি হইবে। কেহ প্রশ্ন করিবে না, চালকল মালিকদের পাটের বস্তা ব্যবহারে বাধ্য করা যাইবে কী উপায়ে? যে পাট নিগম বর্তমানে অর্ধ লক্ষ বেল পাট কিনিতে হিমশিম খাইতেছে, তাহারা নয়-দশ লক্ষ বেল পাট কিনিবে কোন জাদুবলে? অপর দিকে, উন্নত প্রযুক্তি শিখাইলেও চাষি উন্নত মানের পাট উৎপাদন করিতে পারিবে না, যদি পর্যাপ্ত স্বচ্ছ জল দুর্লভ হয়। নদী, পুকুর, নয়ানজুলি চুরি করিয়া এখন পাটের মান উন্নত হইবে কী করিয়া?

পাটের ব্যবহার বাড়াইবার প্রতিও রাজ্য নজর দেয় নাই। রাস্তা নির্মাণে পাটের ব্যবহার প্রচলনের বিষয়টি প্রযুক্তিগত অনুমোদন পাইয়াছে। রাজ্য তাহা এত দিন কার্যকর করে নাই কেন? কেন্দ্রীয় ভরতুকির ভরসায় বস্তার উপর নির্ভর না করিয়া রফতানিযোগ্য শোভন সামগ্রী নির্মাণ করিবার পরামর্শও চটশিল্পকে দেওয়া হইয়াছে বহু পূর্বে। তাহা এখনও কার্যকর হয় নাই কেন? যে রাজ্যে অন্তত অর্ধেক চাষি এবং অধিকাংশ সংগঠিত শ্রমিক পাটের উপর নির্ভরশীল, তাহার নেতারা কেন্দ্রের দিকে আঙুল তুলিয়া দায় সারিয়াছেন চিরকাল। আজ পাটচাষি ও পাট শিল্পের দুর্দশা তাহারই ফল। রাজ্যকেই ইহার সমাধান করিতে হইবে।

অন্য বিষয়গুলি:

Jute State government TMC Jute Problem
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE