স্কুলের শিশুদের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করিবার জন্য কমিটি গঠন করিবে রাজ্য সরকার। ইতিপূর্বে মিড ডে মিলের উপর নজরদারির জন্য তিনশোর অধিক কর্মী নিয়োগের সিদ্ধান্ত হইয়াছে। কখনও আবার জেলা স্তরে এমন নির্দেশ জারি হইতেছে। যেমন, ছাত্রদের উপস্থিতির হার বাড়াইতে কমিটি নির্মাণ হইয়াছে মালদহে। এত কমিটি কেন? সার্বিক নজরদারির ব্যবস্থা কি নাই? বিলক্ষণ রহিয়াছে, কিন্তু তাহা অবহেলিত, দুর্বল। বিদ্যালয়গুলির সামগ্রিক মূল্যায়নের দায় যাঁহাদের, সেই ‘স্কুল ইনস্পেক্টর’ অকুলান। কয়েক শত পদ দীর্ঘ দিন শূন্য পড়িয়াছিল। সম্প্রতি কিছু নিয়োগ হইয়াছে, কিন্তু নিয়মিত পরিদর্শনের ব্যবস্থাটি এখনও সবল হয় নাই। জেলার এক একটি স্কুলে বৎসরে কত বার পরিদর্শন হয়, তাহার হিসাব তলব করিলেই চিত্রটি স্পষ্ট হইবে। তদুপরি শিক্ষক সংগঠনগুলির রাজনৈতিক ক্ষমতার প্রাবল্যে স্কুল পরিদর্শকেরা কোণঠাসা। বিচ্যুতি দেখিলে শাস্তির সুপারিশ করিবার সাহস তাঁহারা হারাইতেছেন। বিভিন্ন প্রশাসনিক কাজও তাঁহাদের উপর ক্রমাগত চাপানো হইয়াছে। তাহাতে বিদ্যালয় পরিদর্শনের কাজটি ক্রমশ গৌণ হইয়া উঠিতেছে। অথচ প্রশাসনিক নিয়মে শিক্ষার মান নিশ্চিত করিবার দায় বিদ্যালয় পরিদর্শকের। সরকার-নিয়োজিত কমিটি সেই ভূমিকা লইতে পারে না।
তৎসহ, শিক্ষার অধিকার আইন অনুসারে প্রতিটি স্কুলে বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটি তৈরি হইবার কথা। গঠনের নিয়ম, সদস্যদের ক্ষমতা, সকলই আইনে বলা আছে। তাহাতে স্পষ্ট হয়, যে সকল দায়িত্ব পৃথক পৃথক কমিটি ও কর্মীর উপর ন্যস্ত করিতে চাহে পশ্চিমবঙ্গ সরকার, তাহার সবগুলিই বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির উপরে ন্যস্ত করিয়াছে কেন্দ্রীয় আইন। ওই কমিটির অন্যতম দায়িত্ব অর্থব্যয়ের অনুমোদন। পশ্চিমবঙ্গের স্কুলগুলিতে পরিচালনা কমিটি গঠিত না হইবার ফলে শিক্ষকরাও বিপন্ন। কারণ স্কুলের নির্মাণ, সংস্কারাদি কাজে সরকারি অর্থের ব্যয় তাঁহাদের আপন দায়িত্বে করিতে হইতেছে। অপচয়-দুর্নীতির অভিযোগ উঠিলে তাঁহারা নাচার। শিক্ষা দফতরের নির্দেশে নূতন নূতন কমিটি তৈরি হইলেও, তাহার সদস্যদের ভূমিকা নজরদারি ও সুপারিশেই সীমাবদ্ধ থাকিবে। কমিটির সিদ্ধান্ত রূপায়ণের ফলে অভিভাবক বা ছাত্রদের মধ্যে কোনও ক্ষোভ দেখা দিলে তাহার দায়ও শিক্ষকদের উপরেই বর্তাইবে।
এই দেশে স্কুল এখন কেবল শিক্ষাদানের কেন্দ্র নহে। শিশুর সার্বিক বিকাশের জন্য নিবেদিত। শিশুর পুষ্টি, স্বাস্থ্য, সামাজিক সুরক্ষা, ব্যক্তিত্বের বিকাশ, সকল বিষয়ের সহিত যুক্ত থাকিবে বিদ্যালয়। এই গুরুদায়িত্ব সম্পূর্ণই চাপিবে শিক্ষকের উপর, এবং তাঁহার ভুল ধরিবার দায়িত্বপ্রাপ্ত লোকের সংখ্যা বাড়িতেই থাকিবে, ইহা কেমন ব্যবস্থা? যথাযথ সদস্য লইয়া বিদ্যালয় পরিচালনা সমিতি তৈরি না হইবার জন্য পঞ্চায়েত, পুরসভা, সরকারি দফতরগুলির সহিত বিদ্যালয়ের সংযোগ ও সমন্বয় হয় নাই। সেই ফাঁক ভরিতেই এখন বাহির হইতে নূতন নূতন নিয়োগ, বিচিত্র কমিটি নির্মাণ করিতেছে রাজ্য সরকার। প্রয়োজন বাড়তি পরিদর্শকের নহে, প্রয়োজন অংশীদারের। অকারণ পরিদর্শক, কমিটি না বাড়াইয়া আইন মানিয়া বিদ্যালয় পরিচালনা সমিতি গঠন করুক রাজ্য সরকার। রাজকোষের অর্থ বাঁচিবে, শিক্ষাও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy