Advertisement
০১ নভেম্বর ২০২৪

উন্নয়ন বটে

সন্দেহ হয়, নদীখাত হইতে বালি তুলিবার কাজে সেচ দফতর যত আগ্রহী, চাষির নিকট জল পৌঁছাইবার কাজে তাহার তত উদ্যম নাই। তাই বিদ্যুৎহীন পাম্প, জলহীন সেচ খাতের সম্মুখে সহায়হীন চাষি চাহিয়া আছে শূন্য দৃষ্টিতে। উন্নয়ন বটে।

ফাইল চিত্র।

ফাইল চিত্র।

শেষ আপডেট: ৩১ অক্টোবর ২০১৮ ০০:৫৭
Share: Save:

বর্ধমানে প্রায় ত্রিশ শতাংশ জমিতে ধান শুকাইয়া খড় হইয়াছে। সরকারি উদাসীনতার প্রতিবাদ করিতে চাষিরা ধানখেতে গরু ছাড়িয়াছেন। অথচ জলাভাবে বিপর্যয় আসন্ন বুঝিয়া সম্প্রতি তাঁহারা পথ অবরোধ করিয়াছিলেন বেশ কয়েক বার। তাহাতে ফল হইয়াছে একটি সরকারি বৈঠক, যাহার সিদ্ধান্তগুলি অধিকাংশই কার্যে পরিণত হয় নাই। যেমন, কম বৃষ্টির কারণে অধিকাংশ ব্লকে সেচ খালে জল কম মিলিবে বলিয়া ক্ষুদ্র সেচ দফতরকে পাম্পের সাহায্যে জল সরবরাহ করিতে বলা হইয়াছিল। সেই দফতর নড়িয়া বসে নাই। বিল বকেয়া থাকিবার জন্য যে সকল সেচ পাম্পে বিদ্যুৎ সংযোগ কাটা হইয়াছিল সেগুলিতে বিদ্যুৎ ফিরাইতে বলা হইলেও বিদ্যুৎ দফতর গা করে নাই। অতএব পূর্ব বর্ধমানে অন্তত এক লক্ষ একর জমির ফসল নষ্ট হইয়াছে। ইহার ফলে ধানের উৎপাদন ছয় লক্ষ টন কমিতে পারে। ইহার অন্যতম কারণ নাকি দীর্ঘ পূজার ছুটি। রাজ্য সরকার কেন্দ্রীয় জল কমিশনের নিকট আবেদন করায় দামোদর ভ্যালি কর্পোরেশন পূজার পূর্বে জল ছাড়িয়াছিল। তাহাতে প্রয়োজনের সামান্যই মিটিয়াছে। অভিযোগ, তেরো দিনের পূজার ছুটির মধ্যে কৃষি বা সেচের কোনও আধিকারিক অধিক জলের দাবি পেশ করেন নাই। অতএব লক্ষ্মীপূজায় শুষ্ক খেতের দিকে সজল চোখে চাহিয়া থাকিতে হইল চাষিকে। বহু ব্যয়ে, বহু পরিশ্রমে ধান বুনিবার পর চক্ষের সম্মুখে তাহা শুকাইয়া খড় হইতে দেখিবার যন্ত্রণা শহুরে নেতা-মন্ত্রীরা অনুভব করিতে পারিবেন, তেমন ভরসা হয় না।

এই বিপন্নতা পশ্চিমবঙ্গের চাষিকে ভারতের অপরাপর চাষিদের সহিত একাসনে দাঁড় করাইয়া দিল। ইতিপূর্বে কর্নাটক, কেরল, মহারাষ্ট্র, মধ্যপ্রদেশ ও রাজস্থানের চাষি ফসলের দাম না পাইয়া বড় বড় শহরগুলিতে মিছিল ও অবস্থান করিয়াছেন। কখনও খরার প্রকোপ, কখনও ভ্রান্ত আমদানি নীতি, কখনও দালাল-ব্যবসায়ী জোটের প্রতি রাজনৈতিক সমর্থন চাষিকে বিপর্যয়ের মুখে ঠেলিয়া দিয়াছে। পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূল সরকার কিন্তু বার বার দাবি করিয়াছে, এই রাজ্য চাষিদের রোজগার বাড়াইতে সফল। যদিও রোজগার ঠিক কত বাড়িয়াছে, তাহার অঙ্ক লইয়া কেন্দ্রের সরকার ও নীতি আয়োগের সহিত নবান্নের সংঘাত দেখা দিয়াছে। যথারীতি, তাহা প্রশাসনিক নীতি গণিতের প্রশ্ন হইতে রাজনৈতিক অঙ্কে পর্যবসিত হইয়াছে। চাষির রোজগার কত বাড়িয়াছে, রাজ্যবাসী জানিতে পারেন নাই। এই কথা সত্য যে, রাজ্য সরকার অধিক পরিমাণ ধান কিনিয়া, এবং আলুর রফতানি বাড়াইতে পরিবহণে ভর্তুকি দিয়া ফসলের দামে স্থিতাবস্থা রাখিতে সফল হইয়াছে। কিন্তু সেচ-সহ কৃষি পরিকাঠামো? সপ্তম বর্ষপূর্তিতে তৃণমূল সরকারের ঘোষণা, তাহার আমলে এক লক্ষ ৭১ হাজার হেক্টর জমি সেচের আওতায় আসিয়াছে। শুনিয়া চাষির মুখ শুকাইয়াছে। এ রাজ্যে বৃষ্টি-নির্ভর চাষ হয় একুশ লক্ষ হেক্টরে। সাত বৎসরে দুই লক্ষ হেক্টর ধরিলেও উনিশ লক্ষ হেক্টরে সেচ আনিতে কত বৎসর লাগিবে? ইহাই কি উন্নয়নের গতি? সন্দেহ হয়, নদীখাত হইতে বালি তুলিবার কাজে সেচ দফতর যত আগ্রহী, চাষির নিকট জল পৌঁছাইবার কাজে তাহার তত উদ্যম নাই। তাই বিদ্যুৎহীন পাম্প, জলহীন সেচ খাতের সম্মুখে সহায়হীন চাষি চাহিয়া আছে শূন্য দৃষ্টিতে। উন্নয়ন বটে।

অন্য বিষয়গুলি:

Agriculture Irrigation Bengal Rice MSP
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE