Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪
National news

'রামরাজ্য' এই পথে নয়, উল্টো পথে

সর্বদাই যেন তার ব্যতিক্রম দেখতে অভ্যস্ত হয়ে উঠছি আমরা। ব্যতিক্রমটাই যেন রীতি, আর রীতিটাই যেন ব্যতিক্রম আজ।

যোগী আদিত্যনাথ। —ফাইল চিত্র।

যোগী আদিত্যনাথ। —ফাইল চিত্র।

অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ১৩ এপ্রিল ২০১৮ ০০:৪১
Share: Save:

প্রজার বিশ্বাসের প্রতি, আস্থার প্রতি, সদা দায়বদ্ধ থাকতে হয় রাজাকে। শাসকের প্রতি শাসিত বিশ্বাস বা আস্থা রাখতে বাধ্য, এমনটা ভাবার কোনও কারণ নেই। নাগরিকের ভরসার মর্যাদা রক্ষা করতে শাসকই বাধ্য বরং। রাজধর্মের সারকথা তেমনই। কিন্তু সর্বদাই যেন তার ব্যতিক্রম দেখতে অভ্যস্ত হয়ে উঠছি আমরা। ব্যতিক্রমটাই যেন রীতি, আর রীতিটাই যেন ব্যতিক্রম আজ।

ধর্ষণের অভিযোগ। কিন্তু অভিযুক্তের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করছে না প্রশাসন। কারণ অভিযুক্ত একজন বিধায়ক। যে সে বিধায়ক নন, শাসক দলের বিধায়ক।

উত্তরপ্রদেশের ঘটনা। উন্নাও গণধর্ষণ কাণ্ডে অভিযুক্ত বিজেপি বিধায়কের বিরুদ্ধে নামমাত্র অভিযোগ পুলিশে দায়ের হয়েছে বটে। তবে গ্রেফতারির সুদূরপরাহত সম্ভাবনাও দেখা যাচ্ছে না। কারণ উত্তরপ্রদেশ পুলিশের শীর্ষকর্তা ওই বিধায়কের প্রসঙ্গে কথা বলতে গিয়ে এখনও প্রায় গলবস্ত্র হয়ে পড়ছেন, ‘মাননীয় বিধায়ক’ ব্যতীত অন্য কোনও সম্বোধনের কথা ভাবতেই পারছেন না।

সম্পাদক অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা আপনার ইনবক্সে পেতে চান? সাবস্ক্রাইব করতে ক্লিক করুন

অভিযোগ ওঠার অর্থ অপরাধী সাব্যস্ত হওয়া নয়, সে কথা ঠিক। বিধায়কের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে বলেই তিনি ধর্ষক প্রমাণিত হয়ে গিয়েছেন, এমনও নয়। তা হলে তাঁর প্রতি উপযুক্ত সম্মান প্রদর্শনে বাধা কোথায়? ‘মাননীয়’ সম্বোধনে কী সমস্যা?

কোনও সমস্যা নেই। পুলি‌শ প্রধান যদি বিধায়কের প্রতি উপযুক্ত সম্মান প্রদর্শনের কর্তব্যে অটল থাকতে চান, তা হলে সে কর্তব্যপরায়ণতা স্বাগত। কিন্তু মুদ্রার দুই পিঠে কর্তব্যপরায়ণতার সংজ্ঞা দু’রকম হবে কী ভাবে? অভিযুক্তের সামাজিক সম্মানের কথা যদি পুলিশ প্রধান খেয়াল রাখেন, তা হলে বিচারপ্রার্থীর আর্তির কথাও তাঁকে মাথায় রাখতে হবে।

আরও পড়ুন: ধর্ষণে অভিযুক্ত বিধায়কও পুলিশের চোখে ‘মাননীয়’!

বিচারপ্রার্থীর প্রতিও তো কর্তব্য রয়েছে রাষ্ট্রের। সেই কর্তব্য পালনের স্বার্থেই তো অধিকাংশ ধর্ষণের মামলায় অভিযুক্ত ব্যক্তিকে সর্বাগ্রে হেফাজতে নিয়ে থাকে পুলিশ। উন্নাও গণধর্ষণ মামলার ক্ষেত্রে তার ব্যতিক্রম হচ্ছে কেন?

উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী পদে যিনি আসীন, তিনি কাষায়-ধারী, তিনি সংসারত্যাগী, তিনি সন্ন্যাসী। সত্যের প্রতি অবিচল নিষ্ঠাই তাঁর জীবনের ঘোষিত মোক্ষ। যে হেতু সংসারত্যাগী, সে হেতু সঙ্কীর্ণতা-মোহ-স্বজন পোষণ ইত্যাদি তাঁকে স্পর্শ করে না। যোগী আদিত্যনাথ সম্পর্কে এমন কথাই বলে থাকেন অনুগামীরা। কিন্তু ধর্ষণে অভিযুক্ত বিধায়কের প্রতি আদিত্যনাথের পুলিশের গদগদ ভাব দেখলে মনে হয়, সন্ন্যাস, সত্যনিষ্ঠা, কাষায়— সবই কথার কথা। নিষ্কলুষ মানবতায় উত্তীর্ন হওয়া অনেক পরের কথা, এখনও পর্যন্ত রাজনৈতিক ক্ষুদ্রতা বা সঙ্কীর্ণতা থেকেই মুক্ত হওয়া যায়নি।

নরেন্দ্র মোদী বা যোগী আদিত্যনাথরা যে রাম রাজত্বের ধারণায় বিশ্বাস রাখেন, সেই রামচন্দ্র কিন্তু প্রজানুরঞ্জনের জন্য স্বয়ং সহধর্মিনী সীতাকে অগ্নিপরীক্ষায় পাঠিয়েছিলেন। মোদী বা যোগীর কার্যপ্রণালীতে কিন্তু প্রজার প্রতি সেই সর্বোচ্চ দায়বদ্ধতার আভাস নেই।

সত্যি ‘রামরাজ্য’ চান তো যোগী আদিত্যনাথরা? নাকি রাজনীতির গয়ংগচ্ছ প্রবাহেই গা ভাসাতে চান? উত্তরটা আদিত্যনাথকেই খুঁজতে হবে। শেষ পর্যন্ত কোন পথে চলার সিদ্ধান্ত তিনি নিলেন, স্পষ্ট করে সে কথা জানাতেও হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE