ব্রিগেড সমাবেশে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। —নিজস্ব চিত্র।
খেলাটা একপাক্ষিক অন্তত রইল না আর। কলকাতার ব্রিগেড প্যারেড গ্রাউন্ডে বিরোধী ঐক্যের যে প্রদর্শনী হল এবং বিরোধী শক্তির যে সমস্বর অঙ্গীকার শোনা গেল, তা গণতন্ত্রের পক্ষে স্বাস্থ্যকর। একপাক্ষিক দাপট কোনও গণতন্ত্রকেই শক্তিশালী করে না। নানা মতপার্থক্য সরিয়ে রেখে দেশের অধিকাংশ অ-বিজেপি দল কলকাতার সমাবেশ থেকে যে ভাবে ঘোষণা করল যে, এই মুহূর্তের অগ্রাধিকার হল বিরোধীদের সামর্থকে বিভাজিত হতে না দেওয়া, তাতে নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বাধীন শাসক গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে একটা একটা উল্লেখযোগ্য সমষ্টির জমাট বাঁধার ইঙ্গিত মিলল।
বিজেপি বার বার সদর্পে একটা প্রশ্ন তুলছিল, বার বার একটা কটাক্ষ ছুড়ে দিচ্ছিল। বিরোধী জোটের নেতাকে জিজ্ঞাসা প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী কে? বিরোধীর জোট যেহেতু এখনও পুরো মাত্রায় জমাট বাঁধেনি, সেহেতু লড়াইয়ের মুখ হিসেবে কোনও এক জনকে তুলে ধরা বিরোধী শিবিরের পক্ষে এই মুহূর্তে কঠিন। সেই কাঠিন্যের কথা বিজেপিরও অজানা নয়। অজানা নয় বলেই বিষয়টা নিয়ে বার বার প্রশ্ন তুলছে বিজেপি। শনিবারের সমাবেশ থেকে বিজেপির সেই প্রশ্নেরই জবাব দিলেন বিরোধীপক্ষের সম্মিলিত নেতৃবর্গ।
এ কথা ঠিক যে, মধ্যপ্রদেশ, ছত্তীসগঢ় এবং রাজস্থানের বিধানসভা নির্বাচনে জয়ের পর থেকে জাতীয় রাজনীতিতে নিজের গুরুত্ব অনেকটাই বাড়িয়েছেন কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গাঁধী। কিন্তু ২০১৯ এর লোকসভা নির্বাচনে কংগ্রেসের পক্ষে একা বিজেপিকে হারানো সম্ভব কি না, রাহুল গাঁধী এখনও মোদীর সুযোগ্য বিকল্প কি না, বিরোধী শিবিরের সব নেতা-নেত্রী রাহুল গাঁধীকে মোদী বিরোধিতার প্রধান মুখ হিসেবে মেনে নিতে প্রস্তুত কি না— এ রকম নানা প্রশ্ন এখনও রয়েছে। শনিবারের ব্রিগেড সমাবেশ থেকে সে প্রশ্নগুলোর মুখোমুখি দাঁড়ানোর একটা সম্মিলিত প্রচেষ্টা বিরোধী শিবির থেকে দেখা গেল। প্রধানমন্ত্রী কে হবেন তা ভোটের পরে স্থির হবে, বিরোধী শিবিরে অভিজ্ঞ নেতার অভার নেই, তাই প্রধানমন্ত্রী বেছে নিতে অসুবিধা হবে না, আপাতত বিজেপির বিরুদ্ধে সার্বিক ঐক্যেই অগ্রাধিকার— এই গোটা বার্তাটা খুব স্পষ্ট ভাবে এবং যৌথ ভাবে উচ্চারিত হল ব্রিগেড থেকে। বিরোধী শিবিরের জন্য এটা খুব ইতিবাচক একটা ঘটনা। দোর্দণ্ডপ্রতাপ নরেন্দ্র মোদীর বিপরীতে অধিকাংশ বিরোধী নেতাকেই যখন ম্লান লাগছে, তখন সম্মিলিত বিরোধী শক্তির তথা মজবুত যৌথ নেতৃত্বের একটা প্রদর্শনী খুব জরুরি ছিল। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্যোগে আয়েজিত ব্রিগেড সমাবেশ সেই মজবুত বিরোধী ঐক্যের প্রদর্শনীটা সফল ভাবেই করে দেখাল। বিরোধী শিবিরের জন্য এটা খুব সুলক্ষণ।
সম্পাদক অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা আপনার ইনবক্সে পেতে চান? সাবস্ক্রাইব করতে ক্লিক করুন
এ কথা ঠিক যে, দেশের সব অ-বিজেপি শক্তিকে ব্রিগেডে হাজির করতে পারেননি বিরোধী জোটের সদস্যরা। এ কথা ঠিক যে, তেলঙ্গানা শাসক দল টিআরএস বা ওড়িশার শাসক দল বিজেডি-কে হাজির করা যায়নি বিজেপি বিরোধী এই মহাসমাবেশের মঞ্চে। কিন্তু যতটা ঐক্য দেখানো গিয়েছে, মত পার্থক্য সরিয়ে রেখে বিজেপিকে হারানোয় অগ্রাধিকার দেওয়া কথা বিরোধী ঐক্যের সব নেতাকে যে ভাবে সমস্বরে বলতে শোনা গিয়েছে, তাতে স্পষ্ট যে, সাধারণ নির্বাচনের মুখে দাঁড়িয়ে থাকা ভারতের রাজনীতিটা আর শুধু শাসক দল-সর্বস্ব বা মোদী-সর্বস্ব রইল না। মোদী যদি জাতীয় রাজনীতির একটা মেরু হন। তা হলে বিপরীত মেরু হিসেবে একটা সম্মিলিত এবং সশক্ত বিরোধী কণ্ঠস্বরও যে প্রস্তুত, ব্রিগেডের এই সমাবেশ তা স্পষ্ট করে দিল।
আরও পড়ুন: আগে ঐক্য, পরে প্রধানমন্ত্রী: গোটা দেশের নজর কেড়ে নিয়ে সমস্বর রামধনু ব্রিগেড
বিরোধী শিবিরের জন্য এই সমাবেশ তাই অবশ্যই একটা ইতিবাচক মাইলফলক হল। ভারতীয় গণতন্ত্রের জন্য বিষয়টা স্বাস্থ্যকরই হল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy