Advertisement
১৮ মে ২০২৪

অসুর নিধন তো হবে, আর দূষণ?

জলসঙ্কটের অশনি সঙ্কেত। তবুও আমরা নির্বিকার। বাড়ছে জল দূযণ। পুকুরে-নদীতে ফেলা হচ্ছে প্রতিমার রং, মাটি। বিসর্জনের সময় দূযণ বাড়ছে আরও। আর কবে সতর্ক হব আমরা?

বাড়ছে জল দূযণ।

বাড়ছে জল দূযণ।

নমিতেশ ঘোষ
শেষ আপডেট: ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০৩:২৯
Share: Save:

ক্রমশ বেড়ে চলেছে দূষণ। জল নিয়ে সঙ্কট বাড়ছে। ভূ-গর্ভস্থ জল রক্ষায় পৃথিবী জুড়ে মাঠে নেমেছেন মানুষ। জল-দূষণ নিয়ে অবশ্য তেমন কোনও হইচই নেই। দুর্গোৎসব শেষ হলেই আবার নদী-নালা-খাল-বিলের জল দূষিত হয়ে উঠবে। প্রতিমার রঙের রাসায়নিকে দমবন্ধ হয়ে মৃত্যু হবে জলজপ্রাণীর। চর্মরোগ থেকে জন্ডিসের মতো রোগে আক্রান্ত হতে পারে মনুষ্যকূলও। তা নিয়ে তেমনকোনও হইচই চোখে পড়ে না। কেন? মায়ের কাছেই অসুরবধের শিক্ষা নিয়ে তো আমরা নামতে পারি আমরা।

দেবী দুর্গার হাতে মহিষাসুর বধ এবং স্বর্গের অধিকার ফিরে পেলেন দেবতারা। এ বারে দেবী ফের মর্ত্যে আসছেন। ঘরে ঘরে শুরু হয়েছে অপেক্ষার পালা। সেই সঙ্গে দীর্ঘপ্রতিক্ষার পরে মায়ের সঙ্গে দেখা হওয়ার আগেই শুরু হয়েছে প্রস্তুতি। নতুন পোশাক, নতুন অলঙ্কার। চারদিকে যেন এক নতুনের গন্ধ। এক উৎসবের আমেজ। সবাই মিলে আমরা মেতে উঠেছি এক আনন্দে। দেবী যেমন আনন্দের মূহূর্তে ভোলেননি অসুরবধের কথা, আমাদের সবাইকেও তো তেমনই এই শপথ নিয়ে পথে নামা উচিত— না আর জলদূষণ হতে দেব না আমরা। সেই ‘জলাসুর’কে এ বারেই আষ্ঠেপৃষ্টে বেঁধে পৃথিবী থেকে বিদায় দেব আমরা।

দিন কয়েক আগে কোচবিহারের যমুনা দিঘিতে (লম্বা দিঘি নামেও পরিচিত) মৎস্য দফতর থেকে মাছ ছাড়ার প্রকল্পে রুই-কাতলা ছাড়া হয়। সেখানে উপস্থিত ছিলেন কোচবিহারের জেলাশাসক কৌশিক সাহা। কয়েকজন মৎস্য চাষি তাঁকে জানান, ওই দিঘিতে এক-দুইবার প্রচুর মাছ মরে ভেসে উঠেছিল। সেই থেকে দিঘি পরিষ্কার রাখার চেষ্টা করেন তাঁরা। বড়দেবীর বাড়ির পাশেই ওই দিঘি। সেখানেই বড়দেবীর বিসর্জন হয়। বিসর্জনের পরে যাতে সেই কাঠামো দ্রুত সেখান থেকে তুলে নেওয়া যায়, সেই জন্য। শুধু ওই দিঘি নয়, দুর্গা প্রতিমার বিসর্জন কোচবিহার তথা গোটা উত্তরবঙ্গেই হয় বড় বড় নদীগুলিতে। তোর্সা থেকে শুরু করে তিস্তা, মহানন্দা এমনকি আলিপুরদুয়ারের অনেক পাহাড়ি নদীতেও প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হয়। শুধু তোর্সা নদীতেই কয়েক’শো প্রতিমা বিসর্জন হয়। প্রতিমার কাঠামো তো বটেই, প্রতিমার রং, শোলার অলঙ্কার, ফুল-মালা সব নদীতে মিশে যায়। লিটার লিটার রং, প্লাস্টার অফ প্যারিস সব জলেই থেকে যায়। প্রতিমার রংয়ে সীসা ছাড়াও অনেক রাসায়নিক থাকে, তা দূষণের মাত্রা বাড়িয়ে দেয় কয়েকগুণ।

বছরের পর বছর ধরে এমনই হয়ে আসছে উত্তরবঙ্গের সর্বত্র। জল-দূষণের ফসশ্রুতি আজ আরও কারও অজানা। সারা পৃথিবীতে জল দূষণের জন্যই বহু মানুষের মৃত্যু হয়। হারিয়ে গিয়েছে বহু জলজ প্রাণী। এখন ওই মাছের সংখ্যা একে বারেই কমে গিয়েছে। শুধু তাই নয়, এখন আর তোর্সায় শুশুকের দেখা মেলে না। যা উত্তরের ‘ডলফিন’ নামেই পরিচিত। ছড়িয়ে পড়ছে চর্মরোগ। এই দূষণ যে শুধুই প্রতিমা বিসর্জনের জন্যেই হচ্ছে তা নয়। সারাবছর ধরেই ওই দূষণ চলতে থাকে।

সম্প্রতি পানীয় জলের সঙ্কট নিয়ে সারা পৃথিবী জুড়েই হইচই শুরু হয়েছে। এই প্রত্যন্ত এলাকাগুলিতেও জল রক্ষায় পথে নেমেছে সবাই। এই আনন্দের মুহূর্তে অশুভের বিরুদ্ধে মায়ের লড়াইকে পাথেয় করে আমরাও এগিয়ে চলি। যাতে জল-দূষণ রুখতে পারি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Durga Puja Immersion Water pollution Pollution
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE