যোগী আদিত্যনাথ ঘোষণা করেছেন, তাঁর সরকার টিকি ও টুপির বিচারে কোনও রকম বৈষম্য করবে না। অর্থাত্ হিন্দু-মুসলমান সবার জন্যই এক নিয়ম, এক আইন, এক বিচার। সাধু আদিত্যনাথের এই ঘোষণা যে সাধু, তা নিয়ে প্রশ্ন থাকার অবকাশ নেই। প্রশ্ন শুধু একটাই, স্বাভাবিক এবং যথোচিত এই ঘোষণাটার দরকার পড়ল কেন? শাসকের কাছে সবাই সমান, কেউ বেশি কেউ কম এটা আবার বড় মুখ করে ঘোষণার দরকার পড়ে?
পড়ে, যদি পটভূমিকায় থাকে অন্ধকার। পড়ে, যদি মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার আগে নির্বাচনী দৌড়ের প্রতিটি মোড়ে থাকে বিভাজনের চিত্কৃত ঘোষণা। পড়ে, যদি ধর্মীয় অসহিষ্ণুতার প্রশ্নে রাষ্ট্রপুঞ্জের রিপোর্টে ভারতের উদ্দেশে থাকে অনাকাঙ্ক্ষিত কষাঘাত। যে কষাঘাতের উত্তরে ভারতকে সেই আন্তর্জাতিক মঞ্চে মনে করিয়ে দিতে হয়, ভারত একটি ধর্মনিরপেক্ষ দেশ এবং তার ঐতিহ্য সহিষ্ণুতার, সবাইকে একসঙ্গে নিয়ে চলার।
যে কাজটা করে দেখানোর, সেই কাজটা করেই দেখাতে হয়। তাতে যদি খামতি থাকে, সেখানেই ঘোষণার দরকার পড়ে বেশি। ভারতের সহিষ্ণুতার ঐতিহ্য প্রশ্নাতীত, সগর্বে এটা স্বীকারের পাশাপাশি লজ্জার তথ্যটাকেও যদি সমান মর্যাদায় গ্রহণ করা না যায়, তা হলে সত্যের মুখোমুখি হওয়া যায় না। সহিষ্ণু ভারতকে এখন অসহিষ্ণুতার পথে হাঁটানোর প্রয়াস শুরু হয়েছে। গো-রক্ষার নামে বা মাংস ভক্ষণের গুজবে অথবা ধর্মস্থানের অজুহাতে ক্রমাগত অসহিষ্ণু হানাহানির অন্ধকারে ঢুকে যাচ্ছে সমাজ, কারণ তাতে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য চরিতার্থ হয়। শক-হুন-পাঠান-মুঘল এক যে দেহে লীন হয়েছিল, সেই দেহ এখন ব্যবচ্ছেদের টেবিলে— চতুর সার্জনের নিপুণ আঙুলে ছুরিকাঁচির তলায়, ক্রমাগত ছিন্ন ও বিচ্ছিন্ন হওয়ার অপেক্ষায়।
ওই শ্যামলা মিলনভূমিই আমার দেশ। এই রুক্ষ বিভাজিত প্রান্তর আমার দেশ নয়। যোগী আদিত্যনাথ যে ঘোষণা করেছেন, তা যদি বাস্তবে পালন করেন, এই দেশের মানুষ তাঁকে মাথায় করে রাখবেন। অন্ধকারকে পিছনে ফেলে এখন আলোর দিকে যাত্রা শুরু করার সময়। কাজে করে দেখাক শাসক। ঘোষণাটা না হয় করুক এই দেশের আম আদমি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy