Advertisement
০১ জুন ২০২৪

ছেলে-খেলা

মার্কিন জাতীয় ফুটবল সংস্থা অতঃপর কী পদক্ষেপ করিবে তাহা ভিন্ন কথা, কিন্তু ক্রীড়াক্ষেত্রে নারী-পুরুষ বৈষম্য সর্ববিদিত সত্য। তাহাতে প্রথম বিশ্ব-তৃতীয় বিশ্ব ভেদ নাই।

আমেরিকার মহিলা ফুটবল দল। ছবি: রয়টার্স

আমেরিকার মহিলা ফুটবল দল। ছবি: রয়টার্স

শেষ আপডেট: ১৯ নভেম্বর ২০১৯ ০০:১৯
Share: Save:

আমেরিকার জাতীয় মহিলা ফুটবল দলের খেলোয়াড়রা আদালতে বিশেষ ‘শ্রেণি’র মর্যাদা পাইলেন। সুবিধাভোগী নহে, সুবিধাবঞ্চিত শ্রেণি। তাঁহাদের অভিযোগ ছিল, তাঁহারা পুরুষ খেলোয়াড়দের সমান উপার্জন, সুযোগসুবিধা বা প্রচার কিছুই পান না, তাঁহারা লিঙ্গবৈষম্যের শিকার হইতেছেন। অথচ এমন নহে যে তাঁরা পরিশ্রম কম করেন, দেশের মুখ উজ্জ্বল করার দায়বদ্ধতা তাঁহাদের অত্যল্প। বিবাদী পক্ষ, অর্থাৎ দেশের জাতীয় ফুটবল সংস্থার যুক্তি ছিল, অনতি-অতীতে কয়েক জন পুরুষ ফুটবল খেলোয়াড় অপেক্ষাও বেশি রোজগার করিয়াছেন কয়েক জন মহিলা খেলোয়াড়, সুতরাং বঞ্চনার অভিযোগ অবান্তর। মার্কিন আদালত যুক্তি খারিজ করিয়া বলিয়াছে, ইহা সার্বিক চিত্র নহে, মহিলা খেলোয়াড়রা বাস্তবিকই সুবিধাবঞ্চিত শ্রেণি।

মার্কিন জাতীয় ফুটবল সংস্থা অতঃপর কী পদক্ষেপ করিবে তাহা ভিন্ন কথা, কিন্তু ক্রীড়াক্ষেত্রে নারী-পুরুষ বৈষম্য সর্ববিদিত সত্য। তাহাতে প্রথম বিশ্ব-তৃতীয় বিশ্ব ভেদ নাই। নরওয়ে মহিলা ফুটবল দলের সেরা খেলোয়াড় মাসকয়েক আগে ঘোষণা করিয়াছিলেন, যত দিন না দেশের জাতীয় ফুটবল সংস্থা মেয়েদের জন্য আন্তরিক ও সক্রিয় সমর্থন-প্রকল্প হাতে লইতেছে, তিনি বিশ্বকাপে বা জাতীয় দলের হইয়া খেলিবেন না। টেনিসে যুক্তরাষ্ট্র ওপেন প্রতিযোগিতায় পুরুষ ও মহিলা খেলোয়াড়রা এখন সমান অর্থ পান, তাহাও সম্ভব হইয়াছিল এক প্রবাদপ্রতিম মহিলা খেলোয়াড় ১৯৭৩ সালে টুর্নামেন্ট বয়কটের হুমকি দিয়াছিলেন বলিয়া। টেনিসের প্রাচীনতম প্রতিযোগিতা উইম্বলডনে তেরো বৎসর পূর্বেও নারী খেলোয়াড়েরা পুরুষদের সমান অর্থ পাইতেন না। অস্ট্রেলিয়ার ফুটবলে সম্প্রতি যুগান্তকারী ঘোষণা হইয়াছে, জাতীয় সংস্থা ফুটবল হইতে যে আয় করিয়া থাকে, পুরুষ ও মহিলা খেলোয়াড়রা তাহার সমান ভাগ পাইবেন। আবার অ্যাথলেটিক্সে যে দেশের জয়জয়কার, সেই আমেরিকার ‘ট্র্যাক অ্যান্ড ফিল্ড’ বিভাগের তিন মহিলা ক্রীড়াবিদের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা, সন্তানজন্ম দিবার পর স্পনসর সংস্থা তাঁহাদের উপার্জনে কোপ বসাইয়াছে।

বিশ্বের চিত্র দেখিয়া ভারতের অবস্থা অনুমান করিয়া লইতে বেগ পাইতে হয় না। ভারতীয় মেয়েরা সমস্ত খেলাতেই রহিয়াছেন, কিন্তু তাঁহাদের কেউ চিনে না। ক্বচিৎ এক জন দীপা কর্মকার বা হিমা দাসকে লইয়া মাতামাতি হয়। বিরাট কোহালির দলকে খেলিতে দেখিবার অবসরে মনে পড়ে, ভারতের একটি জাতীয় মহিলা ক্রিকেট দলও আছে, তাঁহারাও বিশ্বকাপ ইত্যাদি খেলিয়া থাকেন। ১৯৮২ সালে জাতীয় মহিলা ক্রিকেট দলকে বলা হইয়াছিল, জনপ্রতি দশ হাজার টাকা দিলে নিউজ়িল্যান্ডে অনুষ্ঠিতব্য বিশ্বকাপ খেলিবার সুযোগ মিলিবে! সেই অবমাননাকর পরিস্থিতির উন্নতি হইয়াছে সন্দেহ নাই, ক্রীড়াপ্রেমীরা এখন ঝুলন গোস্বামী বা হরমনপ্রীত কৌরের কীর্তিতে উল্লসিত হন। পাশাপাশি সমাজমাধ্যমে ছড়াইয়া পড়ে অ্যাথলিট হইবার আশায় লোকাল ট্রেনে প্রতি দিন সুদূর মফস্‌সল হইতে কলিকাতায় যাতায়াত করা রুক্ষ কেশ ম্লান মুখ কিশোরীর ছবি। সমবয়সি একটি ছেলের সমান অর্থ সে কবে রোজগার করিবে তাহা পরের কথা, মাঠে নামিবে বলিয়া ঘর হইতে বাহিরে আসিবার জন্য তাহার যে অনন্ত সংগ্রাম, তাহার খবর রাখে কে?

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE