Advertisement
২১ মে ২০২৪
সম্পাদকীয় ২

বৈরিতা নয়

কাশ্মীরে আবারও সন্ত্রাসী হানায় যখন ভারত-পাকিস্তান বিরোধের কথা নূতন করিয়া উঠিয়া আসিয়াছে, তখনই পাকিস্তানের হাই-কমিশনার আব্দুল বাসিত-এর মুখে এক ভিন্ন সুর শোনা গেল। তিনি কলিকাতায় এক অনুষ্ঠানে বলিয়াছেন, পাকিস্তানের জনসাধারণ আর আগের মতো ভারত-বিরোধী প্রচারে প্রভাবিত হইয়া পাক রাজনীতিকদের ভোট দেন না।

শেষ আপডেট: ২৩ মার্চ ২০১৫ ০০:০০
Share: Save:

কাশ্মীরে আবারও সন্ত্রাসী হানায় যখন ভারত-পাকিস্তান বিরোধের কথা নূতন করিয়া উঠিয়া আসিয়াছে, তখনই পাকিস্তানের হাই-কমিশনার আব্দুল বাসিত-এর মুখে এক ভিন্ন সুর শোনা গেল। তিনি কলিকাতায় এক অনুষ্ঠানে বলিয়াছেন, পাকিস্তানের জনসাধারণ আর আগের মতো ভারত-বিরোধী প্রচারে প্রভাবিত হইয়া পাক রাজনীতিকদের ভোট দেন না। তাঁহারা এত দিনে অনেক বেশি পরিপক্ব। কোন দল বা রাজনীতিক কত বেশি ভারত-বিদ্বেষী, তাহার প্রতিযোগিতা তাই ইদানীংকার নির্বাচনী রাজনৈতিক প্রচারকে নিয়ন্ত্রণ করে না। কারণ পাকিস্তানের সাধারণ মানুষ বুঝিয়া গিয়াছেন, দুই দেশের পারস্পরিক সহযোগিতার মধ্যেই রহিয়াছে তাঁহাদের উন্নয়নের চাবিকাঠি, শত্রুতার মধ্যে নয়। কথাটিকে কূটনীতিকসুলভ সুভাষিত বলিয়া তুচ্ছ করিলে ভুল হইবে। জনসমাজের পরিবর্তিত মানসিকতাই রাজনীতির হিসাবনিকাশকে পরিবর্তিত করিতে পারে, সুতরাং কথাটি মূল্যবান।

পাক হাই-কমিশনার পাকিস্তানে বিকশিত হওয়া নাগরিক সমাজের কথাই বলিয়াছেন। একই ধরনের নাগরিক সমাজ ভারতেও বিবর্তিত হইয়াছে। দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতা ও সাংস্কৃতিক আদানপ্রদান বৃদ্ধি করিতে বিভিন্ন বেসরকারি সমিতি ও সংগঠন গঠিত হইয়াছে। পরস্পরের আমন্ত্রণে তাহার সদস্যরা প্রতিবেশী দেশ সফর করেন, সেখানকার মানুষ, জীবনযাত্রা, সমাজ ও তাহার আশা-আকাঙ্ক্ষা বিষয়ে অবহিত হন। এই প্রক্রিয়ায় দুই দেশেরই নাগরিক সমাজ মৈত্রী, সখ্য, সহযোগিতার একটা সমান্তরাল ঐতিহ্য গড়িয়া তুলিতেছে, যাহা আবার রাজনীতিকেও প্রভাবিত করিতে সক্ষম হইতেছে। পাকিস্তানের গত নির্বাচনে যেমন প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী নওয়াজ শরিফ ভারতের বিরুদ্ধে কোনও যুদ্ধবাজ অবস্থান লন নাই, যাহা অতীতে রীতিমত দস্তুর ছিল। নরেন্দ্র মোদীও নির্বাচনী প্রচারে প্রতিবেশীদের সহিত মৈত্রীর কথাই বলিয়াছেন। দুই দেশেই উগ্র জাতীয়তাবাদী প্রতিক্রিয়ার শক্তিগুলি এখনও সক্রিয়, তাই মৈত্রীর প্রস্তাবকে দুর্বলতা রূপে অপপ্রচার করার লোকের অভাব হয় না। কিন্তু মোটের উপর সহযোগিতা বৃদ্ধির ও সুপ্রতিবেশীসুলভ সম্পর্ক স্থাপনের উপরেই উভয় দেশের জনসমাজ ক্রমশ ভরসা করিতে শিখিতেছে।

পাক হাই-কমিশনার এই প্রসঙ্গে বিশেষ করিয়া যুব সম্প্রদায়ের কথা বলিয়াছেন। তিনি দেখিয়াছেন, পাকিস্তানের ন্যায় ভারতের তরুণ সম্প্রদায়ও দেশভাগের রক্তাক্ত ইতিহাসের জের টানিয়া চলার পরিবর্তে খোলা মনে দুই দেশের সম্পর্ককে দেখিতে আগ্রহী। পাক-ভারত সম্পর্কের ক্ষেত্রেও তরুণরা ভবিষ্যমুখী। ভারতীয় চলচ্চিত্র ও ফিল্মি সঙ্গীত পাকিস্তানের তরুণদের যেমন আপ্লুত করে, তেমনই পাক গজল ও সুফি সঙ্গীতের সমৃদ্ধ ঘরানার স্বাদ পাইতে ভারতীয় তরুণরা আগ্রহী। আর ক্রিকেট লইয়া দুই দেশেই যে উন্মাদনা, তাহা তো সমগ্র বিশ্বেই নজিরবিহীন। একই পুরাতত্ত্ব, অভিন্ন ভূ-প্রাকৃতিক পরিবেশ, একই জনগোষ্ঠী এবং অভিন্ন কৃষ্টি ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের উত্তরাধিকারী এই উপমহাদেশের রাজনৈতিক বিভাজন একটি ইতিহাসসিদ্ধ ঘটনা, যাহা ঘুচিবার নয়। কিন্তু দুই দেশের সাধারণ মানুষের মধ্যে পরস্পরের প্রতি যে শুভেচ্ছা রহিয়াছে, জম্মু-কাশ্মীর লইয়া বিবাদ আজও তাহা বিনষ্ট করিতে পারে নাই। ইহাই অন্তিম ভরসা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

anandabazar editorial
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE