Advertisement
১৭ মে ২০২৪
প্রবন্ধ ১

সকলের শিক্ষায় নজর দিইনি, তার ফল ভুগছি

সর্বজনীন শিক্ষার বিপুল বিস্তার ও মানের উন্নতি না ঘটলে রাজ্যের ভাগ্যে থাকবে কেবল আর্থনীতিক বন্ধ্যতা ও সামাজিক বিভেদ, অতএব হিংসা ও দুর্বৃত্তায়ন। অশনিসংকেতের পর্যায় পেরিয়ে ঝড়টা অচিরেই আছড়ে পড়ার লক্ষণ দেখা যাচ্ছে কি? সুকান্ত চৌধুরীএক ছিল ছ’বছরের ছেলে, তার ছিল এক দু’বছরের বোন। তাদের বাপ-মা গেল মরে। এমনিতেই হতদরিদ্র, এখন সম্বলহীন শিশু দু’টি বাঁচে কী করে? উপায় একটা জুটে গেল। স্থানীয় এক পোলট্রি ব্যবসায়ী ছেলেটিকে হাজার টাকা বেতনে নিয়োগ করলেন মুরগি জবাই করার কাজে। দরিদ্র শিশুদের শিক্ষায় সাহায্য করার একটি সংস্থার সঙ্গে আমি যুক্ত। আমরা যখন ছেলেটির হদিশ পেলাম, তার বয়স তেরো।

শেষ আপডেট: ১০ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০০:০১
Share: Save:

এক ছিল ছ’বছরের ছেলে, তার ছিল এক দু’বছরের বোন। তাদের বাপ-মা গেল মরে। এমনিতেই হতদরিদ্র, এখন সম্বলহীন শিশু দু’টি বাঁচে কী করে? উপায় একটা জুটে গেল। স্থানীয় এক পোলট্রি ব্যবসায়ী ছেলেটিকে হাজার টাকা বেতনে নিয়োগ করলেন মুরগি জবাই করার কাজে। দরিদ্র শিশুদের শিক্ষায় সাহায্য করার একটি সংস্থার সঙ্গে আমি যুক্ত। আমরা যখন ছেলেটির হদিশ পেলাম, তার বয়স তেরো। ওই বালকসুলভ পেশার রোজগারে সে নিজেকে ও বোনকে সাত বছর স্কুলে পড়িয়ে এসেছে। আমরা তার দুর্গম পথ সিকি শতাংশ মসৃণ করলাম মাত্র।

যাঁরা বৃদ্ধির অর্থনীতিতে দীক্ষিত, তাঁরা বলবেন: বাঃ, এই তো দেখছ হীনতম অবস্থা থেকেও উঠে আসা যায়, এলেম থাকলে এই ছেলেও অমুক কিংবদন্তি শিল্পপতির মতো চরম দারিদ্র থেকে ঐশ্বর্যের শিখরে পৌঁছতে পারবে। সুতরাং গরিবদের শিক্ষা-স্বাস্থ্যে পয়সা নষ্ট না করে বরং ধনকুবেরদের আরও কিছু কর-ছাড় দেওয়া যাক।

এই দর্শনে অটুট আস্থা রেখে এই চিন্তাবিদরা কেউ নিজের পুত্রকন্যাকে রাস্তায় বার করে দিয়েছেন বলে জানা নেই। আপন সন্তানকে দুধেভাতে রাখাটাই আমাদের স্বাভাবিক প্রবৃত্তি। সেই মানবিক প্রবৃত্তির বশে অনেক পাঠক হয়তো নিজের সন্তানদের অনুরূপ অবস্থা কল্পনা করে শিউরে উঠছেন। সেই ভাববিলাসে কোনও লাভ নেই, যদি না বিষয়টা নিয়ে আমরা একটু চিন্তা করি, সম্ভব হলে সক্রিয় হই।

একটা কথা গোড়াতেই বলতে হয়: ওই পোলট্রির মালিককে দুষবার স্পর্ধা যেন আমাদের না হয়। যখন সরকার, দাতব্য সংস্থা, প্রতিবেশী, আপনি-আমি কেউই কিছু করিনি, ওই ভদ্রলোক শিশু দুটিকে বাঁচিয়ে রেখেছেন। তিনি ছোট ব্যবসায়ী, হাজার টাকা তাঁর কাছে কম নয়। চাইলে তিনি আধপেটা খাইয়ে ছেলেটিকে বেগার খাটাতে পারতেন। মেয়েটিকে তো বটেই, ছেলেটিকেও পাচারকারীর হাতে তুলে দিতে পারতেন। এর কোনওটাই না করে, তিনি সাধ্য মতো তাদের পাশে দাঁড়িয়েছেন। সরকার হদিশ পেলে তাদের সরিয়ে নিয়ে, উপরন্তু ভাইবোনকে পরস্পরের আশ্রয় থেকে ছিন্ন করে যে অনাথাশ্রমে রাখত, সেখানে মানবিকতার ওই ছোঁয়াটুকু থেকেও তারা বঞ্চিত হত।

শিশুশ্রমের সাফাই গাইছি না। বোঝাতে চাইছি, আমাদের সমাজে আশ্রয়হীন শিশুরা যে নরকে বাস করে, শিশুশ্রম তার একটা অঙ্গমাত্র, সব সময় বীভৎসতম অঙ্গও নয়। এই শিশুদের সঙ্গে যদি ক্বচিৎ প্রতিষ্ঠানের যোগ ঘটে, তা মুখ্যত স্কুলের মাধ্যমে নয়, হোমের মাধ্যমে। আর সেই হোমের অভ্যস্ত পরিবেশ সরাসরি অপরাধমূলক ঘটনাগুলি বাদ দিলেও প্রায় সর্বত্র সুস্থ বিকাশের পরিপন্থী, প্রায়ই শারীরিক ও মানসিক উৎপীড়নের আখড়া।

এক ধাপ উপরে ওঠা যাক। ভাবা যাক সেই শিশুদের কথা যারা অবশ্যই গরিব, হয়তো দারিদ্রসীমার নীচে, কিন্তু যাদের ঘর আছে, বাপ-মা আছে, সামাজিক পরিপার্শ্ব থেকে আছে ন্যূনতম আশ্বাস ও সংযোগ। এদের জন্য কাগজে-কলমে নানা ব্যবস্থা আছে। তার একটা নমুনা দেখা যাক।

ক’দিন আগে একটি সংবাদপত্রের খবর, মুর্শিদাবাদে এক অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের চালডালে মারাত্মক বিষ মিশেছিল, খেলে শিশুরা ব্যাপক হারে মরত; সৌভাগ্যক্রমে কর্মীরা সময় মতো খেয়াল করেছিলেন। অন্য কোনও কাগজে বা টিভিতে এর উল্লেখমাত্র চোখে পড়েনি। গত বছর বিহারে কিছু শিশু সত্যিই এ ভাবে মারা গিয়ে জাতীয় মাধ্যমগুলির নজরে এসেছিল। মুর্শিদাবাদের বাচ্চাদের পেট-খারাপ পর্যন্ত হয়নি, তাদের নিয়ে আর সময় খরচ কেন?

এটা না-হয় সত্যিই ‘বিচ্ছিন্ন ঘটনা’। কিন্তু অঙ্গনওয়াড়ি ব্যবস্থার ক্ষমাঘেন্নার দানে শিশু ও মায়েদের সাধারণ ভাবে যা প্রাপ্য জোটে, তাতে এর পোশাকি নাম ‘সুসংহত শিশু বিকাশ প্রকল্প’ নেহাত পরিহাস হয়ে দাঁড়ায়। এর দায় কেবল স্থানীয় কর্তাদের নয়, দেশের সর্বোচ্চ স্তরেরও। অন্য নানা দরাজ প্রকল্পের তুলনায় এই খাতে কেন্দ্র টাকা দেয় কৃপণ হস্তে, রাজ্য তাতে আরও কিছু যোগ করে, সে টাকাও গন্তব্যে পৌঁছয় অনিয়মিত ভাবে। বহু জায়গায় এই ব্যবস্থা টিকিয়ে রাখতে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা খাদ্যসামগ্রী ধার দেন, নগণ্য মাইনের অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীরা পকেট থেকে সেই ধার শোধ করেন, কয়েক মাস বাদে অনুদান এলে তাঁদের ঘাটতি মেটে। যাঁরা রান্না করেন, তাঁদের পারিশ্রমিকের কথা না বলাই ভাল।

এই সরকারি নীতির নৈতিক উৎস সমাজের শিক্ষাভিমানী উচ্চকোটির নীরব প্ররোচনায়। মনে পড়ে, প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী চিদম্বরম যখন মধ্যবিত্তের হেঁসেলের জন্য গ্যাসের ভর্তুকি লাফে-লাফে বাড়িয়ে চলেছেন, মিড-ডে মিলের জন্য একই ছাড় দিতে তাঁর চরম বিতৃষ্ণা, শেষে বহু বিলম্বে নিমরাজি সম্মতি? দেশের উচ্চকণ্ঠ শ্রেণির কাছে এটাই স্বাভাবিক ও প্রত্যাশিত। আমরা ধরেই নিই, হোমের শিশুরা আধপেটা খেয়ে মমত্বহীন পরিবেশে বেড়ে উঠবে, বড়জোর একটু লেখাপড়া শিখে সামান্য রোজগারের পথ দেখবে, তলিয়ে গেলে যাবে তাদেরই কোনও সহজাত দোষে, যা ‘আমাদের’ সন্তানদের মধ্যে অচিন্তনীয়। ধরে নিই, প্রত্যন্ত গ্রামে বা বস্তির স্কুলে দু’এক জন শিক্ষক পাঁচটা ক্লাস পড়াবেন, কম্পিউটার দূরস্থান ব্ল্যাকবোর্ড অমিল হবে, শৌচাগারের অভাবে বয়ঃসন্ধির পর মেয়েরা পড়া ছেড়ে দেবে। পরিবারের মেয়ে কত লেখাপড়া শিখবে? তার চেয়ে বিয়ে দিলে একটা হিল্লে হয়, বাপ-মায়েরাও তো সেটাই চায়।

এমন কথা ভাবতে ভাবতে আপনা থেকেই সত্যি হয়ে যায়। আমাদের দেশে শিক্ষার যথার্থ বিস্তারে বাধা আজ বঞ্চিত শ্রেণির অপারগতা তত নয় তাঁরা প্রায়ই সন্তানদের শিক্ষার জন্য ব্যাকুল, সে জন্য বিপুল ত্যাগস্বীকার করেন যতটা শিক্ষিত শ্রেণির নীরব বা সরব অনীহা। বঙ্কিম-রবীন্দ্রনাথ, বিদ্যাসাগর-জগদীশচন্দ্র বাঙালির একটা মস্ত ক্ষতি করে গেছেন। তাঁদের গর্বে আটখানা হয়ে আমরা ভুলে যাই, ব্রিটিশ আমলেও সর্বজনীন শিক্ষায় আমরা ছিলাম অন্যান্য প্রেসিডেন্সির পশ্চাতে, স্বাধীনতার পর বাকি দেশের তুলনায় ক্রমাগত পিছিয়ে পড়েছি। বিদ্যাসাগর দেখলে মরমে মরে যেতেন।

এ ব্যাপারে পূর্বতন সরকারের খতিয়ান মলিন, প্রায়ই লজ্জাকর। ‘অপারেশন ব্ল্যাকবোর্ড’ থেকে শুরু করে সব কেন্দ্রীয় প্রকল্পের সদ্ব্যবহার হয়েছে দেরিতে, অপর্যাপ্ত ভাবে। অন্য সব জায়গার মতো এখানেও সর্বশিক্ষা অভিযান চালু হয়েছে, কিন্তু সেটা তো বঞ্চিত শিশুদের জন্য দ্বিতীয় সারির ব্যবস্থা। তবু কী আশ্চর্য, সমীক্ষায় ধরা পড়েছে যে এই স্কুলগুলিতে লেখাপড়া হচ্ছে। কখনও বা পুরোদস্তুর স্কুলগুলির চেয়ে ভাল।

আনুষ্ঠানিক স্কুলব্যবস্থার পক্ষে এর চেয়ে অগৌরব কিছু হতে পারে না। তা-ও কর্তাদের জেদ আর অবহেলায় বিগত সরকারের শেষ ক’বছর প্রাথমিক স্কুলে কোনও নিয়োগই হয়নি, ‘পিটিটিআই বিভ্রাট’-এর জন্য। তার ফলে তরুণ প্রজন্মের বেকারত্বের দিকটা ব্যাপক প্রচার পেয়েছে। সেটা নিশ্চয়ই গুরুতর, কিন্তু আরও গুরুতর যে, সাধারণ ঘরের কয়েক লক্ষ শিশু এর ফলে ঠিক করে প্রাথমিক শিক্ষা পেল না। এ নিয়ে আমরা নির্বিকার, কারণ এই শিশুরা ‘আমাদের’ নয়।

আর ভুললে চলবে না সেই আমলে শিক্ষক নিয়োগে ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগের কথা। অন্য অনেক রাজ্যেও এমন ঘটেছে বলে পাপের মাত্রা কমে না। ১৯৯৫-এ সুপ্রিম কোর্ট রাজ্যর দুটি জেলায় প্রায় তিন হাজার নিয়োগ বাতিল করেছিল, অন্য ছ’টি জেলা সম্বন্ধেও করেছিল তির্যক মন্তব্য। সেই অপরাধ ‘শুধরিয়ে’ ১৯৯৬ সালে মেদিনীপুরে যে ২,২০০ নতুন নিয়োগ হয়েছিল, ২০১২ সালে তা-ও বাতিল করল কলকাতা হাইকোর্ট। এ লজ্জা আর কোনও রাজ্যের জুটেছে বলে জানি না।

কোনও দুর্নীতিচক্র এক বার জেঁকে বসলে দূর করা শক্ত। পালাবদলের সঙ্গে তার হাতবদল হয়, অবসান হয় না। বর্তমান সরকার অন্তত শিক্ষক নিয়োগের প্রক্রিয়াটা চালু করেছেন, তা কী ভাবে এগোয় দেখা যাক। কিছু নিরপেক্ষ বার্তা থেকে মনে হয় স্কুলশিক্ষার কিঞ্চিৎ উন্নতি ঘটে থাকতে পারে। চালু হয়েছে কন্যাশ্রীর মতো সম্ভাবনাময় প্রকল্প, যার সুষ্ঠু রূপায়ণে শুধু নারীশিক্ষা নয়, সার্বিক নারীকল্যাণে ব্যাপক সুফল ফলতে বাধ্য। আদিবাসী সম্প্রদায়ের জন্য অনুরূপ প্রকল্প নেওয়া হচ্ছে। এতে মেয়েদের ও বঞ্চিত গোষ্ঠীর শিক্ষার অধিকারকে প্রশাসনিক স্বীকৃতি দেওয়া হল, একটা কাঠামোয় আনা হল। পরিবারগুলিও উৎসাহিত হল মেয়ের লেখাপড়া চালিয়ে যেতে। চিন্তা একটাই, এই প্রাপ্তির দিকে তোলাবাজদের দৃষ্টি না পড়ে, মেয়েদের কোনও বিপদে পড়তে না হয়।

বর্তমান স্কুল ব্যবস্থায় সমাজের একটা ছোট অংশ এমন শিক্ষা লাভ করেছে, যাতে তারা অর্থনীতির কোনও লাভজনক ক্ষেত্রে নিযুক্ত হয়ে নিজেদের উন্নতি ঘটাতে পারে, দেশেরও অবশ্যই। তার মধ্যেও এক অতি ক্ষুদ্র অংশ অতি মহার্ঘ স্কুলে পড়ে কিছু বাড়তি সুবিধা লাভ করছে যা ঠিক শিক্ষাগত নয়, বরং সামাজিক ও শ্রেণিগত। অন্য দিকে অপেক্ষাকৃত অসচ্ছল একটা শ্রেণি সাধ্যের অতিরিক্ত অর্থব্যয় করে যে শিক্ষা পাচ্ছে, তা গুণগত বিচারে প্রায়ই নিরেস হলেও কর্মক্ষেত্রের চাহিদায় একটা ন্যূনতম মানের আশ্বাস জোগাচ্ছে। আর তারও নীচে, সব চেয়ে বঞ্চিত ছেলেমেয়েরা যে শিক্ষা পাচ্ছে, সেটা তাদের না করছে কর্মক্ষেত্রের উপযোগী, না দিচ্ছে সামাজিক প্রত্যয় ও নিরাপত্তা। মুষ্টিমেয় ক্ষেত্রে এর ব্যতিক্রম ঘটতে পারে, সেটা হিসাবের মধ্যে আনা যায় না।

এ অবস্থা কেবল বাংলার নয়, ভারতের সর্বত্র। কিন্তু এ রাজ্যে জমির তুলনায় লোকসংখ্যার আধিক্য, আর্থনীতিক বিকাশের অভাব, দেশভাগের ফলে এক বিরাট ছিন্নমূল গোষ্ঠীর অস্তিত্ব ইত্যাদি কিছু কারণে সমস্যাটা বিশেষ তীব্রতা ধারণ করেছে। শিক্ষা যে আর্থসামাজিক বিকাশের একটা প্রধান (হয়তো সর্বপ্রধান) শক্তি, তা আজ সাধারণ ভাবে স্বীকৃত; কিন্তু অন্যান্য শক্তির বড় বেশি অভাবের ফলে আমাদের ক্ষেত্রে কথাটা বিশেষ ভাবে খাটে। সর্বজনীন শিক্ষার বিপুল বিস্তার ও মানের উন্নতি না ঘটলে রাজ্যের ভাগ্যে থাকবে কেবল আর্থনীতিক বন্ধ্যতা ও সামাজিক বিভেদ, অতএব হিংসা ও দুর্বৃত্তায়ন। অশনিসংকেতের পর্যায় পেরিয়ে ঝড়টা অচিরেই আছড়ে পড়ার লক্ষণ দেখা যাচ্ছে কি?

(চলবে)

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি বিভাগে এমেরিটাস অধ্যাপক

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

sukanta chowdhury education
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE