বেহাল হাসপাতাল
পারিজাত বন্দ্যোপাধ্যায় (‘নেই তকমা নিয়েই...’, কলকাতা, ২১-১) বিদ্যাসাগর স্টেট জেনারেল হাসপাতাল সম্বন্ধে লিখেছেন, দুপুর সাড়ে বারোটা বাজতে না বাজতেই আউটডোর বন্ধ করে ডাক্তাররা উধাও, অস্ত্রোপচার হয় কালেভদ্রে। দায়িত্ব নিয়ে জানাই, বিদ্যাসাগর স্টেট জেনারেল হাসপাতালে দুপুর দুটো-আড়াইটের আগে কখনওই আউটডোর বন্ধ হয় না। ওই সময়েও রোগীর লম্বা লাইন থাকে। কারণ, দুপুর দুটো পর্যন্ত টিকিট করা হয় এবং ডাক্তারবাবুরা শেষ রোগী না দেখে কখনওই বেরোন না। ২১ সেপ্টেম্বর থেকে ২০ ডিসেম্বর ২০১৪— তিন মাসে এই হাসপাতালে আউটডোরে রোগীর সংখ্যা ৩৬১১০, অস্ত্রোপচারের সংখ্যা সিজার ২৩১, লাইগেশন ৮৫, হিসটেরেকটমি ও মেজর অপারেশন ৬২, জেনারেল সার্জারি ২৪, অর্থোপেডিক ৫৪, ইএনটি ২৭ ইত্যাদি। সাম্প্রতিক কালে নতুন ইমার্জেন্সি অবজারভেশন ওয়ার্ড ও সিটি স্ক্যান চালু হওয়ার পর বহু রোগী এই পরিষেবা পাচ্ছেন। অসহায় বিপন্ন রোগী উপকৃত হলেই সীমিত ক্ষমতার মধ্যে আমাদের সদর্থক প্রচেষ্টা সাথর্র্ক বলে মনে করব।
ডা. উত্তম মজুমদার। অধীক্ষক, বিদ্যাসাগর স্টেট জেনারেল হাসপাতাল, কলকাতা-৩৪
*
প্রতিবেদকের উত্তর
গত ১৭ জানুয়ারি টেলিফোনে উত্তমবাবুর সঙ্গে আমার বিস্তারিত কথা হয়। কথাপ্রসঙ্গে তিনি আক্ষেপের সঙ্গে জানান, গত এক মাস যাবৎ তাঁর হাসপাতালে কোনও সার্জন নেই। ফলে যাবতীয় মেজর অস্ত্রোপচার বন্ধ। মেডিসিনের চিকিৎসক মাত্র ২ জন। ইএনটি ১ জন এবং চোখের চিকিৎসক ১ জন। এত কম সংখ্যায় চিকিৎসক দিয়ে হাসপাতালের আউটডোর ও অন্য পরিষেবা চালানো দায়। আরও জানান, চিকিৎসক কম হওয়ায় এবং সার্জারি বন্ধ থাকায় রাষ্ট্রীয় স্বাস্থ্য বিমা যোজনার প্রায় কোনও রোগী ভর্তি নেওয়া যাচ্ছে না। তাঁর কথায়, “এই ভাবে আর কয়েক মাস চললে আমাদের ভাঁড়ার খালি হয়ে যাবে এবং হাসপাতাল বন্ধ করতে হবে। স্বাস্থ্য ভবনকে সব জানিয়েছি।” জানুয়ারি মাসের প্রথম থেকে বিদ্যাসাগর হাসপাতালে কোনও মেজর অস্ত্রোপচার হচ্ছে না এবং রোগী ভর্তি বন্ধ রয়েছে।
গত মঙ্গলবার ২০ জানুয়ারি বেলা সাড়ে বারোটা নাগাদ বিদ্যাসাগর হাসপাতালের আউটডোর দেখতে যাই। পাশাপাশি চারটি ঘর। তিনটি তত ক্ষণে খালি। বাকি একটিতে তখন চিকিৎসক বেরিয়ে তালা লাগাচ্ছেন। জিজ্ঞাসা করলে বলেন, “রোগী নেই, থেকে কী করব?” তিনি চলে যাওয়ার পরে অন্তত তিন জন রোগী টিকিট করিয়ে আউটডোরে এসেছেন এবং ডাক্তার না পেয়ে চলে গিয়েছেন। সংবাদপত্রে ওই খবর প্রকাশিত হওয়ার পরের দিন সকালেই উত্তমবাবু প্রতিবেদককে আবার ফোন করেন এবং বলেন, “ডাক্তারেরা অনেক সময় আউটডোর বন্ধ করে চলে আসেন। আসলে আমাদের মিটিং থাকে। অনেক সময় ইমার্জেন্সি এসে গেলেও আউটডোর বন্ধ করে দিতে হয়। ডাক্তার কম বুঝতেই পারছেন। আপনি তখনই আমাকে জানালেন না কেন? কেন আগেই সব লিখে দিলেন?”
লালবাইয়ের মৃত্যু
উত্তম গঙ্গোপাধ্যায় (‘কী ভাবে দেখাতে হয়’, সম্পাদক সমীপেষু, ৩১-১২) লিখেছেন, ‘... যেন চোখের সামনে দেখতে পাচ্ছিলাম রানি চন্দ্রপ্রভার হাহাকার, রাজপুরোহিতের সহায়তায় লালবাইকে দিঘির জলে ময়ূরপঙ্ক্ষী বজরায় সপুত্র হত্যা করার দৃশ্য।’ এ প্রসঙ্গে জানাই, বিষ্ণুপুরের প্রজারা লালবাইয়ের বাসভবন ভেঙেচুরে তাঁকে নির্মম ভাবে ডুবিয়ে মারে তাঁর বাসভবন নূতন মহল সংলগ্ন চৌবাচ্চা নামক জলাশয়ে। আবার অনেকে বলেন, প্রজাদের হাতে লাঞ্ছিত হওয়ার আশঙ্কায় নিজেই উক্ত জলাশয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে আত্মহত্যা করেন লালবাই। সেই সময় থেকে ওই স্থানটি জনবর্জিত হয়েছিল। অনেক পরে, ১৮৯৮ খ্রিস্টাব্দে জলাশয়ের পঙ্কোদ্ধার করে সেটি ব্যবহারের উপযোগী করা হয়। তখন ওখানে লালবাইয়ের কঙ্কাল, অনেক মুসলমানি খাদ্যপাত্র, এমনকী তাঁর অলঙ্কারও পাওয়া গিয়েছিল। (তথ্যসূত্র: ফকিরনারায়ণ কর্মকার, বিষ্ণুপুরের অমরকাহিনী, পৃ ৮১-৮২)
স্বপনকুমার দে। কল্যাণী, নদিয়া
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy