প্রতীকী ছবি।
কঠিন কাজ সহজে এবং কম সময়ে কে না করতে চান? তার উপর সেটি যদি অঙ্ক হয়ে থাকে, তাহলে শিক্ষার্থীরা দুই লাইনে অঙ্কের সমাধান খুঁজে পেতে চায়। এই অঙ্কই যেন যত নষ্টের গোড়া। তার উপর শূন্যের আবিষ্কার যেহেতু এই দেশেই, তাই রাগটা যেন আরও বেশি। কিন্তু মজার বিষয় হল, কঠিন কঠিন অঙ্কের সহজ সমাধানের পথও বাতলে দিয়েছিলেন একজন ভারতীয়ই। নাম দিয়েছিলেন বৈদিক গণিত, যার পোশাকি নাম বৈদিক ম্যাথামেটিক্স।
বৈদিক গণিত: ইতিহাস
প্রাচীন পদ্ধতির মাধ্যমে গাণিতিক সমস্যাগুলির সহজ সমাধান করার কৌশল এবং সূত্রের সংকলনই হল বৈদিক গণিত। কুড়ির শতকের প্রাক্পর্বে শ্রী ভারতী কৃষ্ণা তীর্থজী এই বৈদিক গণিতের সমস্ত সূত্র আবিষ্কার করেছিলেন। তিনি এক জন গণিতবিদ ছিলেন। পরবর্তীকালে তাঁর এই কৌশল এবং সূত্রের সংকলন ‘বৈদিক ম্যাথামেটিক্স’ নামের একটি বইয়ে প্রকাশিত হয়েছিল। গণিতবিদ চেয়েছিলেন, কঠিন অঙ্কের সমাধান শিক্ষার্থীরা যাতে সহজেই করতে পারেন।
নামে বৈদিক, বেদের সঙ্গে কী সম্পর্ক?
‘বৈদিক ম্যাথামেটিক্স’ বইয়ের প্রথম পাতায় লেখক উল্লেখ করেছিলেন, তাঁর সংকলনে যে সমস্ত সূত্র এবং কৌশলের কথা উল্লেখ করা হয়েছে, সেই সমস্ত বিষয়ের সঙ্গে ঋকবেদের কোনও সংযোগ নেই। পরবর্তীকালে, অধ্যাপক চন্দ্রকান্ত রাজু, জনপ্রিয় কম্পিউটার বিজ্ঞানী একটি নিবন্ধে এই একই বিষয়ে সিলমোহর দেন। তিনি আরও উল্লেখ করেছিলেন, গণিতের সাধারণ ক্ষেত্র, যেমন পাটিগণিতের জন্ম হয়েছিল ভারতবর্ষেই।
এই বিষয়টি কী পাঠ্যসূচির অন্তর্ভুক্ত?
কেন্দ্রীয় মন্ত্রীসভার তরফে এই বিষয়টিকে পাঠ্যসূচির অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব পেশ করা হয়েছিল। এর পর চলতি বছরে সংশ্লিষ্ট বিষয়-সহ আরও বেশ কিছু বিষয় পাঠ্যক্রম চালু করার ‘গাইডলাইন’ বা নির্দেশিকা প্রকাশ করেছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। দ্রুতই কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয় স্তরে এই বিষয়টি নিয়ে পড়াশোনার সুযোগ পাবেন পড়ুয়ারা।
শেখার বিষয়বস্তু?
বৈদিক গণিত আদপে সাধারণ অঙ্কের থেকে একটু বেশি সৃজনশীল। সহজ ভাবে যে কোনও ধরনের অঙ্কের সমাধান করা সম্ভব এই ‘বিশেষ’ পদ্ধতি অবলম্বন করলে। যাঁরা প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে চান, তাঁদের ক্ষেত্রে পরীক্ষা প্রস্তুতির জন্য অন্যতম উপায় হতে পারে বৈদিক গণিতের অভ্যাস করে পড়াশোনা করা।
কারণ এই পদ্ধতিতে যোগ, বিয়োগ, গুন, ভাগ-সহ শতকরা হিসেব, অনুপাতের হিসেবের মত লম্বা এবং সময়সাপেক্ষ অঙ্কের সমাধান কয়েক মিনিটের মধ্যে করা সম্ভব। ত্রিকোণমিতির সমস্যা সমাধানের ক্ষেত্রেও উপকারি এই বৈদিক গণিত প্রক্রিয়া।
কী ভাবে শেখা যেতে পারে?
কেন্দ্রের তরফে ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ বৈদিক ম্যাথস অ্যান্ড অ্যাবাকাস-কে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে, যাঁরা বৈদিক গণিত শেখানোর অনলাইন কোর্স পরিচালনা করে থাকে। শুধু শেখানোই নয়, পাশাপাশি, যে সমস্ত শিক্ষার্থীরা প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিতে চান, তাঁদেরকেও বিশেষ ভাবে সহায়তা করা হয়ে থাকে। কোর্স শেষ হওয়ার পর শংসাপত্র এবং যোগ্যদের চাকরি পাওয়ার সুযোগও রয়েছে।
তাই অঙ্কের ভয় কাটাতে বৈদিক গণিত শিখে নিতেই পারেন পড়ুয়ারা। এই বিশেষ বিষয়ের চাহিদা এই দেশের পাশাপাশি, আন্তর্জাতিক স্তরেও রয়েছে। তাই ভবিষ্যতে উচ্চশিক্ষা কিংবা পেশাগত চাহিদার কারণে বিদেশেও পাড়ি দিতে পারেন শিক্ষার্থীরা। পেতে পারেন মোটা অঙ্কের মাইনেও। সুতরাং, কঠিন কাজের জন্য সহজ উপায় খুঁজে পেতে ভরসার হাত হতেই পারে বৈদিক গণিত।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy