গাজায় অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির আবেদন করল রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদ। নিউইয়র্কে ১৫ সদস্যের নিরাপত্তা পরিষদ রবিবার মধ্যরাত পর্যন্ত চলা জরুরি অধিবেশনের শেষে এই প্রস্তাব পাশ করে। এরই পাশাপাশি, গাজায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১০৬০-এ। এর মধ্যে ৭৫ শতাংশই সাধারণ নাগরিক বলে রাষ্ট্রপুঞ্জ জানিয়েছে। আহত ছ’হাজারেরও বেশি। মারা গিয়েছেন ৪৩ জন ইজরায়েলি।
রাষ্ট্রপুঞ্জ সূত্রে খবর, ২১ দিন ধরে চলা এই সংঘর্ষে প্রায় ২০০ জন শিশুর মৃত্যু হয়েছে। এই সংঘর্ষে প্রতি ঘণ্টায় এক জন শিশু প্রাণ হারিয়েছে। ভেঙে পড়েছে নাগরিক পরিষেবা। গাজার প্রায় ৫০ শতাংশ অঞ্চলের বাসিন্দাকে সরে যেতে বলেছে ইজরায়েলি সেনা। ফলে ঘরছাড়ার সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ লক্ষ ৬৭ হাজার। ঘরছাড়াদের জন্য রাষ্ট্রপুঞ্জ গাজায় ৩৪টি আশ্রয় শিবির চালাচ্ছে। আশ্রয় শিবিরগুলিও ভরে উঠেছে। ইদের জন্য অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির আবেদন করেছে রাষ্ট্রপুঞ্জ। নিরাপত্তা পরিষদের আশা, এক বার যুদ্ধবিরতি শুরু হলে তার মেয়াদ আরও বাড়িয়ে নেওয়া যাবে।
যুদ্ধক্ষেত্রে ঈদের নমাজ। গাজা। ২৮ জুলাই ২০১৪। ছবি: এপি।
নিরাপত্তা পরিষদের এই প্রস্তাবে খুশি নয় ইজরায়েল। খুশি নয় প্যালেস্তাইনও। প্রস্তাবে ইজরায়েলের নিরাপত্তার বিষয়টি ভাবা হয়নি বলে অভিযোগ করে রাষ্ট্রপুঞ্জে ইজরায়েলের প্রতিনিধি জানান, ইজরায়েল শান্ত থাকলেই গাজা শান্ত থাকবে। অন্য দিকে প্যালেস্তিনীয় প্রতিনিধির দাবি, ইজরায়েলের আগ্রাসন বন্ধ করার বিষয়ে প্রস্তাবটিতে জোর দেওয়া হয়নি।
ইদ উপলক্ষে রবিবার হামাসের দেওয়া ২৪ ঘণ্টার যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব শেষ পর্যন্ত প্রত্যাখান করে ইজরায়েল। সোমবার ইজরায়েলি ক্যাবিনেটের বৈঠকে বসার কথা। এখানে যুদ্ধবিরতি নিয়ে আলোচনা হবে বলে জানা গিয়েছে। একই সঙ্গে গাজায় ইজরায়েলি সেনার আগামী পদক্ষেপ নিয়েও আলোচনা হওয়ার কথা। সোমবার সকাল থেকে গাজা মোটামুটি শান্তই রয়েছে। তবে কয়েক বার গোলাবর্ষণের শব্দও শোনা গিয়েছে। গাজা থেকে ইজরায়েলি শহর আশকেলোন-এর দিকে একটি মাত্র রকেট ছোড়া হয়েছে বলে ইজরায়েলি সেনা সূত্রে খবর। হামাসের তৈরি সুড়ঙ্গগুলি ধ্বংস করার কাজও জারি আছে বলেও ইজরায়েল জানিয়েছে। এখনও পর্যন্ত হামাস ২৫৩৪টি রকেট ছুড়েছে বলে ইজরায়েল জানিয়েছে। অধিকাংশ রকেটই ক্ষেপণাস্ত্র-ধ্বংসী ‘আয়রন ডোম’ ব্যবস্থা ধ্বংস করতে সক্ষম হলেও রকেটের আঘাতে দু’জন ইজরায়েলি নাগরিকের মৃত্যু হয়েছে।
এল খুশির ঈদ। উত্তর গাজার জাবালিয়ায় এক আশ্রয় শিবিরে। ছবি: এএফপি।
অন্য দিকে, যুদ্ধবিরতি নিয়ে আমেরিকা ও ইজরায়েলের মধ্যে সম্পর্কের টানাপড়েন তৈরি হয়েছে। রবিবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ফোনে ইজরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুকে বিনাশর্তে অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব দেন। কিন্তু নেতানিয়াহু তা প্রত্যাখান করেন। এর আগে মার্কিন বিদেশ সচিব জন কেরির প্রস্তাবও ফিরিয়ে দিয়েছিল ইজরায়েল। বিদেশ সচিব কেরি যুদ্ধবিরতির জন্য হামাসের উপরে চাপ দিতে মিশর, তুরস্ক এবং কাতারের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করছিলেন। মিশরের বিষয়ে আপত্তি না থাকলেও কাতার ও তুরস্ক হামাস ঘেঁষা বলে ইজরায়েলের বিশ্বাস। এমনকী, হামাসকে সাহায্যের জন্য ইরানের পাশাপাশি কাতারকেও দায়ী বলে মনে করে ইজরায়েল। কেরির প্রস্তাব হামাসকে সুবিধা পাইয়ে দেবে বলেই তা প্রত্যাখান করা হয় বলে ইজরায়েলি প্রশাসন সূত্রে খবর। এ দিকে, গাজায় রাষ্ট্রপুঞ্জের স্কুলে হামলার দায় নিতে রাজি নয় ইজরায়েল। একটি ভিডিও প্রকাশ করে ইজরায়েলের দাবি, একটি মর্টার ঠিকমতো কাজ না করে স্কুল চত্বরে পড়লেও তখন স্কুল চত্বরটি ফাঁকাই ছিল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy